বাঁশের একটা সরু কঞ্চি পেয়েছে রাস্তায়। সেটা দিয়ে পথের পাশের ঝোপে সপাং সপাং বাড়ি মারতে মারতে হাঁটছিল কাজল। কঞ্চির আঘাতে ঝোপের মাথা ছিটকে পড়ছে। আশশেওড়া আর আকন্দের ঝোপ। নিজের মনেই জন্মায়। বর্ষায় বাড়ে খানিক। বর্ষা শেষে গাছিরা কেটে পাট করে ফেলে রাখে শুকাতে। শুকনো ঝোপ একদিন ঠেলে দেয় রসের চুলোয়। গোড়া থেকে আবার ডালপালা গজিয়ে নেয় প্রায় মৃত গাছ। একেবারে গোড়া উপড়ে না তুলতে মরে না সহজে।
কাজল একমনে কঞ্চির বাড়ি দিয়েই যাচ্ছিল। তার মাথা নত। কী যেন ভাবছে।
—অই হারামজাদা, ও কচ্ছিস ক্যান? উরা তোর গায় কামড়াচ্ছে? উগের কষ্ট হচ্ছে না, অতো জোরে বাড়ি মারছিস!
খনখনে গলায় মাহিরন দাদির চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল কাজল। তাকেই যে বকা হচ্ছে তা বুঝতে সময় লাগল। বুড়ি তার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করল, কী কচছো, দাদি?
—ওই দ্যাকো, আমি কই কী আমার সারেঙ্গী বাজায় কী? কচ্ছি তোর মাতামুণ্ডু। গাছগুনোয় বাড়ি দিছছিস ক্যানে? উগোর ব্যতা লাগে না? দেব তোরে একখান, কেমন লাগে দ্যাখ!
কাজল অবাক। বুড়ি এত রাগ করছে ক্যান? এই ঝোপ তো কয়দিন পরে বজুল গাছি কেটে পাটিয়ে দেবে, তখন?
বুড়ি মাহিরন এগিয়ে এসে গলার স্বর মোলায়েম করে বলল, নিকাজে গাছে বাড়ি দিতি নেইরে ভাই। ওগোরও জান আছে, কষ্ট পায়। চ, আমার সাথে, দুটো জিলিপি রাখিছি তোর জন্যি।
এই নরম নরম কথায় কাজল ভাবলা মেরে চুপ করে থাকে। যখন তখন বকাবকি করলেও বুড়ি তাকে এটা সেটা খেতেও দেয় ডেকে খুঁজে।
কাজল মাহিরন দাদির পিছনে হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে মুত চাপে, প্যান্ট নামিয়ে রাস্তার ধারে মোতে সে। হাতে লাগা মুত প্যান্টে মুছে নেয়।
মাহিরন বাড়ি পৌঁছে পিড়েয় বিছানো পাটিতে বসে পড়ে কাজলকে ডাকে, আয় বয় এখেনে।
কাজল বসে খানিক দূরে। মাহিরন দাদি রে রে করে ওঠে, ওখেনে বসলি, কাপড়ে মাটি লাইগলো না? তোর মার কাপুড় কাচার সুমায় আছে?
কাজল সে কথার ধারে যায় না, বলে, জিলিপি দিবা তো দেও।
মাহিরন দাদি এক বদনা পানি এনে ওর হাত দুটো আর মুখটা ধুইয়ে দেয়। তারপর হাতে আস্ত দুটো জিলিপি দেয়। বলে, ঝপ কইরে খেয়ে নে। আবাগীর বেটি দেখলি আমার মাতার চুল ছেড়বেনে।
কাজলের খিদে লেগেছে অনেকক্ষণ আগেই, মাহিরন দাদির ছেলের বউ আসার আগেই জিলিপি চালান করে দেয় পেটে। মাহিরন দাদি দাঁত ছাড়া মাড়ি বের করে হাসে, বলে— যা, বাড়ি যা। তোর দাদির গায় জ্বর দেখে আলাম। বাড়িতি থাইকগে। দাদির পানি-টানি লাগলি দিস।
বাড়ি ফিরে কাজল দেখে দাদি জ্বরের ঘোরে গুঙাচ্ছে। কাজলকে দেখে ডাক দিয়ে বলে— ও দাদা, আমার মাথাডা ফেইটে যাচ্ছে, এক বদনা পানি দি ধুয়ে দেদিনি।
বদনা নিয়ে সে পাশে বাড়ির রিতুদের কলে যায়। রিতুর মা কলপাড়ে কাপড় কাচছিল। জিজ্ঞেস করল, ছ্যান করবি?
—না, দাদির মাতায় পানি দেবো। জ্বর এয়েছে।
—তার আবার কখন জ্বর অ্যালো? দে, বদনা দে।
রিতুর মা তার হাত থেকে বদনা নিলে কাজল সরে গেল। গোলার নিচে ছাগলের বাচ্চা নিয়ে খেলছে রিতু। কালই হয়েছে বাচ্চা তিনটে। রিতু একটা বাচচা কোলে নিয়ে বসে আছে। অন্য বাচ্চা দুটো তিড়িং তিড়িং করে লাফাচ্ছে আবার শুয়ে থাকা মা ছাগলের দুধ খাচ্ছে একটু পর পর। কাজলের একটা বাচ্চা কোলে নিতে ইচ্ছে করছিল, সে হাত বাড়াতেই রিতু তার হাতে জোরে বাড়ি দিল— এই ধরবি না আমার ছাগল।
—ধরলি কী হয়?
—কী হয়? রিতু মুখ ভেংচায়। —ম্যালা কষ্ট করে ছাগল পুষতি হয়। পুষে দ্যাখগে একবার।
—মারে কবোনে। এখন এটটু নিই।
রিতু কঠিন। বলল, এবার কলাম হাত ভেঙে দেবোনে। যা এখেন থে।
কাজল দু’পা পিছিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছাগল ছানার তিড়িংবিড়িং নাচ দেখতে থাকে।
—ও রিতু, ছাগুনো অত ঘাটিস নে, মরে যাবেনে। ইবার আয় ছ্যানডা করে নে দিনি। রিতুর মা ফিরে এসে কলপাড় থেকে ডাকে তাকে।
রিতু উত্তর দেয়, না, আরেটটু খেইলবো।
রিতুর মা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, আমার ম্যালা কাজ পইড়ে রয়েছে। তাড়াতাড়ি আয় কলাম।
রিতু গোলার তলা থেকে বের হলে রিতুর মা কাজলকেও ডাক দেয়, তুইও আয়, কাজল।
রিতুর গোসল শেষে কাজলকেও গোসল করিয়ে দেয় রিতুর মা। সাবান দিয়ে কাজলের গা ডলতে ডলতে বলে, গায় যে ছ্যাতলা পইড়ে গিয়েছে রে বাপ।
রিতু শুকনো জামা পরে এসে কাজলকে গোসল করানো দেখছিল। ও রেগে গিয়ে বলল, ওর গায় অতো করে সাবান ডলছো আমি কিন্তু আব্বুকে কয়ে দিবানে।
রিতুর মা মেয়েকে এক নজর দেখে কাজলের মাথায় পানি ঢেলে দিতে দিতে বলল, তুই ওরাম হিসকুটে মেয়ে ক্যানে রে? ওর মা তোরে কত আদর করে।
রিতু বলে, আগে কইরত, এখন আদর করে না। তুমিও ওরে আদর করবা না। আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে মা।
রিতুর মা কাজলকে একটা গামছা পরিয়ে প্যান্ট খুলে নিয়ে বলে, যা ঘরে যেয়ে প্যান্ট পইরে গামছাডা দিয়ে যা। ধুয়ে আমিও ছ্যান করে নিই।
কাজল গামছা ফিরিয়ে দিতে এসে দেখে রিতু নেই সেখানে। গোলার কাছে দাঁড়িয়ে ছাগল দেখছে। কাজল আস্তে আস্তে বলল, মাইজ মা, দাদি এটটু তরকারি দিতি কলো।
—তুই যা। আমি দিয়ে আসপানে।
একটু পরে রিতুর মা আঁচলের তলে তরকারির বাটি নিয়ে কাজলদের ঘরে দিয়ে বলল, রিতুরে কিছু কইসে না বাপ। দাদিরে নিয়ে খেয়ে নে।
কাজলের দাদি তখনো চোখ বুজে শুয়ে। কাজল তার গায়ে হাত দিয়ে ডাকল— দাদি ওঠো, মাইজ মা মাছের তরকারি দিয়েছে।
দাদি কাতরাতে কাতরাতে উঠে বসে। বলে, রুটির বাটি আর থাল-টালা নিয়ে আয়। আমি দাঁড়াতি পারছিনে।
কাজল অপটু হাতে থালা, রুটির বাটি, পানির জগ, গ্লাস, তরকারির বাটি রাখে মাদুরের উপর। তারপর দাদির হাত ধরে নিয়ে আসে। রিতুর মায়ের দেওয়া মাছের টুকরোটা ভাগ করে দাদি। বেগুন আলুও। রুটি ছিঁড়ে দেয় কাজলের পাতে। অনেকদিন পর মাছের তরকারি দিয়ে তারা রুটি খাচ্ছে। জ্বরের মুখেও দাদির ভালো লাগে। রোজ দুবেলা গুড় দিয়ে রুটি খেয়ে খেয়ে মুখে চড়া পড়ে গিয়েছে যেন!
কাজল খেতে খেতে বলে, দাদি, আগে রোজ গেলি মাইজ মা তুমারে তরকারি দিয়ে যাতো।
দাদি মাছের কাঁটা ছাড়াতে বলে, হ্যাঁরে ভাই দিতো। তখন আমরাও দিইছি ওগের। এখন দিতি পারিনে। একতরপা আর কত দেবে বউডা?
—দাদি, আব্বা কবে আসপে?
দাদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, খাওয়ার সুমায় অতো কতা কতি নেই।
—দাদি আব্বা কি মইরে গিয়েছ?
দাদি বিরক্ত হয়ে চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। থালায় পানি ঢেলে হাত ধুয়েও বসে থাকে সেভাবেই।
কাজলের মনটা খারাপ হয়। ভয় হয় দাদি আবার কাঁদতে শুরু করবে নাকি? সেই একদিন সৌদি থেকে মুবাইলে ফোন আসলো। ফোনের কথা শুনে দাদি আর মা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। মেজমা, আবু চাচা দৌড়ে আসলো। দাদি কাঁদতে কাঁদতে তাদের বলল, ওরে আমার আসাদের করুনা হইছে রে। আল্লা আমার এ কি সর্বনাশ হলো। মাবুদ তুমি এ কি কইরলে? বিদেশে আমার ছেলেডা একা একা কী করছে রে আল্লা আল্লা।
কয়দিন পর আবারও মোবাইল ফোনে খবর আসে কাজলের আব্বা আসাদ আলী করোনায় মারা গেছে। খবর শুনে কাজলের দাদির দাঁত কপাটি লাগে। তার মা বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। অনেক মানুষ এসে বাড়ি ভরে ফেলে, দাদি সবাইকে বলছিল, আমার ছেলেডারে তুমরা নিয়ো আনো। আমার সুনারে তুমরা আমার বুকে আইনে দাও।
কয়েকদিন পরে কাজল মাকে জিগেস করিছিল, আব্বা কবে আসপে?
মা কিছু বলেনি। কাজল দাদিকে জিজ্ঞেস করেছিল। দাদিও কিছু বলেনি। কিন্তু রিতু তাকে বলেছে— তোর আব্বার করুনা হইছিল, হয়ে সেই সৌদিতি মইরে পইড়ে ছিল। এখন তো পেলেন ওড়ে না তাই ওখেনেই মাটি দিয়ে দিয়েছে। তোর আব্বা আর কোনোদিন আসপে না।
কাজল রিতুর কথা বিশ্বাস করে না। প্লেন চলে না তাই আব্বা আসতে পারছে না। আসার সময় কাজলের জন্যে অনেক কিছু আনবে। এবার কাজল রিতুকে কিছুই দিতে দেবে না।
দাদি উঠে খাটে বসে তাকে ডাকে— আয়, শুয়ে থাক।
কাজলের শুতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে মায়ের কাছে যেতে। কিন্তু মণ্ডলবাড়ি তার যাওয়া বারণ। মা বারবার বলে দিয়েছে। একদিন গিয়েছিল, মণ্ডলের নাতি কাশেম ক্রিকেট খেলায় গণ্ডগোল করে মাথায় ব্যাট দিয়ে মেরেছিল। হাত ফসকে গিয়েছিল বলে জোরে বাড়ি লাগেনি। কপালের কাছে ফুলে ঢোল হয়ে ছিল কয়দিন।
দাদি চোখ বন্ধ করলে সে পা টিপে টিপে বের হয়। রিতু এখনো গোলার নিচে। তার কোলে এখন বড় একটা পুতুল। কাজলের আব্বাই সৌদি আরব থেকে পুতুলটা এনে দিয়েছিল রিতুকে। পুতুলটা একটু ছুঁতে ইচ্ছে করে, কাজল ভয়ে ভয়ে রিতুর কাছে বসে। রিতু এখন কিছু বলে না। বরং সরে পাটিতে বসার জায়গা দেয়।
খেলা শেষ করে কাজল বাড়িতে ফিরে দেখে দাদি বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে। সে কাছে গিয়ে গায়ে হাত দেয়। গা ঠাণ্ডা। দাদি তাকে আঁচল খুলে টাকা দিয়ে বলে, দুকান থে চানাচুর কিনে আন, দুজনে খাই।
চানাচুর খেতে খেতে কাজল বলে, ও দাদি, মার জন্যি একটু থুই?
দাদি ধমকে ওঠে, থুতি হবে না। তোর মা মণ্ডলবাড়ি কত কী খায় তা জানিস?
কাজলের মা কিছুদিন হয় সকালে তাদের খাইয়ে-দাইয়ে যায় মণ্ডলবাড়িতে। সারাদিন সেখানেই থাকে। রিতু কাজলকে বলেছে— তোর মা তো মণ্ডলবাড়ি চাইকরানি করে।
চাইকরানি করা কী জিনিস কাজল বোঝেনি।
রিতু, যে তার থেকে মাত্রই এক বছরের বড়, সে বুঝিয়ে দিয়েছে— বড় মণ্ডলের বুড়ি মার খুব অসুখ, উঠে বসতি পারে না। বিছানায় খায়, বিছানায় হাগা-মুতা করে। তোর মা সেই হাগা-মুতা ছাফ করে। বুড়িরে খাওয়ায়। গা মুইছে দ্যায়। বুড়ির গু লাগা কাপুড় ধোয়। তার জন্যিই মণ্ডল রোজ অতোডি কইরে ভাত দেয় তোগের। আর মাস গেলি মাইনেও দেবে তোর মারে।
দাদির কাছে কথাটা যাচাই করতে চেয়েছিল কাজল। দাদি বলেছে, রিতুটা খুব পেকেছে। তুই ওর কথায় কান দিসনে।
কাজল তবু জিজ্ঞেস করে, মা, তালি রোজ ওবাড়ি সারাদিন থাকে ক্যানে?
দাদি ঝাঁঝিয়ে উঠেছে, তোর মারে ভাত দেবে কিডা? আমার ছেইলে তো আর নেই যে মাসে মাসে টাকা পাঠাবে আর তোর মা ঠ্যাংয়ের পর ঠ্যাং তুলে বইসে খাবে?
কাজল বলে, তুমার তো টাকা রয়েছে।
দাদি তেড়ে ওঠে, ও আল্লা তুই কি কইরে জানলি আমার টাকা আছে? তোর মা বুঝি তোর কাছেও গাওনা গেয়েছে? ছেলে আমার কয়ডা টাকা দিয়েছে? কয়দিন চলবে আমার? আমি কি আইজই মরে যাচ্ছি? মইরে গেলি তো তুরাই মা-বেটা মিলে খাবি। আমার আর কিডা আছে সাতকুলি?
কাজলের দাদি সুর টেনে টেনে বলে আর কাঁদে। দাদির কান্না দেখতে দেখতে কাজলেরও কান্না পায়।
তারপর থেকে সে আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করে না।
চানাচুর খেয়ে দাদি উঠোনে হাঁটে। কাজল বসে থাকে মায়ের জন্যে। সন্ধে হয়ে আসছে, একটু পরে মা বাড়ি আসবে। মা বাড়ি এলে কাজলের ভালো লাগে।
কাজলের মা শিউলি যখন বাড়ি পৌঁছে তখন মাগরিবের আজান শুনে অজু সেরে মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে ঢুকে গেছে। তবু মাথার ঘোমটা লম্বা করে টেনে সে কোনোমতে মসজিদের সামনেটুকু পার হয়। মনে মনে দোয়া পড়ে আল্লা যেন কোনো মুসল্লির সাথে দেখা না হয়ে যায়। শিউলি আর একটু আগে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে। কিন্তু মণ্ডল চাচির ‘আগুনির মালশাডা চোকির তলে দে, উঠোন থে কাঠগুনো তুইলে হেসেলে দিয়ে যা’ ধরনের হুকুম আর শেষই হয় না। তাই রোজই সন্ধে ঘোর হওয়ার পরই সে বাড়ি ঢোকে।
শিউলি সদর দরজা পার হতেই কাজল ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে। শিউলি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, বলে, ছুইসে নে, ভাতের পুটলাডা ধর, আমি ছ্যান কইরে সাফ হই আগে।
মায়ের আনা ভাতের ভারি পোটলাটা কোনোমতে ঘরে রাখে কাজল। মার কাছে যাওয়ার এখনও অনেক দেরি। এখন মা সদর দরজায় তালা দেবে। তারপর ছ্যান করবে। মাথা ঘষে ঘষে চুল মোছবে। উঠোনের কাপুড় তোলবে। কলসি ভইরে খাওয়ার পানি আর বালতি ভরে হাত ধুয়ার পানি ঘরে নেবে। তারপর কাজলকে কোলের কাছে নেবে।
শিউলি সদর দরজায় তালা দিয়ে শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে, সইনধেবেলা উঠোনে হাটছেন ক্যান? নিয়ের পড়া শুরু হয়েছে। ঘরে যান।
কাজল বলে ওঠে, ওমা দাদির তো জ্বর হইল সারাদিন। মাইজ চাচি মাতায় পানি দিয়ে দিয়েছে।
শিউলি শাশুড়ির গায়ের তাপ পরীক্ষা করে বলে, না, জ্বর নেই। চলেন, ঘরে চলেন। আমি ছ্যানডা করে চা বানায় দেবোনে, খালি ভালো লাগবেনে।
কাজল পিঁড়ের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে মায়ের গোসল করা দেখে। মা যখন শুকনো কাপড় পরে চুলে গামছা জড়িয়ে নেয় তখন ওর খুব ভালো লাগে। তার মনে পড়ে, আগে মা দুফারে গোসল কইরত। তারপর ভাত খাতি দিতো। গরম ভাত।
শিউলি গোসল সেরে চা বানায়।
কাজল বলে— মা, আমিও চা খাব।
শিউলি তিন কাপ চা-ই বানায়। দুধ নেই তবে চিনি দিয়েছে বেশি করে। সাথে একবাটি মুড়ি। চা খেতে খেতে মা আর দাদি গল্প করে। কাজল চা খায় আর মায়ের মুখ দেখে। আগে সন্ধেবেলা বারান্দায় পাটিতে বসে মা আর দাদি হাসতে হাসতে গল্প করত। কোনোদিন চা খেত। কোনোদিন পিঠে। কোনোদিন চানাচুর। কোনোদিন মুড়িমাখা। কাজল পড়তে বসত পাশে। তখন মা রান্নাঘরে ভাত রান্না করত। কাজলের পড়া শেষ হলে গরম গরম ভাত খেত তারা।
মা আর দাদির গল্প কানে ঢোকে না কাজলের। সে ভাবছিল— কবে স্কুল খুলবে?
কবে সে বড় হবে? কবে টাকা আয় করে মাকে দেবে?
মা আবার রোজ বারান্দায় গল্প করতে বসবে।
One Comment
[…] মিলা মাহফুজা – অপেক্ষা […]