গতানুগতিক সাহিত্যধারার কেউ নন সালভিন। একেবারে তরুণ এই কবি একজন আর্টিস্টও। দারুণ সব ইলেস্ট্রেশন রয়েছে তার কবিতার সাথেই। শ্রীলঙ্কা শহরে সাধারণ তরুণদের প্রতিনিধি বলা যায় তাকে। তার কবিতার প্রধান উপজীব্য প্রেম। যুবক-যুবতীর রক্তমাংসের প্রেম—কামনা—শরীরী desire তার কাজকে অন্যরকম মাত্রা দিয়েছে। সহজ, সাবলীল ইংরেজি তার কবিতার ভাষা। সেই সাথে আছে অ্যারোটিক আর্ট। অন্তর্বেদনা আর আনন্দের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। ফেসবুকে আর ইনস্টাগ্রামে তার নিজের যে পেজ করেছেন, নাম দিয়েছেন ‘thoughtsofsalvin’ মানে, ‘সালভিনের ভাবনাগুলো’। সেখানেই পোস্ট করা আছে কবিতা আর ইলেস্ট্রেশন। আছে স্বীয় কবিতার আবৃত্তি। প্রায় ১০০ কবিতা অনুবাদের পর যখন তার সাথে যোগাযোগ করা হলো, চ্যাট বক্সে জানালাম সে কথা, ভীষণ অবাক হয়েছিলেন।
বাংলা ভাষার পাঠকের কাছে এর স্বাদ কিছুটা বোল্ডিশ মনে হতে পারে ঠিক। তবে কবিতাগুলোর অন্তর্গত আবেদন আর মানব শরীর ও মনের ঐকান্তিক কামনাগুলোর দ্বিধাহীন শৈল্পিক প্রকাশ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। ইংরেজিতে যে বোল্ড কিংবা স্ল্যাং শব্দগুলো অবলীলায় ব্যবহার করা যায়, তা বাংলা সাহিত্যে অনেকাংশেই যায় না এখনো। অশ্লীল শোনায় প্রচলিত পাঠকের কাছে। তাই অনুবাদে অনেকটাই সংযত হওয়ার প্রচেষ্টা যে ছিল আমার এটা অনস্বীকার্য। হয়তো এজন্য মূল থেকে কিছুটা সরেও এসেছে। অবশ্য তাতে যে বিনির্মাণ ঘটেছে তা-ও একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয় বলেই মনে হয় আমার।
আসুন, পড়ে দেখি তার কবিতা।
মেয়েটি জানতে চাইল..
“সবচেয়ে সহজ
তবুও কঠিন
কোন জিনিসটি তুমি চাও আমার
কাছে?”
ছেলেটি উত্তর দিলো
“সম্মতি”..
বিলীয়মান
মনে হতে পারে বিলীন হয়ে যাচ্ছি আমি
অতল অন্ধকারে..
কিন্তু বিশ্বাস করো..
এখনও এখানেই আছি আমি,
এখনও তোমার নাম ধরেই ডেকে যাচ্ছি..
তুমি কি শুনতে পাও না
আমার স্বর? এই যে ডেকে যাচ্ছি এখনও
শুধুই তোমার নাম..
খনন
স্বর্গের নাম করে..
কেনই-বা?
খুঁড়েছি,
আমার হৃদয়,
দাগ বরাবর..
এতো খুঁড়েছি,
এতোটাই যে,
রক্তক্ষরণ ঘটে গেছে,
শেষ পর্যন্ত
তোমাকে
পেতে..
আমারই,
শিল্পে লুকোনো..
বলো আমায়
বলো আমায়..
কেমন অনুভূত হয় তোমার,
আমাকে পেতে, অভ্যন্তরে..
তোমার পাছায়, তোমার হৃদয়ে?
তোমার ভাবনাগুলো
বলো আমায়..
কেমন অনুভূত হয়, আমাকে..
তোমার তলপেটে,
তোমার গলায়..?
প্রায়
আমার
অন্ধকার কোণে..
অসংখ্য অংশে,
সবচে’ বেশি ব্যথার কারণ..
সেই আলোকরশ্মি,
পতিত হয়
একেবারে
স্থানের ও
সুখের,
ফাঁক গলে..
দূরত্ব
তুমি আর আমি
আমরা বসি পাশাপাশি
তবুও আমাদের মধ্যকার
এই দূরত্ব
কখনই বেশি ছিল না
কেননা, সর্বদাই
তুমি ভাবো আমাকে
আর আমি তোমাকে
বখিল
আহা!
শুধু যদি মানুষ তাদের
ভালোবাসার সাথে..
ক্ষমাশীলতার সাথে
বখিল না হতো!!
অন্তত..
তাদের আপন সুখের
স্বার্থে!!!
আমার আত্মার কবি
সে, কথা বলে
আমার আত্মার কবির
সাথে,
সান্ত্বনার শব্দে,
রক্তাক্ত ক্ষতগুলো
পূর্ণ ক’রে ক’রে।
অলঙ্করণ
তার কাছে,
তারা সবাই ছিল তারার মতো..
অলঙ্কার,
শোভিত করে,
পিচ-কালো রাতের আকাশ
চিরকাল তার হৃদয়ে..
এক টুকরো সৌন্দর্য,
তার জন্য একাংশ,
চিরকাল তার হৃদয়ে..
সুগন্ধি
আশ্চর্যভাবে,
পুরোটাই মনে পড়ে আমার—
হলদে ফুলেল জামা,
তারকা শোভিত চুড়ি, সবই—
সবটাই মনে আছে এখনও—
তোমার সুগন্ধির
ঘ্রাণ, আহা..
কীভাবে যে..
ফিরিয়ে আনে সব,
যখন গন্ধ পাই তোমার,
কোনও ঘরে।
স্বর্গ
২৬৩ বোতল রাম,
প্রেমের আরও ৫টি প্রচেষ্টা, এই আমার
পুরো সঞ্চয়,
আর হ্যাঁ, আছে ১০০’রও বেশি হুকআপ..
কিন্তু বিশ্বাস করো, এখনও পর্যন্ত
তোমার প্রেম!
একমাত্র স্বর্গ আমার—
আমার স্বপ্ন।
শয়তান
সে..
ছিল তার কামনা
তার চাওয়া! তাই
মেয়েটা,
নরকের ভেতর দিয়েই এগিয়ে গেল
ছেলেটির বুকে,
যদিও সে জানতো, ছেলেটিই
শয়তান।
কালিময়
কালিময় শরীরটাই যেন
মেয়েটির ভেতরকার এক জানালা;
পাংশুল হৃদয় তার
বিক্ষত আর ভাঙা,
অনুপযুক্ত উপায়ে যারে
স্পর্শ করা হয়েছে,
শুধুমাত্র
শরীরী প্রতিশ্রুতি পেতে; তাই সে
ভেঙে গেছে, মিষ্টি করে
সবচে’
সুন্দর উপায়ে।
সদ্বিবেচনা
তুমি..
আমাকে পাগল করে তোলো,
ঠিক যখনই মনে হয় আমার
আবারও ফিরে পেয়েছি
প্রজ্ঞা,
প্রশান্তিসহ,—
তখনই তুমি..
দু’পাশে ছড়িয়ে দাও তোমার পা!
ভেতরে বন্দী করে ফেল আমায়
আর চাবি ছুড়ে দাও দূরে।
শায়েস্তা
সে তার নখ বিঁধিয়ে আঁকড়ে ধরবে,
আমারে যেতেই দেবে না
আর চিৎকার করবে,
“জোরে! আরও জোরে! আরও! আরও!”
রাঙা-লাল হয়ে উঠবে ও!
ঘর্মাক্ত হয়ে, কোনোরকম বিড়বিড়িয়ে
বলবে আমারে,
“আরও ভালো করে করতে পারতি..”
আমি নিশ্চিত
এরপরও ওর কাছে যেতেই থাকবো
আমার ইগোকে শায়েস্তা করতে।
শালীনতা
ছেলেটি বললো,
“আমি কিছুই চাইব না
তবু দেখবি সবই নিয়ে গেছি”
মেয়েটি বললো,
“তুই! হারামি একটা! সবসময়ই আমার
ভেতরের মাগিটারে
বের করে আনিস,
সমস্ত শালীনতাকে
পরাস্ত করে।”