অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৫, ২০২৪
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৫, ২০২৪
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাতুনে জান্নাত -
নুশান : দ্য স্পেশাল চাইল্ড – প্রথম পর্ব

(প্রথম পর্ব)

‘হ্যালো মাম্মি’ টেলিভিশনে বিবিসি-২ চ্যানেলের ছোট বাচ্চাদের অনুষ্ঠান ‘সিবিস’-এর ‘টমাস’ ট্রেন কার্টুনের ট্রেনের হুঁইসেলের শব্দ ছাপিয়ে মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে শব্দ দুটি। সিটিং পেরিয়ে বাথরুমের দিকে গড়িয়ে আসতে থাকে আরও দুটো ডাক ‘মাম্মি, মাম্মি’। তারপর শব্দের বিরামহীন স্রোত বাথটাব ভরার গুড়গুড় শব্দের উপরে ঘূর্ণির কেন্দ্রের মতো জট পাকাতে থাকে। পানির কলটা কমিয়ে সতর্ক ছা-ওয়ালা মুরগির মতো কান খাড়া করে মা। অনেক সময় নিচতলা বা পাশের কাঠের হাউজ থেকেও অহেতুক শব্দের ঝড় ঘরে ঢুকে পড়ে। ‘নুশান, নুশান’ নুশানকে ডাক দেয় বাথটাবে ঢোকানোর জন্য; ওকে খুঁজছে মা— এ ঘর ও ঘর— না কোথাও নেই সে!

পা টেনে টেনে সিটিংয়ে গিয়ে সফেদ পাতলা নেটের জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের সামনের দিকে রাস্তার পাশের বাগানে চোখ পড়তেই মানুষের ভিড় জমানো শব্দের পাহাড় কানে ধাক্কা দেয়। সাদা-কালো-বাদামি সংমিশ্রণ। মানুষগুলোর হাশরের ময়দানের মতো ঊর্ধ্বমুখ-দৃষ্টি তারই ২০ উইন লেন, লন্ডন এর দোতলা ঘরের দিকে, বন্ধ কাচের জানালায় প্রতিহত হচ্ছে তাদের দৃষ্টির তীর। জানালার কাচ একটু তুলে কিছুটা ভীতি ও আশঙ্কা নিয়ে মা নরম ইংরেজিতে জানতে চায়, হোয়াট হ্যাপেন্ড? আরও হট্টগোল সৃষ্টি করতে করতে আঙুল ইশারায় তারা যা দেখায় তা দেখতে কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না মা! মায়ের মন প্রবল বজ্রদাপট আকাশের মতো ফেটে যেতে থাকে ‘থ্রাস থ্রাস থ্রাস’। কিছুক্ষণ আগে জানালার মোটা কাচ তুলে সানসেট থেকে ফুলের টব সরিয়ে নিতে দেখেছে নুশান, মা সরু সানসেট থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সকালের রোদ খাইয়ে ভেতরে এনে রেখেছিল পাতাবাহারের টব দুটো। সে কথা মনে করে ফ্লোরে খেলতে বসা নুশান কোন ফাঁকে ফাঁকি দিয়েছে। এত সরু পথে কীভাবে ঢুকল ভেবে কূলকিনারা পায় না মা। শীতের দাপটে ডুবোডুবি লন্ডন শহরের মাঝামাঝি কিছুটা গরমের এ সময়টায় স্কুল থেকে এনে কাপড় খুলে মা ভেবেছে, বাথটাও করিয়ে দেওয়া যাক। স্কুলে নানা জাতের বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে। বাচ্চারাও ঠোঁট ডুবিয়ে মা পাখি, ছা পাখি হয়ে চুকচুক চুমু খায়। তা খাক এদেশের নিয়ম তো বদলাবে না; তারা বেশি বুঝওয়ালা দেশের স্কুলে পড়ায়।

‘মাম্মি মাম্মি’ সাথে আরও দুর্বোধ্য ইংরেজি ভাষণ, সাথে ধমকের শাসন। ‘কেয়ারল্যাস, হোপল্যাস, উইক টু কেয়ার এ বেবি’ শব্দের দমকা বাতাস। মোটা ও নেটের পর্দা সরিয়ে মা সাবধানে কাচের ভারী জানালার পাল্লা উপরের দিকে তোলে। মাকে দেখে সানসেটে পা ঝুলিয়ে বসা পোশাকহীন ধবধবে সাদা মায়াবী নুশান ঘাড় কাত করে শব্দ করে হাসে বিজিতের হাসি। মা নিজের ঘাড়ের উপর জানালার পা-টি রেখে কাছিমের মতো মাথাটা লম্বা করে বের করে দুই হাতে পেছন থেকে জাপটে ধরে; টেনে ভেতরে আনে নুশানকে। খিলখিল হাসিতে মাতোয়ারা নুশান কৈ মাছের মতো খলবলিয়ে উঠে। ইয়েস! সুখের নিঃশ্বাস ফেলে বাইরের শব্দজট। ‘থ্যাংকস গড, উই সেইভ হিম’। নিরাপদে ঘরে পৌঁছানোর আনন্দে সবাই হাততালি দেয়। কেউ কেউ বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে ব্রাভো দেয়। মা হাত তুলে সবাইকে কাতর বিদায় জানায়। হাসির সাথে চোখভরে আসে জলে। জলভরা চোখে বাইরে দেখতে দেখতে জানালার নেটের পাতলা পর্দা নামিয়ে দেওয়ার আগে হাত তুলে আবার কৃতজ্ঞতা জানায়। এভাবে কৃতজ্ঞতা সহি হয় কি না, একটু ভাবে! ভারী পর্দা দু-পাশের হুকের বেল্টের সাথে আটকে দেওয়া হয়েছে। রাত নামলেই পর্দা নামবে। কে জানে কিছু কিছু মানুষ সবসময় রাতের সাথে থাকে। রাতটা যেন একটা বল তার পিঠে দুলছে মা, একবার ডানে একবার বাঁয়ে। একটা নয় অসংখ্য বল একের পর এক ছুটছে ডানে বাঁয়ে উত্তরে দক্ষিণে। গ্রিলহীন খোলা জানালা দিয়ে বাইরে নেংটু সানসেটে পা ঝুলিয়ে বসা হয়তো শিশু মনের দুষ্টু স্বভাবের কাজ। যদিও চার বছরের বাচ্চার জন্য এ কাজ স্বাভাবিক নয় এ ভাবনায় মনে পেরেক গেঁথে রয়েছে। ভয়ানক এ কাজটা করেও বড় কোনো অঘটন ঘটাতে পারে নাই নুশান সে স্বস্তিও পেতে পারে না মায়ের অবোধ মন। কিছু কিছু ভাবনা পিছু ছাড়ে না কারও কারও! বুকের মধ্যে লেপটে থাকে আলকাতরার পোঁচে মাখামাখি থ্যাতলানো গাঢ় থেকে গাঢ় কুয়াশা।

