অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৬, ২০২৪
২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ৬, ২০২৪
২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শম্পা মনিমা-র গুচ্ছকবিতা

স্বপ্নের সব গল্পরা

কথার ভাঁজে টান ধরা মনে সবটুকু জল বিষিয়ে যায়নি
বুকের চারপাশে এখনো রক্ত হিম হয়নি
স্মৃতির ঘড়িতে পুড়ছে দগদগে মাঘের শীত
চোখের কোনে জল পুড়িয়ে ফেলতে হবে
লেশ রাখতে নেই।

স্বপ্ন বাড়ি পড়ে খসে ঘুমন্ত আঁধারে
ঘুম কেড়ে নিয়ে শুকতারা খাঁ খাঁ ভোরে
অপেক্ষায় মন আজকে আর নেই
ঘুরন্ত পৃথিবীতে মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত
দিন গুনে যায় রাস্তারা, আঘাত অনিবার্য-নিয়তি।

লক্ষ্য স্থির, নদীর মতোই নির্ভার লেপ্টে থাকে
শ্রাবণের সাঁতারে পানকৌড়ি ডুবে যায় না
মন খারাপের ভিড় বুকে যদি কিছু চরা পেতো
শোক সাগরে স্নানে মৃতশোক
আগলে নিতাম আমি।

মল্লার

বদর মনে বাজে দিমিদিমি সুর
এ হাওয়া শরীর তোমার ভিজায় নিষাদ সেতার
গোপনে দিয়েছো প্রেম, পরিপূর্ণ পরিমিত
মুঠো ভরে ধরে রেখেছো। সময় সীমিত।

জলছুঁই বিষাদসখা। গাল বেয়ে নামে।
মৃত্যুরও ডাক আসে…বিচ্ছেদ-খামে।

কদম কুসুম বাস

রোদ্দুরও এখানে কম ছায়ায় ঢাকে
বিমুখ চরাঞ্চল
হাতধরে টেনে আনে ভালোবাসার দোহন
গহীনে জাগরী যমুনা দীর্ঘ মধ‍্যরাত
ধূসর চোখে জেগে থাকে অন্য চোখ উত্তাপ

পরিকল্পিত নতুন গাঙে ডুব দেওয়া
মেঘে ঢাকা তারাদের
শেষমেশ প্রশ্রয়ে বাড়-বাড়ন্ত আষাঢ়
ভুলতে দেবে না, এতো নিশিথ প্রহরের তৃপ্ত নিয়ম
কিঞ্চিলিক জৈবিক  ফিসফাস ।

কথা রয়ে যায় বাকি

ঘুমের মধ্যে ছুটি চাই এমনই কথা ছিল,
তুমি এমন রাতে শোনাবে গান
জেগে থাকা
রাতভর- শুধু বৃষ্টি,
শুধু বৃষ্টি,
যে বৃষ্টি ধারায় দিন শেষ হয়ে যাবে
থাকে না মহান কিছু
আমিও চুপ তুমিও চুপ,
সঙ্গী বলতে তুচ্ছ একনদী ভালোবাসা
পাতায় পাতায় শব্দ অবিশ্রান্ত জল
ডিসেম্বরের শহর ঢের যুগ কাটিয়ে দিলো
তখন ছিল চোখে স্বপ্ন-ঘুড়ি,
বুকে হাওয়ার টান
আজ নেই
মৃত সব হাত

ইচ্ছে ছিল বসন্তের জানলাগুলো
হলুদ দলে অনেক দিন সূর্যে মিশবো
ইচ্ছে ছিল আড়ালসুখ লতাপাতা
ছুঁয়ে দেবে হাত বাড়ানো…

ইচ্ছে-পাখি বন্দি এখন পিরামিড মাইনে
আর ওড়ে না শিস দিলেই
দিশেহারায় সরিয়ে দেখি তোমার নাম-
কোথাও নেই!
তোমার আমার রোদের কণা লক্ষ তারার ব্যবধান
ক্লান্ত সাঁকো
ঢের যুগ কেটে যায়
প্রীতি নেই-আজ নেই-কোথাও তারা নেই

এমনই কথার প্রয়াস রয়ে গেলো
পাশাপাশি আমাদের নগরীতে আসবে নাকো
একই স্বপ্নে বলাশোনা রয়ে যায় বাকি।

সারেঙ্গী মেঘ

নিশি জুড়ে মেঘের সারেঙ্গী বাজাচ্ছে
ব্যথাঘন পুরনো মায়ারা যতো
লেপ্টে থাকে আঁধার গাছে গাছে, লতা বনে
তোমাকে সরাবো সে সাধ‍্যি কি আছে?

আধখোলা জানলার বারণ ঠেলে
মুখ ভার নিয়ে আসে ফিরে
বুক তেপান্তর জুড়ে আছাড় কাঁদন
হাওয়ায় ঢাকি অভিমানী আঁচল

পক্ষকাল ধরে চেয়ে থাকি
বারান্দার ওপাশ থেকে আয়নায় জলছবি
ইচ্ছে হয় তাকে ছুঁই
ছুঁয়ে দিলেই যেন বলে উঠবে কথা!
যেখানে মুখের কথারা রয়ে যাবে চুপিচুপি

ভিজেছে যতো মনের আকুলি বেশ
সব কথা আর দেখা একদিন হবে শেষ
তার সব অভিযোগ কাঁধে নিয়ে
আমিও হবো নিরুদ্দেশ ।

 

Read Previous

রীতা ইসলামের যুগল কবিতা

Read Next

শিকড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *