পাঠক হিসেবে আমি গল্পে গল্পই খুঁজি। শব্দের ভাঁজে ভাঁজে কাহিনি যেভাবেই লুকিয়ে থাকুক, সমাপ্তির আগে বা সমাপ্তিতে তা খুঁজে পেলে তৃপ্তি পাই। আবার গল্পে কাহিনি প্রবল হয়ে উঠলেও পড়ে আরাম পাই না। যদিও মনে হয় যেভাবেই থাকুক গল্পে কাহিনি বা আখ্যান থাকা জরুরি। একবার একজন নিরেট পাঠক আমাকে বলেছিল, গল্পে গল্প না থাকলে কী লাভ পড়ে। মাঝেমাঝে কিছু লেখা পড়ি, এরা বলে গল্প কিন্তু পড়া শুরু করে বেশিদূর এগোতে পারি না। দিনের ক্লান্তি শেষে আমরা সাধারণ পাঠকেরা লেখকদের কাছে গল্প পড়তে চাই, নতুন করে কারও নিরীক্ষার বিষয়বস্তু হতে চাই না।
সম্প্রতি পাঠ করলাম গল্পকার নূর কামরুন নাহারের গল্পগ্রন্থ ‘শিস দেয়া রাত।’ এই গল্পকারের গল্প পড়ে মনে হয়েছে, তিনি নিরীক্ষার নামে গল্পকে প্রাণহীন করেন না, অহেতুক দুর্বোধ্যও করেন না। তিনি গল্প দিয়েই গল্পের নির্মাণ করেন।
ঝুঁটি বাঁধার দিন, একই ইউনিফর্মে আবৃত হয়ে স্কুলে ছোটার দিন আমাদের শৈশব-কৈশোরের প্রজাপতি দিন। এই দিনগুলোতে কারও সঙ্গে কারও যেন কোনো ব্যবধান থাকে না, নিজেদের সরলতা আর চপলতার আড়ালে চাপা পড়ে যায় সকলের অভিভাবকের সামাজিক পরিচিতি বা মর্যাদা আর আর্থিক সঙ্গতি। তবে হাইরাইজ ভবনে ঢেকে যেতে যেতে যেমন একটা শহরের পরিবর্তন হয়, তেমনি সময়ের টানে বদল হয় মানুষের সম্পর্ক, পাল্টে যায় দিনযাপনের হিসাব। যে সময় একদিন তুলির এক ছোপেই বদলে যেত, রঙিন করতো জীবনের কঠিন কোনো মুহূর্ত, সেই সময়ই আবার বদলে গিয়ে শতরঙকে উপেক্ষা করে সহজেই মানুষের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। নিরাবেগ বোঝাপড়া বদলে দেয় বকুল, লিলি, শিল্পী, ফেরদৌসী, বেলি আর সাবিনাদের বন্ধুত্বের উষ্ণতাও। জীবনের এই সমীকরণই যেন মূর্ত হয়ে ওঠে গল্পকার নূর কামরুন নাহারের ‘হাইরাইজ’ গল্পে। সহজ-সরল ভঙ্গিতে গড়ানো ‘হাইরাইজ’ গল্পের চাকা হাইরাইজ ভবনের মতো বেড়ে ওঠা শহরের মানুষকে ব্যবধানের দুর্ভেদ্য এক প্রাচীরের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।
‘ওম’ গল্পটি পড়তে পড়তে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখি বারবার। এই গল্পে গল্পকথকের বাবা ঢাকা মেডিকেলের পেয়িং বেডে অচেতন অবস্থায় থাকে। বৃদ্ধের কাছে বসে থাকা সন্তান নানাভাবে নানারূপে অনুভব করে মৃত্যু আর জীবনের পারস্পরিক নৈকট্য, উপলব্ধি করে এই দুইয়ের মধ্যকার অভিনব দূরত্বকেও। বাবার শিয়রে বাবার সুস্থতার জন্য অপেক্ষমাণ গল্পকথক হাসপাতালের ওয়ার্ডে উৎকণ্ঠর সাথে দেখে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ভেতর গোল চকচকে পারদের বিন্দু আর বুদবুদ, স্যালাইনের ফোঁটা আর বুকের ওঠানামা, বাবার গায়ের উত্তাপ। যেন বাবাকে নয় সে মৃত্যুকে পাশে নিয়ে, সাথে নিয়ে বসে থাকে। সারাদিন মৃত্যুকে দেখতে দেখতে জীবনকেও যেন দেখে নতুন করে, প্রতি মুহূর্তে নতুন করে অনুভব করে যে সে বেঁচে আছে। শুধু বৃদ্ধের এই সন্তান নয়, গল্পটি পড়তে পড়তে পাঠকও এই অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হবেন।
‘শোপিস’ গল্পের শুরুটা পড়তে পড়তে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে উঠেছে। গল্পকার যখন লিখছেন, ‘শোপিসটা ভালো করে দেখি। সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি সাইজের একটা ক্রিস্টাল ন্যুড নারী। ধারালো শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের ওপর। কীভাবে বোঝা যাবে ওই নারী বিবাহিত না অবিবাহিত। মুখোমুখি বসা একজন নারীর সামনে একজন পুরুষের এভাবে ন্যুড একটা শোপিস খুঁটিয়ে দেখা অস্বস্তিকর। আমিও অস্বস্তিবোধ করছি। তার ওপর এমন অদ্ভুত প্রশ্ন।’ তখন আনসারীর উদ্দেশ্যমূলক কথা, ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের কথা ভেবে মন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠেছে। এরপর গল্প এগিয়েছে আর কাহিনির গতি পরিবর্তিত হয়েছে ক্রমশ। রেবা আর ইমতিয়াজ দম্পতির সম্পর্কের হিসাব-নিকাশের সঙ্গে আমিও ক্রমশ নির্মম বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। ইমতিয়াজকে তালাক দেবার সিদ্ধান্তটা বদলে যাবে কী যাবে না তা নিয়ে যখন দোলাচলে ভাসছি তখন গল্পের মোড় ঘুরে গেল, অন্যদিকে আর রেবার শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর দ্বিতীয়বারের মতো ভ্রু কুঁচকে উঠলো। যদিও একবার মনে হলো গল্পকার চাইলেই সমাপ্তিটা বদলে দিতে পারতেন তবু কেন যে দিলেন না; কাজটা ঠিক হলো না, রেবার প্রখর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে হয়তো মানানসইও হলো না। পরে ভেবেছি আসলেই তো এমন হয়। জীবনের হিসাবগুলো জটিল গণিতের মতো, চাইলেই সবসময় মনমতো কিংবা সময়মতো মিলানো সম্ভব হয় না।
‘বিছানার বা পাশটা খালি’ গল্পের রেহনুমার হাজবেন্ডের মতে রেহনুমা একটা ‘নিম্নশ্রেণির প্রাণি, বুদ্ধিহীনা। একটা অকাট মূর্খ। মেয়েলোক। পুরোটাই একটা মেয়েলোক। মেয়েলোক মেয়ে হবে এতে দোষ খোঁজা অনেকে বিবেচনার কমতি মনে করতে পারেন। কিন্তু বিষয়টা তা নয়। কোনো নারী আপদমস্তক মেয়েলোক হলে তার সাথে বাস করা যায় না। সে এক অর্থে অসম্ভব।’ গল্পের এই অংশ পড়ে চমকে উঠে যখন জানতে পারলাম রেহনুমার হাজবেন্ড রেহনুমার কারণে দীর্ঘশ্বাস, তাপ, বেদনা এবং ওর নারী হয়ে জন্ম নেবার কষ্ট ধারণ করতে করতে টগবগে ফুটে ওঠা পানি ও বাষ্পসমৃদ্ধ একটা চৌকোণাকৃতি চৌবাচ্চা হয়ে গেছেন, যা শুধু ধারণ করে আর ধারণ করে তখন পুনরায় চমকে উঠলাম। এরপর আখ্যানের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে বুঝলাম গল্পকার গল্পের এই চরিত্র দুটি নির্মোহ দৃষ্টিতে নির্মাণ করেছেন; যে যেমন মানুষ তার অবয়ব ঠিক সেভাবেই তৈরি করেছেন আর এমনটা না হলে যেন কাল্পনিক আর গালভরা এক গল্পের সন্ধান পেতো পাঠক। গল্পে ফিরি। রেহনুমা একদিন সুটকেস হাতে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে তার বইপ্রেমী, ‘মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থ’ হাজবেন্ড বহু বছর পর নিজের সংসারে একেবারে নিভৃতে সময় কাটানোর সুযোগ পান। কোলাহলহীনভাবে নির্বিঘ্নে দিন কাটাতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তিনি নতুন এক অনুভবের সন্ধান পান আর সেখানেই গল্পের সমাপ্তি ঘটে।
আপাতদৃষ্টিতে সুখী এক দম্পতির জীবনের লুকানো ক্ষত আর কৃত্রিম ভালোবাসায় ঠাসা যুগলজীবনের গল্প ‘অবয়ব।’ ‘অবয়ব’ গল্পের সাহানা আর গল্পকথকের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়েছিল বারো বছর আগে আর তারও আগে পাঁচ বছর তারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের বোঝাপড়া থাকা সত্ত্বেও তারা যখন দাম্পত্যে মিলেছে তখন দুজন দুজনকে যেন দুই মেরুর মানুষ হিসেবে পরস্পরের বাস করছে। এক ছাদের নিচে থেকেও তারা কেউ কারও হতে পারেনি। সাহানার হাজবেন্ড বিশ্বাস করে বিত্ত আর ক্ষমতা মানুষকে অহঙ্কার আর গর্ব উপহার দিতে পারে কিন্তু সুখ সৃষ্টির ক্ষমতা তার নেই। সুখ সৃষ্টির জন্য মানুষের প্রয়োজন। তাই সে সুখের জন্য চামেলীর কাছে সমর্পণ করে নিজেকে।
ভোরের আলো যেভাবে ফোটে ‘অন্ধকার’ গল্পে সেভাবে যেন অন্ধকার ফোটে একটু একটু করে। শুরুতে হালিমার নিষ্ক্রিয় ডান হাত ও অবশ ডান পা, অবসন্ন জব্বারের কাশি আর শ্বাসটান-সব মিলিয়ে এক অসুখী দাম্পত্য যাপনের চিত্র ভেসে উঠলেও গল্প ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয় ভিন্ন বাঁকে। দৈহিক-মানসিক অতৃপ্তির ভেতরে থাকা জব্বারকে এক দণ্ড ছাড় দেয় না হালিমা।’ সে ভিন্ন ছাঁচে গড়া মানুষ যে মানুষ ‘প্রবৃত্তির দোহাইও মানে না। জব্বারের নিষ্ঠা, সেবা আর প্রেমকে বাতাসে উড়িয়ে দেয়া ছাইয়ের মতো ছুড়ে ফেলে বিদ্রুপ আর কটাক্ষে জব্বারকে ভস্মীভূত করতেও দ্বিধা করে না হালিমা। সন্তানসুখ আর স্বামীর নিপাট ভালোমানুষির খোপে আপাত স্বস্তিতে থাকলেও তাই হালিমার সংসারটা ‘কিশোরীর তেলহীন রুক্ষ চুলের মতো’ই দেখায়। এই সংসারের গল্পের বিন্যাস ঘটাতে ঘটাতে লেখকের কলমও ক্রমশ রুক্ষ হয়ে ওঠে, অকপটে সোজাসাপটা ভাষায় তিনি উন্মুক্ত করে চলেন মানুষের নিভৃতে গোপন থাকা একান্ত আপন অন্ধকারকে।
‘বর্ণচোরা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র জলি যখন গভীর গোপন সম্পর্কের জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে তখন গল্পকার লিখছেন, ‘জলির কাছে শরীরটা পাখির পালকের মতো হালকা লাগে। ভেতরে খুশির চিকন ঢেউ। পাগুলো যেন হাওয়ায় ভাসে। মাটির অনেক উপর দিয়ে সে হাঁটে। শরীর মনে এরকম ঢেউ আর কখনো লাগেনি।’ এভাবে নিজেকে নতুন এক পৃথিবীতে আবিষ্কার করে জলি, জড়িয়ে যায় নিষিদ্ধ এক সম্পর্কে। এই গল্পের মূল আখ্যান পাঠক হিসেবে আমার জন্য মোটেও স্বস্তিকর ছিল না। যদিও গল্পের শুরুতেই টোপ গিলেছি, গোগ্রাসে পাঠ করতে করতে একেবারে সমাপ্তিতে চলে গেছি আবার পাঠ শেষে বিস্মিতও হয়েছি, গল্পকার কী করে এত নির্লিপ্তভাবে বর্ণচোরা মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের বর্ণনা করলেন, কী করে তিনি জলির মাতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে করতে আচমকা ওকে উতরে যাবার পথও দেখালেন?
‘শিস দেয়া রাত’ গল্পের সরকারি কর্মকর্তা জাফর আর তার স্ত্রী এনজিওর চিফ কমিউনিকেশন অফিসার সব মিলিয়ে এমন একটা দাম্পত্য যাপন করে, যা নিয়ে তারা চারপাশে ঈর্ষার টুকরো টুকরো শব্দ শোনে এবং কারো কারো দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ পায়। আঠারো বছরের এমন এক নিটোল দাম্পত্য জীবনে অভ্যস্ত নারীটিকে তবু অদ্ভুত একটা হিম ভেতরে ভেতরে শীতল করে তুলতে চায়। একটা জমাট শব্দহীনতা যেন দুজনের মধ্যে ভুতুড়ে সন্ধ্যার মতো পড়ে থাকে। আর ‘বিবর্ণ মরা পাতার মতো কিছু কথা ঝরে পড়ে।’ জাফরের স্ত্রী ‘এই অদ্ভুত, লাশের মতো পড়ে থাকা শীতের উৎস’ খুঁজতে থাকে এবং এক সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে অস্বাভাবিক শীতের উৎসটা আবিষ্কার করে ফেলে। এই গল্পটি পড়তে পড়তে একসময় এই দম্পতিকে পরস্পরের সঙ্গে আশ্চর্য এক সমীকরণে মিলে যেতে দেখি। আবার আশঙ্কাও জাগে মনে, এই বুঝি দুটি মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আসলে সম্পর্ক এমনই এক গোলকধাঁধা, পথ হারিয়ে ফেললে সেখান থেকে হয়তো মুক্তি মেলে না কারও। দূরে সরতে চাইলেও ঘুরেফিরে পুরোনো প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে হয়।
‘বিনিময়’ গল্পের শিলুর বয়স বিয়াল্লিশ। সে ডিভোর্সি। সোনার হরিণ একটা সরকারি চাকরি তার দখলে। চাকরিটা সম্মানজনক। ভালো পদ। তবু শিলু বেশ জটিল একটা সমস্যার ভেতরে দিন কাটায়। পেশাজীবনের সমস্যার বাইরেও শিলুর আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বিয়াল্লিশের শরীর থেকে ওর ‘যৌবন অপসৃত সন্ধ্যার মতো অন্ধকারে মিলিয়ে যায়নি।’ এখনও ওর দেহে মধ্যদুপুরের রোদ আর তাপ। নিজের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সে নেতার দ্বারস্থ হয়, যিনি দলীয় কর্মীদের ত্রাতা, মেধাবী, দরদী ও চৌকস। ‘বিনিময়’ গল্পের নেতা চরিত্রটি গল্পকার নির্মাণ করেছেন সাহসী হাতে। শেষ পর্যন্ত শিলু সমস্যা থেকে বের হতে পারে কিনা, পারলেও কিসের বিনিময়ে পারে- এই সব প্রশ্নের অস্বস্তিকর উত্তর পাওয়া যায় গল্পের একেবারে শেষাংশে।
গল্পকার নূর কামরুন নাহারের লেখা গল্প পড়তে পড়তে মনে হয়েছে তিনি উত্তম পুরুষের বয়ানে গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। হাইরাইজ, ওম, শোপিস, বিছানার বাঁ-পাশটা খালি, অবয়ব, শিস দেয়া রাত- এই গল্পগুলো উত্তমপুরুষে লেখা। গল্পকারের সহজ, সাবলীল বর্ণনাশৈলীর কারণে এই গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে ‘আমি’র স্থানে দাঁড়িয়ে তিনি অনায়াসে তৈরি করতে পারেন যে কোনো চরিত্রের গভীরতা। আর তাই পাঠকও আখ্যানের খুঁটিনাটির সঙ্গে নিজের যোগসূত্র তৈরি করতে পারে।
নূর কামরুন নাহারের গল্পে এই সময়ের মানুষের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব এবং পারস্পরিক বৈরীমূলক আচরণের নেপথ্যের রূপটি প্রকট হয়ে ওঠে। সমাজের নানাশ্রেণিতে অবস্থানরত মানুষকে তিনি যেন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আর নিপুণ কারিগরের মতো নির্মাণ করেন গল্পের শক্তিশালী আখ্যান। এই সব আখ্যান আমাদের চেনা গণ্ডির হলেও আখ্যানের গভীরে লুকানো সংকট আমাদের ভেতরে তাড়না তৈরি করে। তাই গল্পকার নূর কামরুন নাহারের গল্প পড়তে পড়তে আমরা আহত হই, বিমর্ষ হই, আত্মশ্লাঘাও বোধ করি।
নূর কামরুন নাহারের গল্পে এই সময়ের মানুষের অন্তর্গত দ্বন্দ্ব এবং পারস্পরিক বৈরীমূলক আচরণের নেপথ্যের রূপটি প্রকট হয়ে ওঠে। সমাজের নানাশ্রেণিতে অবস্থানরত মানুষকে নূর কামরুন নাহার যেন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আর নিপুণ কারিগরের মতো নির্মাণ করেন গল্পের শক্তিশালী আখ্যান। এই সব আখ্যান আমাদের চেনা গণ্ডির হলেও আখ্যানের গভীরে লুকানো সংকট আমাদের ভেতরে তাড়না তৈরি করে। তাই এই গল্পকারের গল্প পড়তে পড়তে আমরা আহত হই, বিমর্ষ হই, আত্মশ্লাঘাও বোধ করি।