কিছুক্ষণ লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করে নুশান ততক্ষণে বাথটাবে ঢুকে গেছে। ছলকে পড়েছে ফ্লোরে ঠাণ্ডা মেশানো গরম পানি। কাঠের উপর পলিথিনের আকাশি-কালো মোটা রাবারের মেট বিছানো। কম পানি পড়লে মুছে নিলেই চলে মপ দিয়ে। কিন্তু পানির ভেতর গিয়ে দুই হাতে যখন ছপ্পা ছপ্পা খেলে তখন “নুশান থামো, থামো নুশান বাবা লক্ষ্মী, মা লক্ষ্মী!” বলে বলে থামাতে হয় মা-কে। নয়তো কাঠের মেঝের ফাঁক গলে জলে ভেসে যাবে নিচতলার পড়শির বিছানা বালিশ, ভেসে যাবে দু’পক্ষের সম্পর্ক। সাদা-বাদামির ব্যবধান বাড়বে। দোতলার বাথরুমের নিচে নিচতলার শোবার রুম। যেমন গিয়েছিল এক বছর আগে। নিচতলার আয়ারল্যান্ডিয়ান ওয়ার্কশপ চালানেওয়ালা লাঠি হাতের গোঁয়ার স্বামীকে থামিয়ে মিষ্টি উর্বশী চল্লিশোর্ধ সুন্দরী মহিলার মিষ্টি ভাষায় ধমকের কষ্ট মেঘ হয়ে জমেছিল অনেকদিন। এমনিতেই কাঠের ফ্লোরে লাফানোর শব্দের জন্য প্রায়ই অভিযোগ আসে। কখনো গেটে, কখনো ঘরের সামনে রাখা গাড়ির পেছনে একটি মেয়ের সাথে সাপের মতো জড়াজড়ি, কইতরের মতো ঠোঁট-ডোবানো বাকবাকুম করা ছেলে এখন স্থির; সে মেয়েটি পোয়াতি হয়ে এ বাড়িতেই অবস্থান নিয়েছে। সে বাইশ বছর বয়সী চোখ-লাল ছেলেটাও তেড়ে আসে মাঝে মাঝে। আসতে যেতে নুশানকে দেখলেই সাত বাচ্চার মধ্যে ছোট যমজ সমবয়সী বাচ্চা দুটো বলে, ‘উই উইল কিল ইউ। ইউ নটি বিবি।’ হয়ত এভাবে ধমক তারা খায় নিয়মিত, প্রচলিত ভাষা তাদের। নুশান তাদের জড়িয়ে ধরে তুলতুলে লাল ঠোঁটে চুমু খেতে চায়। তারা সরিয়ে দেয় ঝাপটায়। কখনো মা অগ্রিম টেনে নিয়ে আসে ‘নো নো’ বলে। শিল্পী সাগর শর্মা গল্প শুনে হেসে বলেছিল, ভাগ্যিস বলে নাই ‘আই উইল ফক ইউ।’ এটা তো এখানকার জাতীয় ভাষা। সাদা চামড়ার ধবধবে অহংকারের মতো ঠোঁটে ঝুলে থাকে…

খাবার বানাতে মা রান্না ঘরে ঢোকে। ঝকঝকে তকতকে লন্ডনের রান্নাঘর। কাঠের বক্সগুলো সাদা রঙে মিশে থাকে দেয়ালের সাথে। শুধু স্টিলের হ্যান্ডেল চিনিয়ে দেয় ‘আমাকে টানো’। সাদা দেয়ালের সাথে মিশে থাকা সাদা ফ্রিজার খুলে খাবারের বাটিগুলো বের করে। কয়েকটি চুম্বকের রঙিন ফুল, প্রজাপতি, ফল লাগিয়েছিল সাদা রেফ্রিজারেটরের উপর। নুশান দেখতে পেলেই টেনে ফেলে দেয়। বলের মতো ছুড়ে মারে স্পেসের জায়গাটায়। উল্টোদিকের রমিছার বন্ধ দরোজায় ঘটাং করে বাড়ি খেয়ে কখনো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কোনোটা প্রতিহত করে নিজেকে ভাঙা থেকে রক্ষা করে কার্পেটের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। বাড়িতে আসলেই অন্যদিন আরও আগে খাবার হত। আজ দেরি হয়ে গেছে। মাইক্রোওভেনে গরম করতে যে সময় লাগে তার মধ্যে নুশান তিনবার চক্কর দিয়ে গেছে। খিদে বেশি পেলে নুশান ঘরের জিনিস ভাঙচুর করে। ক্ষুধা না পেলেও মজা করে আছাড় পাছাড় করে জিনিসপত্র। ভাঙা চাই, তচনচ হওয়া চাই। বেসিনে শ্যাম্পুর বোতল, হারপিকের বোতল উপুড় হয় প্রায়ই। মায়ের মোবাইল তো সবসময়ই মেঝেতে ঝনঝনাৎ করে পড়ে পড়ে টুকরো টুকরো হয়। অনেক ঝক্কি পোহানো ক্লান্ত দিন, সকাল থেকে চা ও দুই পিচ বিস্কুট খাওয়া মা ওকে স্কুলে রেখে দু’ঘণ্টা হেঁটেছে। বারোটার মধ্যে ঘরে ফিরে এসে খাবার খেতে বসত। আজ হয়নি খাওয়া। নুশানের স্কুলে ১১টায় নাস্তা হয়। নাস্তায় থাকে প্রথমে তিন ধরনের ফল ও সবজি, তারপর মার্জারিন মেশানো ব্রেড। প্রতিদিন পাঁচ ধরনের সবজি ও ফল খেতে হয়, তবেই নাকি শরীর রোগহীন, পরিপুষ্ট হবে। যাবার সময় একটা ছোট প্লাস্টিকের বোতলে সেমি ফ্যাটের দুধ দেয় স্কুল থেকে। ঘরে এসে দুপুরের খাবারের আগে ওটাই খায় সে চুকচুক করে। তবুও একটার মধ্যে খাবার দেওয়ার নিয়ম। বেলা দুটোর ঢং শব্দ জানান দিলো ঘড়ি। ঘড়ির শব্দে অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠে মা।

খাবারের প্লেট বের করতেই দৌড়ে আসে। মালসায় ভাতের ফেন আর কুঁড়া গুললে যেমন হাঁস দল প্যাক প্যাক প্যাক করে ঝাঁক বেঁধে পড়ে হাতসহ পাত্রে তেমনই নুশান আজ প্লেটে হুমড়ি খেয়ে পড়ে হাত ডুবিয়ে দিচ্ছে খাবারের প্লেট ডাইনিং এ নেবার আগে। ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁত কেটে মুখে কাটুমাটু, পাটুপাটু ধরনের শব্দও করছে। সবসময়ই শব্দ করে। গানের মতো, অবোধ্য স্বরের মতো কী যেন! মা কোনো মতে ডাইনিং টেবিলে খাবারের প্লেট রাখে এক হাতে, আরেক হাতে সামলায় তাকে। কোনো বাহানা না করে বসে যায় খেতে নিজ হাতে। কিছুটা অস্বস্তি মেখে মা ধীরে ধীরে নিজের খাবার আনতে যায়। এক মিনিট খাবার গরম করে ফিরতে ফিরতে দেখে যতটুকু খেয়েছে তার চেয়ে বেশি টেবিলে, কার্পেটে, গায়ে পড়েছে। তা পড়ুক। পেট না ভরলে আবার হাউমাউ করে কাঁদবে দুবার এত জোরে কেঁদেছে যে, পুলিশ উপস্থিত হয়েছে। স্কুলে বাচ্চাদের সাথে বসে নিজের হাতেই খায়। নিয়ম মেনে। শান্ত- সৌম্য। মায়ের কাছে আসলেই সমস্যা শুরু হয়। মা যেন গাছ আর সে লতা। ঢলে পড়ে, ঝুঁকে পড়ে বাগাডুমডুম খেলে। ‘বাচ্চা মায়ের কাছে আসলে তো এরকম করবেই!’ নিজেকে ধমকে থামায় মা। এটা হয়, এটা স্বাভাবিক মা ভাবে। ‘ ব্রিটিশ বাচ্চা ব্রিটিশ শিক্ষককে মানে ; বাঙালি আনট্রেইন্ড মায়ের কি যোগ্যতা! ভাবনার লাভা ঠেলে সরাতে হয়।

প্রতিদিন একা মায়ের মনে স্বাভাবিক- অস্বাভাবিক এর দোলা চলে। ডাক্তারের ভাষ্যে কোনো সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। জন্মের পর কতই পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছিল। কোনো সমস্যা ছিল না। তবে কেন আজ বিষণ্ণতা ভাঁজ খুলে খুলে দেখে কষ্ট ও ফাঁকে জমে থাকা ছায়া, দাগের দগ্ধ ক্ষত। চমৎকার মুখের গঠন, চমৎকার তার আচরণ। এর ফাঁকে কোথায় অদৃশ্য ফাঁক, কোথায় অদৃশ্য বাঁক উল্টে দিল হিসাব যোগ-বিয়োগ, পূরণ ও ভাগ। নুশানের কাজগুলোকে ভাগ করতে থাকে মা। কখনো অতি মায়াবী মুখ তুলে তাকানোর দৃশ্য। অস্বাভাবিক থেকে অতি প্রতিভাধর হওয়ার আশার পুলক বা তার মধ্যে একটি বড় মনের মানুষ হবার লক্ষণের সাথে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় “চিকেন ফ্রাই’ স্পষ্ট ও ভারী কণ্ঠ। পা দিয়ে বাগি আটকে দেওয়া, শুধু একটি শব্দ এপল, অরেঞ্জ, বিস্কুট, খোক বলে যখন তার যা খেতে ইচ্ছা করে, জিপির ভেতর চলন্ত ইলেকট্রনিকস বোর্ডের জন্য অসুখের বাহানায় অপেক্ষারত রোগীদের চেয়ারে কিছুক্ষণ বসে থাকা, স্কুলের বাচ্চাদের জাপটে ধরা অথবা রাগ উঠলে চিমটি কাটা, চুল টেনে ধরা। ডাক্তারের রুমে ঢুকলে চেয়ার ছেড়ে তার ফোন নিয়ে টানাটানি করা, বেসিনের পানি নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। তুলনা হতে থাকে কোনটা স্বাভাবিক কোনটা অস্বাভাবিক? এপাত্রে একটা ওপাত্রে একটা রাখার মতো মা মাথা একবার এদিকে একবার ওদিকে দোলায়। মাথায় কেন শুধু অস্বাভাবিক কাজগুলো ভেসে আসছে বেশি? মা মাথা ঝাঁকায়। মস্তিষ্কের কনসাস মাইন্ডে ধীরে ধীরে নুশান চিহ্নিত হয়ে পড়ছে অস্বাভাবিক রূপে। ডাক্তার, শিক্ষক সবার কাছেই সে স্পেশাল চাইল্ড। বিশেষায়িত শিশু। ‘ক্যাম্পবেল’ চ্যারিটির স্কুলে সে পড়ছে তা প্রাইভেট হলেও ফ্রি পড়তে পারছে সে কারণে। অবশ্য কাউন্সিলের ট্যাক্স ক্রেডিট কার্ড জমা দিতে হয়েছে। স্কুল তার অতি পছন্দের। যদিও ঘর থেকে বের হয়ে অন্যদিকে যেতে চায়। কিন্তু স্কুল শিক্ষকদের অতি আদরের, অতি আগ্রহের কারণে স্কুলে সে ভালো থাকে। প্রথম ছয় মাস মাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। বসে থাকতে হয়েছে স্কুল কক্ষের কোণায় চেয়ার দখল করে। কোণায় মা বসে থাকত আর সে খেলত বা পড়ত। সাদা, কালো বাচ্চারা কাছে এসে হাত উঠিয়ে দিত কোলে উঠার জন্য। মা ওদের কোলে নিত আদর করত। পাকিস্তানি-বাঙালি বাচ্চারা তাকিয়ে থাকত দূর থেকে। দুই একবার বসে না থেকে সরে থাকার চেষ্টায় যা হয়েছে কাগজপত্র ওলটপালট আর গগনবিদারী চিৎকার। তাই স্কুল শিক্ষকদের মিটিংয়ে মাকে বসিয়ে রাখার পারমিশন নিয়েছে হেড টিচার তুশারি ডাইসন, শ্রীলঙ্কান ব্রিটিশ মহিলা। মায়াবী মুখের গঠন। বোম্বের নায়িকা কাজল বা সুস্মিতা সেনের মতো অথবা বাংলাদেশের অভিনেত্রী শম্পা রেজার মুখের আদল। তার চেহারার মতোই ব্যবহার। বাচ্চারা যেন তার সন্তান, মায়েরা যেন তার বন্ধু। মাকে ‘মাম্মি মাম্মি’ ডাকে। সবাই এখানে মাকে মাম বা মাম্মি ডাকে। সবার সাথে মায়ের ভালো ভাব। ইতালিয়ান নোরা, ইন্ডিয়ান ফ্লোরা। মা বসে থাকলে সে সহজ কাজগুলো করে। কাজ মানে ছবি আঁকা, কেচি দিয়ে কাগজ কেটে কেটে আঠা দিয়ে লাগানো, রঙের ভেতর হাত ঢুকিয়ে কাগজে ছাপ মারা। পেন্সিলে কাগজে আঁকিবুঁকি করা। গুটি দিয়ে মালা বানানো। গাড়ি নিয়ে খেলা, খেলনা ল্যাপটপে গান শোনা, খেলার সময়ে স্লাইডে উঠানামা। নুশান নীচ থেকে উঠে উল্টো দিকে, মানে উপরের দিকে। সবসময়ে এটা তার মূল কাজ। শিক্ষকের সতর্ক প্রহরা রয়েছে। গ্রুপে গ্রুপে ভাগ করা আছে বাচ্চা ও শিক্ষক। চলচ্চিত্রের পর্দার মতো প্রতি বিশ মিনিট পর পর পাল্টে যায় কাজ। চারজনের গোল-টেবিল সেজে যায় নতুন সাজে। একটা বড় হল ঘর এটি। ব্রেক টাইমে যখন গাড়ি খেলা হয় সবাই খেলে। কেউ স্কুটার, কেউ সাইকেল, কেউ বাগি ঠেলে। যার যার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অনুযায়ী দেওয়া হয় খেলার জিনিস। সব শেষে গানের, ছড়ার বা কথা বলার ক্লাস। গানের ক্লাসে সে সবার সাথে সুর মেলায় নিজের সুর।

নুশান সবই ঠিকঠাক মতো করে শুধু মা এসে খাতায় সাইন করে, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার হাত থেকে ওকে ও একটি দুধের ছোট প্লাস্টিকের বোতল নেয়ার পর বাগিতে বসানোর আগেই এদিক দৌড়, ওদিক দৌড়। চ্যারিটির অন্য-অফিসে ঢুকে পড়া। রিসেপশনিস্ট মেয়েটার ফোন নিয়ে টানাটানি করা। কারো সহায়তায় বা একা টানাটানি ও মৃদু বকাবকি করে বের করে বাগিতে ঢুকিয়ে তো রক্ষা। বয়সের চেয়ে বাড়ন্ত, মোটা গড়নের তিন বছরের নুশানকে তুলতে ও নামাতে প্রায়ই মায়ের কোমরে টান পড়ে, টান পড়ে পায়ের গোড়ালিতে। যে বয়সের একটি বাচ্চা সহজভাবেই হেঁটে যাওয়ার কথা। কিন্তু নুশানকে হাঁটতে দিলে দৌড়ে। খেলতে দিলে ছাড়া পাওয়া বাছুরের মতোই ছুটতে থাকে মাঠ পেরিয়ে, ফুটপাত পেরিয়ে রাস্তার যানজটের ভেতর। যেখানে গাড়ি চলে কিলোমিটারে নয় মাইলের গতিতে।

রাতের টলমলে শিশির সরে গিয়ে ভোরের মোলায়েম আলো বের হতেই নুশান জেগে উঠে। ঘুম ভাঙার পর কিছুক্ষণ সে পাখিদের মতো আনমনে গান করে। তার গানের ভাষা দুর্বোধ্য হলেও সুরের কিন্নরি আবেশ জাগায়। স্কুলে শেখানো ইংরেজি রাইম আর মা’র কাছে শেখা বাংলা ছড়া ও গান মিশিয়ে গাইতে গাইতে মায়ের গালে, কপালে, চোখে চুমু খায়। মুখের উপর হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাকে জাগানোর চেষ্টা করে তবু্ও ঘুম না ভাঙলে হামাগুড়ি দিয়ে লেপের ভেতর থেকে বের হয় পায়ের দিক দিয়ে। ভারি কাচের জানালার পাশে রাখা মা’র চেয়ারে বসে ঠাণ্ডা কাচের গায়ে গাল লাগায়। মুখ থেকে ধোঁয়া বের করে কাচকে ঘোলা করতে থাকে। তারপর দুই হাত দিয়ে সে কুয়াশায় ছবি আঁকে। রাতের কুয়াশা জমে ভেতরের দিকেও জল টলমলে ভেজা শিশির কণা। হাত দিয়ে সে পানির সাথে খেলে ঠাস ঠাস শব্দ করে। তারপর কুয়াশার ক্রিম ভেদ করে উঠা কিশোরীর ঘুঙুর ছড়ানো ভোর দেখে আর দেখে গাড়ি চলাচল। গাড়ি তার বেশি পছন্দ। একচিলতে সবুজ ও গোলাপ বাগানের পর চওড়া রাস্তা হর্ণহীন গাড়ি সাঁ সাঁ ছুটে চলে। ঘরেও খেলে গাড়ি দিয়ে। টেবিলের উপর লাইন করে গাড়ির। অনেক রঙের গাড়ি। স্কেলের আঁকা লাইনের মতো সোজা৷ হঠাৎ কি যে হয় সব গাড়িকে জোরে ছুঁড়ে মারে। সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে গাড়ি। কারো অংশ ভাঙে কারো পুরোটা। নুশানের সেদিকে মন নেই সে সোফায় উঠে লাফাতে থাকে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত বাবাকে চুমু খায়। না জাগলে চুলহীন মাথায় ঠাস ঠাস থাপ্পড় দেয়। আগরাতে ঘুমানো বাবা জেগে থাকে। নুশানকে কম্বলের ভেতর ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ মজা করে। দু’জন ঘুমের ভান করে। নুশান ‘এবিসি সং’ বলে। ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার’ বলে। শব্দ স্পষ্ট নয় তবে সুর বোঝা যায় সে ঠিক বলছে।

আগের দিন ঘটে যাওয়া কোনকিছুই বাবার কানে যায় নাই আজ-অব্দি। যদিও নীচের কারো সাথে দেখা হলে কেউ না কেউ তো বলবেই। মা বলে নাই। বলার মতো কোন পরিবেশই সাহস নিয়ে এগিয়ে আসে নাই। এর আগে রান্নাঘরের বোর্ডে থাপ্পড় দিয়ে ছুরি পড়ে নুশানের চোখের একপাশে কেটে গিয়েছিল। তা দেখে তেড়ে এসেছিল মারতে। দোষ তো মায়ের। কেয়ারলেস মা। বোকা মা। ছেলের বিরুদ্ধে কমপ্লেন করে।

আটটায় ঘরে ফেরা বাবা খাবারের আগে ভদকার বোতল খুলে বসে মাকে নিয়ে। কষ্ট-মিষ্ট স্মৃতির রোমন্থন পর্বে বাংলাদেশের ফুলঝুরি নদী, আর ভারতের গঙ্গা নদীর পাড়ে তাদের ঘরবাড়ির পুনরাবৃত্ত গল্প। রিফিউজি তারা ছিল না। কেননা দেশ ভাগের আগেই তাদের দোকান ব্যবসা সব ছিল ভারতে। ছিল এক খণ্ড কেনা জায়গা। তবুও ষাটের দশকে তখন ভারত উত্তাল। নকশাল আন্দোলন। তার ঢেউ তাদের পরিবারকেও ভুগিয়েছে। তখনই তারা ছেড়েছে পূর্ব পাকিস্তান যখন ছিল ভারত উত্তাল। যে দেশের নামের সাথে বাংলাই রইলো না এমন দেশ তার নিজের হয় কেমন করে এটা ছিল তার বাবার মত! সে পাকিস্তানের সরকার আর মুসলমানদের দৌরাত্ম মেনে নিতে পারেনি। ঘরবাড়ি হারানো তারা পশ্চিমা বাংলায় থিতু হতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। নদীয়া জেলার নবদ্বীপ ছোট শহরটিতে বাস গড়ে। কিন্তু ওদেশে মালাউন নামে মুসলমানদের চোখে নিগৃহীত হিন্দু ভারতেও বাঙাল নামের দুর্বল প্রজাতি। তারা বাচ্চারা তখন গঙ্গা নদীর পানিতে ঝাপাঝাপি করে আনন্দ লুটা ও মাছ ধরে পুষ্টির অভাব পূরণ করত। কিনার থেকে ভাইবোন মিলে শাক টোকানো। এসব নিয়ে স্থানীয়দের টিটকারি। ‘জমিদারেরা শাক টোকায় লো পারমিতা।” যত বড় হতে থাকে ঘন হতে থাকে বেদনা। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে বাঙাল আর বাঙালির বাধা সবচেয়ে প্রকট হয়েছিল। বাংলাদেশে ফেলে আসা ঘরবাড়ি নিজের হাতে লাগানো বকুল ফুলের ঘ্রাণ আহা। টগর ফুলের ঝোপ কেউ হয়তো কেটে ফেলেছে। হয়তো কোনোদিন গেলে চিনবেই না। ছিল গরুর গোয়াল। সব্জিক্ষেত। তার বাবার হোমিওপ্যাথিক ঔষধালয় ভরা মানুষের আর্তনাদ। কত রোগী যে চিকিৎসা নিত কত মানুষের জীবনগাথা জড়ানো জীবন। তার বাবার ঔষধে দারুণ কাজ হত কেননা চিকিৎসার অন্তরালে কাজ করত আধ্যাত্মিকতার পরম আশীর্বাদ। এমন দুঃখের ও মিষ্টি মধুর স্মৃতি রোমন্থনের মধ্যে নুশানের এমন উদ্ভট ও অস্বাভাবিক ঘটনা তোলাই গেল না। আর বলবেইবা কি! দোষটা তো মায়ের। অবহেলা, উদাসীনতা, উন্নাসিকতা। আরও কত বহুল শব্দ ব্যবহারে ব্যবহারে কষ্ট থেকে কষ্টের উপরিতলে পৌঁছে যাওয়া। তার থেকে এই ভালো পান করো, গল্পে গল্পে আর স্মৃতির রোমাঞ্চিত হাওয়ায় উড়ে যাও পুরনো জীবনে, উপড়ে দাও জলভরা জীবন কলসি।

মা তার পুরনো জীবনের কথা বলতে পারে না; না শোনা ইচ্ছার কারণে! সৎমায়ের দ্বারা নির্যাতিত মা পালিয়ে শহরে এসেছিল একটা নাট্যদলে যোগ দিল। সে দল লন্ডনে এসেছিল নাটক করতে। যদিও এসব নাট্যদলের উদ্দেশ্য থাকে মেয়েদের দিয়ে ব্যবসা করানো। সে নাট্যদল থেকে বাবাই তাকে পছন্দ করে বের করে আনে। অপরূপ সুন্দরী ও ভালো মনের মানুষ হিসাবে প্রশংসায় প্রশংসায় ভাসিয়ে রাখে। আজও বলেছে তোমাকে পেয়ে দেশ হারানোর, জীবন হারানোর সব কষ্ট দূর হয়ে গেল। মা একটু থেমে ভাবে নেশার ঘোর না সত্যি! আবার ভাবে নেশায় সত্যি কথাটাই নাকি উঠে আসে। মা’র কোন কষ্টের কথা তিনি শুনতে চান না। বলেন কষ্টগুলোকে ঝেড়ে ফেলে দাও, ধানের কাঁকরের মতো, আউলা কষ্টের জল টেমস নদীতে। না পার তো কালো বিনে ভরে দাও ময়লার গাড়ি এসে নিয়ে যাক। কেন গো তোমার কষ্টের কথা তো শুনি? পুরনো জীবনের কষ্টেও মধু থাকে। মৌ আহরণের আকাঙ্ক্ষা। যদিও মা ও বাবাও জানে পথের চোরকাঁটার মতো কষ্ট তাদের পোশাক, শরীরে বুকে আটকে থাকে। বাছতে বাছতে সময় ফুরিয়ে যায় শুধু কষ্ট ফুরোয় না। মা কিছু বলতে পারেনি। ড্রিঙ্কের সাথে সিগারেট টানতে টানতে সিনেমার চিত্রের মতো ভেসে উঠেছে পোশাকহীন নুশানের পা ঝুলিয়ে সানসেটে বসে থাকা। যেন কোন ঐশীলোক থেকে আগত শিশু এঞ্জেল। সব এঞ্জেলদের পরনে পোশাক থাকে। এঞ্জেলদেরও দর্জি ছিল মনে হয়। আসল এঞ্জেল বাড়ির কার্নিশে বসেছে সকলের হিত সাধনের জন্য। মায়ের সিগারেট টানা বাবা উপভোগ করে। তিনি ছেড়েছেন অনেক দিন হলো। কিন্তু বৌয়ের জন্য কিনে আনেন। সপ্তাহে দুদিন পানপাত্র খুলে বসেন। বাদাম বা চিপসের সাথে উপভোগ করেন জীবন-শালা। মা একা একা পড়ে থাকে নিজ জীবনের ঘোরে। জটিল বর্তমানের শকটে। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত ক্ষতবিক্ষত তিক্ত রিক্ত চিত্তের বেদনা শোনানো হয় না আর। আটপৌরে জীবনের ঘোরে দেশের মধ্যে পড়ে থাকা একটি মুখের স্থির চিত্র। বনমোরগের পিছু পিছু দুইজোড়া পায়ের আওয়াজ মিশতে মিশতে বাতাস হয়ে যায়। হাসির উজ্জয়িনী বাতাসে মেলাতে মেলাতে টুপ করে চোখের জল ফেলে যায় কচুপাতায়। নক্ষত্রের আলোর মতো সোনালি দিন আর ফিরে পাওয়া হলো না।

জানালা দিয়ে বাইরের সকালের দৃশ্য উপভোগ ও বাবার সাথে খুনসুটি করে নুশান ফিরে আসে মায়ের কাছে। ততক্ষণে মা উঠে পড়েছে। ব্রাশ-পেস্ট নিয়ে তার দাঁত মেজে দিয়েছে। সাড়ে তিন বছরের নুশান এখনো ডায়াপারে প্রাকৃতিক কর্ম সারে। অনেক চেষ্টা করে হিসি করানোটা আয়ত্ত করেছে দিনের বেলা। প্রথমে ভেতরের খালি জায়গাটাতে একটা বালতি রেখেছে। নুসান কিছুতেই নুনু খুলবে না। পেন্টসহ ধরে নুনু। পেসাবে ভরে যায় তার কচি কচি আঙুলের ডগা। রাতে ডায়াপার পরাতেই হয় নয়তো চিৎকারে ভাসিয়ে দেবে শব্দ। বাবা বলে, পুলিশ এসে যাবে। বর্গীর ভয়ের মতো পুলিশের ভয় নুশানকে না থামাতে পারলেও মাকে সচল করে, সাবধান করে। তাই ডায়াপর এখনো থাকে। পুরনো ডায়াপার ছাড়িয়ে নির্দিষ্ট বিনে ফেলে নতুন পরিষ্কার পরিয়ে তাকে নাস্তা করায় মা। নাস্তা উইটাবেক্স কলা আপেল, দুধ। আজ বাবা অমলেট-ব্রেড খাবে। মা নিজের নির্দিষ্ট কিছু রাখে না যখন যা ইচ্ছা খেয়ে নেয়। আজ রবিবার- আজ বেড়ানোর দিন। কোথাও না কোথাও যাবে তারা। আগে থেকে ঠিক করা থাকে না। বাবা যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই তারা যাবে। যদিও মাকে জিজ্ঞেস করবে কোথায় যাব? মা যদি বলে, মাইল্যান্ড পার্ক। উত্তরে বাবা বলবে সিটি সেন্টার। আবার মা যদি বলে টাওয়ার, ব্রিজ বাবা বলবে চলো আজ ট্রেনে ট্রেনে ঘুরি। আজকাল মা কিছু বলে না। নির্লিপ্তের মতো বলে, তোমার যেখানে ইচ্ছা। এটা শুনতেই যে এ প্রশ্ন করা তা বোঝা যায়। খুশি চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠে পঞ্চাশ পেরুনো বাবার দাঁতহীন মাড়িতে। ব্রাশ শেষ করে দাঁত পরবে। এই শীতের দেশে দাঁত চলে যায় আগে। ট্রেনে বাসে আনন্দ ভ্রমণ। কিছু খাবার সাথে করে নিতে হয়। নুডলস নয় স্যান্ডউইচ। তারপর চিকেন ফ্রাই কিনে মজাদার এক খাবারের আসর বসানো। যদিও একটু পরে বাইরে যাবে দোকানের মাল কিনতে। তারপর ফেরার পথে ফোন করবে। রেডি হয়েছো তো? বলতে বলতে ঘরে ঢুকে যাবে। রেডি না দেখলে চিৎকার চ্যাঁচামেচি। বিচিত্র মানুষ বিচিত্র সংসারপাতি এই আগুন তো ঐ জল।

৩.

মায়ের কাছে নুশানের এ সমস্যা ধরা পড়ে যখন তার ১৪ মাস। তার আগে তার দুষ্টুমিগুলো ছিল শিশুসুলভ। এই ডাস্টবিন উল্টে দেওয়া। মায়ের কানের দুল, গলার হার টেনে ছিঁড়ে ফেলা। মায়ের বাবার নাকেমুখে চিমটি কাটা। বারান্দা দিয়ে ঘরের আসবাব, খেলনা ছুঁড়ে দেওয়া। ল্যাপটপে জোরে জোরে থাপ্পড় দেওয়া। মা বুঝতে শুরু করলে যখন সে, ডাকলে সাড়া না দেওয়া। কোনো প্রশ্ন করলে রিপিট করা। রান্নাঘরের ড্রয়ারগুলোকে টানা ধাক্কা, টানা ধাক্কা করা অনেক সময় ধরে। ফ্রিজের দরোজা জোরে জোরে পেটানো মা দেখছিল কষ্ট নিয়ে এবং নিশ্চিত হয়েছিল ওর কোনো সমস্যা আছে! ঠিক শিশুদের মতো নয়। বড়োদের মতো নয়। অন্যরকম, কি রকম? আলমারির ডানা পেটাতে পেটাতে ভেঙে ফেলেছিল। মাকে রান্নায় থাকতে হয়, বাথরুমে যেতে হয়। শেষে বাথরুমে নিয়ে বাথটাবে বসিয়ে রাখত সাবানগোলা পানিতে। শিশু সেন্টারে গেলেই ছোট বাচ্চাদের মেরে খামচে মাটিতে ফেলে দেওয়া। মুখে আঁচড় কেটে সাদা ধবধবে মুখটাকে রক্তে লাল করে দেওয়া ছিল প্রায় নিয়মিতই। এ কাজ করে সকলের হৈচৈ দেখলে সে হাসতো। শেষে ঘন পাহারায় রাখতে হত।

সাত মাস থেকেই চিলড্রেন সেন্টারে নিতে হয়। চিলড্রেন সেন্টার থেকে লোক এসে নিয়ে যায়। কোন এলাকায় কোন ঠিকানায় বাচ্চা জন্মেছে তার লিস্ট তাদের কাছে যায় কাউন্সিল থেকে। সপ্তাহে তিনদিন নিতে হয় সেন্টারে। প্রথমে বডি ম্যাসেজ করে অলিভওয়েল দিয়ে। বাচ্চা কোলে নিয়ে বুকের উপর নিয়ে মায়েরা ব্যায়াম করে। তারপর ছড়া, গান শোনায়। মিউজিকের তালে তালে নাচে গার্ডিয়ান বাচ্চা কোলে নিয়ে নয়তো বাচ্চারা। কিন্তু সে খুব চিৎকার করে কাঁদতো।

তখন বেরিয়ে আসতো মা। বড় হতে থাকলে খেলনা দিয়ে চিলড্রেন সেন্টারের খেলার সরঞ্জামের দিকে চোখ নয়; চোখ থাকতো খোলা দরোজা ও বাইরের গাড়ির বহরের দিকে। সুযোগ পেলেই দৌড়।

—কেন দৌড় দাও? কথার জবাব নয় সে কথাটাই রিপিট করে। জিপিতে নিয়ে গেলে ডাক্তার ও বেবি সিড বলে, হি ইজ ওকে, নো প্রব্লেম।

—কীভাবে নো প্রব্লেম হয়?

মা বুঝাতে চাইত এবনরমালিটি। ওর আচরণ ডিটেলস বলতো। কিন্তু অকার্যকর হয়ে ফেরত আসত। কেন বুঝে না ডাক্তার? নিয়মিত ডাক্তার না করলে প্রাইভেটে যেতে হবে সে খরচ আয়ত্তের বাইরে। এ প্রশ্ন ঘুরে ফিরে মায়ের মনে তোলপাড় তোলে সাগরের ঢেউয়ের মতো। ঢেউগুলো ভেসে চলে আছড়ে ফেলে দূর বহুদূর অসীম সাম্রাজ্যে। মন কাঁদে একা একা। মা যেন দ্বিপবাসিনী বাবা যেন এক পাথর। ডাক্তার ছাড়া কিছু বলার নেই করারও নেই। অগত্যা আড়াই বছরের সময় একটি চ্যারিটির ‘ লিটলস্টার কিডস’ চিলড্রেন সেন্টারে ভর্তি করে দেয়। প্রাইমারি স্কুলে যাবার আগপর্যন্ত এরা পড়ায়।

শেষবার মায়ের এক চিকিৎসার সময় নুশান ডাক্তারের ফোন নিয়ে টানাটানি, স্টেথোস্কোপ নিয়ে ঘাটাঘাটি ও শেষে বেসিন এর পানি নিয়ে এত লাফালাফি করেছে যে, পাকিস্তানি ডাক্তার রেদোয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে, চিন্তান্বিত মাথা নেড়ে বলে, হি ইজ নট ওকে। হি নিডস হেল্প। তারপর চিঠি লিখে দেয় স্পেশালিষ্ট দীপ্তি বেনুগোপালকে। যথাসময়ে চিঠিসহ বেনুগোপাল এর ইস্টহামের চেম্বারে উপস্থিত হলো নুশানের মা-বাবা। শিশুদের ডাক্তার মানেই ওয়েটিং রুম ভরা খেলাধুলার সরঞ্জাম। বিচিত্র খেলনা। একেকজন খেলছে একেকটা নিয়ে। কাড়াকাড়ি নেই হুড়াহুড়ি নেই। বাচ্চাগুলো অসুস্থ। কারও শারীরিক, কারও মানসিক। কারও শারীরিক মানসিক দুটোই। মা কিংবা বাবা কিংবা অভিভাবকদের বিষণ্ণ মুখ বেদনা হয়ে ছড়িয়ে থাকে ওয়েটিং রুমে। অটিজম এমন একটি সমস্যা এর কারণ বোঝা কঠিন। কি কারণে হয় তাও বলতে পারে না কেউ। স্কুলে যাবার পর থেকে বাইরে এলে নুশান খেলনা নিয়ে খেলে চুপচাপ। কোনো বাচ্চা তার খেলনা নিয়ে গেলে সে আরেকটা নেয়। কখনো রাগ করে না বা কাঁদে না।

ডাক্তার বেনুগোপাল এর চেম্বার মাঝারি ধরনের। ডাক্তারের চেহারা মায়াময়। কিশোরীর মতো চঞ্চলতা চোখে। মুখে প্রাণময় হাসি। নারী হলেও কোনো সাজ নেই। গাঢ় নীল ফতুয়া ও জিন্স পরনে। নুশানের কাগজপত্র তার কাছে আগেই পৌঁছেছে। ‘হ্যালো নুশান, আর ইউ ওকে?’

নুশানের কোনো সাড়া নেই।

শুধু এগিয়ে ধরা খেলনা হাতে নেয়। খেলনা তার পরিচিত। চেয়ারে বসে বসে একটি রিং এর আলনায় ছোট থেকে বড় রিং সাজায়। আবার খুলে নিয়ে বড় থেকে ছোট রিং সাজায়। ডাক্তারের কথা যেন শুনতে পাচ্ছে না সে। রিং সরিয়ে ডাক্তার কাগজ পেন্সিল, রং পেন্সিল দিলে চুপচাপ সব কাজই করে সে। কাজ মানে আঁকিবুঁকি। সবই গোল গোল। ছোট ছোট গোল নয়তো বড় বড় গোল। পুরো দুই ঘণ্টা ডাক্তারের ডাকে সাড়া দেয়নি বা তাকায়ওনি তাঁর দিকে। ডাক্তার তখন ফরম পূরণ করে কোনো প্রশ্ন মাকে কোনো প্রশ্ন বাবাকে। কোন বয়সে কেমন আচরণ, জন্মকালে কোনো সমস্যা ছিল কিনা? ফরম পূরণ শেষ করে ডাক্তার হতাশ হয়ে বলে, ও কানে শুনতে পায় না। ডাক্তারের মূল ভাষা হিন্দি। ইংরেজির মাঝে মাঝে হিন্দি বলছে। মা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ও অনেক ভালো শোনে। কেননা মা’র সাথে সে গান গায়। টেলিভিশন দেখে। নীচতলায় সামান্য শব্দ হলে দৌড়ে যায়। কথার জবাব দেয় না। রিপিট করে। এটাও তো শোনে বলে। এসব কথা ডাক্তারের কানে যায় না। কান পরীক্ষার প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। আরও নিয়ম অনুযায়ী স্পিকিং থ্যারাপি, অকুপেশনাল থ্যারাপি, ফিজিও থ্যারাপি করতে হবে। কোথায় কোনটা করতে হবে বলেন। ‘সময়মতো চিঠি পাবেন, বলে ডাক্তার বিদায় জানায়। সারা রাস্তায় কারোমুখে কথা নেই। ট্রেন, বাস, পায়ে হাঁটা পথ মাড়িয়ে ফিরে আসে ঘরে। ক্লান্তি নিয়ে পড়ে থাকে মা রাতের গভীরে; ঘুমহীন, ছায়াহীন, মায়াহীন এ সংসার সঙ্গিন।

৪.

রবিবারের আনন্দ সঘন দিন পার হয়ে সোমবার এলো। স্মৃতিতে গেঁথে থাকলো কিউ গার্ডেনের নান্দনিক কারিশমা। সাজানো বাগান যেন সাজানো নয়। ফুল, লতা, ঝোপঝাড় প্রাকৃতিক পরিবেশ। বেশ টাকা চলে গেল নুশানের হিসাবী বাবার পকেট থেকে। সেও যেন হিসেবী আবার হিসেবী নয়। পুরো বায়ান্ন পাউন্ড খরচ করে কৃত্রিমভাবে বানানো প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে ঘরে বানানো নুডলস খেয়ে ফেরা। বুনোফুলের সমারোহ, বাঁশবন বিশাল , লেকের নৌকা, গ্রিন হাউজ ছিল মনোরম। ছয়টা কন্টিনেন্ট এর প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে গাছপালা লাগানো হয়েছে। বিলেতের সোমবার কর্মচঞ্চল প্রবাহ খাপখোলা তলোয়ারের মতো লাফিয়ে নামে। শনি ও রবিবারের আনন্দ উপভোগের পর ব্যস্ততায় ডুবে যেতে মনও এগিয়ে থাকে। ভোর থেকেই ব্যস্ততার বাড়াবাড়ি। প্রতিদিনের মতো নুশানকে প্রস্তুত করায় মা। সে এক কঠিন সংগ্রাম। সে এদিক থেকে ওদিক দৌড়ে। কাঠের ফ্লোরে লাফায়। মা দৌড়ে পিছু পিছু। ‘নুশান নুশান’ সে হয়তো গাড়ি নিয়ে খেলছে। টেনেটুনে বেরুতে বেরুতে সময় চলে যায় নয়টার উপরে। স্কুলে ঢোকার আগেও ইঁদুরের মতো কাঁইকুঁই। শিক্ষক হাত ধরার সাথে সাথে সোজা আদুরে বেড়াল। স্কুলে ঢুকতে ঢুকতে সাড়ে নয়টা ছুঁই ছুঁই। ব্যাগ জ্যাকেট হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখে ক্লাসে ঢুকিয়ে দেওয়া। আজ বিকেলে তার আবার স্পিকিং থেরাপির ক্লাস আছে। সামনের সেপ্টেম্বরে তাকে সরকারি নার্সারি স্কুলে ভর্তি করতে হবে। নিয়মিত ডাক্তার ও হেলথ ভিজিটর আসবে। তাদের প্রাইভেট স্কুলে ঢোকার নিয়ম নেই। হাঁটতে বেরিয়ে যায় মা। একটা ওয়াকিং সু কিনেছে সম্প্রতি। ঢেউ খেলানো ফুটপাত যেন নদীর আঁকাবাঁকা ঢেউ। দুটো নীল রঙের টানও সর্পিল গতিতে ছুটছে সাথে সাথে। যতই গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে নাকে ভেসে আসছে বুনোঘ্রান। রোদের লন্ডন হাসিমুখে স্বাগত জানাচ্ছে আর ডাকছে সবুজে ঘেরা এপিং ফরেস্ট। ভুল পথে গিয়ে নদী যেমন হারিয়ে ফেলে গতি এ ফরেস্ট ও ঢুকে পড়েছে শহরে। অথবা শহর ঢুকে পড়েছে বনে। হালকা গাছ হালকা ঝোপঝাড়। শহরের জন্য বড় মনোহর বড় মায়াবী। থরে থরে ফুলের ঝাড় ভ্রমরের ওড়াউড়ি। গাছ দেখে ঠিকই চেনা যায় ইংরেজি ছবির গাছ, এগুলোর ধরণ বেড়ে উঠার ভঙ্গি পাতার ঝিরিঝিরি ফুলের আবহ। বন যতদূর পর্যন্ত রাস্তায় গিয়ে মিশেছে ততোদূর হেঁটে আসে মা। রাস্তা তত ভালো নয়। তবু্ও বনের ভেতর দিয়ে হাঁটার আনন্দ মন শরীরকে চাঙা রাখে।

হাঁটা শেষ করে সাড়ে এগারোটার মধ্যেই ফিরে আসে। জ্যাকেট পরে বাচ্চারা লাইন ধরে দাঁড়ায় ক্লাসে। টয়লেটে যেতেও এভাবেই টিফিনের সময় লাইন ধরে। আশ্চর্য হলেও সত্য সবাই এক সাথে টয়লেটও করে। নুশানও খাওয়া দাওয়ার সাথে এতেও নিয়মের মধ্যে পড়েছে। দরোজার কাছে শিক্ষক ধরে রাখে বাচ্চাকে গার্ডিয়ান বাইরে টেবিলের উপর রাখা খাতায় সাইন করে সবুজ ক্যাপওয়ালা ছোট একটা দুধ ও বাচ্চা নিয়ে চলে যায়। বাচ্চার উপস্থিতি কম হলে কোন কোন বাচ্চাকে দুধ বেশি দিয়ে দেয় শিক্ষক। আর নুশান এটা বেশিই পায়। সে তার চঞ্চলতা ও আকর্ষণীয় আচরণ দিয়ে ইতিমধ্যে সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে।

মা আজ একটু দ্রুত পা চালায়। চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান এড়িয়ে অন্য রাস্তায় নিয়ে যায়। ঘরে গিয়ে অতি সতর্কতায় খাবার সারে। একটু গড়িয়ে নেয় ফোমের ম্যাট্রেস। যদিও দুদিন আগের ভয় তার মগজে ঘুরপাক খেতে ভোলে না একটুও।

বিকাল সাড়ে তিনটায় এপয়েন্টমেন্ট। দুইটায় ফোন করে বাবা মনে করিয়ে দেয় দায়িত্ব মনে করে। ‘ চিলড্রেন হেল্প সেন্টার ‘ এ এটা তার তৃতীয় এপয়েন্টম্যান্ট। এর আগে ফিজিওথেরাপি ও অকুপেশনাল স্কিল এপয়েন্টম্যন্টে নুশান পুরোপুরি ফেল মেরেছে। স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক নীচে তার পয়েন্ট। তার যে বল, যে রিং দিয়ে যেভাবে খেলার কথা সে খেলেনি। কখনো অন্য পরীক্ষার্থীকে দেখেছে নয়তো শিক্ষককে। মা বুঝতে পারে না নতুন একটি জায়গায় নতুন শিক্ষকদের সাথে একটা বাচ্চা হুট করে কেমন করে স্বাভাবিক আচরণ করবে?

স্পিকিং থ্যারাপির ক্লাসে

—হোয়াটস ইউর নেম

—হোয়াটস ইউর নেম শিক্ষক ইনান মার্গারেটের প্রশ্নে নুশানের উত্তর।

—আর ইউ ওকে

—আর ইউ ওকে

শুরু হয়েছে ভুল উত্তর দিয়ে। মানে রিপিটেশন। পাতলা বাতাসে দিঘির মতো ঠোঁটে ঢেউ মৃদু হাসির রেখাও খুশি করতে পারে না মায়ের মন। ‘মায়ের চিৎকার দিয়ে বলতে করছে ও ইচ্ছা করে ভুল বলছে। স্কুলে তো সব ঠিক ঠিক বলে। বলতে পারেনি মা। ছল ছল চোখ ব্যথা করে জল নামছে।

এবিসি সং’ বললে পুরোটাই গাইলো। ‘এবিসি সং বলো’ বলতেই জবাব দিল ‘এবিসি সং বলো’।

—’দিস ইজ দ্যা প্রবলেম’। হি ডা’জন্ট রিকগনাইস ভার্ব?

ডাক্তার সমস্যা বুঝে খুশি।

তারপর সেই পুরনো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। নুশানকে এক হাতে ধরে রেখে মা উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য আনা সব চিপস চকলেট শেষ করে ফেলেছে। এখানকার হেল্পিং এসিস্ট্যান্ট কাউকে পাত্তা না দিয়ে দরোজামুখে দৌড়ে গিয়েছে কয়েকবার। তার দৈনন্দিন কাজ। অগোছালো ইংরেজিতে মা বুঝিয়ে দিচ্ছে। কানের পরীক্ষায় যদিও সে উৎরে গেছে। চারকোণা একটি ঘরে ঢুকিয়ে চোখে চশমা এঁটে দিয়েছিল। এক একটা সুইচ টিপলে এক একরকম শব্দ করে বেল বাজে বাইরে এক এক দিকে। কয়েকবার বাজানোর পর নুশান বুঝে গিয়েছিল এবার কোন বেল বাজবে। অপারেটর খুশি হয়ে হাসির স্টিকার দিয়েছে গিফট। নুশান কিছু না বুঝলেও এ ইংরেজ অপারেটর এর সাথে খুব হেসেছে। মায়ের মনে বারবার বেনুগোপালের মুখটা ভাসলো; কেন নুশান তাকে এতটা ইগনোর করেছে? বুঝা যায় না কোনোভাবে! নিজের ওমে বেড়ে ওঠা এ শিশুর মনের কূলকিনারা কোনদিকে যায়!

(চলবে)

 

+ posts
কবি ও সাহিত্যিক খাতুনে জান্নাত ভালোবাসেন মানুষ ও প্রকৃতি; দুর্বলের প্রতি সহিংসতা ও অভিন্নতার মুক্তি চান তিনি। তাঁর কবিতা নস্টালজিক অনুভূতি, নারী মুক্তি, প্রকৃতি, বোধ ও বিভেদমুক্তির ও উজ্জীবন মূলক। কবির জন্ম সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার, ঘিলাছড়া ইউনিয়নে। তবে তাঁর পৈতৃক ও মাতৃক ঠিকানা: লক্ষ্মীপুর জেলাধীন লক্ষ্মীপুর থানার গোপীনাথপুর গ্রামে।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
কবিতাগ্রন্থ: দিনান্তে দেখা হলে (২০০৯) জীবনের কাছে ফিরে (২০১০), নিরন্তর রোদের মিছিলে (২০১২), মুঠো খুলে দেখি(২০১৬), নিসর্গে নিমগ্ন নামতা(২০২২),
উপন্যাস গ্রন্থ:শিউলির কথা (২০১৯), বিলেতের বাউরি বাতাস(২০২২)।
নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ গ্রন্থ‘ দ্য রে অফ লাইফ এন্ড নেচার‘ প্রকাশিত হয় ২০১৩, অনুবাদ ব্রজেন চৌধুরী।
লিটলম্যাগ ও জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখছেন। বাংলাদেশ ভারত, যুক্তরাজ্যসহ,যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের জাতীয় দৈনিক, ব্লগ ও অনলাইন পত্রিকায় বাংলা ও ইংরেজি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, প্রবন্ধ ও তাঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদ কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে।তিনি গান, শিশুতোষ ছড়া, সাহিত্য ও নারী বিষয়ক প্রবন্ধ , নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি অনুবাদ করছেন।

Read Previous

পথের পর্চা পেশ

Read Next

পশ্চিমা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এক নয়
ড. আকবর আলি খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *