বিদীর্ণ সবুজের ধুকপুক
দৃ্ষ্টিতে চাই মন্দাকিনীর স্ফটিক শুদ্ধতা
চাই কন্টক শয্যায় বিষহরা শুভ্রতা।
অথচ হাত বাড়ালেই চৈতন্যের খেয়ালি ঝড়ে
সমস্ত অভিজ্ঞানে শত ক্ষত চিহ্ন ঝরে পড়ে।
নিষুপ্ত জীবনের প্রাচীন দেয়ালেও উন্মুখ
লটকে থাকে বিদীর্ণ সবুজের ধুকপুক
ভেসে থাকে কাগজী নৌকোর মতোন
দুরন্ত ভাসানিয়া আবেগী ক্রন্দন।
ভেতরের ভাঙচুরে শুনি বেহাগী স্পন্দন
ঠোঁটেও জমেছে দেখি পোড়া মন চন্দন।
বিমূর্ত আভাস
অথচ এই ভালুক জ্বর সময়ে
টুকরো মানুষের লাশগন্ধ ভাঙচুর নিয়ে
ঢের প্রশ্ন তোলা যেত।
মননে পুঁতে রাখা ভ্রূণের জন্ম সম্ভাবনা নিয়ে
সঘন উচ্চারণের লগ্ন বয়ে গ্যালো।
ধীর পায়ে নেমে আসা কুয়াশা সন্ধ্যার মৌনতা
শেষমেশ ভাষা পেতে পেতে আর পেল না।
ইচ্ছে-অনিচ্ছের দ্বান্দ্বিক সমীকরণে বরং
অনর্থক কথকথাই মোটা দাগে
শক্ত জমিন পেয়ে যায়। আর আমাদের
হৃদিবলয় থেকে জন্মে যে বোধের আকর
তার ভেতরে মূলত কোনো ভাষা থাকে না,
থাকে শুধু খুচরো হিসেব-নিকেশ, আর
কথামালার বিমূর্ত আভাস।
যেতে হলে যাবো
যেতে হলে যাবো ফের বুক জলে নেমে
তোমাকেও আটকাব কৈশোরী ফ্রেমে।
উলটো হাওয়ায় দুলে বিকেলের কাশফুলে
সাজাব দুর্বা শরীর আদুরে আঙুলে।
যেতে হলে যাবো শেষ পথেরও শেষে
পাহাড়ী ঝর্না মেঘের কোল ঘেঁষে ঘেঁষে।
জানি যে ওপারে নেই তুমি কুহকিনী
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবো তবু হিম জাফরানি।
যেতে হলে সাথে নেব জোছনা পুকুর
নেব মৌন চেখের সাথে মুখর মুকুর।
মৃত জোছনার খেলা
উজানি রাতের উলটো ধারায়
আমি রাহমান আর পদ্মা পাড়ের শিরিন বানু
যখন উদয়াস্ত অপেক্ষমান
তখন নিয়তি যেন বিস্মিত বালক, দিগন্তে নতজানু।
শিরিন বানু জলহীন তরঙ্গের মুখে স্তব্ধতায় লীন
আর আমি শহুরে মাঝি-শ্যালো নৌকোয় চেপে
মৌ মৌ ফুলের গন্ধ মেপে মেপে
‘যাবো কি যাবো না’ দ্বিধায় বিমূঢ় শব্দহীন।
বেহুলা শিরিন বানু তখনও ভাসিয়েছিল নিরুদ্দেশের ভেলা
সাথে ছিল তার লাশগন্ধ প্রেম, ছিল মৃত জোছনার খেলা।
শব্দের কৌলিন্য
কতিপয় কুলীন শব্দ এখন যাচ্ছেতাই। বিবস্ত্রও বলা যায়।
ধরা যাক ভালোবাসার আদিম শব্দটি। সেই কবে কৌলিন্য
হারিয়ে বসা এই শব্দটা এখনও নিষ্ফল ওম্ দেয় নষ্ট সব বিশ্বাসে।
চোখের ভূপৃষ্ঠে জলজ হামাগুড়ি দিতে দিতে শব্দটি এখন
না টানে কৃষ্ণচূড়া, না টানে নারীর পাঁজর। ‘স্বপ্ন’ তো এখন
কেবলি বদ্ হাওয়া। রাতে কিংবা দিনে সে শুধু ঘুমই পাড়ায়, যদিও তার তাড়াবার কথা ঘুমকেই। ভীষণ রাক্ষুষে ‘ক্ষুধা’ সমস্ত সৌন্দর্য খেতে খেতে এমনই ঢাউস যে তার এখন সুগারের ঘনত্বে ঘন ঘন পেচ্ছাব পায়। অথচ এই ‘ক্ষুধা’ই অমোঘ সৃষ্টির
চমৎকার একটি প্রতিশব্দ হতে পারতো। কিন্তু সৃষ্টির সাথে জড়িয়ে যে ‘বন্ধ্যাত্ব’ তাকে খণ্ডাবে কে? এইখানে
‘মানুষ’ শব্দটি খুব প্রাসঙ্গিকতা পেয়ে যায়। কিন্তু মানুষের বন্ধ্যাত্ব নিয়েও তো ঢের প্রশ্ন। বন্ধ্যাত্ব তাকেও গিলে খাচ্ছে অবিরাম।
তবে ‘মানবিক’ শব্দটি অর্থবহ হলে কাকধোয়া বৃষ্টি তার সফল
অনুষঙ্গ হতে পারে এবং তাতে অন্তত ‘মানুষ’ শব্দটি
একটি সম্পূর্ণ শব্দ হয়ে উঠতেও পারে এখনও।