অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৯, ২০২৫
২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মে ৯, ২০২৫
২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দীপঙ্কর বেরা  -
অসুর নিধন 

ঘরের পাশে রাস্তার ধারে ট্যাক্সি রেখে শম্ভু বলে— না, আজও সে রকম ভাড়া হল না। কী করে মালিককে বোঝাব কে জানে?

কথা শুনে মালতী কিছু বলার আগে বাইরে কাটা স্বপন চিৎকার করে— কী রে শম্বা, বেরিয়ে আয়।

শম্ভু বেরিয়ে আসতেই বলে— কী রে? তোর খুব চর্বি জমেছে মনে হয়। আমাদের ছেলেদের চাঁদা দিসনি কেন? এখানে কি ফোকটে থাকার জায়গা? আমাকে আসতে হল। দে, পাঁচ শ’ দে।

শম্ভু মাথা গরম করে। তাই মালতী বলে— এই লকডাউনে কোনো আয় নেই। রেশনও ঠিকমতো পাচ্ছি না। ট্যাক্সির ভাড়া হচ্ছে না। আমাদেরই চলছে না।

স্বপন আরও জোরে বলে— আরে আমাদের তো এটাই আয়। আমরা বুঝি। তাই গত চার পাঁচ মাস আসিনি। কিন্তু পুজোর মুখে না বললে শুনব না। না হলে—

কলতলায় বাসন মাজছিল শম্ভুর মেয়ে মিনু। আর কিছু না বলে মিনুর দিকে তাকিয়ে স্বপন ও তার দলবল ভাঙা বেড়ায় লাথি মেরে চলে গেল।

পরদিন কথাটা মিনু ভিক্টরকে বলল। আনমনে কী যেন ভাবতে ভাবতে ভিক্টর বলে— চল, আমরা গাছের ঝোপে বসি।

প্রথম প্রথম ভিক্টর বেশ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলত। বলত— আমাদের এই বস্তিকে উন্নত করতে হবে। তোকে আমি বাবুদের মতো ফ্ল্যাটে তুলব। আমরা প্রেমের মিশাল গড়ব।

আর এখন ঝোপের আড়ালে গল্প করার ছলে শুধু গায়ে হাত দেয়। বেশ কয়েকবার খুব কষ্টও দিয়েছে। মিনু ইস্ততত করছে দেখে ভিক্টর বলে— আরে চিন্তা করো না। আমি স্বপনদার সঙ্গে কথা বলব।

মিনু আজ ভিক্টরের মুখে আদর করে স্বপনদা নামটা শুনে চলে আসে। পেছন থেকে ভিক্টর বলে—তোমাদের এত দেমাক ভালো নয়। তোমরা পস্তাবে।

ঠিক তাই হল। মহালয়ার তিন চারদিন পরে শম্ভু একটা বড় ভাড়া পেয়ে সবার জন্য কিছু না কিছু নতুন এনেছে। আর ঠিক তারই গন্ধ পেয়ে মাঝ রাতে এসে হাজির ভিক্টর। কাটা স্বপন ও তার দলবল সাথে করে। ছিটে বেড়াটা পুরো ভেঙে দেয়। শম্ভুকে মারধর করে। কোনো টাকাপয়সা না পেয়ে মিনুর দিকে এগোয়।

মিনু জানত। আসলে এসবই বাহানা। শেষ পর্যন্ত মিনুর কাছে আসবেই। এমনটা হবে ক’দিন ধরে টেরও পেয়েছিল। তাই বিছানায় বালিশের পাশে রাখা ছিল। কেন না অস্ত্র ছাড়া অসুর নিধন সম্ভব নয় বলেছিল পাড়ার অনিতা বৌদি।

কাটা স্বপনের সামনে পৌরুষত্ব দেখাতে ভিক্টর এগিয়ে যেতেই মিনু চালিয়ে দেয়। ভিক্টর কাটা কলা গাছের মতো পড়ে যায়।

পরদিন হাতকড়া পরা মিনুকে দেখে অনিতা বৌদি বলে— এ যুগে সবাই মাটির দুর্গাকে পুজো করে। কিন্তু সত্যিকারের দুর্গার এটাই ভবিতব্য।

মিনু মুচকি হাসে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Read Previous

অগ্নিবাসর

Read Next

নুশান : দ্য স্পেশাল চাইল্ড – প্রথম পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *