অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শারদুল সজল -
শারদুল সজলের গুচ্ছ কবিতা

জীবন
জীবন, আমাকে ডেকে ডেকে বললো- আমি তোর
তুই চাইলে, না চাইলেও আমি তোর
সত্যি সত্যি তাকিয়ে দেখি
আমি তার- সে আমার
মিছিলে, রাজপথে, কৃষ্ণচূড়ার ঔদ্ধত্য লালে
ধোঁয়াশার মুকুলে
এমনকি ঘুমের ভেতরে- ছায়ার ভেতরে
পালাতে পারিনি বিন্দু দূরে
ও আল্লাহ, জীবন সবখানে!

খ.
জন্ম বলো, মুত্যু বলো, ব্যাধি বলো
জীবন, একটা কিছু তো বটেই
পিচ্ছিল জোছনায় দোল খেয়ে
নির্জন অভিমানে
ব্যর্থ বলো, ঘৃণা বলো, স্বপ্ন বলো
হালকা বলো, ভারী বলো, সংশয় বলো
জীবন, একটা কিছু তো বটেই!

যুবক
সম্পূর্ণ সন্ধ্যাকে গিলে খেয়ে যে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
যে আমি ভেঙেছি দোজখের দুর্যোগ-আগুন
মুগ্ধতার তুমুল সৌরভে… মৃতময় মুখগুলোকে জড়ো করে
যিশুর মুজেজায় আদেশ করেছি জেগে ওঠো-
মৃত্যুকে অনুবাদ করে ফিরে আসা হে যুবক
বলো¬ আমি-
একমাত্র আমিই মৃত্যুর কাছে কখনও কৃপণভাবে দাঁড়াইনি !

দুটো ইঁদুর ও ঘরে না ফেরার গল্প
সেই কবে থেকে একটা মানুষ রাস্তায় হেঁটে চলছি
শাদা কালো দুটো ইঁদুর- সামনে এগিয়ে নিয়ে চলছে আমাদের
রাস্তাটা খুব খাঁড়া পাহাড়ে উঠে গেছে
পাহাড়ের শেষে গভীর সাগর- যেখানে পড়ে যাবার পর
কেউ কোনোদিন ফেরেনি
মানুষ ইঁদুর দুটোকে খুব ভালোবাসে
শাদা ইদুরের কাঁধে ভর দিয়ে গতিশীল করে জীবনের আয়োজন
আর শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে কালো ইঁদুরের নির্জনতায়
খুঁজে পায় সমুদ্রযাত্রার প্রস্তুতি
এইসব শাদা ইঁদুর ও কালো ইঁদুরের যৌথফার্মে জীবনের আয়োজন ঢেলে
পৃথিবীর শেষ সঙ্গীত রচিত হয় এক অলৌকিক আহবানে
আমরা কেউ ফেরাতে পারি না এই আহবানে- এই স্মৃতির শহরে
রচিত হতে থাকে এক একটি ঘরে না ফেরার গল্প

বৃষ্টিরাত
এই মন খারাপের রাতে তোমাকে কি আমি একটিও
চুমু দেবো না?
বৃষ্টি শেষ হয়েছে কখন
উঠোনের বা পাশ থেকে লেবু ফুলের গন্ধ
হামলে পড়ছে জানালায়
বাতিটা নিভে যায়- যায় বুঝি মুখটা আড়াল কোরো না
এই মন খারাপের রাতে তোমাকে কি আমি একটুও
চুমু দেবো না?
২.
যে যাই বলুক তুমি ফিরে না এলে
বাজেয়াপ্ত হবে এই শহরের সকল সঙ্গম!
নারী-পুরুষের সকল দরোজায় প্রকাশ্যে তালা ঝুলিয়ে
তরল জোছনায় ছড়িয়ে দেবো নিদ্রাহীন সংশয়ের দিন
যে যাই বলুক- যতই ভাঙুক এই বৃষ্টিচি‎হ্ন রাতে
তুমি ফিরে না এলে বাজেয়াপ্ত হবে এই শহরের সকল সঙ্গম!

প্রিয় শহর
তোমাকে ছেড়ে কী করে থাকছি হে প্রিয় শহর! তুমি কেমন আছো?
আমার পায়ের ছাপহীন, আমি কেমন আছি তোমার বাতাসের ধূলিহীন- মুনিয়াহীন
জানতে চেয়ো না
কত মাইল আগুন খেয়ে এই আমি ফুটবলের নিভাঁজে ঘুরতে ঘুরতে লাটিম হয়েছি সুতোছেঁড়া মেঘের ভেতর ভাসতে ভাসতে কোনো অজানা তেপান্তর ভেসে চলেছি-
তুমি প্রশ্ন করো না- বসন্তের বিউগল ভেঙে গেলে প্রশ্ন চলে না
তৃষিত অন্ধকারে খসে পড়ছে এনভেলাপ, সবুজাভ ঝাউশাখায়
স্মৃতি ধোঁয়ায় উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক সারস পাখি
বিমূর্ত পৃথিবীর ছায়া ফেলে, দূরে- রেডিও মেগাহার্টজে
ভেসে চলছে আমার ফেরারি কণ্ঠস্বর
এভাবেই বুঝি স্বপ্নেরা হত হয়- মানুষগুলো পরিচিত মানুষের তাপ ছেড়ে দূরে রয়
প্রিয়তমা শহর- তোমার বুকে যদি আর কোনোদিন ফেরা না হয় তুমি ক্ষমা করো
আর আমার ফেরারি ডানার নামে ‘প্রিয় বলে’ একটি শেষ চিঠি লিখো

মা
মা, তোমার কদম মোবারকের চিহ্ন
বৃষ্টি এসে মাটির শরীর থেকে ধুয়ে নিচ্ছে অনবরত
ঘরের পুবপাশে রা-রা করে বেড়ে ওঠা গাছগুলো
বির্মষ মৃত্যু-পাথর। তোমার শোকে-
গলে পড়ছে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকে
নৈঃশব্দ্য, এই চিৎকারগুলো বুকের তুরঙ্গে ভাঁজ করে
আমি যতোবার হাঁটতে চেয়েছি
পারিনি, তোমার পরিচিত উঠোন- এই ঘর রাস্তায়
পা দিয়ে নয় মনে হয় আমার বুক দিয়ে হাঁটি
কারণ এখান দিয়ে তুমি হেঁটে গেছো!

Read Previous

শাহীদ লোটাসের গুচ্ছ কবিতা

Read Next

মোহাম্মদ হোসাইনের গুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *