অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রওশন রুবী -
সরলা

E:\Anupranan Antorjal 3nd Issue- To Shafik For editing- 3rd Oct 2022\Antorjal 3rd Issue_22.10.2022\10. Antorjal 3rd issue- Boro Golpo-02\rowson.jpg

সরলার গার্জিয়ান বলতে একমাত্র ছোটোবোন। কাছে পিঠে অনেকে আপনজন স্বীকার করলেও বিপদে পড়লে ডুমুরের ফুল হয়ে যায়। দশবছরের ছেলেটা সাতদিনের ডায়রিয়ায় মরো মরো হলো। দেব-দেবীর পূজো অর্চনা, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে জমদূত পরাজয় মেনে ফিরে গেলেন। কিন্তু এই বোন ছাড়া একটা কাক-পক্ষীকেও সরলা ত্রিসীমায় দেখেনি সাত-সাতটা দিন। অথচ বাড়ি এসে ঘরদোর নিকিয়ে স্নান সেরে সবে দুমুঠো ভাত আর একটু পেঁপের ঝোলে হাত রেখেছে। অমনি অনিতা কাকিমা তার চিরায়ত নাকিঃস্বরে চোখের জল নাকের জল এক করে সরলাকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ জুড়ে দিলেন। মনে হলো তিনকূলে তিনিই সরলার একমাত্র শুভাকাঙ্খি। কাঁদতে কাঁদতে বারংবার বললেন,

-যাবার চাইছি; কেউ লয়ে যায় নাই। তয় ভগবানের কাছে দিন-রাইত মাথা-কুটছি। ভগবান এই পাপির কথা শুনছে। পোলাটা ফাঁড়ামুক্ত হইয়ে উঠছে।

ভগবানই জানেন, এই কথাগুলো কতটা মিথ্যে। সরলা অনিতার বেষ্টনিমুক্ত হতে না হতেই এলেন পূর্ণি কাকিমা। যথাক্রমে সন্ধ্যা পর্যন্ত চললো মরা কান্নার রোল আর ভোজ। ভুখা রয়ে গেলো সরলা নিজেই। তার সামনে নেয়া ভাতের থালাটি পূর্ণি কাকিমা পরম তৃপ্তিতে খেলেন। নিমাই কাকা, পরিমল কাকা অবশ্য যাবার সময় বলে গেলেন,

-মারে ভুখা থাকোন তোর আবার সয় না, সময় করে খেইয়ে নিস। এই অভিশপ্ত পেটের জ্বলন সইবার পারি লয়। দুটো আগেই গিইলে লইছি।

সরলা দ্রুত জিভে কামড় বলে,

-কাকা অমন কইরে বইলো না। তোমরা আছো বইলেই ভরসাখান পাই।

মনে মনে বলে, ‘নচ্ছার যতো, হাড় হা-ভাতের দল। তোদের মুখে নরক-অনল। হাঁড়িতে একটা ভাতও রাখেনি। ফের বলছে-খেয়ে নিস! তোদের মুণ্ডু খাবে? মাথা ঘুরছে এদের সামলাতে সামলাতে।’ মুখে মধুর হাসি হেসে হাত জোড় করে মাথা খানিক ঝুঁকিয়ে প্রণাম করে বিদায় জানালো হাভাতেদের সরলা।

আজ অমিয় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে ওর ঘন কোঁকড়ানো চুলগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে মনে ভেসে উঠে নানান কথা সরলার। বছর সাতেক আগে মাছ ধরে ফেরার পথে জলদস্যুর হাতে খুন হয় সঞ্জয়। সঞ্জয় ছিলো যেমন পরিশ্রমী তেমনি হিসেবী। ধীরে ধীরে নিজের একটা নৌকো, এই ভিটে আর দুখন্ড ফসলি জমি কিনেছে । নৌকোটা জলদস্যুরা লুট করলেও রয়ে গেছে ভিটে, ফসলি জমিন। এটুকুই সরলা আর তার ছেলের সম্ভল। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে কোনোমতে দিন কেটে যেতো সরলার। কিন্তু এই শশুর গোষ্ঠীর শকুনগুলোর হাভাতেপনা সরলাকে অতিষ্ট করে তুলছে দিনকে দিন। আর্থিক অবস্থাও পতন হচ্ছে ক্রমেই। ছোটোবোনের কাছে কারণে অকারণে হাত পাততে হচ্ছে। কিন্তু কি করা যায়! একটা উপায় তো বের করতে হবে এ অবস্থা থেকে নিস্তার পেতে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে সরলা।

হরি হরি শব্দে রাতের ঘুমকে বিদায় জানিয়ে সরলার বুক কাঁপতে থাকে। কার কি হলো কে জানে। হঠাৎ রামদাদা ঠাকুরের মুখটা ভেসে উঠলো চোখে। মোচড় দিয়ে উঠলো বুক। তাহলে দাদা ঠাকুর স্বর্গে গেলেন? আহারে বড় ভালো মানুষ ছিলো বেচারা। ভাবতে ভাবতে নিবিড় করে বুকে জড়িয়ে রাখলো অমিয়কে। হরি হরি শব্দের গতি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেল। ভীত ও চাপা শোনাচ্ছে তা এখন। দাদা ঠাকুরের স্বর্গের চিন্তা বাদ দিয়ে অস্থির হয়ে উঠলো সরলা। কি খবর জানবার জন্য মন আকুপাকু করে। ঘরে ঘুমন্ত অমিয়কে একা রেখে বেরুবার সাহস হচ্ছে না ত্রিশ পেরুনো বিধবা সরলার। দরজা ভাঙার শব্দে সরলার বুঝতে বাকি নেই বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। যদিও বাঁশের দরজা ভাঙার প্রয়োজন হয় না। তবু পৌরষ জাহির করে হয়তো ভাবে সরলা।

এ ভাঙা বাড়িগুলো তছনছ করে ডাকাতগুলোর কোন চুলোর উপকার হয় তা সরলা বুঝতে পারে না। শুধু দীনহীনকে আরো পিষে ফেলা। ওদের বৌ-ঝিদের ভোগ করা। ডাকাত পড়ার পরদিন বউ-ঝি-রা অনেকেই অনেকের চোখের দিকে তাকায় না। একসাথে বসে গল্পও করে না। তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সেই গোপন কথাটি জানে বলেই এমন। কিছুদিন পর ফের সবাই স্বাভাবিক হয়। স্বাভাবিক হতে না হতেই ফের তারা আসে। তাই নতুন কিছু নয় ডাকাতদের আনাগোনা। তবু আজ অজানা সঙ্কায় সরলার বুকে কাঁপন উঠে। কি করবে কিছু বুঝে উঠবার আগেই পাঁচজন মুখোশ পরা লোক ঘরে ঢুকে সমস্ত ঘর তছনছ করে ফেলে নিমিষেই। কিন্তু খোঁজা বন্ধ হয় না। এবার বিশালদেহী বিদঘুটে একজন ডাকাত অমিয়কে শূন্যে তুলে আছাড় দেবার ভঙিতে দাঁড়িয়ে রইল। অসহায় ভয়ার্ত অমিয় চিৎকার করতে থাকে। ওর মুখে একজন ওর গেঞ্জি ছিঁড়ে গুঁজে দেয়। সরলারকে উদ্দেশ্য করে পেছনে দাঁড়ানো ডাকাতটি বললো,

-এই শালী ঢ্যাবঢ্যাব কইরা চাইয়া আচস্ কেরে? দলিল, ট্যাহা পয়সা কোন চিপায় লুকাইয়া রাখচস জলদি বাইর কর পুতের জানের মায়া থাকলে। নইলে বাপের লাহান ওরেও জমদূতের বাড়ি পাডাইয়া দিমু।

এই পর্যন্ত শুনেই অমিয়কে ধরা ডাকাত আরেকটু উপরে তোলে অমিয়কে। অমিয় ‘মা’ ‘মা’ বলে ফের চিৎকার করে। সরলা ভগবানকে নামিয়ে আনবার বৃথা চেষ্টায় ভেতরে ভেতরে তড়পাতে তড়পাতে রাম নাম জপছে। শেষ করছে যা এলোমেলো হতে থাকে। হঠাৎ সরলার গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ডাকাতটা ওর গালে দুটো চড় বসিয়ে বলে,

-ওই মাগির ঝি মাগি, টাইম লস করস ক্যাঁরে? বাইর কর! বাইর কর বাইনচোতের বেটি!

এই পর্যন্ত বলে আরেকটি থাপ্পড় উঠাতেই পেছন থেকে সেই মুখোশধারী ধমক দিয়ে উঠে। সাথে সাথে হাতটা নামিয়ে নিলো থাপ্পড় মারা ডাকাতটি। মিউমিউ স্বরে বলে উঠলো,

-ভুল হইছে সর্দার। কাম আগাই লইবার চাইতে ছিইলাম।

অন্য একজন শাড়ির আঁচল খুলতে লাগলো আর তক্ষুণি পেছনের ডাকাত চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

-খামোশ! খামোশ বেজম্মার পোলারা! খামোশ! তোদের সাহস দেইখ্খা আমার মাথাটায় খুন চাপতাছেরে! খুন চাপতাছে মাগির পুত! তোরা জানস না? ওই জানসনারে মাইয়া মাইনসের যন্ত্রণায় আমার সুখ সুখ হয়? তবু সেই সুখে ভাগ বসাইতে চাস? আগে পোলাটার একটা পরিণতি কর। তারপর তার -প -র জলপরীটারে আমি দেখতাছি। কথাগুলো শেষ হতে না হতেই অমিয়কে কোলে রাখা ডাকাত ওকে উপরে তুলে আছড়ে ফেলার জন্য। এমন সময় সরলা ‘না’ শব্দটা শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে উচ্চারণ করে বলে,

-দিচ্ছি! দিচ্ছি! ওকে ছাইড়ে দাও আগে।

-হা-হা-হা-হা। অট্টোহাসিতে ফেটে পড়ে সবাই। সরলা শোকে তাপে জ্ঞান হারালো।

চোখ খুলতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। গালে তুলতুলে হাতের স্পর্শ আর কানে মা, মা শব্দে ধীরে ধীরে চোখ খোলে সরলা। চোখ খুলে দেখে সে মেঝেতে পড়ে আছে। মুখের উপর মুখ ঝুঁকে বসে আছে অমিয়। ওর মাথাদিয়ে ছুঁইয়ে পড়া রক্তের ধারা ডান কানের পাশ দিয়ে নেমে শুকিয়ে আছে গাল অবধি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে মাথায় গলায় হাত বুলাতে বুলাতে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে আর কোনো ক্ষত আছে কিনা। ক্ষতচিহ্নের আর সন্ধান না পেয়ে ছেলের সারা শরীর চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে তোলে। সরলা মনে করতে চায় কি হয়েছে রাতে। হঠাৎ ঘটে যাওয়া সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো। তড়িগড়ি চৌকির নিচে ঢুকে পুঁতে রাখা দলিলের স্থানটির মাটি পূর্বের মতো আছে দেখে যতো দ্রুত চৌকির নিচে ঢুকে ছিল ততই দ্রুত বেরিয়ে এসে চারপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিলো। অমিয় চিৎকার শুরু করলো,

-মা, মাগো কি কইরছো? আমার যে পেট পুইড়া যাইতাছে ভোখে। খাইতে দাও। চৌকির নিচ থেকে বেরিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অমিয়কে কাছে টেনে কানে কানে বললো,

-ও বাপ, বাপরে; কাল ওরা কোন ব্যালা গেইলোরে।

ছোটো অমিয় কিছু মনে পড়ে না। শুধু ঘুম পাচ্ছে আর ক্ষিধে পেট মোছড়ায় তাই গাল ফুলিয়ে মুখ কালো করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। সরলা ছেলের গায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে। এবার সব ভুলে যাওয়া অমিয় বিরক্ত হয়। চোখ ছোটো ছোটো করে সরলার দিকে তাকিয়ে বললো,

-মা তোর কি হইছেরে? আত্মা ধইরছে? দাদিমারে এক ছুইটে লইয়া আহি?

এই বলে দৌড়ে সেস্থান ত্যাগ করলো অমিয়। একা ঘরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে সরলা উঠে দাঁড়িয়ে কাপড়ে লেগে থাকা রাতের ধুলো দুহাতে ঝেড়ে ফেলে। অমিয়কে ডাকে। কে শুনে কার কথা। ও ফিরেও তাকায় না। ক্লান্ত লাগে সরলার। সে স্নানের তৃষ্ণায় ছোটে নদীর দিকে।

দিন কাটতে থাকে সরল নিয়মে। সরলা খায় দায় স্বজনের জ্বালাও পোহায়। যদিও সেই রাতের পর অনেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। কথা বলছে না। যারা ফেরায়নি তারা নিতান্তই অসহায়, নিঃস্ব। মনে শুধু অশান্তির বীজ চারা গজায়। তাকে ভোগ করার খায়েশে তড়পানো ডাকাতের কণ্ঠ কেমন ফর্সা ফর্সা লাগে। চেষ্টায় চেষ্টায়ও মনে করতে পারছে না কোথায় শুনেছে। পূব পাড়ার মন্দির থেকে ঢাকের শব্দ ভেসে আসছে। আজ সপ্তমী, আনন্দ উপছে পড়ছে পাড়ায় পাড়ায়। অষ্টমী আগুয়ান। ছেলের জন্য যৎসামান্য ব্যবস্থাই করতে পেরেছে সরলা। স্বামীর অভাব হাড়ে হাড়ে টের পায় সে। বড় শূন্য শূন্য লাগে। ঘরের দুর্বল বেড়াগুলোর গায়ে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে কতো চিহ্ন সঞ্জয়ের। সেসব তীর্যক বিঁধে বুকে। ঢাকের আওয়াজ মধুর থেকে মধুরতরো হয়।

মনে পড়ে সাতবছর হলো শেষবার এমন দিনেই সঞ্জয় সরলাকে নিয়ে গিয়েছিল মন্দিরে মন্দিরে। তখন কতো কি কিনে তারা বাড়ি ফিরতো যার হিসেব ফুরাবে না। পঙ্কিল জীবনের সব গ্লানী নিয়ে মায়ের চরণে ঠাঁই নিতে পুঁজোর থালা হাতে মন্দিরের পথ ভাঙে সরলা। যন্ত্রণাক্লিষ্ট দূর্বিসহ জীবনের কথা মনে মনে মায়ের সামনে নিবেদন করে নিঃশব্দে অশ্রু ঝরায়। অতঃপর ভরাক্রান্ত হৃদয়ে বাড়ি ফিরতে উঠে দাঁড়ায়। মন্দিরের ফটক না পেরুতে ঢাকের তালে নাচতে থাকা একজন যুবকের গায়ে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে যেতে রক্ষা পেয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে সরলা। অবিকল সঞ্জয়ের মতো। চোখ রগড়ে ফের দেখে। কিন্তু পুঁজো দেখতে আসা অসংখ্য মানুষের ভেতর হারিয়ে যায় যুবক। ভেতরে অনুভূতি ভোঁতা হতে থাকে বুঝতে পারে সরলা।

হঠাৎ হোঁচট খেয়ে টলকে উঠা দেহটা নুইয়ে পড়তে পড়তে সামলালো সরলা। ঘরে ফিরে মাদুর পেতে সটান মাটিতে শুয়ে ভীষণ একরোখা কষ্টটাকে গলা থেকে দ্রুত বের করে দেয়। কষ্টটা চিৎকারে পরিণত হয়ে বাতাসে ভাসতে থাকে। এর মধ্যে একটা চিন্তা মাথায় চেপে বসে। পূর্ণি কাকিমার ছেলে বিরেনকে সেই দশ বছর বয়সে জলদস্যুরা নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেয়নি। ছোটোবেলায় তার চেহারা আর সঞ্জয়ের চেহারায় নাকি বহু মিল ছিল। কাকিমা তাই কারণে অকারণে সঞ্জয়ের কাছে এসে বসে থাকতেন। গায়ে মাথায় হাত বুলাতেন। বুকে জড়িয়ে কাঁদতেন। সেকি ফিরে এসেছে? মন্দিরে দেখা যুবকটি সেই কি? এক ঝলকের দেখা তাই চেনা গেলনা। পূর্ণি কাকিমাকে খবরটা দিতে হবে। ভোরেই খবরটা দিবে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছে সরলা; সে নিজেও জানে না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে উঠে দুটুকরো বাতাসা, একমগ পানি খেলো। আড়াআড়ি শুয়ে থাকা অমিয়কে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে দরজা চাপিয়ে প্রকৃতির ডাকে বাইরে যায়। দূর থেকে ঢাকের শব্দ মৃয়মান শোনায়।

ভোর রাতের জমাট আঁধার গ্রাস করেছে গ্রামটাকে। নিঝুম বন-বাদাড়। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কোথাও লোক চলাচল নেই। সে সময় অমিয়কে এক হাতে ও অন্য হাতে দলিলপত্রগুলোর পুটলি বুকে চেপে দৌড়াচ্ছিল সরলা। তাকে দেখে মনে হচ্ছে হায়েনার তাড়া খাওয়া অসহায় প্রাণি। দৌড়াতে দৌড়াতে প্রাণ বাঁচাতে সীমানা পেরুচ্ছে। ঢাকা যাবার শেষ ট্রেনের যাত্রী হয়ে ট্রেনে চেপে বসে শেষ পর্যন্ত সরলা। তখন তার বুকের কাঁপন দম বন্ধ করে দিচ্ছে। ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। ট্রেনের দরজার দিকে মুখ করে বসে রইল। বিপদ সামনে এলে কী করে প্রতিহত করবে ভাবছে।

রাতে সে কাজ সেরে যখন দাঁড়ালো তখন একটু দূরে গাছের আড়ালে টিমটিমে আলো দেখতে পেল। ‘এখানে আলো কেন?’ ভাবতে ভাবতে থমকে গেল। একটু কান পাততেই বাতাসের পাতলা আবরণ ভেদ করে শুনতে পেল ফিসফিস শব্দ। ঘোরের মধ্যে আরেকটু এগুতেই কিছু মানুষে ছায়া ছায়া অবয়ব প্রতিয়মান হলো। বড় একটা গাছের আড়ালে জনা ছয় মানুষ। কী করছে এরা? সরলার মন ঘর দিকে যাওয়া নয় রহস্যেময়তার আড়াল ভাঙতে প্রতিজ্ঞ। সে ডানে দু-কদম সরে আসতেই মন্দিরে দেখা সঞ্জয়ের মতো যুবককে দেখতে পেল। তার শরীরে বিদ্যুত প্রবাহ মুহূমুহ জানান দিল তার অস্তিত্ব। সেই বিদ্যুৎ তাপে পুড়তে পুড়তে সরলা শোনে সে যুবক তার সাথের লোকদের বলছে,

-আইজ রাইতেই নিখুঁতভাবে কামডা সারতে অইবো। তয় সব ভাগ বটোয়ারা করবার পারবা কিন্তুক ঐ পরীটা আমার। ওর রূপের আঙ্গারে পুইড়া পুইড়া ভাইটার বুকে কোপখান বসাইতেও হাত কাঁপে নাইক্কা। সেইদিন ভাগে পাইয়াও যুইত কইরতে পারি নাই। পরী ভিমরি খাইয়া প্যাঁচখান লাগাইলো। ওর গায়ে কেউ আঁচড় কাইটলে ওই বাইনচোতরে ফাইড়া ফালাইমু। চোখ তুইলা চাইলে- উপড়াই নিমু চোখ। মন্দ কইলে- গলা ধড় থেইক্কা আলগা কইরা দিমু। পিরিতিখান পরীর প্রতি শুরু অইছিলো ভাইয়ের কোলত শুইয়া একবার নদী ঘুইরবার গেইছিলো সেই তখন থেইকা। আরেকখান নৌকায় বইসে জেলেদের চলাফেরা খেয়াল রাইখ ছিলাম, তখন তাগো নৌকা পাশ দিয়া যাচ্ছিল।

এই পর্যন্ত শুনে গাছ খামছে ধরে দম আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধির হয়ে উঠে সরলা। বড় বেশি খোলাসা হয়ে গেলো সবকিছু। কিছুক্ষণ পর মিটিং শেষে ডাকাতেরা ফিরে গেলে সরলা বিড়ালের পায়ে পায়ে ঘরে ঢুকেই ছেলেকে নিয়ে পথ ভাঙে। ভাগ্য ক্রমে ট্রেনটি পেয়ে যায়। বিমলার দরজায় এসে যখন দাঁড়িয়েছে তখন ছোটো ছোটো খুপরি ঘরের জীবনগুলো কাজে বেরুচ্ছে। দরজায় তালা দেখে প্রতিবেশীদের কাছে প্রশ্ন রাখে সরলা। কেউ কেউ নির্ভীকার। কেউ বা বললো জানিনে। প্রায় আসেই না। কাউকে কিছু বলেও যায় না। এক ছোকরা কাছে এসে চোখ মুখে বিশ্রি ভঙিতে হাই তুলে বললো,

-কি হয় তোমার?

সরলা ওর মুখের মদের গন্ধে মুখ ফিরিয়ে বলে,

-বোন হয়।

হা-হা-হা, গগন কাঁপিয়ে কিছুক্ষণ হেসে টিপ্পোনি কাটে। বলে,

-দুজনই বেশ সুন্দরী!

সরলা বুঝতে পারে ফোন করে আস উচিত ছিল। কিন্তু ঈশ্বর জানে সে সুযোগ কতটা ছিল।

বিমলা আজ জানে জীবন মানে নাটক। তাই সে ইটের বুকে হাতুড়ি পেটাতে পেটাতেও ভুলে না রতন থেকে কিভাবে কথা নিয়ে ছেড়েছে। কালকের পর এই রোদের মধ্যে বসে বসে সে আর ইট ভাঙবে না। সে সুপারভাইজার রতনসহ যে ছ’জন মানুষ থাকে এক বাসায় তাদের জন্য বাজার করবে, রান্না করবে। আর তাদের ঘরদোর পরিষ্কারের পাশাপাশি রতনের দেখভাল করবে। সূর্যের প্রখর তাপে পোড়ার পেয়ে চুলার আগুনে পোড়া ঢের ভালো বিমলা জানে। সুখের আঁচে তাই তার মন গুনগুনিয়ে উঠে। রক্তে একটা উন্মাদ শিহরণ উঠে। বিমলার গলা বেয়ে নেমে আসে একের পর এক প্রিয় প্রিয় গানের কলি। ‘আইজ পাশা খেলব রে শ্যাম, আইজ পাশা খেলব রে শ্যাম।’ শেষ হতেই ধরলো ‘বসন্ত বাতাসে সইগো, বসন্ত বাতাসে।’

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সুরের অবস্থা চোরাকাদায় ডুবে যাওয়া বিশালদেহী প্রাণির মতো। ব্যথায় টনটনিয়ে উঠা ফোঁড়ার মতো বিমলার সুরের ব্যথায় চারপাশের শ্রমিকেরা কাতর। মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস কারো নেই। কারণ স্বয়ং সুপারভাইজারের নরম ছায়া আছে ওর উপর। কিছু বলে শেষে কাজটাই না হারাতে হয়। এটুকু তাদের ভয় নয় সত্য বলতে না পারার ঘৃণা। সূর্যের তাপ দ্বিগুণ হচ্ছে। বিমলা অনতিদূরে বড় ছাতার নিচে টেবিলে পা তুলে বসে থাকা রতনের পায়ের কাছে রাখা ঠাণ্ডা পানির বোতলটা লক্ষ্য করে এগিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করেই চুরুটে সুখ টান দিয়ে সরু ধোঁয়ার কুন্ডলি তুলে রতন বলে,

-বিমলা পানির ঝাপটা মুখে দিয়ে আমার সামনে এসো তো।

হতভম্ব হয় বিমলা। মানুষটা কি যাদু জানে? চোখ না খুলে বুঝতে পারলো কি করে বিমলা এসেছে? আর সে যে পানি নিতেই এসেছে? বিমলার এবার নরখাদকের মতো ভয়ঙ্কর লাগে রতনকে। বিমলার দেরি দেখে রতন দাঁতে দাঁত চেপে টেনে টেনে ডাকে,

-বিমলা! ও বিমলা! বি-ম-ল…

হকচকিয়ে উঠে বিমলা। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে রতনেরর সামনে দাঁড়ায়। রতন মনের আঁশ মিটিয়ে বিমলার ভেজা গালে একটা চড় বসায়। আর কুতকুতে চোখগুলো অপেক্ষাকৃত ছোটো করে বিমলার ফুলে উঠা লালচে ফর্সা গালের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আহ্ সুখ পাইলামরে বড়। তুমি সুখ পাইছো বিম?

অপমানটা হজম করে বিমলা। ‘সুযোগ পেলে কড়ায় গন্ডায় শোধ নেবো তখন টের পাবে বাচাধন গোখরার বিষ কাকে বলে।’ মনে মনে প্রতিজ্ঞাটা করেই ভেজা বন্ধ চোখের পাপড়ি খুলে রাক্ষসটার দিকে তাকায়। জানে, অন্যান্য শ্রমিকেরা তার এসময়কে উপভোগ করছে। রতন আবার বলে,

-মাথাটা নামাতো সুন্দরী। জরুরি কথা আছে। সবাই শুনে ফেলবে।

বিমলা ভেতরে ফোসফোস করতে করতে মাথা নামায়। ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

-তোর জন্য একটা মোবাইল কিনেছি বিমলা। রাতে দিয়ে যাবো।

মনে মনে বলে, ‘ভাব কতো সবার সামনে এমন ভাব নেয় যেনো গিন্নি। ইঞ্জিনিয়ার নন্দ বাবুর কথাই ঠিক। এরা প্রশ্রয় পেলে খুব দ্রুত নিজের অবস্থান ভুলে যায়।’

বিকেলে ফিরে ঘরদোর অন্যদিনের চেয়ে গুছিয়ে রাখে। লবণ দেওয়া ইলিশ মাছের পেটিতে কচুরলতা রেঁধে নেয়। নিজেকে ধুয়ে তকতকে করে নিয়ে লিপিস্টিকের গা ঘঁষে রাঙায় ফ্যাকাশে পঁচিশোর্ধ্ব ঠোঁটের অপমান। বারংবার রতনের চড় ওকে অন্যমনস্ক করে দিচ্ছে। এ কেমন অভ্যাস ভেজা গালে ঠাসঠাস চড় বসাতে হবে?

 

কাঁচকলা, লালশাক, লাউ, রুই মাছ, কুঁচোচিংড়ির ব্যাগটা নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন গেইট পার হল বিমলা। উত্তরে পাঁচ মিনিট হাঁটা রাস্তা পার হয়ে নারায়ন ভিলার দোতলায় উঠে আসে সে। সকাল আটটা পঁচিশে ঘড়ির কাঁটা তখন। বাজার প্লাস্টিকের বড় চালনে ঢেলে পৃথক করে রাখতে রাখতে তাড়া দেয় রতনকে,

-এই উঠো! উঠো! কাজে যাবে না?

রতন ঘুম কাতুরে আদুরে গলায় বলে,

-হোক দেরি তোকে একটু মন ভরে দেখি আমার ময়না!

বিমলা বিড়বিড় করে। কানে নেয় না রতন। শোবার ঘর থেকে রান্নাঘরের নাড়ি নক্ষত্র সবই দেখা যায় দেখে বিমলা খুব খুশি। চিংড়ির খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে রতনকে জিজ্ঞেস করে,

-বাড়ি কবে যাবে?

-তুই যেদিন মরে যাবি।

নির্লিপ্ত উত্তর দিয়ে দীর্ঘক্ষণ বিমলার মুখে কি যেনো খোঁজে।

-ইস্! রঙ! ঠোঁট বাঁকায় বিমলা। পুরুষ মানুষের এসব ভাবের অর্থ আমার অজানা নয়। বলেই খিলখিল করে হাসে।

-তোর দেহটা জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করে বিমলা।

-কে মানা করেছে! দাও! বলে এমনভাবে ম্যাচটা বাড়িয়ে ধরলো যে রতন পুরো হাতটাসহ বিমলার দেহটা কাছে টেনে বলে,

-আজ শুক্রবার। তোর মনে নেই বিমলা! এই ঘরে থাকা অন্য ছ’জনকে কৌশলে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। পুরো পরিবেশটা আজ তোর।

সেই যে বিমলা এলো ইট ভাঙা ফেলে। সেই থেকে গত সাতমাস ধরে বাড়ি যাবার কথাটা একবারও ভাবেনি রতন। শুধু ভেবেছে গরিবের ঘরের পদ্মফুল স্বামী পরিত্যক্তা বিমলাকে কি করে খুশি করা যায়। আরো কতোটা বেশি সময় কাটানো যায় ওর সাথে। বিমলাকে ছাড়া আজকাল অসহায় লাগে রতনের। ওর মধ্যে কি আছে যা বেনুবালার মধ্যে নেই ? যৌবন, সৌন্দয, গুণ? হ্যাঁ ঠিক এসবই আকৃষ্ট করে রতনকে।

দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে বিমলার দেখা নেই দেখে সরলা পুটলিটা থেকে যত্নে রাখা বোনের নম্বরটা বের করে এবং পাড়ার দোকানে গিয়ে ফোন করে। বিমলার ফোনটা বন্ধ, চিন্তায় পড়ে যায়। এখানে আরো কয়েকবার আসায় সরলা অনেক কিছুই চেনে। পরদিন দুপুর নাগাদ বাড়ি ফিরলো বিমলা। সরলা ছেলেকে নিয়ে বিমলার পাশের ঘরের মেঝেতে আধো জেগে আধো ঘুমে রাত পার করেছে। বিমলা বোনকে দেখে চমকে যায়। বোনের মুখে সব শুনে বিচলিত হয় এবং সাহস দেয় বোনকে। অনেক চিন্তা করেই পুলিশকে রিপোর্ট করে ওদের ধরিয়ে দিবার ইচ্ছাটা বাতিল করলো তারা। অন্য এক ম্যাচে রান্নার কাজটা দুদিন পর বোনকে জুটিয়ে দিতে পেরে বড় নিশ্চিত হলো বিমলা। ছেলেকে পাশের স্কুলে ভর্ত্তি করিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। কিন্তু বছরের প্রায় শেষ সময় টিসি নেই দেখে আপাতত ভর্তি না করাতে পারলেও প্রধান শিক্ষক বলেছে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে নিবে। হোক বয়স উপরের শ্রেণিতে পড়ার তাতে কি শিক্ষার কোনো বয়স থাকে না বিমলা আজ এটুকু বুঝে।

মা হতে না পারার ব্যথাটা বিমলার ভেতরে ফণা তুলে থাকে। সুযোগ পেলেই ছোবল হানে আর বিষে বিষে নীল করে বিমলাকে। কিছু কিছু পথ চুরি হয়ে যায় জীবন থেকে। কিছু কিছু সম্পর্ক অনিচ্ছায়ও ষোড়শী রমনীর মতো তরতর করে সিঁড়ি টপকিয়ে উঠে যায়। উঠতে উঠতে পেছন ফিরে দেখে না । দেখে না কতো পথ যেতে পারবে। জানে শুধু ভাঙতে হবে সিঁড়ি। সেরকমই বিমলা ও রতনের সম্পর্কটা সিঁড়ি টপকে উঠে। উঠতে উঠতে বিমলার বমি পর্যন্ত পৌঁছায়। প্রথম যখন সংবাদটি শুনে রতন স্প্রিং এর মতো লাফিয়ে উঠে। বিমলাকে লাত্থি মেরে খাট থেকে নিচে ফেলে পেটে বাঁশ দিয়ে গুতিয়ে ভ্রুণ নষ্ট করতে ইচ্ছে করে। কিছুদিন পাগলের মতো এ ক্লিনিক ও ক্লিনিকে ঘুরে যখন কোনো সুরাহাই করতে পারলো না তখন গভীর ভাবনায় পড়ে গেলো। বাড়িতে বেনুবালা আছে। যেকোনো দিনই, রতনের বংশধর পয়দা করতে সক্ষম নয়।

আজ তাদের বিয়ের প্রায় পনেরো বছর। কবিরাজ, ডাক্তার, পরীক্ষা নিরীক্ষার কিছুই বাদ দেয়নি রতন। শেষবার গত বছর পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেলো বেনুবালা কোনোদিন মা হতে পারবে না। এটি শুনে অনেক কেঁদেছে বেনুবালা এবং কান্না যখন পাথর হলো সেই উঠে পড়েছিল বিয়ে করাতে রতনকে। এক সময় ওর জ্বালায় বিরক্ত রতন, ঘর ছেড়েছে। অভিমানী বেনুবালা প্রায় ফোন করে। কিন্তু রতনকে একবারও বাড়ি যেতে বলে না। শুধু বলে বংশধর আনতে হবে। তুমি একটা বিয়ে করো। রতন যতোই বুঝায় বিয়ে করলেই কি তার সন্তান হবে এমন গ্যারান্টি আছে? ওপাশে বেনুবালা হাওয়া ছেড়ে দেওয়া বেলুনের মতো চুপসে যায়। রতন বহু ভেবে কাজী অফিস বিমলাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে আগত সন্তানকে স্বীকৃতি দেয়। ইদানিং নিজেকে স্বার্থক পুরুষ ভাবতে শুরু করে রতন। বিমলা বিয়ের দিন থেকে চড় খাওয়া গালে আপন মনে হাত বুলায়। ভেতরে ফোসফোস করতে থাকা সাপটা প্রতিশোধ নিতে পেরে মরে যায়।

সরলা ম্যাচের রান্না শেষে ঘরদোর পরিষ্কার করে কাপড় ধুচ্ছিল। যদিও শুরুতেই কথা ছিল রান্না করার। ধীরে ধীরে অন্য দায়িত্বগুলোও নিতে হয়েছে সরলাকে। এজন্য অবশ্য বাড়তি টাকা তারা দেয়। কলিংবেলের শব্দ হচ্ছে, খুলে দিতে হাত ধুতে ধুতে আরো তিনবার শব্দটি বাজলো। যে এসেছে তার খুব তাড়া বুঝতে পারে সরলা। সে দ্রুত দরজা খুলে দিয়ে গোমটা টেনে পাশে সরে দাঁড়ায়। ড্রাইভার বরকত, নিতাই ও তাদের এক নতুন বন্ধু এসেছে। গোমটার আড়াল থেকে যাকে দেখেই সরলার বুক শুকিয়ে মরাগাঙ হয়ে গেলো। থরথর করে পা কাঁপছে। সে কাঁপন যাতে সরলার মধ্যেই থাকে যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে ভেতরে ভেতরে। কারণ ওদের বন্ধুটি যে তারই চিরশত্রু। আর চিরশত্রু তো জানে না সরলা তাকে চেনে। ওরা সরলাকে খেয়াল না করে ভেতরে চলে যায়। সরলা প্রতিশোধের নেশায় ভেতরে কাটামুরগির মতো ছটফট করে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কোনো প্রমাণও নেই তার কাছে। সে জানে যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য শুধু শক্তি নয়, মনোবলও চাই। প্রস্তুতি নিতে হবে প্রথমে। তাই পেছনে সব ফেলে ফের সামনে পা বাড়ায়।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

রীতা ইসলামের যুগল কবিতা

Read Next

শিকড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *