অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চঞ্চল নাঈম -
চঞ্চল নাঈমের যুগল কবিতা

জলপত্র

পৃথিবীর শীতল হিম গোলার্ধ গ্রহ পথে ঢুকে পড়ে পিপীলিকাদের খাঁজ কাঁটা দেহ আর আঁকাবাঁকা ভনভন আওয়াজ; চোখের জ্বলন্ত আলো-ছোঁয়া নিয়ে যায় শস্যফুল, আলোর নিবিড় খাঁজকাঁটা, স্মৃতির উচ্ছল নিমজ্জন ফুলপরাগের ভাঁজে, উড়ন্ত হাওয়ার শরীরী মা-মেঘ আঁচলের পাশে নীলিমার বিরাগ জ্যামিতি, আকাশীর নিঝুম রুপালি, সমুদ্রের গহীন জোয়ারে শরীরের মূল মর্ম ভেঙে, দুই কূল ভেঙে মনে মনে বলে সহস্র ঝিনুক নিয়ে লুকালো কোথায় নিশান মেঘের হাঁস?
চারিদিক থেকে বাতাস উপুড় হয়ে নাক মুখ ঠোঁট আরো হন্যের রক্তের বুঁদ নিয়ে ফিরে গেলো আলোকবিহীন অন্ধকারে; এইসব দেখে এক পৌরাণিক পাখি হাসতে হাসতে দম আটকে ভীষণ হাপাচ্ছিল! আর নিঃশ্বাসের গহীনে জলজ শ্যাওলার সবুজ পাতারা লাফঝাঁপ দিতে দিতে মেশালো শরীর সব রঙ! দূরের অধিক দূরে জ্বলে জ্বলে কারা যেন মেঘ-পাপড়ি মাড়িয়ে বিশাল অন্ধকার দিক ধেয়ে আসলো তুমুল বেগে, মিটিমিটি জ্বলছে নিভছে আর মিচকি হাসছে! এর ভেতর একটি জোনাকদি আলো নিয়ে পালালো কোথায়?

জলজ উদ্ভিদের ছন্দে তুমিও, রক্ত ঘাসেদের দ্রাঘিমায় হাঁটু মুড়ে বসে, অনুভূত;

রাতের জলের শব্দে জেগে ওঠে যেন জ্যোৎস্নার আগুন উচ্ছ্বাস দেহের উনুন; আমিও নির্ঘুম চেয়ে তাই দেখি; চোখের ভাঁজের যে পথ মাড়িয়ে এলে, সবুজ জলজ আরো পিঠ পাশে বিছালে তা নীলের প্রহর; আলোহীন আঁধারের শব্দ, তুমিও হেঁটেছো ছুঁয়ে জল নিবিড় বিষাদ উল্লাস রাতের সমুদ্দুর বারবার দুলে খাবি খায়।

জলের ঢেউয়ের অগোচরে একটা দুইটা ছোট ছোট ঢেউ দেহ ছড়িয়ে শরীর ছিঁড়ে মিশে যায় জলে; আবার জলের ধাক্কায় স্রোতের মাছ ধেয়ে আসে সমুদ্র কিনারে; আমার চোখ তা দ্যাখে নৈঃশব্দ্যের বেশে লজ্জা হারিয়ে, যেমন- কুমারীর স্নান দেখে মুগ্ধ দুপুরের রোদ! জলকলমির দেহ থেকে মুখ পর্যন্ত স্যাঁতসেঁতে শ্যাওলার রঙ একবার ঢেউয়ে ডুব দেয়, একবার ভেসে ওঠে, বারবার ঢেউয়ে ডুব দেয়, বারবার ভেসে ওঠে! টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে যেতে ব্যতিব্যস্ত বিষাদের রক্ত; এমন ভাবতে ভাবতে বিষণ্ণ হয়ে, ঠোঁট দিয়ে চুলগুলো ছিঁড়ছে সমস্ত ঢেউ।

বাতাসের আলোড়ন দুলে দুলে ওঠে, লাল লাল পিঁপড়ে দল-বল ছেড়ে তীর ছেড়ে আর লাফঝাঁপ দিতে দিতে জলের অতলে! অন্য প্রান্তে ঢেউয়ে মাছেরা রোদের আঁশ কাঁটা পুরে নিচ্ছে শুধু তাদের জঠরে; এইসব ভাবতে ভাবতে তুমি চোরাবালি অন্ধকারে ডুবে গেলে; রক্তের চিমনি বৃত্ত হতে হতে বৃত্তান্তরে মেশে; বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ জলের শরীরে অবিরত আঁচড় কাটতে থাকে।

বিষণ্ন

প্রবল বাতাস শোঁ শোঁ শব্দ নিয়ে জল ভেসে আসছে। দেবদারু পাতা খসে জলের উপর ঘুরতে ঘুরতে নীরবে, নদীর পেটে ঢুকে পড়ে চুপ। সর্পীর অশ্রুতে নীরবতা অতিক্রম করে, কী বিষণ্ন অভিপ্রায়ে, অজান্তে জলের দিকে অদ্ভুত উন্মাদ চোখের দুশ্চিন্তায় আর কি যেন টেলিগ্রাম অসম্ভব অগ্নিরশ্মি। হঠাৎ জলের ভেতর চোখের অগ্নিবিন্দু মুখছবি দ্যাখে। জল ঢেউ খেলছে তার মুখও ঢেউয়ে দুলছে। জলের নির্লিপ্ত শীৎকারে ভেসে রাত্রিনিন্দুকের পরিহাস স্পষ্ট। জল ভিতর নিজের মুখ দেখে ভাবে, মুখে ছোপ ছোপ দীর্ঘশ্বাস যেন। জলজ সর্পের। সর্পের মুখ থেকে শুরু করে জীবনের সব স্মৃতি, অদ্ভুত রুপালি লিপি খুলে দেয় সুনির্মম মুহূর্তের বুদবুদ। নির্জন জীবনস্বপ্ন। তখন কতো কি! আর ওর নির্মল মুখই স্বচ্ছ নীলিমার অনুরাগ। তারপর একটু অন্য মনা হয়ে সর্পির্ণী জলের পাশে, শরীর দিয়ে জলের ভেতরের নিজ মুখ স্পর্শ করতে এগিয়ে। কিন্তু জলে মুখ দিলে মুখ কোথায় যেনবা দুলে দুলে মিলে যায়। মুখ জল থেকে উঠায় মুখটা ভেসে ওঠে! আবারও জলে মুখ দেয় মুখ জলে মিশে যায়। কখনো ধরা দেয় না। এরপর চুপ করে জলের কাছে অনুনয় বিনুনয় করে আর হঠাৎ সর্পের স্মৃতি মাথার ভিতর পিলপিল করে ধেয়ে আসে। সর্প না থাকলে হয়তো সেদিন সবুজাভ পাতা ঝরে যেত বাতাসেও। তারপর গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে লাল লাল পিঁপড়ের সৈন্যরা, কতো গোলাগুলি, বিপুল কাতর, ক্লান্ত। তখন সর্পের ডান পাশ, বুকের পাজরে বুলেট ছোঁ মারা শকুনের বেশে ছোঁ মারে। সর্পের রক্তে বুনো ঝোড় ভিজে, স্নান সেরে মুচকি হাসছে। সেদিন থেকেই সর্প আর…! শোনা যায়, বাতাসের কলরবে মিশে গ্যাছে কতোগুলো রঙিন পাতা অনুযোগে উল্কাপথে আর কিছুই না। এরপর থেকে সর্পী জলের মুহূর্ত শুষে। আজ এতো বিস্মরণের পর জল দেখে সর্পের কথা মনে পড়ে।
–তারপর স্মৃতিহীন। নিথর নৈঃশব্দ্য।
সর্পী বিড়বিড় করে।

Read Previous

আলী ইব্রাহিমের যুগল কবিতা

Read Next

কামরুন নাহারের যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *