অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ১৯, ২০২৪
৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ১৯, ২০২৪
৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মীর আবু রাইয়ান – গুচ্ছকবিতা

মা বিজয়া

তুমি হলে মা

ঠিকঠাক গলায় তুলতে পারলে

অনেক সুন্দর শোনায়,

আবার তীব্র মা রাগিণী

তার উপর ভর করে

স্বরের মালা সাজাই,

কত সুরের খেয়াল

তোমাকে আশ্রয় করে গড়ি।

ছোটবেলার সেই খেলনার আবদার

এখনো যায়নি, এখনো সেই চিকন ব্যথা

খেলনা আদায় করার ব্যথা,

এখনো অনেক পরিচিত!

শিশুর হাতে খোল

আপন হাতে খেলে যায়

বেহাগের তানে বিজয় ছবি,

বিস্ময় চোখ নিয়ে দাড়িয়ে রই,

অধরা সেই মুখ খুঁজে যাই!

সকল প্রাণেই মিশে আছে

সব ফুলের গন্ধে মায়ের সুর!

অরতির লগ্ন বয়ে যায়

তোমার মুখ ছুয়ে অঞ্জলি দেইনি,

মাটির দেহ জাগে জলের টানে।

রং খেলা হলো শেষ

তুমি যাবে চলে,

হৃদয়ে তাই ব্যথা উঠেছে

নৃত্য করে ভোলাই তারে।

আকাশে আজ ভীষণ চাপ

ভিতর বাহির ভীষণ আনচান,

হৃদয়ে খুব অস্থির চলাচল।

রাই কিশোরী মেয়ের নাচন!

আকাশের পুষ্পকরথ

মা চলে যায় বন্ধু, চাঁদ ডুবে যায়।

অসুখ

করোনার ভূত কেড়ে নিয়েছে

সংসারের সুখ,

পৃথিবীটাকে করেছে

আরো একটু স্বার্থপর…

ঢেকে দিয়েছে মাস্কে যত চেনা মুখ,

অসহ্য গরুর মুখের টোনা।

নতুন সংসার বেঁধেছিল যে ছেলেটা

ডাইনিং টেবিল আর বউয়ের আদর

রয়েছে অনেক দূর দূরের দেশে।

নীলাঞ্জনা প্রতি ক্লাসে পড়ে আসে

সাদা কাপড়ে পেঁচানো মাথা

চোখ দুটো চেয়ে থাকে

হাতে পায়ে কালো মোজা।

সংসারের খরচ বাঁচতে

ছেলেটা একবেলা খেয়ে নেয় অফিস

নাভিশ্বাস উঠে গেছে পাঠাওয়ের ড্রাইভারের,

কুকুরের মরার জায়গা নেই এই শহরে

তবু নানা চরিত্রে অভিনয় সারাবেলা।

হকার ছেড়েছে প্রিয় শহর

প্রিয় মানুষ ছেড়েছে পৃথিবী

অনেক বালিকা ছেড়েছে স্কুল

বাবা হাত পা বেঁধে দিয়েছে বিয়া।

মানুষ চিনেছে সম্পর্ক

বাপ ছিনেছে ছেলেকে

মা চিনেছে মিয়েকে!

তারপরেও জয় করব

ভালোবাসা দিয়ে পুরো পৃথিবী

যতই থাকি ক্ষুধার্ত আমরা।

মোনালিসা

মোনালিসা তোমার সব রঙ নিয়ে

রাঙিয়ে দিও কোনো পথিকের পথ,

আমি চিনেছি কি তুলির আঁচড়ে

এই পৃথিবীর রহস্যঘেরা আশ্রয়ে,

তোমার ঐ উচ্চ মানমর্যাদাসম্পন্ন

মনের গভীরতা, হৃদয়ের সৌন্দর্য?

তুমি কি পারো না স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো

ক্যানভাস থেকে বের হয়ে মশাল হাতে

পৃথিবীর অন্ধকার মহলের কিশোরীর

পাশে স্বাধীনতার আশা হয়ে দাঁড়াতে,

দেবীর মতো ওদের দিকে

আশীর্বাদ দৃষ্টি দিতে।

আমার গোলাপে কান্না লুকিয়ে রয়

সারা গায় সভ্যতার ধুলাবালি

শিশুর কান্না, চাইল্ড এবিউজিং

বোবা আর্তনাদ নেচে যায়

সকাল সন্ধ্যা গান গায়

বেসুরো গলায়!

ভিঞ্চির মতো দৈর্ঘ্য প্রস্থে বাঁধব না ক্যানভাসে

তবে হাত বাড়ালেই পাবে পথ শিশুর ছোঁয়া

একটু ভালোবাসা পেলে ওরাও হতো

নীল আর্মস্ট্রং কিংবা বোদলেয়ার, ফ্রয়েড,

একটু সুযোগ পেলে মেসি রোনালদো নেইমার,

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার কিংবা আইনস্টাইন!

তোমার নানান রঙে রাঙিয়ে দিয়ো ভবিষ্যৎ শিশুদের।

মাদার টেরিজার মতো নির্মল হৃদয় দিয়ো

শহরের যত স্থ অসহায় বৃদ্ধ অনাথদের

তোমারই জয়যাত্রা অব্যাহত থাক।

তোমায় দেখে বাঙালি সেবা করতে শিখুক!

প্রেমই দম, দমই প্রেম

তোমার মতোই কে জানি ডেকে যায়

ধ্রুপদি কীর্তনের সুরে দিগন্তের ওপার থেকে,

তোমারই আঁচলের স্নেহ বাংলা মায়ের কোলে,

যেন এ প্রেমেই আমি কতবার দম নিয়েছি।

বন্ধু বিনে এই সুখ কারে কই

লিলুয়া বাতাসে তৃষ্ণা মেটে না,

জীবনবৃক্ষের মতো ডেকে যায়

বৃদ্ধের চোখ নিয়ে আমি হেসে যাই,

দম নেই দম নেই, প্রেমের দম নেই।

বসন্তের সাজে চলো সাজি

নদীর এপার ওপার বদল করি

প্রেমের রঙে লেখা আছে,

বাতাসের তীব্র নেশায়,

দম নেই দম নেই

প্রেমের দম নেই।

কপালে লেখা আছে

কবিতার মাঠে দেখা হলে

যেমন খুশি ফসল বুনো,

আমার বুকে মায়ার চাষ

যৌবন যার শাওন মাস।

তুমি জীবনের সাধনা, সময় করে এসো না

ধানের আইলে বসে একটু হেসে যাও,

যে শিহরণ জাগে, সে আনন্দের দাঁড় ধরি।

মিলনের গান গাই চলো

বৌদ্ধ ভিক্ষু হতে পারব কিনা জানা নেই

তবে বাংলা মায়ের খাঁটি ছেলে।

চল আয় প্রেম করি

তোর আঁচলে গন্ধ মাখি

চল আয় কথা বলি

রূপের আবেশে ডুবে যাই

তোর বুকেতে বুনি

এক হাজার একটি পদ্ম

তোকে কোলে করে

পার হব ব্যথার নদী!

তোর আঁচলে বাঁধবি

সুখের পায়রাগুলি!

দুঃখের নদী আমায় দিবি,

প্রেমের তরে জাগি!

সরদার

শত বর্ষের বিরহ গীত

আমরা প্রাণের যমুনায় মিলে

ঝংকার তুলি গিটারে,

দেখা হবে সুরের মোহনায়।

সবুজের মাঠভর্তি

ফসলের ন্যায্য দামে।

মিছিলে বৈষম্যের প্রতিবাদে

পাশে পাবে বন্ধুর পথে,

দেখা হবে নদীর পাড়ে

ফসলের নায্য দামে,

শ্রমিকের মজুরির খুশিতে।

যারা ঈশ্বর কে খুশি করতে চায়

তারা যায় মন্দির মসজিদে গির্জায়,

আমি আজও খুঁজি মানুষের ভিরে

খোদা ভগবান যিশুকে চিনতে।

যারা ক্ষমতা চায় তারা যায়

পার্টি অফিসে, দলে দলে লড়তে,

মানুষ হয়ে মানুষ ঠকাতে

গুণ্ডা পুষিয়ে রাখতে হয়

ছাত্র দিয়ে ছাত্র পেটাতে।

চলো বসন্তের সাজে সাজি

টগবগিয়ে খুন সমর বেশে

এখন আমি জানি বন্ধু

কেমনে ভাঙতে হয়

শত্রুর ঘাটি!

দেশে কবি শিল্পী মাইর খায়

নায়িকারা হাজত খাটে।

দেশে আমলা, মন্ত্রী, মিনিস্টার

পুলিশ সব এক থালে খায়।

দল দল করিস না

দলের নেতাকে মারি না!

চোরের মায়ের বড় গলা,

আদমখোর সব হালা।

ডুবি ডুবি

আগুনের দিকে তাকালে

মনে হয় ফুলের ডালা,

হৃদয় প্রেমের গণতন্ত্র

সত্য যখন তোমায় চুমু খাই

বোধি প্রাপ্ত হই চাঁদনি রাতে।

একাল সেকাল পেরিয়ে আনি

ভালোবাসার ফাল্গুনী মন্ত্র,

জ্বলবে যখন বিরহের বাসনাতে

বাজাব অমিয় সুর

নদীর পাড়ে প্রার্থনারত!

ধ্রুব তারার পতন রোধে

নক্ষত্রের পানে ছুটব,

সূর্য গ্রহণ কালে,

রোদ মাখব চোখে।

একটি পায়রার প্রাসাদে নৃত্য

হৃদয়ে শুধু মরুভূমির তৃষ্ণা!

দোলা দেয় আকাশে

ঋষির কামনার বনে ছন্দ।

চাঁদের আলো নিভে গেলে

তারার পানে চেয়ে দেখ

সুখ তারা কথা কয়

এই শূন্যতা গ্রহণ করো!

ছন্দে হাসে সপ্ত ঋষির মণ্ডলপাড়া

দিকনির্দেশ করে অপার্থিব।

গুরু ভাব

এই শূন্যতা গোগ্রাসে পান করা ভালো,

নর্তকী কিংবা নায়িকাদের

পাশে থলথলে মাংসপিণ্ডের চেয়ে

গুরুর প্রেমে মিষ্টতা ভাগ করে নেয়া ভালো

তারানা ধ্রুপদে ভেসে যাওয়া ভালো।

ওড়া জানে না গুরুরা ইশ্বরপুত্র,

পৃথিবীর ডাইনোসর মানুষ করে

রাখাল হয়েছি পৃথিবীর পথে,

এখন বটগাছের ন্যায় করুণাময়,

পাখি সাপ বিচ্ছু সব বসত করে এই দেহে,

জানে না আমরা তো অনেক দেখেছি

এইসব শূকরের মহাউৎসব।

রাত্রি দিন তাড়া করেছি

বড় বড় গরু আর বকরির পাল।

মৃত্যুকে আরেক মুক্তি করে

ধ্যানের ঘরে আমৃত্যু স্বাধীন হচ্ছি!

গলায় পরেছি মার জয়ের মালা!

ভাবের ঘরে সারা জীবন

চুরি করলি রে লালন,

বুদ্ধকে চিনলি না মীর!

শিল্প মানে আসক্তি

জানলি না তোর ঘোড়াকে,

সারা জীবন ছায়া দেখে

ছুটলি রে পিছে পিছে,

লোকে বলে মন্দ স্বভাব তোর,

দমের ঘরে কষে টান দিয়ে বয়

উঠিস না আর ভেসে, দুলুক দুলে হৃদয়!

গুরুর হাতটি শক্ত করে ধর— অবোধ!

 

Read Previous

রূপান্তরের গল্পগাথায় কঠিন বাস্তবের আবরণে অতলান্ত বিষাদ

Read Next

রুদ্র সুশান্ত – যুগল কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *