অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ১৯, ২০২৪
৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ১৯, ২০২৪
৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাহানারা নুরী -
চাঁদা

যেসব শ্রমিক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নানান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন, তাদেরই একটি দল একটা ভারী মালের কন্টেইনার ট্রাকে তুলতে যাচ্ছে এমন একটি সময়ে এ নাটকটির প্রথম দৃশ্য শুরু।
আসুন আমরা বরং দেখি আমাদের শ্রমিক বন্ধুরা একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ নিয়েছে। একটা ভারী জিনিস ঠেলতে ঠেলতে তারা তাদের ফ্যাক্টরি থেকে বেরিয়ে এসেছে পথের উপর, যা একইসাথে আমাদের এই নাটকের অভিনয়স্থলও বটে।

শ্রমিকেরা :

হে-এ-এ-এই মারো টান/ হেইয়ো-
তাসের দেশে/ হেইয়ো
যায় আর আসে/ হেইয়ো
রাজা রানি/ হেইয়ো
মুখে বুলি/ হেইয়ো
হাতে রুলি/ হেইয়ো
ঘোমটাখানি/ হেইয়ো
রুলের গুঁতায়/ হেইয়ো
দাবড়ানি দেয়/ হেইয়ো
কি মর্দানি/ হেইয়ো
সাচ্চা কথা/ হেইয়ো
ভাঙবে মাথা/ হেইয়ো
যদি বলিস যাতা/ হেইয়ো
হেই আল্লাহ রাসুল/ হেইয়ো
ভোটের গোলে/ হেইয়ো
মোরা খাইছি গোল/ হেইয়ো

অদূরে বিরক্তি নিয়ে বসে থাকা কন্ট্রাকটর এতক্ষণ ওদের সম্মিলিত ধুয়া শুনছিল এবার ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে তেড়ে ফুঁড়ে আসে।

কন্ট্রাকটর : এ্যাই-এ্যাই- থাম-থাম- শালারা- দিনে দিনে সাতদিন অয় নাই কাজ পাইছস্-এখনই বুলি ফুইটা উঠছে- এসব কি? কি গান গাস্ তোরা-এ নূরা।

নূরা : গাহান না কন্টেকদার সাব-জুকার দিতেছি।

কন্ট্রাকটর : জুকার-দিতেছি! রুলি মুলি মর্দানি ফর্দানি এসব কি বলতেছস্- চুপচাপ কাজ কর- কেউ শুনলে বাপের নাম ভুলাইয়া দিব।

আলম : জুকার না দিলে শইল্যে জোশ আইয়্যে না স্যার।

কন্ট্রাকটর : জোশ আসে না? এ তুই কেটা রে?

আলম : জ্বরে আঁই পেনী আলম- বাড়ি পেনীতে তো, (সঙ্গীদের দেখিয়ে) এতারা পেনী আলম ডাকে- স্যার আন্নে আঁরে এপয়েনমেন দিলেন আর আইজ ভুলি গেছেন বড় দুঃখের কথা স্যার।

কন্ট্রাকটর : অ ঠিক আছে ঠিক আছে- ত দে না তোরা গায়ে জোশ আইসা পড়ে এমুন জুকার দেনা এইসব কি বানছস।

নূরা : এই আমাগো রফিকুল- ভালো কবিতা বানায় হের নতুন কবিতা।

আলম : একখান বইও ছাপাইছে- নাম দিছে ‘কবি রফিকুল ইসলাম খোন্দকারের নতুন দেশ বিষয়ক কবিগান’।

কন্ট্রাকটর : এমন কবিতা আমার ঘুম আইসা যাইতেছে- রফিইক্যা কই রে- দে তো এইবার দুইখান জোশের ডায়লগ মার।

রফিকুল : আচ্ছা- ওই হাত লাগা- ধর ধর না আবে

এই ই ই- ফেন্সী বোতল/ হেইয়ো
ছেমরির খেল/ হেইয়ো
বাংলা বল/ হেইয়ো
মাস্তানের চাকু/ হেইয়ো
এসিড ডাকু/ হেইয়ো
পুলিশের শেল/ হেইয়ো
পাবলিক শালা/ হেইয়ো
নেতারা দুলা/ হেইয়ো
জান ঝালাপালা/ হেইয়ো। (কন্ট্রাকটর এখানে ঝিমাতে থাকে)

ওদের পিছন থেকে বেরিয়ে আসে এক যুবক। তার হাতে তামার চুড়ি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরনে জিনস্, কোমরে গিঠঠু মারা শার্ট, মাথায় একটা উল্টা টুপি- তাতে কোনও সিম্বল নাই- যুবক এগিয়ে এসে একটা দুর্বিপাকের মতো দাঁড়ায় ও হাঁক মারে।

যুবক : জিন্দাবাদ (একটা ছুটোছুটি শুরু হয়। শ্রমিকেরা ভয়ে একাট্টা হয়ে একে অপরের সাথে মিশে যায়। তাদের মধ্যে নূরা হঠাৎ সাহস করে ছুটে যায় কন্ট্রাকটর হোসেনের কাছে)।

নূরা : কন্টেকদার সাব- ও সাব- সাব- (একটা ব্ল্যাংক ফায়ারের শব্দ শোনা যায়)।

কন্ট্রাকটর : অ্যাটাক অ্যাটাক- ডাকাত ডাকাত- না সন্ত্রাসী- মার্ডারার (হঠাৎ তার মনে হয় তার কোমরে টাকা গোঁজা আছে, সে কোমরের খুতি চেপে ধরে চিৎকার করতে থাকে) আমার খুতি- আমার টাকা- আমার টাকা- বাঁচাও- বাঁচাও- ছিনতাইকারী- ডাকাইত কই ডাকাইত? ( কোমর হাতড়ে দেখে এবার চোখ মেলে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায়)।

নূরা : ডাকাইত না- হের বড়ভাই- ওই যে?

রফিকুল : ইবলিশ!

আলম : আঁই যাই- ওরে বাপরে- এইবার আর রক্ষা নাই ঢাকার শহরে কাম বিচরাইতে আসি জানে মইরলা।

কন্ট্রাকটর : ভাইরে- শ্রমিক ভাইসব- লাইলাহা ইল্লা আন্তা- দিনকাল যা পড়ছে- খালি তো মার্ডার করে না- টুকরা কইরে মাটিতে পানিতে মিশায়া দেয়- তুই একটু আগায়া গিয়া দ্যাখ না আলম।

আলম : আন্নে যান না স্যার।

কন্ট্রাকটর : নূরা তুই যা, তগো পিছনে আমি এ এই পিলারটার মতো খাঁড়া আছি।

নূরা : সার আপনে আগে যান।

কন্ট্রাকটর : আমি তগো লিডার- লিডারে কুনোদিন আগে যায়- এই যে এতকিছু হতেছে দেশে দেখতে পাস লিডাররা কোথায়? আড়ালে- সব রণকৌশল নির্ধারণ করতেছে- কোন্ জায়গায় কারে কীভাবে ল্যাং মারতে হইবো- তুমি কয় ইঞ্চি বামে বা ডানে সরলে কে কত ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আছাড় খাইবে- এসব ঠিক হতেছে পেছন থেকে- সময় হলেই ইশারা করতেছেন আর তাদের নবীন সৈনিকেরা ইঙ্গিতমাত্র ঝাঁপায়ে পড়তেছে লক্ষ্যবস্তুর উপর- যা যাহ্- আগাইয়া যা- মার মার শালার নাক সই কইরা পঁচাত্তর সিক্কা ওজনের এক ঘুসি মার।

শ্রমিক-৩ : আপনে হইলেন কন্টেকদার এমডি সাবের কাছের লোক- আমরা মরা কাউয়া- আপনেই সামলান

কন্ট্রাকটর : পাইছি এক বুদ্ধি পাইছি- আমি কাউন ডাউন দিই, আর একঝাঁক জেহাদি নওজোয়ানের মতো তোরা সব ছুইটা গিয়া¬ ও কে? রেডি- ওয়ান- টু- থ্রি (বলেই সে ওদের সামনে ঠেলে দিয়ে উল্টা দিকে ছুট দেয়। যুবক আবার ফাঁকা গুলি করে)।

যুবক : জিন্দাবাদ- (শ্রমিকেরা সব মাটিতে শুয়ে পড়ে। গুলির শব্দ ও জিন্দাবাদ ধ্বনিতে কন্ট্রাকটর পড়ে গিয়ে একটা আছাড় খায়, হাঁচড় পাচড় করে উঠে দাঁড়ায়) ।

হোসেন : বাঁচাও বাঁচাও- ওরে বাপরে মাইরা ফাললো রে- লাইলাহা-ইল্লাল্লাহু ..কে বাবা? কেন বাবা? কোন পার্টি বাবা?

শ্রমিকেরা : হ্যাঁ কোন পার্টি?

কন্ট্রাকটর : আমারও পার্টি আছে বাবা?

শ্রমিকেরা : হ্যাঁ উনার ও আছে, হুঁ!

যুবক : শাটআপ, আমি জিন্দাবাদ (জয়দুল) পার্টি- একদম চুপ।

কন্ট্রাকটর : এই চুপ- একদম চুপ।

যুবক : ইয়ার্কি হচ্ছে- শালা- আমাকে দুলাভাই পেয়েছিস- চুপ- (তার মুখের মধ্যে পিস্তল ঢুকিয়ে দেয়) ।

আলম : স্ স্ … স্যার আন্নে কে?

অন্য শ্রমিকরা : হ্যাঁ আপনে? কে?

যুবক : চুপ- একটা খুন করে এসেছি- মাথায় রক্ত চড়ে আছে।

কন্ট্রাকটর : আ আপনে? খু-উ-ন? কারে? আমারে? এ্যাঁ- আমি মইরা গেছি- এই তোরা দেখ রে আমি মৃত- তোরা কি আমারে দেখতে পাইতেছস্? এই শ্রমিক ভাইয়েরা আমার- এই মৃত অবস্থায় কেউ আমার পাশে নাইরে- ফকিরনির পুতেরা খাইতে পাস্ না, কে তগোরে কামে লাগাইয়া দিল- আমি এই আমি- সব শালা ফুটছে এখন- এই বিপদে আইজ কেউ আমার পাশে নাই রে।

আলম : তুঁই মইরলে মাইনষে শোকরানার নমাজ হইড়ব।

যুবক : চুপ হারামির বাচ্চা- ছিক্ ছিক্ ছুঁচো- ইন্দুর চামচিকা কোথাকার- বের কর- কি আছে- বের কর।

কন্ট্রাকটর : আ আমি ছাড়া আমার আর কি কিছু নাই।

যুবক : ওফ্ তাহলে চলবে কীভাবে সকাল থেকে মালপানি পড়েনি পেটে- চলবে কি করে?

কন্ট্রাকটর : ও মনু- সক্কালথন কিচ্ছু খাওন জুটে নাই? তাইলে তো আপনে আমার মেহমান- ওয়েট একটু ওয়েট আসেন এহানে বন- ভাবনার কিচ্ছু নাই এখ্খনি ম্য্যানেজ

কইরা দিতেছি- এই কথা আগে কইবেন তো- এ্যাই তোরা- বাইর করতো কার কাছে কি আছে- বাইর কর- আবে মাল নিকাল।

নূরা : আ আমার আমার কাছে এই দশ টাকা ছাড়া আর কিছু নাই।

আলম : আমার এই তিরিশ।

কন্ট্রাকটর : বাইর কর না- তর কোমরে কি নাই (ওর কোমরের লুঙ্গির খুঁট থেকে ছিনিয়ে নেয় খুচরা কটি নোট) দশ দশ বিশ- তিরিশ চল্লিশ এ ই ই পঞ্চাশ।

আলম : স্যার- বাজারকরণের লাই বউয়ে জমা ট্যাকাটা দিছে- দয়া করেন- না খাই থাকতে হইবো-পোয়াতি মানুষ।

কন্ট্রাকটর : দেখতেছস না বিপদ- আগে তো পার পাই পরে আমি ম্যানেজ কইরা দিম্ নে তগোরে।

রফিকুল : আ আ আমার কাছে কিছু নাই (কন্ট্রাকটর তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়) ।

কন্ট্রাকটর : শালা খালি হাতে বাইরাস ঘর থন- আপদে বিপদে রক্ষা করবো কে?

রফিকুল : আ আপনে।

কন্ট্রাকটর : কয় কি আমি দেখুম- ক্যান আমি কি তগো বোনাই শালা- সাতসকালে দিলো মেজাজটা খারাপ কইরা- এই ই যে মিস্টার নেন- সব সুদ্দু- দুইশো তিরিশ টাকা¬ (যুবক তার হাত থেকে ছিনিয়ে টাকাটা নেয় এবং কন্টেকদারের লুঙ্গির কোমরে বাঁধা খুঁতির মতো ব্যাগ খামচে ধরে চেইন খুলে টাকা বের করে ওকে ছুঁড়ে ফেলে) মাইরা ফাললো রে হায় হায় রে আমার ডলারের ব্যবসার টাকা ব্যাংকে রাখবো বইলা নিয়া ঘুরতেছিলাম-(মোবাইল বের করে) হ্যালো- স্যার হাইজ্যাক হইয়া গেছে স্যার- সব ওয়েজের টাকা।

য়ুবক : (কন্টেকদারের মোবাইল কেড়ে নিয়ে পাছায় একটা লাথি মারে) যাহ্ শালা ফোট- এই যে তোরা সব- শোন্- আমি এই বসলাম- আমি থাকলে তোগের ভয় নাই- ঠিক কি না- এই তুই যা- গরুর গোশ আর পরাটা- নিয়া আয় (একজন বেরিয়ে যায়) অহন থেইকা তগো কন্টেকদার আমি- মালিক আসলে আমার লগে দেখা করতে কইবি– এ- ধর তোর পঞ্চাশ টাকা? এই তুই তোর এই দশ- মাছি মাইরে হাত গন্ধ করি না আমি- শান্তি দেও মাওলা।

আলম : ওস্তাদ- একটা বোতল- আইজ আপনে জয়েন দিছেন সে উপলক্ষে- আনুম নি কোনো?

যুবক : তুই আমারে ডাইল কোম্পানি ধইরে নিছাস্ নাকি শালা- দামিটা না হইলে আমার চলে না।

নূরা : দুষ নিয়েন না ওস্তাদ চাইরপাশে সব দেইখা শুইনা মুখে উল্টাপাল্টা আসে, সোজা কথা বারায় না।

রফিকুল : আমাগের একজন কবি- কবি নজরুল বলছিল গুরু- দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই যাহা আসে কই মুখে- আমাগেরও সে অবস্থা।

যুবক : দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি- হাঃ হাঃ হাঃ ভালো বলেছিস্- শান্তি দেও মাওলা।

রফিকুল : (পা টিপতে থাকে) শান্তি চান ক্যান? আপনেরা খালি শান্তিতে থাকবেন- আর আমরা পাবলিক শ্যাষ হইয়া যামু?

যুবক : আমার শান্তি কই?

আলম : ক্যান আগের যাগাত কি অইল? ক্যন্টনমেন- ভালোইতো আছিলেন-

যুবক : নতুন ডেরা খুঁজতাছি- পাবলিকের এই তোদের কাছাকাছি- ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকবো।

রফিকুল : আপনে তাইলে আমগো বস্তিতে থাকবার পারেন- কিন্তুক সেহানেও ঝামেলা আছে- একজনেরে উচ্ছেদ হইতে হইব।

যুবক : না না ওইসব জায়গায় না- কোনো স্ট্যাটাস থাকে না- দেখলেই ডাইল সন্দেহে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। ও

নূরা : তাইলে বড় কোনো সরকারি অফিসে একটা টেবিল দখল করে ফেলেন- ফেলাট পাইয়া যাইবেন-সংসদের ছামনে উঁচা উঁচা দেলান তুলতেছে না- সেডির একটা- হইতেও পারে।

যুবক : কি যে বলস্ না- তোরাই তো বদনাম দিবি- সরকারি গুন্ডা বলে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু হয়ে যাবে।

আলম : তাইলে হুলিশ ডিপাটমেন্টে ঢোকেন- আমনেরও কিছু অইবো আমরাও বাঁচি যামু।

যুবক : কেন তোদের আবার কি হয়েছে তোরা তো দেখি ভালোই আছস্।

শ্রমিকেরা : আমরা- গুরু? আমরা- আমরা যে পাবলিক ওস্তাদ! আপনে যাগোর কাছাকাছি ঘনিষ্ট হয়ে থাকনের বাসনা করতেছেন।

‘গুরু বলবো কি গো আর।
এই দ্যাশেতে পাবলিকের গুরু দুঃখের নাই কিনার
মোরা ভাত পাই না বিষ তুইলা খাই।।
এসিড খাইয়া কবরে যাই
বিচার চাইতে যাইলে গো গুরু বাপের নামটা ভুইলা যাই
গুরু বলবো কি গো আর।।
এই দ্যাশেতে পাবলিকের গুরু দুঃখের নাই কিনার
আমরা সৎ হইতে যাই ঠ্যাঙ্গানি পাই
নীতির কথায় জুতাটা খাই।
উল্টানীতির দেশেতে আমার ঠিকানার খোঁজ নাই
গুরু বলবো কি গো আর (সুর- বাবু সেলাম বারে বার গানের অনুকরণে) ।।

যুবক : সব ঠিক হয়ে যাবে।

নূরা : কাজকর্ম?

যুবক : সব ঠিক হয়া যাবো।

আলম : ঘরদুয়ার, ইসতিরি কন্যার ইজ্জত?

যুবক : ঠিক হয়া যাবো।

রফিকুল : বইপত্র, স্কুল, মাস্টার, কবির গাহান?

যুবক : সব ঠিক হয়া যাবো।

আলম : অফিস-আদালত, আইন-কানুন?

যুবক : ঠিক হয়া যাবো।

নূরা : চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি?

যুবক : বললাম তো ঠিক হয়া যাবো।

শ্রমিকেরা : বছরের পর বছর ফাঁকি?

যুবক : ঠিক হয়ে যাবে- কি কি বললি?

শ্রমিকেরা : ওস্তাদ তুমিও আমাগের দিতেছ, যেমন সকলে দিয়েছে, ফাঁকি? শুকনা বুলি?

যুবক : দ্যাখ এই আমরা হইলাম দেশের শক্তি- দেশের ভবিষ্যৎ যুব মন্ত্রণালয়-পার্টির যুবক-যুবতী শাখা এসব কেন হয়েছে? তোদের জন্য- এই দেশ আমাদের- কে আমাদের ফাঁকি দেবে? আমরা ছাড়া কে চলতে পারে? দেশ? না সমাজ?

রফিকুল : ম-ন্ত্র-ণা-ল-য়? কি হয় সেখানে?

যুবক : ধর আমি একজন মন্ত্রী। তোগের আমি ওপেন মার্কেটের সব ওপেন করে দিয়েছি- সব ওপেন তোদের জন্য- তোরা তখন কি করবি?

নূরা : (জনৈক যুবক সেজে) ধরেন আমি অইলাম নয়া কন্টেকদার- লেকাপড়া ইন্টার- মন্ত্রীর কাছে গেলাম- আপনে মন্ত্রী- ভাইজান সালামালেকুম।
যুবক-মন্ত্রী : কি সাহজাহান? কি খবর- কেমুন কাজকাম চলছে।

নূরা : চলছে ভাইজান- ভাইজান সেই কামটা- ফুলবাড়িয়ার বঙ্গমাতা গার্মেন্টসের মাল সাপ্লাই- কামটা কিন্তু আমার- আপনে একটা ফোন করে কয়ে দেন না-

মন্ত্রী : সেটা তো আমি কয়া দিয়াছি রে- এমডি জানে তুই গিয়া দেখা কর।

নূরা : এইবার আলম তুই এমডি- আমি এমডির কাছে গেলাম (আলম এমডির ভাব করে একটা চেয়ারে বসে থাকে) স্যার স্যার- গুডমর্নিং স্যার- ভাইজান আপনাকে ফোন করেছেন স্যার? ওই সেই সাপ্লাইয়ের কামের ব্যাপারে?

এমডি রূপী
আলম : সাপ্লাই- স্যাটা তো ফাশ হয়ে আসেনি- সেরকেটারিতে পাইল আটকে আছে।

নূরা : ওকে- তাইলে আমি যাই আজই সেরকেটারিতে- তাইলে পাইল ও সেরকেটারি সুদ্দ নিয়ে আসব।

আলম : না না সেরকেটারি আনতে হবে না- আপনে বসেন- আমি দেইখতেছি- বসেন ক্রিং ক্রিং (কলিংবেল বাজানোর ভঙ্গি ও শব্দ করে) এই এনাকে এককাপ ফাশকেলাশ চা- না না কপি কপি দেও- (আলমের অভিনয় দেখে যুবক হো হো করে হেসে ওঠে)

যুবক : শালা বান্দর একটা- জীবনের কোনোদিন কোনো এমডি দেখেছিস্ তুই?

আলম : না গুরু- আপনে বসেন না বসেন, আর এট্টু তামশা হউক না- এই রফিকুল আয়- তুই অইলি ডাইল মাস্তান- কর মাস্তান কর- মাস্তান মন্ত্রীর ঘরে ঢুকছে- গুরু আপনে মন্ত্রী-

রফিকুল : (মুখে সিগারেট। একটা ব্যান্ডের গান গুনগুন করতে করতে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আসে মন্ত্রীর সামনে) পথহারা পথিক যে ভাই/ পথের গান পথেই যে গাই/ বন্ধু তুমি আসো না- সেলামালেকুম- হ্যান্ডসেক হ্যান্ডসেক- দোস্ত- (মন্ত্রী মুখ কুঁচকে ফেলে ওর মুখে গন্ধ পেয়ে) কি ও নো নো- ইয়েশ হোকে হোকে- এই আমি দূরেই থাকতেছি- একটু বেশি হয়ে গেছে আজ- বেশি রাত তক এখনও চলে কি না- বুঝতেই পারছ- ভাবছি একটা ব্যান্ডে ঢুকে পড়ব- আজকাল নৃত্যসহ গীত বেশ লাগতেছে- মনের ভিতর একটা শিল্পী কেমন যেন জাইগা উঠতে আছে- সে যাক্ দোস্ত- তোমারে বরণ করতে আসলাম- ইয়ে যাকে বলে নবীনবরণ।

মন্ত্রী : কে আপনি?

রফিকুল : নতুন মন্ত্রণালয় পাইছো- বন্ধু চিনতে পারতেছ না? চেষ্টা করো- নইলে ঝামেলা হই যাবো- কিছু না আমার কতা হলো- একটু নজরে রাইখো- এই এটা একটু চাইখা দেইখবা নাকি- গত বছরের মাল- তোমরা এই বছর যা সব বানাইতাছো ওয়াকথু- ভেজালই আছে মাল নাই¬ এরম মুখ কালো কইরা আছো ক্যান- হাসো- একটু হাস্সো- মাই সুইট মিনিস্টার (মন্ত্রীকে সুড়সুড়ি দিতে থাকে হাতের চাকু দিয়ে)।

মন্ত্রী : একী আপনি আমাকে হে.. হে.. হে.. আরে- বসেন বসেন- হবে হবে সব হবে।
রফিকুল : নজরে রেখ- এতদিন তো কিছু করতে পরলাম না- এবার যদি হয়।

আলম : রফিকুল তুই আর মানুষ অইলি না তামাশা অইলেও ইনি আমাগের মন্ত্রী- মন্ত্রীর লগে কেও এরম করে- একটু কমে সমে কর।
রফিকুল : ও তুমি তো রাজ্যের মনতিরি? (ব্যঙ্গ করে তাকে) তা তুমি যদি আমার জন্যি কর আমিও করবো- তোমার যা লাগে- ইয়ে যা কিছু আই মিন ফ্রম টপ টু বটম- যা যা দরকার মিটলে একজন মন্ত্রী সুখে থাকে- আমি আমি জোগাড় করে দেব আর একটা আবদার দোস্ত তোমার অই পুলিশটারে একটু হাত ঝাপটা দেও তো- মানা করে দাও- ও আমার সাথে কানামাছি খেলে খালি কানামাছি খেলে-

নূরা : এ রফিকুল হইছে- আর না।
রফিকুল : এই শালোর পুত- মাটিতে পুইতে ফেলাব- টুকরো কইরে মাটিতে পুঁইতে ফেলাব- শালা আমার সাথে মুখ তুলে কতা কস্! পুইতে ফেলাব (আলমকে মারতে ছোটে। আলম ছুটে বেরিয়ে যায়)

মন্ত্রী : এ তোরা কি রে? একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? ( বেশ বদল করে একটা ধুতির মতোন পরে ছুটে এসে আলম তার পায়ে পড়ে)
আলম : স্যার স্যার আঁরে বাঁচান, আঁর বাড়ি দখল কইরছে, আঁরে পতে বসাইছে, স্যার অঁন আঁই কই যামু, কার কাছে যামু?

নূরা : ( বেশ বদল করে) মিনিস্টার সাব, মিনিস্টার সাব, আমার দোকান লুট করেছে, ফুলেল মেয়েটারে ধইরে নিয়ে ছিত্তিছান কইরে ছাইড়ে দিয়েছে, থানায় গেলাম, দারোগা দূর দূর কইরে তাড়ায়ে দিল, বউডারে ভাইয়ের কাছে ইন্ডিয়াতে পাটায়ে দিয়ে এখুন বস্তিতে লুকায়ে আছি, সন্ত্রাস না কইরেও লুকায়ে আছি, আমারে হক বিচার দেন, নালে আমারে ধইরে জেলে ঢুকায়ে দেন, তবু দুচোক্ষের পাতা এক করে দুরাত ঘুমাতে পারব, দুটো রাত দুটো চোক্ষের পাতা এক কইরে সব সোমায় মনে হবি না ওই এলো, ওই তাড়ায়ে বেড়াচ্ছে, এই হামলা করলো, চাক্কু, রামদা, বন্দুক-এই জানটা নিয়ে নিল, এই বুঝি মেয়ের চিক্কার, ওই বুঝি আমার বউটা হামলে পইড়ে কাঁদতিছে- হে ভগবান-হে খোদা।

রফিকুল : (লাথি মেরে) বেন্দাবন চলে যা শালা (ভাগিয়ে দেয় লোকটাকে, সে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়) কাফের কোথাকার-পুঁইতে ফেলাব একদম-ভাইজান।

মন্ত্রী : (উত্তেজিত) ভাইজান, এত সাহস, আমাকে ভাইজান ডাকছো, জানো আমি মন্ত্রী।

রফিকুল : (মন্ত্রীর কলার ধরে) তবে শালা চল্, তেল হয়েছে তেল বের করবো তোর।

মন্ত্রী : এ কী আ আ আ আমাকে? কোথায়?

রফিকুল : অজ্ঞাত স্থানে (মন্ত্রীর ভান ছেড়ে যুবক এবার স্বরূপে চিৎকার করে ওঠে)।

যুবক : থাম থাম- এই থাম তোরা (হাঁপাচ্ছে) কি করছিস্ তোরা-এসব কি গাঁজাখোরি?

নূরা : গাঁজাখোরি কি? ইসবই তো পেরতেকদিন ঘটতেছে, আপনে কি নয়া আসলেন এ দেশে?

মন্ত্রী : যাহ্!

রফিকুল : আপনি নতুন বউয়ের মতোন যাহ্ বললি কি হবে- সত্য ঘটতেছে, আসলে আপনের মতো মন্ত্রীরা ঐ চশমার ভিতর দিয়া আটতালার উপরে বইসা কদ্দূর আর দেখেন, তিলমাত্র না দেখলেও বিশ্বাস যায় না, তাইতো বলেন বিরোধী দল বানায়ে বলতেছে, বদলোকে বদনাম রটাচ্ছে, সাম্বাদিকগের দুলাভাই বনে যান। হলুদ সাম্বাদিকতা, ঠ্যাঙ্গ ভাইঙ্গে দোব, হুংকার মেরে বলেন আর এরকম লিকবি তো বানচোতেরা তোগের আমি চক্ষে সরষে হলুদ দ্যাখায়ে ছাইড়ে দোব।

যুবক : না এসব চলবে না, চলতে পারে না অসম্ভব!

নূরা : চলবে না কি গুরু? এসবই চলছে, ওপেন চলছে, মার্কেট ওপেন সবকিছু এখন ওপেন সিক্রেট- (গান)

ওরে রক্তলোলুপ পিশাচেরা নাচে বুকের উপরে
হেই রে জোয়ান হেইয়ো
তোমার লুটেরা দল লুটতিছে দেশ রাইতে-দিনেদুপুরে
হেই রে জোয়ান হেইয়ো
চোর গেলে আনো ধইরে ডাকু তুমি সাধু উপর উপরে
হেই রে জোয়ান হেইয়ো
এই পাবলিকেরই রক্ত চুষে খাচ্চে শেয়াল কুকুরে

যুবক : সর্বনাশ! তোরা তো বেশ বৈপ্লবকি কথাবার্তা বলছিস্, সাবধান বুঝেছিস্! যা যা নিজের কাজে যা, কাজের চেয়ে ভালো জিনিস নাই রে জানিস তো, এই যে তোরা কাজ করছিস্, কি সুন্দর শ্রমিকের ঘাম না শুকাতে তাদের শ্রমের মূল্য পরিশোধ করিও বলেন নবীজি। কি সুন্দর তোরা ওয়েজ আর্ন করছিস্, আমি একবার বাবার উপর রাগ করে মালয়েশিয়া চলে যেতে চেয়েছিলাম, যেই শুনলাম সেখানে গায়ে গতরে খাটা ছাড়া কোনো কাজ নেই, ইচ্ছাটা উবে গেল, তোরা যা পারিস আমি পারি না- একটু লেখাপড়া শিখেছি তো তাই কোনোদিকেই যেতে পারি না-কি সর্বনাশ ঘটিয়ে দিল ঐ পড়াশুনা।

নূরা : গুরু তোমার মনের মধ্যে একটা বিশাল দুঃখের পাতিল কেবল টগ্বগ্ করতেছে, কথা তুললেই সাঁৎ কইরে তার ভাঁপ বারায়ে পড়তেছে, যাই আমরা বরঞ্চ আমাগের কামই করি, আসো ভাইয়েরা হাতে হাত দেও, এই মালগুলা তুইলে ফেলি, সুপার ভাইজার শালা আবার কুনদিক দিয়া আইসা পড়ে।

মারো জোয়ান/ হেইয়ো
সেয়ান পোলা/ হেইয়ো
মামলা ঝোলা/ হেইয়ো
মায় কয় বাপ/ হেইযো
বাপ চায় মাফ/ হেইয়ো
পুতে কয় শালা/ হেইয়ো
মামা বলে/ হেইয়ো
পড় মামু/ হেইয়ো
উল্টি সে খায়/ হেইয়ো
ভাইগনার ঠেলা/ হেইয়ো (হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢোকে পুলিশ ও ইন্সপেক্টর কবির)

কন্ট্রাকটর : এই্ এই যে এই যে স্যার স্যার আমার টাকা আমার খুতি আমার টাকা আমার খুতি, হায় হায় রে আমার টাকা।

ইন্সপেক্টর : এই হট হট হট, ধর ধর ধর, এই শালারা কে টাকা নিয়েছিস্ বল্।

শ্রমিকেরা : কি টাকা? কিসের টাকা? আমরা কোনো টাকা নিই নাই (কন্ট্রাকটরের প্রবেশ)।

কন্ট্রাকটর : কি পাইলা কিছু, কই সেই শালা, কই সাতসকালে আমার জায়গা বেদখল, এত্ত সহজ অরাজকতা, দ্যাশে একটা অরাজকতা চলতেছে।

ইন্সপেক্টর : এরা তো বলতেছে টাকা নেয়নি।

কন্ট্রাকটর : কি? এরা বলতেছে? কিরে নেয়নি, আমার খুতি থেকে তিরিশ হাজার দুইশো বত্রিশ টাকা-

আলম : তিরিশ হাজার!

নূরা : আলম আমাগো বেতনের টাকা।

কন্ট্রাকটর : সেই শালা কই, সেই শালা ( বেরিয়ে যায়)।

পুলিশ : স্যার এই মামলায় ঘাপলা আছে, এই ক কে নিছে? তোরা নিছস্ না আর কেও? এক একটার চউখ দ্যাখেন না স্যার য্যান আফ্রিকান মাগুর মাছ চক্ চকে পিছল পিছল শ্যাওলা ধরা, এই তুই নিছস?

নূরা : না স্যার।

ইন্সপেক্টর : তুই নিয়েছিস্।

আলম : না দারোগা সাব।

ইন্সপেক্টর : তাইলে তুই!

রফিকুল : খোদার কসম স্যার, না স্যার, ওই ওই যে (আঙ্গুল তুলে আগের যুবককে দেখাতে গিয়ে দেখে সে উধাও)।

ইন্সপেক্টর : শালারা মশকরা করতেছস্? পুলিশের লগে মশকরা? জানস্ পুলিশ কি? তোর বাপ! (এমন সময় যুবকের উদয়)।

আলম : ওই্ ওই যে।

পুলিশ : ধর ধর ধর ধর ( বেরিয়ে যায়)।

নূরা : মাস্তান এক গেল, দুই আসল সেও তো ভালো ছিল, এখন তো পুলিশ আসছে, এইবার? (যুবককে তাড়া করে ঢোকে পুলিশটি)।

পুলিশ : ধদ্ধর র র র র শালারে ধর বেরিয়ে যায় ওরা ঢোকে কন্ট্রাকটর)।

কন্ট্রাকটর : ভয়ে আমার কইলজা লগে নাই রে, লাই লাহা– চর বসায়া থুইছে, দ্যাখো সবদিকে চর, নতুন নাম লিখায়েই এত দাপট, আমরা বলে পুরান মাস্তানে ভাত পাই না এখন, সেই আমার মুখের গ্রাস কাইড়া নিতে চাস্, ভাগ্য ভালো এই শালাদের ওয়েজের টাকাটা আন্ডার ওয়্যারের ভিতর লুকানো আছে-একটু বেশি, ফ্ল্যাটের কিস্তি ছিল তিরিশ হাজার আর এদের আটত্রিশ হাজার, যার কেউ নাই তার আল্লা আছে, আল্লার মাল আল্লা মিলায়া দিছে, আগেই ম্যানেজ কইরে রেখেছে, (এমন সময় ছুটে আসে পুলিশটি এবং ধাক্কা খেয়ে উভয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে উঠে দাঁড়ায়) কি যে সব করেন না।

পুলিশ : আরে সরেন সরেন গেল গা, ধরেন ধরেন ধরেন। (ছুটে বেরিয়ে যায়)

ইন্সপেক্টর : হোসেন সাহেব শুনছেন, এরা তো কিছুতেই স্বীকার যাচ্ছে না, বলছে ছিনতাই হয়নি।

কন্ট্রাকটর : হয় নাই? কিরে বেইমানের দল, হয় নাই? এই জন্য তোদের এত কইরে চাকরি জুটায়ে দেওয়া? আমি কসম করে বলতেছি ছিনতাই করেছে, লম্বা লম্বা লেকচার দিয়ে ছিনতাই করলো, দুটো পটকাও ফুটলো, ওরা না বললেই হলো? (এমন সময় পুলিশটি যুবককে ধরে ভেতরে ঢোকে) এই এই যে, এ আমার সর্বস্ব নিয়েছে।

পুলিশ : সর্বস্ব কি সাহেব, আপনে কি রেইপড্ হয়েছেন নাকি?

কন্ট্রাকটর : তা হইনি আবার, খুব হয়েছি।

ইন্সপেক্টর : আরে সাহেব থামেন তো, এই ইবলিশের বাচ্চা বড় বড় কথা বলে, এই ছিনতাই হয়েছে রে? পটকা ফুটেছে রে? (লাঠি দিয়ে শ্রমিকদের একজনের পায়ে মারে। সে চুপ করে থাকে)

কন্ট্রাকটর : হ্যাঁ হইছেতো।

ইন্সপেক্টর : আরে শুয়োরের পয়দা ছিনিয়ে নিয়েছে কি? (আলমকে খোঁচা দেয় কিন্তু সে দাঁতমুখ খিঁচে চুপ করে থাকে)।

কন্ট্রাকটর : হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়েছে।

ইন্সপেক্টর : ওরে কুকুরের ছা ঝাঁপ দিয়ে পড়ে চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে ভেগে গেছে কি? (নূরাকে থাপ্পড় দেয় সে কিছুই বলে না)।

কন্ট্রাকটর : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ছোঁ মেরে নিয়ে একদম পগারপার।

ইন্সপেক্টর : এই নমরুদের সাগরেদ বল্ নিয়েছে, তোরা চোখ বন্ধ করে ছিলি, দেখিসনি নয়কি?

কন্ট্রাকটর : আরে বাবা হ্যাঁ, চোখ তো বন্ধ করেই ছিল (এবার তার পকেটে টাকা ভরে দেয় সে)

ইন্সপেক্টর : পেয়েছে কি? যা খুশি তাই করবে? বড় বড় লেকচার ছেড়ে বোকা বানিয়ে লুট করবে? পটকা ফুটাবে? কি ভেবেছিস্ নিজেকে? ক্যাডার?
( সে মারতে শুরু করে একবার যুবককে আর একবার শ্রমিকদের একেকজনকে পালাক্রমে)
মানুষের স্বপ্নগুলো ছিনিয়ে নেবার মতো টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাবি? কি মনে করেছিস নিজেকে? পলিটিশিয়ান? (লাঠির বারী)
চোখের সামনে অন্যায় হবে, চোখ বন্ধ করে থাকবি? কেন রে বাইনচোত? কি ভেবেছিস্ তুই নিজেকে? আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা? (লাঠির বারী)

নূরা : পুলিশ সাহেব, ও-পুলিশ সাহেব।

ইন্সপেক্টর : (যুবককে) শালার চেকনাই দ্যাখো, পার্লার থেকে মাঞ্জা মেরে এসেছে য্যানো (রুলের গুঁতো মারে) ওস্তাদ কে তোর? সেই শালারেও ধরতে হবে এবার, দ্যাখো কি রকম তাকিয়ে আছে দ্যাখো, আমাকে যেন জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে, কাজে কর্মে তো আস্ত একখান ইবলিশ, গরীব মজুরদের ওয়েজ ছিনতাই করে নিস্ (গুঁতো মারে)-

সবাই : ‘তোরে দেব লকারেতে ঢুকায়ে।
না খাইয়ে পরায়ে দড়িতে ঝুলায়ে
তেল ঝরাবো রে শুকায়ে।।
তুই লাফাংগা ছিলি লাফাংগা রবি
মন্ত্রী বা নেতা কখনো না হবি
বাঘ ছিলি ঘরে, বাঘডাঁশ হয়ে
কোনে কোনে রবি লুকায়ে।
তোরে খানাপিনা ছাড়া
হাজতে রাখিয়া তেল ঝরাবো রে শুকায়ে’।।

যুবক : শাট আপ্, শা- আ ট আপ (ঝাঁপিয়ে পড়বে এমন রুদ্রমূর্তি)।

আলম : কমিশনার সাহেব ও কমিশনার সাহেব।

ইন্সপেক্টর : (বিস্মিত ও গর্বিত ভঙ্গিতে আলমের ডাক শোনে ও পরে তার দিকে তাকায়) কি ডাকলি তুই আমাকে? কমিশনার?

আলম : হ-আমনেরে দেখি তো কমিশনারই লাগে, ঠিক কিনা কমিশনার অইতে আন্নের আর দেরং নাই।

ইন্সপেক্টর : কি বলবি বল।

আলম : ইনারে মারিয়েন না, খুউব ভদ্র ঘরের সন্তান, অনেক বড় বড় লাইন।

ইন্সপেক্টর : কি কস্।

নূরা : ভাবসাবে মনে অয় প্রাইম মিনিস্টারের নাতি?

ইন্সপেক্টর : তাই নাকি?

রফিকুল : কম কইরে হইলেও মন্ত্রীর পুত না অইলেও ভাইগনা হইতে পারে।

ইন্সপেক্টর : তাই নাকি? নাতি? (যুবকের সামনে এগিয়ে আসে। পুলিশটির হাত থেকে লাঠি নিয়ে দূরে ফেলে দেয়) ইয়ে আসসালামু আলাইকুম স্যার, একটা ভুল হয়ে গেছে স্যার। একি স্যার আপনের শার্টে ধুলা স্যার (মুছে দিতে থাকে-)! আমি ভাবছিলাম, এমন ফরেনারের মতো চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কম করে হলেও আমেরিকায় পড়তেছে, সে কেমন করে ছিনতাইকারী হতে পারে- ছিঃ! ছিঃ! কি ভুল । উহ্ আপনের নিশ্চয়ই পালপিটেশন হচ্ছে, পুলিশে তাড়া দিয়েছে। নুরনবী সাহেব আপনে মানুষ বুঝে কাজ করবেন না? অপদার্থ! কতগুলা অপদার্থ পালি ডিপার্টমেন্টে! দেখি মুখটা মুছে দি, এই আমার রুমাল, আমার স্ত্রী খুব ভালো বুটিক শিখেছে, ডজন ডজন রুমাল বানিয়ে রাখে, বসের সামনে খুব ঘামতে হয় তো তাই। উনির সামনে গেলে ঘাম কি আরে আমার কত কলিগ পেচ্ছাব পর্যন্ত করে দিচ্ছে, ভালো মেয়ে খুব ভালো মেয়ে আমার স্ত্রী, এই তোরা সব এই ভদ্রলোককে হোসেন সাহেবের টাকা ছিনতাই করতে দেখেছিস্, বল বুকে হাত দিয়ে বল দেখি।

নূরা : (ঘাবড়ে গিয়ে) কই না, রফিকুল মিয়া দেখছো তুমি?

রফিকুল : না না কিছু না, আলম তুই?

আলম : না না কোনোদিন না?

ইন্সপেক্টর : তাহলে সব একেবারে ঘিরে ধরেছিস্ যে? কি হচ্ছে এসব? ভেবেছিস্ কি তোরা, আমার হাত থেকে আজতক কোনো সন্ত্রাসী ছিনতাইকারী পালায়ে বাঁচতে পেরেছে? পারেনি, পারবে না, এই রশিদ ইন্সপেক্টরের গায়ে এই পোশাক থাকতে নয়, এক্কেবারে জননিরাপত্তা আইনে ধরে নিয়ে চৌদ্দ শিকের ভিতরে ঢুকিয়ে দেব হা হাহ হাহ্ হাহ্।

আলম : পাইরতেন ন সেই আইন রদ অই গেছে।
ইন্সপক্টের : কি, রদ?

নূরা : বাতিল।

পুলিশ : তাইলে স্যার আরেকটা আইন তো হবো, আপনে নিশ্চিন্তে অ্যারেস্ট করতে থাকেন।

ইন্সপেক্টর : তো সেই আইনে তুই অ্যারেস্ট? (আলমকে বাঁধে)

যুবক : শোনেন ইন্সপেক্টর সাহেব ওরা মজুর মানুষ ওদের অ্যারেস্ট করলে কি লাভ, এই কন্ট্রাকটরের কাছে মেলা টাকা ওরে অ্যারেস্ট কইরা নিয়া যান (পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দেয়)।

ইন্সপেক্টর : কি? ও হ্যাঁ পাইছি, এই শালা তুই অ্যারেস্ট, সক্কালে নাশতাটা পর্যন্ত করতে পারি নাই, তুই তর এমডির ফোনের ঠেলায় দারোগা এই অভুক্ত দুইডা মানুষরে ডিউটিতে পাঠায়া দিল (পিছু পিছু ছুটছে তাকে ধরার জন্য আর কন্ট্রাকটর ছুটছে)।

কন্ট্রাকটর : আমি আমি অ্যারেস্ট? ক্যান ইন্সপেক্টর সাব?

ইন্সপেক্টর : সন্ত্রাসী কাজের অভিযোগে আমার কাছে ইনফরমেশন আছে তুই তিনমাস আগে এই গদ্দি দখল করেছিলি ছুম্মা আমীনের কাছ থেকে।

কন্ট্রাকটর : আর যে আইজ ওই সুমন আমারে সরায়া দখল করলো সেইটা কিছু না বুঝি, আমি মন্ত্রীর কাছে যামু, আমি মিনিস্টারের কাছে যামু, শোনেন সাহেব এই যে এই নেন আমি শেষ আমি ফতুর (দুজনে টাকার ভাগবাটোয়ারা করে, ঢোকে বিগবস্। সে দেখে ফেলে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে)

বিগবস : সুমন।

যুবক : জ্বি ভাই (পাশে এসে মাথা নত করে দাঁড়ায়)।

বিগবস্ : হোসেন (এগিয়ে আসে কন্ট্রাকটর)।

কন্ট্রাকটর : হুজুর!

বিগবস্ : কি যে করস্ তোরা, এমডি সাহেব আমার বড় দুলাভাই, সে তো ফোন কইরা আমার মাথা খারাপ কইরা দিল, তোরা দুইডা আবার নাকি দখল বেদখলের খেলা লাগাইছস্? তোরা তো পার্টির মুখে চুনকালি দিয়ে বসলি- ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ, বলবে কি আমাদের? কি বলবে পাবলিকে? বিদেশী বন্ধুরাই বা কি ভাববে? একটু রইয়া সইয়া এক অপরে সমঝাইয়া চল্ আর এই তরা, তরা কে?

শ্রমিকেরা : আমরা ফ্যাক্টরির লেবার মাননীয় মন্ত্রী।

বিগবস্ : তরা কি নাকি ঝামেলা পাকাইতেছস্?

নূরা : ঝামেলা? কই না তো?

বিগবস্ : ভোট দিছস্ কারে, আমাগরে না হেগরে?

রফিকুল : না স্যার আমরা মুর্খসূর্খ মানুষ, কিচ্ছু বুঝি না তাই ভোটও দিই নাই, দিনের কামলা, দিনের খাতায় নাম লিখি আর দিনের টাকা নিই, আমরা খালি মাল খালাস করি আর জুকার দিই।

বিগবস্ : জুকার জুকার কি রে?

নূরা : এই জুকার, ধরেন এক ধরনের গীত, রফিকুল নতুন গীতও লেইখছে, খাওন তো ঠিকমতো হয় না, শইল্যে একসময় মনে অয় বল পাই না, তহন জুকার গাই সক্কলে একসাথে ধরি মাল টেরাকে উঠে।

বিগবস্ : তাই নাকি তো তোরা কাম শুরু কর আমি একটু বসি, সুমন এমডিরে খবর দেও, সেলাম দিবা, বাপের নাম রাইখো।

যুবক : রাখতে তো পারবো না বড়ভাই, বরং ডুবায়েছি, যেদিন আপনার দলে ভিড়ছি সেদিনই, এখন আমার পরিবারে কেউ আমার নাম উচ্চারণ করে না বাবার ভয়ে, যে আমার নাম নিবো বাপ তারে ভাত না খাওয়াইয়া উপাস রাখবো, ব্রিটিশ পদ্ধতির নির্যাতন, আমিও জ্বলতেছি, আমার পরিবারও।

বিগবস্ : কষ্ট-বড় কষ্টে আছে ইয়াং জেনারেশন, কইলজাটা ফেটে যায় আমার ওরে দেইখা, হোসেন তুই তালতলায় যাগা সুমনরে আমি এখানে রাখুম, তেজি পোলা বদরাগি, কিন্তু রবিনহুড টাইপের সততা আছে, তগো মতোন ছ্যাচড়া না, বুঝচোস্? এই তোরা কাম করস্ না ক্যা, বুঝছি লাটে উঠবো দুলাভাইয়ের ব্যবসা। নাহ্ সুমনরে আমার এহানেই দরকার।

নূরা : জ্বে স্যার। এই সিরিয়াল সিরিয়াল ধরো ভাইয়েরা, হাতে হাত রাখো।

‘আয় জোয়ানো পাগলা খেলো/ হেইয়ো
লেখাপড়া, বাপ মা ভোলো / হেইয়ো
তাসের দেশটা মামার বাড়ি/ হেইয়ো
সুযোগ ধরো, কপাল খোলো/ হেইয়ো
মামদোবাজি হেথায় চলে/ হেইয়ো
সরকারি মাল নিজের বলে/ হেইয়ো
জাপটে ধরো, দখল করো/ হেইয়ো
দে মাইর যে ন্যায়নীতি বলে/ হেইয়ো’

বিগবস্ : তরা শালারা কাজকামের মইধ্যে এইসব কি ছড়া বানাচ্ছি।

নূরা : এইটা হলো জুকার স্যার

বিগবস্ : ইয়ের পুতেরা নাটক করতাছস্ নাকি, এই গোটা ফ্যাক্টরি চলে ইয়াং জেনারেশনের শ্রমে, বছরে কোটি টাকার ব্যবসা। যুব সম্প্রদায় দেশের মাথার মণি তাগের নিয়া ইয়ার্কি করি ছড়া বানছস্, দুলাভাই এইসব কি রাখছে।

নূরা : যুব সম্প্রদায়ের অপমান করুম ক্যান সার, হেরা তো আমাগেরই সন্তান।

বিগবস্ : হেরা যে অ্যামাগেরই সন্তান, আস্পর্ধা দ্যাখো? তোগের হবে কেন রে? ওরা ওদের বাপ মার সন্তান।

আলম : ক্যান গরিব অইছি বলি কি আমরা বাপ-মা অইতাম পাইরতাম ন নি?

বিগবস্ : তা পারবি না ক্যান তোরাই তো হচ্ছিস গন্ডায় গন্ডায় জন্ম দিচ্ছিস আর ছেড়ে দিচ্ছিস রাস্তায়, শালার কে নাকি আবার এর জন্যি মাগী সাই সাই পুরস্কার পেয়েছে।

ইন্সপেক্টর : ছিঃ ছিঃ ছিঃ, সব শালা মাগীবাজ।

বিগবস্ : আরে না এ মাগী সে মাগী নয়, মাগী সাই সাই একটা পুরস্কারের নাম, তোমরা কি পত্রিকা পড়ো না, ইন্সপেক্টর এরা কি করতেছে তুমি দ্যাখো নাই?

ইন্সপেক্টর : এই শালারা স্যার মা-বাপ নিয়া এমুন জুকার তুলে না, ভালো কইরা কান পাইতা শোনাও গুনাহের কাজ, এই এখানে গান নাইট্যকলাবাজি চলবো না। নাটক বন্ধের কথা চলতিছে, বুজছাস্?

রফিকুল : আমরা তো নাটক করতিছি না, মাল তুলতিছি।

বিগবস্ : মাল কি রে তরা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতার কতা বলতিছিস্, কে এদের উসকানি দিতেছে ইন্সপেক্টর, নিশ্চয়ই ফ্যাক্টরির পিছনে কেউ লেগেছে, শ্রমিক আন্দোলন করাবে, প্রোডাকশন বন্ধ করে দিতে হবে, শেষে দুলাভাইয়ের ব্যবসার বারোটা করেন কি আপনেরা?

ইন্সপক্টের : এই কে কে করতেছে আন্দোলন, কে তগোরে বলছে এইসব জুকার বলতে, আমি ঠিক জানি এই এই (শ্রমিক ১-২-৩কে জাপ্টে ধরে) এইগুলা শয়তানের চেলা, বল্ তরা দাবি আদায়ে নামতে যাইতেছস্ ঠিক কিনা।

নূরা : না তো আমরা খালি ছিদ্দিকরে বলছি আমাগো সবার নয়শো পঞ্চাশ টাকা মজুরি পাকা কইরা দিতে-

ইন্সপেক্টর : এইবার ঠিক ধরছি, শালারা বর্ণচোরা। এতক্ষণ লুকাইয়া ছিল এই ধর ধর, বান এগুলারে, স্যার সুমন সাবের কোনো দোষ নাই, ট্যাকাটা এই বেডারাই নিছে, কয় কি না সবাইরে নয়শো পঞ্চাশ টাকা কইরা দিতে হইব।

নূরা : স্যার আমার কি দোষ, বলেন আমগো কি দোষ?

বিগবস্ : এই, কি দোষ?

ইন্সপেক্টর : চান্দাবাজি! ছিনতাই আর কি?

বিগবস্ : শুনছস্?

পুলিশ : হ (সাথে কন্ট্রাকটর ধূয়া ধরে)।

ইন্সপেক্টর : শুনছস্?

পুলিশ : তরা যে কি না, দেখি কি আছে বাইর কর।

রফিকুল : স্যার, এই তিরিশ টাকা ছাড়া আর কিচ্ছু নাই স্যার। নিঃস্ব মানুষ আমরা, বউটা পোয়াতী স্যার, মেঘনা রাক্ষসী খাইয়া নিছে ভিটামাটি, ঘরদুয়ার মাথা গুঁইজা আছি বস্তিতে, সেখানেও ভাড়া নিতে চাঁদা, বাজার করতে চাঁদা, বউরে হাসপাতালে নিয়া গেছলাম ডাক্তারের দুয়ার তক পৌঁছতে দিতে হইল কুড়ি টাকা, আমরা কই যামু স্যার।
বিগবস্ : হোয়াট ননসেন্স!

নূরা : আমরা ওয়েজ আর্নার যেদিন কাজ করি সেদিন বেতন, নইলে না খায়া থাকতে হয়, চাকরি পাকা হয় নাই, পাকা হইলে ইউনিয়নের নেতা বলছে বেতন বাড়বো, আমাগো নাকি নয়শো পঞ্চাশ টাকা পাওনের কথা লেখা আছে, সরকারের খাতায় সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতে কুনদিন সত্য বিশ্বাস করতে শুরু করছিলাম চাকরি পাকা হবো, মায়ের পাডা ভাঙছে, গন্ধে ঘরে টিকা দায়। মায়েরে বড় ডাকতার দেখাবো ক্লাস এইট পাস বইনটার বিবাহ হবো।

রফিকুল : আমার পোয়াতী বউটা স্যার, আমার অনাগত সন্তান, সে যেন জানে আমি নির্দোষ, সে যেন জানে আমি চাঁদাবাজ না, ছিনতাইকারী না। সে যেন জানে আমি নির্দোষ, তাইলে তার রক্তে কুনো দোষ থাকবো না, তাইলে সে সোনার মানুষ হইতে পারবো।

নূরা : মা, মাগো। তোমার পা দুইটা দ্যাও ছুঁইয়া যাই, তোমার পায়ের গন্ধের মতো কোনো সুগন্ধ নাই, মরণের মধ্যে সে যেন বাঁচার আশা, যে যেন ঘোর অন্ধকারে চাঁদের আলো, মা আমি তোমার ছেলে নতুন ঘাসের মতোন সবুজ লকলকে শরীল নিয়া এই ঢাকার মাটিতে পা রাখছি, খাইটা খাইছি, সকাল ন রাইত দুপুর, দিনের আলো হারায়ে গেছে জীবন থিকা, ফুলের বাস মুইছা গেছে অন্তর থিকা, কপালের ঘাম বুকে পইড়ছে, বুকের থন মাটিতে পায়ের তলার মাটি ভিইজা জবজব, মেশিনে সেই ঘাম পইড়ে মেশিন জং ধরিছে, মালিক আরও নতুন নতুন মেশিন কিনছে, আরও আরও মাল বানানোর নতুন অর্ডার পায়ছে, আমি দিন আইনেছি দিন খায়ে রইছি, তবু অন্যেরটা কাইড়ে খাই নাই, বিশ্বাস কইরো মাগো, তুমি বিশ্বাস কইরো।

তিনজনে : আমরা কিছু করি নাই, আমরা ছিনতাই করি নাই, মাফ করেন স্যার, স্যার স্যার।

ইন্সপেক্টর : (পুলিশটির দিকে তাকায়, সে রফিকুলের কাছ থেকে নেয়া দশ টাকার নোট তিনটে দেখায়) কি যে করেন না আপনেরা।

নূরা ও রফিক : এই ট্যাকাটা নিয়া যান, আমরা ছিনতাই করি নাই, মাফ করেন স্যার, স্যার স্যার।

আলম : আমরা কিছু করি ন মাফ চাস্ কা? অন্যায় যদি কেও করে তো উনারা করছে।

ইন্সপেক্টর : এই তুই কি বললি? কি বললি? কান ধর (আলম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে)

নূরা : ভাইরে কথা কস্ না, কি বলতে কি বলেছে, পাগলা কিসিমের ছেলে ওর কথা ধরবেন না (রফিকুল আলমকে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে আসে)।

রফিকুল : ও তো কিছু করে নাই।

ইন্সপেক্টর : তোরাও ধর (দুজনকে নীল ডাউন করিয়ে আলমের দিকে আসে ইন্সপেক্টর) ধর কান (আলম চুপ করে থাকে, ইন্সপেক্টর তাকে ইনসিস্ট করে দুবার, তৃতীয়বার তাকে জোর করে কান ধরতে গেলে আলম জেদি ঘোড়ার মতো রুখে দাঁড়ায়)

আলম : না, সাবধান, গায়ে হাত দিবেন না ইন্সপেক্টর। (তার রুক্ষ না এর ধাক্কায় ইন্সপেক্টর কয়েক পা পিছিয়ে আসে। বিস্ময় রাগ ও ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে)

সমাপ্ত

জাহানারা নুরী
২৯ অক্টোবর, ২০০২

Read Previous

নূর কামরুন নাহার-এর গল্পগ্রন্থ
‘শিস দেয়া রাত’ পাঠের অনুভূতি

Read Next

‘অযান্ত্রিক’ ঋত্বিকের চলচ্চিত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *