স্নানান্তর
স্নান সমাপ্ত হলে পবিত্রতার দায় ফুরিয়ে যায়–এটা কিন্তু শেষকথা নয়! সারাদিন দৃষ্টিপাত… ভিজে ভিজে যে দৃষ্টি¯স্নান কিংবা ধূ-ধূ প্রান্তর যে উন্মুক্ত হাওয়ায় ভিজে একশা। রাতভর জোছনায় ভেসে ভেসে যে অধিরাত্রিক স্নান তা কি চূড়ান্তভাবে শুদ্ধ নয়? কামারশালার হাপরে যে লোহার অগ্নি স্নান–তাতে সে তো আরো বহুমাত্রিক মানে খাঁটি হয়, ঠিক যতটা বৃষ্টিতে মাটির শুদ্ধতা আনে।
অপরাধের পরে যে প্রজ্বলিত অনুতাপে ভিজে যাওয়া… সেই স্নানে কি পাপ ধুয়ে যায় না? নদীর ঘাটে বসে মা চূড়ান্ত দৃষ্টিসীমানা পর্যন্ত যে চোখের জল ফেলে তার বিশুদ্ধ-মূল্য কতটা? কারো কারো চোখের জল তো গঙ্গাজলেরও অধিক পবিত্রতর। সে জলে স্নান হলে… এখন ভোর–শান্ত শুদ্ধতার বেলা। যে ভোরের উদ্বেগের কাছে পাখির কোলাহল সমর্পিত। অধিকন্তু সমর্পণ জানে তোমার সমস্ত স্নানের দায় কাঁধে নেওয়ার অন্তর্গত মানে।
পত্রপাঠ
কুশলপত্র লেখার কথা ছিল– নিরক্ষর, শব্দহীন এবং সঙ্গতই বাক্যহীন পত্রলিপি! সেই নৈঃশব্দ্যমুখর পত্রে উক্ত থাকবে কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো হিমশীতল একটা হাহাকারমাখা চিকচিকে দীর্ঘশ শ্বাস!
পাতাজুড়ে লেখা থাকবে বেলী ফুলের সুগন্ধ যেন যে প্রেমান্ধ সে-ও পড়ে নিতে পারে ঘ্রাণমূলক বর্ণমালায়। সেই কাঁচা হাতের পত্রে লেখা থাকবে সেই সব জীবন্ত স্বপ্নের পত্রমর্ম উপাখ্যান যেগুলো সত্যি হয়নি, বরং লতায়-পাতায় ঝরে গেছে অকাল পতনে। লেখা থাকবে বৈশাখ, লেখা থাকবে দুরুদুরু ভ্রমণ আর শ্রাবণের বৃষ্টি! লেখা থাকবে সৃষ্টি করতে করতে অনাকাঙ্ক্ষিত ধ্বংসের ভাগ্যলিপি!
লেখা থাকবে বেদনা কবলিত অশ্রু আর ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ! আদিম সভ্যতার কাছে হারমানা আর্তনাদ। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় যে অব্যক্ত পংক্তিমালা কেটে খান খান হবে কিন্তু হবে না রক্তপাত, কারণ তা শুকিয়ে বহুকাল আগে রক্তশূন্য!
ঠিকানা হারানোর উন্নয়নমূলক অপরাধে এইপত্র আর পোস্ট করা হবে না কোনোদিন। পরে দেখা যাবে কেউ আর পত্র লেখে না এবং পত্রকূলের ডাকবাক্সের কথা কেউ জানে না। বড়জোর মুঠোফোনে আবেগহীন একখণ্ড মেসেজ ইথারে…।
এখন শীতের হু-হু হাওয়ায় পাতা ঝরার দিন, ডাকহরকরার অন্তর্গত পত্রহৃদয় ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়!