অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ১৪, ২০২৪
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ১৪, ২০২৪
৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোহাম্মদ হোসাইন -
মোহাম্মদ হোসাইনের গুচ্ছ কবিতা

জীবন

যেন রাফখাতা
এলেবেলে লিখে রাখে সব

কতকিছু মূর্ত হয়ে ওঠে
বিমূর্তও রয়ে যায় কতকিছু
ইজেলে ইজেলে…

কেউ কেউ ফেলে দিয়ে যায়
পা দিয়ে মাড়িয়েও যায় কেউ না কেউ
কোনো না কোনো ভাবে

রোদ ওঠে বৃষ্টি হয়
সেসব ছবি হয়ে ওঠে
প্রকৃতি যেন অমেয় কলম
ফটোশুট, সাটার গান
লিখে রাখে, ছবি নেয় বিপুল
বিপ্লব…!

কোলাহল শেষে ফিরে আসে রাত
ফিরে আসে নিজ অবয়ব

ভেতরে ভেতরে মানুষ আসে
প্রিয় ছবিরা আসে
মুখ থেকে মুহূর্ত থেকে সরে যায়
আপ্লুত সময়

জীবন ছোট ছোট রাফখাতা
সেই খাতা আঁকিবুঁকি, সুদূরের গান
ছবি, আড়াল, তবু আড়াল নয়

অপরিমেয় শূন্যতার আহবান…

আমরা

আপনি আমার খুব কাছের লোক
আমি আপনার খুব কাছের লোক

আপনি এখন খুব দূরে চলে গেছেন
আমি এখন খুব দূরে চলে গেছি

আসলে আপনি খুব ভয় পেয়েছেন
আসলে আমিও খুব ভয় পেয়েছি

আপনি কখনও আমার কাছের ছিলেন না
আমি কখনও আপনার কাছের ছিলাম না

আপনি কখনও তুমি হও নি
আমিও কখনও আমি হই নি

আমরা কেউ কারও কাছের ছিলাম না
আমরা কেউ কারও আপনার ছিলাম না

আমরা আসলে সময় পার করছিলাম
যেভাবে মানুষ সময় পার করে

যে আপন হয় সে কখনও দূরে যায় না
যে কাছের হয় সে কখনও ভয় পায় না

আমরা আসলে আমরা হয়নি
আমরা পরই ছিলাম
আমরা দূরেই ছিলাম…

রঙপেন্সিল

ঠকবো জেনেও মানুষের কাছেই ঠকি
মানুষকেই আঁকড়ে ধরি।

কতজনে কতকিছু শেখালো
হাতে রঙপেন্সিল দিয়ে বলল, এই নাও তোমার ভবিষ্যৎ
আমি প্রথমে বুঝতেই পারি নি; আঁকাবাঁকা রেখা অঙ্কন করে
ভেবেছি এই আমার স্বপ্নের বাড়ি, এই আমার ভবিষ্যৎ, উপরে ওঠার সিঁড়ি…
আমার কিছুই হয়নি; পতোন্মুখ থেকে থেকে অবশেষে সবুজঘ্রাণ নাকে চেপে ধরে বুঝতে চেয়েছি বেড়ে ওঠার প্রকৃত পাঠশালা কোনটি…

যেখানে হাত রাখি সেখানেই দেখি আজ সুতুপার তেতলানো ছবি, ভীবৎস রঙতুলি !
আমি ঘেমে নেয়ে ওঠার আগে আরেকবার বাংলার মুখচ্ছবি এঁকে নিই, তারপর রঙপেন্সিল
বুকে আঁকড়ে ধরে একলাই কাঁদি আর একাকি কাঁদার সেই ছবিটা শেষমেষ প্রকৃতির হাতে তুলে দিই…

লৈঙ্গিক পরিচয়

আমাদের সাথে একজন কবি আছেন
আমাদের সাথে আসলে কয়েকজন আছেন, তারমধ্যে অন্তত একজন কবি
কবিদের মধ্যে অন্তত একজন নারী

পৃথিবীর সব মানুষ যেমন কবি নয়, সব নারীও তেমন মা হতে পারেনি, পারে না
সব পুরুষেরা কি বাবা হতে পারে কিংবা সব বাবারা পুরুষ?
প্লেটো, সক্রেটিস, কিংবা অ্যারিস্টটল কি কবি ছিলেন?
তারা কি কবিতা ভালবাসত?
কবিদের মধ্যে কেউ না কেউ মাতাল
আবার মাতালদের মধ্যে কেউ না কেউ নারী বিদ্বেষী
আসলে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে কতগুলো লিঙ্গ পেয়েছি

সেই লিঙ্গগুলোই আমাদের রাজপথে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে

এখনো আমরা তাই লৈঙ্গিক পরিচয়ই বহন করে চলি….
১০/১২/২০২১.

বাতাস লিখে ফেলে সুগন্ধি কবিতা

অন্ধকারে ধুয়ে নিয়ে হাত
বাতাস লিখে ফেলে নতুন সুগন্ধি কবিতা
কেউ দেখার আগেই তা প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসে
আলোর কৃষক

শহরের লোকেরা কৃষিজমি চেনে না
অথচ, প্রত্যেকের ভেতর একজন কৃষক বাস করে
শাদা ভাত যখন মিষ্টি করে হাসে, তখন তার গাল বেশ নান্দনিক টোল

আমাদের দিনগুলি পুরনো নদীর পাশ দিয়ে যায়, সেইসব স্মৃতি কাদামাটি রচিত,
রাত গহন হলে প্রায়শই তারা ফুলবানু কিংবা পুঁথিময় জোনাকজ্বলা চরিতাভিধান…

অথচ, যেদিন থেকে কই মাছ ভেজে
নিয়ে গেছে মায়া দারিদ্র মোচনে, সেই থেকেই শাঁখের করাত আমাদের রাজনীতি

সময়কে শিকল পরানো অবান্তর
মানুষ বুঝে নিতে শিখুক পরাবাস্তবতা
না হলে কসমোলজিক্যাল কবিতাও কপর্দকহীন
অঘোর

যা হয় অথবা হবে বলে গোঁ ধরে আছে
তার ভেতরেই লুকানো প্রত্ন অ্যান্টিমেটার হয়ে যাবে
হিমবাহ নেমে গেলে চারদিকে শুধু জল, শুধু দহন

মানুষ মূলত রূপান্তর ভালোবাসে…

+ posts

Read Previous

শারদুল সজলের গুচ্ছ কবিতা

Read Next

মারুফ আহমেদ নয়নের গুচ্ছ কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *