
যাত্রিক
সমস্ত কোলাহল থেমে গেলে আমি
পৃথিবীর অভ্যন্তরে ডুবে যেতে থাকলাম
আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল
তবু আমার পতন বন্ধ হলো না
চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই কী অবিশ্বাস্য
আমি সব দেখছিলাম
আমার পূর্বপুরুষের হাড়-গোর,
কংকাল কবর
প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধব কৃতজ্ঞ-অকৃতজ্ঞ সব
যারা একদা বাঁকা চোখে তাকাতো
আজ সেই দৃষ্টিতে কী নিদারুণ আকুতি
আমি বিচলিত হলাম না মোটেই
মোটের উপর সেই বোধ আমার ছিল না
এক অমোঘ আকর্ষণে আমি আরো-
আরো গভীরে সেঁধিয়ে গেলাম
নরম কাদামাটির স্তর থেকে মসৃণ বালি
মসৃণ বালি থেকে এবড়োথেবড়ো পাথরের স্তর
অতঃপর হাজার বছরের সঞ্চিত সিঞ্চিত সুপেয় পানি
আমি অবগাহন করলাম
পবিত্র হলাম এবং
আমার অলঙ্ঘনীয় যাত্রা অব্যাহত থাকলো…
প্রদর্শনীর ডাকসাইটে চিত্রের মতন
বহু বছরের গন্ধমাখা ইতিহাসের
অলিগলি আর দুর্বোধ্য শিলালিপির আঁকিবুঁকি
হিমশীতল বরফযুগের অনন্ত ঘুমের কাব্য
প্রাগৈতিহাসিক প্রস্তর যুগের
আড়মোড়ার গল্প
সেইসব পেশীবহুল শিলালিপিতে জেগে উঠেছিল
মধ্যযুগের কান্নার সুর অনুরণিত হলো
আধুনিকতার জঞ্জালের স্তুপে
সেইসব শিলালেখর পাঠোদ্ধার না করেই আমাকে
আরো গভীরে টেনে নিয়ে গেলো অচেনা পথ…
একসময় আমাকে গলিত-ফুটন্ত
উদগীরোন্মুখ এবং উদগ্রীব
বহুবিধ ধাতুর স্তরে মিশে যেতে হলো
সেখানে বাদামি, তামাটে কিংবা
লালচে আলোর ঝলকানি
আতশবাজির মতো ছুটে যাওয়া স্ফুলিঙ্গ
এসবের মোহ ছুড়ে ছুটে চললাম
নতজানু আমি
আমাকে যেতে হবে আরো আরো পথ
বৃত্তের কেন্দ্রে
একের সমীপে
ঘুমের চেয়ে আরো গভীরতর মাধুর্যে
মৃত্যুর চেয়েও গভীরতম ঘুমে…
প্রেমবিফিং
শেহ্জাদী,
তোমার এই নিয়ন্ত্রিত প্রেমব্রিফিং
ভালো লাগে,
অবাধ মেলামেশার নিষিদ্ধ এই সময়ে
পাঁচজন প্রেমের ফাঁদে আক্রান্ত
দুইজন ফাঁদ থেকে নিষ্ক্রান্ত
সত্যি বলছি বেশ লাগে,
ভালো লাগে এই আবদ্ধতা
দশ ফুট বাই এগারো ফুট, নির্বুদ্ধিতা
নির্বোধ বলেই
সুবোধের মতো ভালো লাগে বিশ্বাস করতে
প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস,
আশ্বাসের সাথে মিথ্যার ঝুড়ি নিয়ে
সেই কুড়ি থেকে
এই যে বসবাস,
মিথ্যার বিষে দুষিত যে বাতাস
সেই বাতাস বুকে টেনে নিয়ে
বেঁচে থাকা
ভালো লাগে শেহ্জাদী, খুব ভালো লাগে।
জীবনের এই অবেলা
অনালোকিত দিনে
প্রেম প্রেম খেলা,
বয়সের ভাঁজে
নিজের মাঝে
কভু কি সাজে?
দোকানে দোকানে তাই বিশুদ্ধিকরণ খুঁজি
দোকানিরাও হয়ে গেছে আজকাল ভালোবাসার কারবারি,
সেখানে ভালোবাসার অনেক দাম
শেহজাদী বলো, কে নেবে মৃত্যময় এনাম?
চড়া মূল্যে কেনা বিশুদ্ধতা কজন পায়!
দূরারোগ্য অসময়ে তোমার নিয়ন্ত্রিত প্রেমবিফিং তাই
এই অবোধের অলীক বেঁচে থাকার আশ্রয়।