ঘুম-পরী- ১
আমার অনেক স্বপ্ন ছিল !
বনের ভেতর পাখির কলকাকলিতে
একটি নির্জন জায়গায় আমরা ঘর বানাবো ।
আমার অনেক ইচ্ছে ছিল
সেখানে আমাদের ছেলে হবে মেয়ে হবে
আমরা সেখানে প্রকৃতি ও ভালোবাসায় কাটাবো জীবন ।
আমার খুব ইচ্ছে ছিল !
বনের ভেতরের সেই বাড়ির একটি ঘর থাকবে
আমার কবিতা লেখার জন্য ।
আমি তাকে মাঝে মাঝেই বলতাম
” তোমার জন্য অনেক বই রেখেছি আমি
তুমি এই বইগুলো পড়বে’’ ।
আমি যেদিন শরৎ রচনাসমগ্র কিনে আনলাম
সেদিনও তাকে দেখালাম সেই বইগুলো
খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে ।
আমার কথার উত্তরে সে বললো,
” বই পড়তে আমার ভালো লাগে না ” ।
ঘুম-পরী- ২
মনের মানুষ নিয়ে এক হাজার বছর বাঁচতে হয় না ।
মনের মানুষের সঙ্গে থাকা এক মু-হূর্তে যেই সুখ আসে
সেই সুখেই হলো স্বর্গীয় সুখ ।
আমি এমনি সুখে একদিন ছিলাম
ভেসেছিলাম স্বর্গে,
সেই সময়ে ঘুম-পরী
আর আমি ছিলাম খুব পাশাপাশি ।
ঘুম-পরী- ৩
আমি তাকে একটি লাল শাড়ি দিয়েছিলাম।
শাড়িটা তার শরীর ঢাকতে পারেনি,
তার অতো সুন্দর সুঠাম দেহে
শাড়িটা একদিক না একদিকে ছোটই হয়ে যেতো।
আমি তাকে একটি লাল শাড়ি দিয়েছিলাম!
সেই শাড়িটি আমি কখনো দেখিনি
শুধু সে একবার খাটের উপর স্তূপ করে রেখে
শাড়িটির ফটো তুলে পাঠিয়েছিল আমার কাছে ।
সেই শাড়ি নিয়ে অনেক কিছুই হলো ।
ওর ভার্সিটির বড়ো আপুদের নিয়ে কতো দরবার
কতো পরামর্শ,
কারণ বিক্রেতা অন্য শাড়ির ফটো দেখিয়ে
ওর কাছে এই শাড়িটি বিক্রি করেছিল,
এই নিয়ে ওর মনে ছিল অনেক কষ্ট
অনেক রাগ ।
আমি ওর রাগ বুঝতে পেরে ওকে বলেছিলাম,
” তুমি রাগ করো না
আমি তোমাকে আবার লাল শাড়ি কিনে দেবো,
সেই শাড়িটি হবে তোমার মনের মতো !
সেই শাড়িতে তোমার শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে যাবে
যেমনভাবে তুমি ঢাকতে চাও তোমার শরীর “।
আমি তাকে একটি লাল শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম !
হয়তো সেই শাড়িটি সে কোনোদিনই পড়েনি
হয়তো সেই শাড়িটি অযত্নে অবহেলায় কোথায় পরে আছে
হয়ত শাড়িটির অস্তিত্ব আজ আর কোথাও নেই !
আমি তাকে আর কোনোদিনেই লাল শাড়ি দিতে পারিনি !
সে আমার জীবন থেকে চলে গেলো আমাকে না বলেই !
সে আমার জীবন থেকে চলে যাবার পর
আমি বুঝতে পারলাম, লাল শাড়ি পড়ে
সে কোনো দিনই আমার সামনে আসবে না আর ।
ঘুম-পরী- ৪
ওকে একবার এক পলক দেখলে
পৃথিবীর সব শান্তি এসে যেতো আমার,
ওকে এক পলক একবার দেখলে
অফুরন্ত সুখে ভেসে যেতাম আমি !
ওকে সারা জীবন দেখার প্রতীক্ষায়
স্বপ্ন দেখতাম আমি সব সময় ।
অথচ
ওকেই আমি আর কখনো দেখতে পাবো না !
এক পলকও না !
না পৃথিবীতে
না আখিরাতে ।
ঘুম-পরী- ৫
জান্নাতে আমি তেমন কিছুই চাই না
চাই শুধু ঘুম-পরীকে ।
ঘুম-পরী পৃথিবীতে যেইভাবে হাঁটে
ঠিক এইভাবে সে হাঁটবে সেখানে,
কথা বলবে এড়ো চোখে থাকিয়ে
রাগ করবে খুব
আর এই রাগে থাকবে অফুরন্ত প্রেম ।
ঘুম-পরী সেখানে অনেক অনেক ভালোবাসবে আমাকে
যেমন আমি ভাবতাম সে আমাকে ভালোবাসে ।
পরিচিতি
শাহীদ লোটাস (Shaheed Lotus) বাংলা ভাষার লেখক ।
জন্ম- ১৫ জ্যৈষ্ঠ সোমবার সকাল ৮ টায় ।
তিনি গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লেখেন ।
তার লেখা প্রকাশিত গ্রন্থ
উপন্যাস : বেদনার বাঁশি, কলকি সুন্দরী, আরশি, ঘৃণা, বসন্তের শেষ বিকেল ।
কাব্যগ্রন্থ : একুশ ও মুক্তির গান, মুদ্দাফরাশের কবিতা, একটি শোক সংবাদ ।
আত্মজীবনী : ১৮ মার্চ ২০১৯ ।
যোগাযোগ …
Gmail: shaheedlotus@gmail.com
Yahoo: shaheedlotus@yahoo.com
Facebook: www.facebook.com/writer.shaheedlotus