অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মার্চ ২৮, ২০২৪
১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মার্চ ২৮, ২০২৪
১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ড. সুরজিৎ রায় -
আমার স্মৃতির পাতায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

গুণী সঙ্গীতশিল্পী ও অধ্যাপক পিতা-মাতার ছায়ায় যার সঙ্গীত জীবনের শুরু, বাংলার সঙ্গীত জগতে তিনি ছিলেন অনন্যা। রবীন্দ্রগানের পাশাপাশি দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদ ও রজনীকান্তের গানেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন। বিশ্বভারতীয় সঙ্গীত ভবনে অধ্যাপনা এবং পরে অধ্যক্ষ পদ লাভ তার শিরোপার মুকুটে আর একটি পালক যোগ করেছিল।

আমার সঙ্গীত জীবনের একেবারে শুরুতে একটি অনুষ্ঠানে প্রথম তার সঙ্গে মঞ্চে, এস্রাজে সহযোগিতার কথা আজও মনে পড়ে। এরপর বহু অনুষ্ঠানে তার অবিচ্ছেদ্য অনুগামী হয়ে ওঠাই শুধু নয়, তার ভ্রাতৃসম হয়ে ওঠা। বড় দিদির মতো যেমন তাকে পাশে পেয়েছি, তেমনি শিখেছিও অনেক কিছু। রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা ও সাধনা তাকে এক অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছিল। আশ্চর্য হয়ে দেখতাম প্রতিটি রবীন্দ্রগান কত অনায়াসে, কোনো স্বরলিপি ছাড়াই তিনি পরিবেশন করতেন। শিল্পী হিসেবে নয়, শিক্ষক হিসেবে, গুরু হিসেবে, তার অবস্থান যে কতটা, আজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগনিত শিষ্যই তার প্রমাণ। যেমন একটা ঘটনার কথা বলি। মেদিনীপুরে আমরা একটি অনুষ্ঠান করতে গেছি। দিদির সেদিন প্রবল জ্বর, নৃত্যনাট্য পরিবেশনের জন্য তিনি মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারলেন না, কিন্তু তার শেখানো সেই নৃত্যনাট্যটি অসাধারণ দক্ষতায় পরিবেশন করল তার ছাত্রছাত্রীরাই।

২০১৩ সালে অধ্যাপক হিসেবে যখন বিশ্বভারতী সঙ্গীতভবনে যুক্ত হলাম, আরও কাছ থেকে দিদিকে জানবার-চিনবার সুযোগ হলো। সহকর্মী হিসেবে তাকে যত দেখেছি, অবাক হয়েছি, কতটা দক্ষতার সঙ্গে তিনি অধ্যক্ষ পদ সামলেছেন। তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

দিদির পরিচালনায় খ্রিস্ট উৎসবের কথা না বললেই নয়। প্রত্যেক ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনের দিন শান্তিনিকেতনে খ্রিস্ট উৎসব পালিত হয়। যার পরিচালনায় সবসময়ই দিদি থাকতেন। বড়দিনের ক্যারল পরিচালনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তিনি এমনভাবে একটি শেখাতেন যে, আমরা সহ-অধ্যাপকরা এবং ছাত্রছাত্রীরাও সমান দক্ষ হয়ে উঠেছিলাম এই দীর্ঘ চর্চায়। তার কর্মবিরতির পর এবং তার চলে যাওয়ার পরও তাই এই ধারা সমানভাবে বাহিত হয়ে চলেছে।

মাত্র ৬৬ বছর বয়সে এই গুণী শিল্পী-অধ্যাপক দিদিকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু তিনি আমাদের জন্য যে ভাবনা ভালোবাসা রেখে গেলেন— তা চিরভাস্বর, চির অমলিন থেকে যাবে আজীবন। প্রণম্য এই সঙ্গীতশিল্পী তাই অমর। অমর আমাদের প্রিয় স্বস্তিকাদি।

ড. সুরজিৎ রায় : সহকারী অধ্যাপক, সঙ্গীত ভবন, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন

Read Previous

জলছবির প্রতিচ্ছবি

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন, ৪র্থ সংখ্যা (এপ্রিল-২০২৩)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *