আয়নার ভেতরের মানুষ
গঙ্গাচরণবাবু প্রতিদিন স্নান সেরে
আয়নার সামনে দাঁড়ান
গৌরবর্ণ দেহের উজ্জ্বলতা পরখ করে নেন;
জহুরির চোখে স্বর্ণ যাচাইয়ের মতো
খুঁটে খুঁটে দেখেন,
মাঝে-মাঝে বুকের জমিনে
অকালে পক্বকেশ দেখে
বিরক্ত হন–কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে!
কিন্তু কখনোই বুকের গভীরে
আঁধারে থই-থই ক্যাতক্যাতে কাদা-জল
দেখতে পান-না,
খুঁজে পান-না ফুলের বাগানে লুকানো সাপ।
ইদানিং আয়নার পেছন থেকে
গায়েবি হাসি শুনেন;
শুনে আঁতকে ওঠেন ।
কিন্তু তার ঘুণে ধরা বিবেকে
মরচে পড়া হৃদয়ে
কখনোই স্পর্শ করে না ।
বিদ্রূপ হাসিগুলো মোজার ভেতরে পুরে’
দৌঁড়াতে থাকেন
অশ্বমেধ যজ্ঞের লাগামছাড়া ঘোড়ার মতো।
একটি কঙ্কাল কথা বলছে
একটা কঙ্কাল আমার পড়ার টেবিলের পাশে
দেয়ালে গা লাগিয়ে ঝুলে আছে
সিলিংফ্যানের হাওয়ায় টুংটাং শব্দে
মাঝেমধ্যে নড়াচড়া করে ।
কী যেনো বলতে চায়!
একদিন ওর হাড়গোড়ে মাংসের পলিমাটি মোড়া ছিল
বুকে ছিল সমুদ্রের গর্জন—শান্ত স্নিগ্ধ নদী
গোলাপের বাগান–হিংসের অগ্নিকুণ্ড,
সে কী কোনো অপ্সরী–নারী
নাকি তেজোদীপ্ত কোনো সুপুরুষ
ঘোর-লাগা কোনো ঘুষঘোর
নাকি সরলবৃক্ষের মতো কোনো মানব!
মগজে সমুদ্দের উথাল-পাথাল ঢেউ
একদিন কঙ্কালটি কবরে শুয়ে ছিল
মৃত মানুষের কঙ্কাল-ও অরক্ষিত!
ভাগ্যিস গোরখেকোর খপ্পরে পড়েনি।
কঙ্কালের বিমা নেই, জৌলুস নেই,
বিত্ত-বৈভবের ফুটানি নেই
কঙ্কালের জাত-পাত আছে নাকি?
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।