অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৫, ২০২৫
১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৫, ২০২৫
১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অনিকেত সুর -
অনিকেত সুর – যুগল কবিতা

পাড়ার রাস্তায় এক বেহালাবাদক

এক বেহালাবাদক এসেছিল আমাদের পাড়ার রাস্তায়
ঢ্যাঙা, ডুরে জামা লিকলিকে দেহে, ঢোলা পাতলুন
শীত বিকালের তেরছা রোদের ভিতর বাবরি নাচিয়ে

ঘন কালো যুগল ভুরুর নিচে দূর দ্যুলোকের ধ্যান
বুঝি মোক্ষধামের কেউ এই বেগানা বেঢপ লোকালয়ে
      পথ ভুলে আচানক ঢুকেছে পাড়ায়
জানে তবু মর্ত্যের মর্মে লুকানো ক্লেশ—

তার বেহালার ছড় থেকে চৌদিকে ছড়িয়ে যায় অতল বেদনারাশি
অচিন তড়পানি জাগে এক অবোধ শিশুর বুকে
যেন সে বিরহী নিজে বিচ্ছেদে কার, নুয়ে পড়া লতা

সেই অবেদ্য বেদনার উঠতি-পড়তি বুকে
এক আর্ত বেহালার সুর আজও ওঠে-নামে

আত্মায় খোদিত ছবি, তার গায়ে— চলমান স্থির—
                      ডুরে জামা
                       পাতলুন
                      সঙ্গী বেহালা
                 দু’চোখে দ্যুলোক—
এসেছে কৈবল্যধামের থেকে নেমে
এই কিম্ভূত বেগানা পাড়ায়

 

মাতৃগত

মাকে মাঝে মাঝে কাঁদতে দেখতাম
নতমুখ, বিশীর্ণ দু’গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা
সেই নীরব নত অশ্রুপাতে আমাদের ছোটঘর
বড় বেশি নীরব হয়ে যে

‘কী হইছে মা?’ শৈশব কুতূহলে প্রশ্ন করেছি একদিন, দু’দিন…
‘বুঝবি না তুই, বাবা।’
বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছে মা সরে যেতেন অন্যদিকে…

আমার প্রাত্যহিক স্নানের জলে রোজ
গতায়ু মায়ের নিঃশব্দ অশ্রুধারা মিশে যায়
এবং আমি যুগপৎ শীতল ও উত্তপ্ত হয়ে উঠি

মায়ের চোখের জলের ভাষা খুঁজতে গিয়ে—
ক্রমশ নিজেই মায়ের অবয়ব নিতে নিতে
তাঁর ক্লিষ্ট দু’চোখে আমি নোনাজল হয়ে নামি
             তাঁর শীর্ণ দু’গালে স্পন্দমান
             লেপ্টে থাকি দুইফোঁটা জল
             নির্বাক টলমল জলের শরীর।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

ঈর্ষা

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন, ৬ষ্ঠ সংখ্যা (জুন-২০২৪)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *