অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
জুন ২১, ২০২৫
৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুন ২১, ২০২৫
৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোমেল রহমান -
উন্মাদ কিংবা ভবঘুরে কূটালাপ

একজন উন্মাদ কিংবা ভবঘুরে লোক যাকে ধরে আনা হয়েছে একটা বিশেষ মামলার দোষী হিসেবে, যিনি আগুন দিয়ে আমাদের ঘর-সংসার, জানালা-দরজা, মানুষ, পশুপাখি ছাই করে দেন এবং আমাদের বৈষম্যময় সমাজের গুপ্ত বা অন্তরঙ্গ কিংবা ধর্মান্ধ বিভাজনকে উন্মোচন করে দেন, যদিও তিনি ভাড়ায় খাটেন তার সঙ্গে গারদের মধ্যে (আপাত) আটক অবস্থায় দেখা হলে রাতের আলাপে এইসব কথাবার্তা হয়-
– আগুন দিতে আপনার কেমন লাগে?
– ভাল্লাগে!
– কেমন ভালো?
– খুউব!
– আগুন কেন দেন?
– পয়সা পাই দিলে! আগুন না দিলে খাবো কি?
– আগুন না দিলে ভাত জোটে না?
– নাহ!
– রোজ আগুন দেন?
– সেইটা বলা নিষেধ আছে!
– কার নিষেধ?
– ওস্তাদের!
– আপনার ওস্তাদও আছে?
– নাই এখন, ছিল আগে!
– নাই কেন?
– আগুনে পোড়ায় মাইরা ফেলছে!
– কারা?
– শিষ্যরা!
– আপনেও তো তারই শিষ্য!
– তাতে কি?
– আপনিও ছিলেন ওস্তাদরে আগুন দেওয়ার খেলায়?
– বলা যাবে না, নিষেধ আছে।
– কার নিষেধ!
– জানি না!
– আগুন দিলে যেই মানুষের ঘর-সংসার পুইড়া ছারখার হয়ে যায়, তাগর জন্য খারাপ লাগে না?
– উঁহু! আমার কর্ম আমি করি! যার যেইটা কর্ম!
– আপনার ঘরে যদি আগুন দেয়া হয়, তাইলে কেমন লাগবে?
– আমার তো ঘর-সংসার নাই! ভবঘুইর‍্যা!
– ধরেন যদি ঘর-সংসার থাকতো আর তাতে কেউ আগুন দিতো, তাইলে কেমন লাগতো?
– ধরবো ক্যান? নাই যা তা ধরবো ক্যা?
– ধরেন মনে মনে, দোষ নাই ধরলে!
– আমি ধরবো না!
– আচ্ছা! আপনার ভাই’র ঘরে যদি আগুন দেয়া হয়, তাইলে কেমন লাগবে!
– সেইটা তারে জিগান!
– আপনি কি করবেন তখন?
– আলু পোড়া দিয়া খাবো!
– ক্যান?
– একা আমি নিভাবু কেম্নে? তার থিকা কয়ডা আলু পোড়ায় খাওয়া উত্তম!
– আলু পাবেন কই?
– ধার করবো!
– কার থিকা?
– প্রতিবেশী থিকা!
– আপনে না বললেন আপনার ঘর নাই, তাইলে প্রতিবেশী হয় কেম্নে?
– আমার ভাইয়ের প্রতিবেশীর কাছ থিকা ধার করবো!
– কিন্তু তারা ক্যান দিবে?
– আলু পোড়ার ভাগ সবাই খায়!
– আচ্ছা আপনার শরীরে যদি আগুন দেয়া হয়, তাইলে আপনার কেমন লাগবে?
– যে দিবে তারে জাপ্টায় ধরবো!
– উঁহু! লাগবে কেমন?
– যন্ত্রণা লাগবে!
– তাতে কি, আপনার তো কোনো পিছু টান নাই, মরলে কার কি? তার থিকা আপনার গায়ে আগুন দিলে সেই আগুনে কয়েকটা আলু পোড়া দিয়া দুনিয়ার জন্য রাইখা গেলেন? ক্ষুধার্ত মানুষ খাইল!
– আপনে মানুষ সুবিধার না!
– আপনেও না!
– আপনার মনে মায়া-দয়া নাই।
– আপনার আছে? আগুন দিয়া বেড়ান খারাপ লাগে না?
– লাগে!
– কিসের জন্যে মায়া লাগে?
– বাড়ির পুলাপান আর বউ-ঝি গুলানের জইন্ন্যে!
– খুইলা কন শুনি! নেন বিড়ি নেন! টানেন!
– শুইনা করবেন কি? খবর বানায়া পয়সা কামাইবেন?
– তাতে আপনার কি? আপনের মায়া লাগে কেন সেইটা বলেন!
– মায়া লাগে কারণ, আগুন পুইড়া সব কয়লা হয়া যায়! পুলাপানের খেলনা, বউ-ঝি গোর হাঁড়ি-পাতিল, শাড়ি-চুড়ি, আলনা! এই গুলানের জইন্ন্যে মায়া লাগে!
– কেন লাগে? এই গুলান তো জান বাঁচলে আবার কেনা যায়!
– কিনলেও হয় না, ঠিকঠাক! ব্যথায় নিদান নাই গো! যেই মায়া দিয়া হাঁড়ি-পাতিল, আলনা-খেলনা জোগাড় করে মা বইনেরা সেইটা আর শোধ হয় না!
– তাইলে আপনে আগুন দেন ক্যান?
– না দিলে খাবো কি?
– অন্য কাজ কইরা খাবেন?
– ওইটাই আমার কাজ!
– তাইলে মায়া করেন ক্যান?
– মায়া লাগে তাই মায়া করি!
– উল্টাপাল্টা বইলা কি লাভ আছে?
– দুনিয়াডাই উল্টাপাল্টা!
– কেম্নে?
– আগুন না দিলে আমারে ধইরা নিয়া পোন্দায়!
– কারা?
– আছে, নাম বলা যাবে না, যারা আগুন নিয়া খেলে তারা!
– কারা?
– ধুর বাড়া বললাম না, নিষেধ আছে নাম বলা!
– তাইলে ড্রেসের কালার কন, দেখতে কেমন তাই কন?
– আমি পাগল এইটা সবাই জানে, কেউ বিশ্বাস করবে না আমার জবান!
– আপনে না ভবঘুইরা?
– যখন যেইটা কয় সেইটাই আমি!
– কারা ঠিক কইরা দেয় আপনার পরিচয়?
– যারা খেলে তারা!
– কি খেলা?
– ক্ষমতার খেলা! রাজা-রানি খেলা!
– ও!
– আপনের রাজা-রানি হইতে মন চায় না?
– উঁহু!
– ক্যান?
– অনেক ঝামেলা! সারাদিন মিথ্যা কথাবার্তা বইলা সব সত্য বানানো লাগে!
– এই জন্য রাজা হইতে চান না?
– আরও কারণ আছে!
– কি?
– বলা যাবে না!
– ক্যান?
– ওস্তাদের নিষেধ আছে!
– ওস্তাদ রে তো পোড়ায় মারছেন!
– যে যেই বিদ্যা বানায় সে সেই বিদ্যায় মরে!
– বাহ! কথাটা তো ভালো!
– আমার না ওস্তাদের কথা!
– তার মানে ওস্তাদ জানতো সেও পুইড়া মরবে?
– হুম, জানতো কিন্তু বিশ্বাস করত না! টের পায় নাই কে আগুন দিবে!
– কে দিছিল?
– আপনে হেভি সেয়ানা লোক! আমারে নিয়া প্যাঁচ খেলতেছেন? টাইম ভালো হইলে পোড়ায় দিবো আপনারে!
– হা হা! টাইম তো খারাপ এখন!
– হ। মনে হইতেছে আমারেও পোড়ায় মাইরা ফেলবে, তারপর বলবে, পাগল নিজে নিজেরে কেরোসিন দিয়া জ্বালায় দিছে! মামলা ডিসমিস!!
– হ্যাঁ, ঠিক তাই!
– তাইলে আপনেও খেলার সাথে আছেন?
– হ্যাঁ।
– তাইলে আপনেও একদিন এম্নে মরবেন!

Print Friendly, PDF & Email
রোমেল রহমান

Read Previous

তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা

Read Next

পথ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *