অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৫, ২০২৪
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৫, ২০২৪
১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবীর বিকাশ সরকার -
আগন্তুক

১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাস। স্বাধীনতা সংগ্রামে উন্মাতাল তখন পূর্ব পাকিস্তান। প্রতিদিনই মিছিল মিটিং চলছে। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা তো আছেই, অনিশ্চিত দোদুল্যমান ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে মাথার ওপর। কী হবে দেশটার? কী ঘটতে যাচ্ছে জাতির কপালে? পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কী সত্যিই স্বাধীনতা দেবে বাঙালিকে? সর্বত্রই এসব সরাসরি বলাবলি না হলেও চিত্রটি এই রকমই।

সকালবেলা অফিস যাওয়ার পূর্বে জীবন চক্রবর্তী প্রতিদিনকার মতো তিন ছেলেমেয়েকে ডেকে দরজার কাছে বললেন, “সাবধানে থাকিস। যেই আসুক ভালো করে বুঝে শুনে কথা বলবি। দেশের পরিস্থিতি একদম নাজুক বুঝতেই তো পারছিস, বাইরে না যাওয়াই ভালো। কিছু আনার দরকার হলে দারোয়ান রহমত আলীকে দিয়ে আনাবি। ওতো আবার বিহারি জানিস তো? ওর থেকেও সাবধান। বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে এখন আর বিহারিদেরও বিশ্বাস করা যায় না। আমি ভাবছি ওর বদলে বাঙালি কাউকে রাখা যায় কিনা। রাত-বিরেতে আমাদের মিটিং-টিটিং হয় সেসব গোপন তথ্য বাইরে পাচার করে দিতে পারে।” এই কথা বলে দু’কদম হেঁটে গিয়ে পুনরায় ফিরে বললেন, “ভালো কথা। একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে। আজকেও দুপুরে না-ও ফিরতে পারি। তোদের মাকে বলিস।” বলে জীবনবাবু নিচে নেমে গেলেন দোতলা থেকে। বড় মেয়ে রাধাশ্রী বলল, “তুমিও সাবধানে থেকো বাবা।” বলে তার পরের ছোটবোন জয়শ্রী এবং সবার ছোটভাই রাজদেবকে নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। রাজদেব বয়স যার প্রায় দশ জানালার কাছে গিয়ে পর্দা তুলে দেখল সাদা রঙের জিপটা প্রতিদিনকার মতো বাবাকে তুলে নিয়ে চলে গেল।

রাধা জয়শ্রীকে বলল, “মাত্র তো সাড়ে আটটা বাজে। আরও কিছুক্ষণ পড় না জয়ী! রাজকেও অঙ্কটা দেখিয়ে দে। অঙ্কতে ও একদম কাঁচা। আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। দেখি মা কি করছে! সকাল থেকে বলছিল প্রেশারটা নাকি বেড়েছে।”

এর আধঘণ্টা পর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনল জয়শ্রী। একবার। দুবার। তিনবার। সে দরজা খুলবে কি খুলবে না ভাবছিল। আবার যখন নাড়া পড়ল সে গিয়ে দিদিকে ডেকে আনল। রাধা কয়েক সেকেন্ড কি ভেবে নিয়ে কোমরে শাড়িটাকে গুঁজে দরজা খুলল। খুলেই দেখতে পেল একজন যুবক দাঁড়িয়ে। বয়স পঁচিশ বা ছাব্বিশ। শ্যামলা। দীর্ঘদেহী। কুঁকড়ানো চুল হলেও বেশ এলোমেলো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কিন্তু চোখ দুটো বড় বড় এবং উজ্জ্বল। মুখে হাসির আভা। মোটা সাদা খদ্দরের পাঞ্জাবি ও পাজামা পরনে। পায়ে চামড়ার চটি। রাধা কখনো একে দেখেছে বলে স্মরণ করতে পারল না। কয়েকটি ছেলে আছে এপাড়ার বেশ উত্ত্যক্ত করে, বাজে বাজে কথা বলে। শহরেও কেউ কেউ বিশ্রী শব্দ ছুড়ে দেয় ওকে দেখে। সে জানে এর জন্য ওর সৌন্দর্যটাই দায়ী। একটি ছেলে তো ওকে ‘মা দুর্গা’ বলেই ডাকে, এই তো রাস্তার মোড়ে বাদুরতলায় থাকে। কয়েকটি চিঠিও রাধা পেয়েছে, এনে দিয়েছে রহমত আলী। কিছু করার নেই। এই পাড়ার নতুন বাসিন্দা ওরা কিছুই চেনে না, জানে না, চক্ষু বুজে সইতে হচ্ছে। তবে ভয় পাওয়ার মেয়ে নয় রাধা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে, এমএ পরীক্ষা দিয়েছে। এখন বাসাতেই থাকে।

রাধা অবাক হয়ে জিজ্ঞস করলো, “কাকে চাইছেন?”

ছেলেটি মৃদু হেসে নমস্কার দিয়ে বলল, “আমার নাম ঋষিকেশ দাস। এই পাড়াতেই থাকি। মিউনিসিপ্যালিটি অফিসের কাছেই নিবারণ হিন্দু মেসে থাকি।”

যুবকটির নাম মনঃপূত হলো না রাধার কাছে। ছেলেটি নমঃশূদ্র। বলল, “তা কি চাই? কী জন্যে এসেছেন? বাবার কাছে চাকরি-বাকরি কিছু?” কণ্ঠে তার উষ্মা।

কাচুমাচু হয়ে গেল ঋষিকেশ। আবার হেসে বলল, “না। মানে চাকরি ঠিক নয়। আদিত্যদা মানে আদিত্য সেনগুপ্ত আমাকে পাঠিয়েছেন। টিউশনির জন্য। একজন টিউটর খুঁজছেন নাকি আপনারা?”

রাধা কপালে চোখ তুলে ফেললো, “আদিত্যদা! কোন্ আদিত্য? টিউশনি! টিউটর! কই আমি তো কিছু জানি না! বাবাও তো কিছু বলেনি আমাদেরকে। আসলে মতলবটা কী? ওই অসভ্য ছেলেগুলোর মতো আপনিও আমাকে উত্ত্যক্ত করতে এসেছেন, নাকি? এ-তো ভীষণ মুশকিল হলো দেখছি! এই পাড়ায় এই শহরে কি আর সুন্দরী মেয়ে নেই? কী পেয়েছেন বলুন তো আপনারা?” রাগলে হিতাহিত জ্ঞান থাকে রাধার।

চমকে উঠে ঋষিকেশ! ভীষণভাবে! কী বলছে মেয়েটি! প্রেম নিবেদন করতে এসেছি! তাকে উত্ত্যক্ত করতে এসেছি! মুখের হাসিটা উবে গেল নিমেষে। অস্পষ্ট স্বরে বলল, “না না না। তা কেন? আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমি প্রেমট্রেম করতে আসেনি। আপনাকে বিরক্ত করার জন্যও নয়। ওসব বিলাসিতা আমার একদম নেই। বিশ্বাস করুন আ…আ…আমার একটা কাজ দরকার। নিদেনপক্ষে টিউশনি। খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের সংসারের অবস্থা… আদিত্যদা বললেন… তাই এলাম।”

খুব বিরক্ত হলো রাধা, “কিন্তু আপনাকে দেখে তো টিউটর মনে হচ্ছে না!” বলেই আবার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো আগন্তুকের। কখন যেন জয়শ্রী আর রাজদেবও এসে দাঁড়িয়েছে দিদির কাছে। রাধা কঠিন মুখ করে বলল, “আপনি আসুন। আমাদের টিউটরের কোনো প্রয়োজন নেই।” বলেই জবাবের অপেক্ষা না করেই দরজাটা সশব্দে বন্ধ করে দিল।

মাথাটা কেমন যেন টলে উঠল ঋষিকেশের। সকালে কিছু খায়নি। পয়সা থাকলে তো খাবে! গতকাল তবু পান্তাভাত দু’মুঠো খেয়েছিল। টাকা বাকি পড়েছে বলে দুপুর আর রাতের খাবারও বন্ধ করে দিয়েছে মেসের ম্যানেজারবাবু। আজ সকালে শুধু একগ্লাস জল খেয়ে বেরিয়ে এসেছে। তার সমস্ত শরীর সহসা উষ্ণ হয়ে উঠল। খুব গরম হয়ে যাচ্ছে মাথার ভেতরটা। কোনো অসুখ নেই শরীরে তবুও দারুণ অসুস্থবোধ করতে লাগল। গলাটা শুকিয়ে গেছে। পা দুটো সহসা ভারী অনুভূত হচ্ছে। সিঁড়ির কার্নিশ ধরে ধরে সে নিচে নেমে এলো। রহমত আলী নিঃশব্দে লোহার ফটক খুলে দিয়ে তাকে বেরোতে দিল।

পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে দেখল কোনো সিগারেট নেই। কেবল ম্যাচটা আছে। হাঁটতে হাঁটতে নিজের মনেই বলতে লাগল বিড়বিড় করে, আদিত্যদা কী এই বাসার কথাই বলেছিলেন? নাকি অন্য ইঞ্জিনিয়ারের বাসায়। আরও তিনটি ইঞ্জিনিয়ারের বাসা আছে পাশাপাশি। অভাবে, সংকটে, দুশ্চিন্তায়, দুভার্বনায় মাথার ঠিক নেই তার। বিএ পাস করেছে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আজ দু’বছর, অথচ একটা কাজ জোটাতে পারছে না। সবাই ব্যস্ত। সর্বত্র অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে। নেতৃস্থানীয় সবাই আন্দোলনরত। অভাব-অভিযোগ, সুখ-দুঃখের কথা শোনার কেউ নেই। এই সময় কে কাকে কাজ দেবে? এদিকে ছোটবোন অরুণাটা বিএ পড়ছে হোস্টেলে থেকে। দু’টো টিউশনি করছে এটাই সংসারের একমাত্র আয়। আরও তিনটি ছোট ভাই-বোন স্কুলের ছাত্রছাত্রী। বাবা গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত ভেঙে এখন অবশ। বেসরকারি এক চা রপ্তানিকারক কোম্পানির কেরানি ছিল। সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। বড় মাসী আছেন এই শহরেই। মেসোমশাই ডাক্তার। মাসীই গোপনে-গোপনে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করছে। ঋষিকেশের চা-সিগারেটের জন্য হাতখরচ মাসীই দেয়। দিনের বেলা প্রায় উপোস থাকে, না হয় পার্টি অফিসে গেলে চা সিঙ্গাড়া, নিমকি জুটে যায়। আর রাতের বেলা মাসীর বাসায় গিয়ে খেয়ে নেয়। বাবা সবাইকে নিয়ে গ্রামে চলে গেছে কয়েক মাস হয়ে গেল। ঠাকুরদা আমলের একটা বড়সড় টিনের চালের বাড়ি ছিল বলে রক্ষা। তা না হলে পথে বসতে হতো।

ঋষিকেশের মনটা এতো বেশি বিধ্বস্ত হয়ে গেল মেয়েটির নগ্ন রূঢ় ব্যবহারে যে নিজেকে নিদারুণ শক্তিহীন মনে হচ্ছে। এরকম নিঠুর অভিজ্ঞতা তার জীবনে এই প্রথম। ব্রাহ্মণের মেয়ে নমঃশূদ্রকে কী ভালো চোখে দেখবে? মুচির ছেলে ভেবে নিয়েছে তাকে। তাই বলে এভাবে মানুষের সঙ্গে বিশ্রী ব্যবহার করতে হয়? নীচু জাতের বলে আমরা কি মানুষ নই? নিশ্চয়ই মেয়েটি শিক্ষিত হবে। হায় শিক্ষা! জীবনে তো অপ্রীতিকর ঘটনা কম ঘটেনি। কিন্তু এরকম অপমান তো কখনো সে হয়নি! মানুষ একটা কাজ, একটা চাকরি চাইতে বা দাবি করতেই পারে, তাই বলে এরকম আপমান করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া! এতোখানি অবমানিত হওয়ার কথা তো তার ছিল না!

আদিত্যদা বলেছিলেন সড়ক ও জনপথের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জীবন চক্রবর্তীর কথা, তিনি একজন টিউটর খুঁজছেন। হ্যাঁ ওই তো ফটকের বাঁ পাশে নেইম প্লেটে ওই নামই তো লেখা আছে। চারজন ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যে হিন্দু একজনই। ঠিকই গিয়েছিল ঋষিকেশ ভুল নেই। কিন্তু ভুল মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এই যাহ্ দুঃখ! টিউশনি হয়নি তাতে তেমন দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। এই অপ্রত্যাশিত দুর্ব্যবহারটা কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছে না সে। না, এই জীবনে আর মুছে যাবে না।

আতিদ্যদা’র বাড়ির সামনে দিয়ে চলে এলো মেসে। কেউ নেই। দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়, তাই অনেকেই চলে গেছে। পাচক রঞ্জিত রান্নাঘরে ব্যস্ত। দক্ষিণ কোণে নিজের বিছানায় এসে বসল ধপ করে। পকেটে আজকে একটি কানাকড়িও নেই। খুব সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে। ইব্রাহিমের মুদি দোকানে তিন-চার মাসের বাকি। ওখানে যেতে পারে না। এদিক-ওদিক তাকালো কারো টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট আছে কিনা। নাহ্ নেই। রঞ্জিতের হুঁকোর নেশা, সিগারেট টানে না সে।

হঠাৎ দেখতে পেল দরজার কোণে সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে। সেটা নিয়ে এসে আগুন দিয়ে ধরালো। বিশ্রী এক গন্ধ ও স্বাদে মুখ বিকৃত করে ফেললো। তবুও কয়েকটি টান দিল আয়েশ করে। তারপর বাইরে ছুড়ে ফেলে দিল। জরুরি বইখাতা ও চিঠিপত্রগুলো একটা ঝোলা বেগে ভরে কাঁধে নিয়ে নিজের বিছানা ও টেবিলটা দেখে নিল। তারপর পুরো ঘরটাকে। সর্বমোট ১৫টি বিছানা। প্রায় ৭-৮ মাস ধরে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল কমিউনিস্ট নেতা আদিত্যদা’র সাহায্যে। পাকের ঘরে গিয়ে রঞ্জিতকে বলল, “কবে আবার ফিরি ঠিক নেই। সাবধানে থেকো রঞ্জিত। অনেক বিরক্ত করেছি তোমাকে। ক্ষমা করো ভাই।”

রঞ্জিত লুঙ্গিতে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো দরজা অবধি, “কী হলো আবার দাদা! ম্যানেজারবাবু কিছু বলেছেন নাকি? মুখটা শুকিয়ে কেমন হয়ে আছে! কিছু খাওয়া তো হয়নি সকালে। এখন কেউ নেই দু’টো রুটি আছে দেবো? তবে তরকারি বলতে কিছু নেই।”

ঋষিকেশ দু’মিনিট ভাবল, “সেই চান্দিনা যাবে বাসে করে। কখন গিয়ে পৌঁছে! খেয়ে নিলে হয়। পেটের ভেতরটা চুঁই চুঁই করছে ভূতুড়ে খিদেয়। কিন্তু পরক্ষণে ভাবল, অনেক ঋণ হয়ে গেছে রঞ্জিতের কাছে। আর নয়। বলল, “অনেক করেছো তুমি রঞ্জিত আমার জন্য। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। বাড়িতে গিয়েই খাব না হয়। আর ম্যানেজারবাবুকে বলো, টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে এসে পরিশোধ করে যাবো। বড় মাসীর বাসায় গিয়ে বাসের ভাড়া নিয়ে গ্রামেই চলে যাবো।”

রঞ্জিত এক কাপ লিকার চা আর শুকনো রুটি এগিয়ে দিল। ঋষিকেশ গোগ্রাসে খেয়ে নিল কারণ, ম্যানেজার এসে দেখলে আর রক্ষে নেই! রঞ্জিতকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে ঝোলা ব্যাগটা কাঁধে ভালো করে স্থাপন করে পা বাড়ালো দরজার দিকে।

[২]
জয়শ্রী কলেজের ছাত্রী। না বোঝার কথা নয়। দিদির এমন ব্যবহারটা একদম ভালো লাগেনি ওর। জানা নেই শোনা নেই অপরিচিত একজন মানুষের সঙ্গে এরকম আচরণ করতে হয়? দারুণ মনঃক্ষুণ্ন হলো সে। দিদিকে ভয় করে বলে সে কিছু বলল না। কিন্তু সুযোগ বুঝে মাকে সব বলে দিল। কল্যাণী চক্রবর্তী একসময় স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। জয়শ্রীর কথা শুনে বিষয়টি আঁচ করতে বিলম্ব হলো না। রাধাটা এরকমই। সেই শৈশব থেকেই যেমন সাহসী, তেমনি রুক্ষ আচরণ ওর। কতবার নিষেধ করেছেন তিনি যার তার সঙ্গে বুঝে শুনে ব্যবহার করার জন্য। ওর বাবাও কঠোরভাবে সাবধান করে দিয়েছিল, কিন্তু এতটা বছরেও একদম বদলালো না মেয়েটা! কোন্ ছেলে এসেছিল কে জানে? যদি দুষ্ট প্রকৃতির হয়ে থাকে কি জানি কী করে বসে বাইরে পেয়ে রাধাকে তিনি ভাবনায় পড়ে গেলেন! এমনিতেই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। শান্তি নেই মানুষের মনে, তার ওপর ওরকম ঘটনা ঘটালে মন আরও বিমর্ষ হয়ে পড়ে।

কল্যাণীদেবী তবু রাধার ঘরে গিয়ে বললেন, “দুপুর যায় যায়। জ্ঞান করেছিস রাধা?”
রাধা রেডিও বাংলাদেশের খবর শুনছিল। শেখ মুজিবের ৬ দফা তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে জনমনে। এর বাস্তবায়ন মানেই স্বাধীনতা। হাজার বছরের বাঙালির কাঙ্ক্ষিক্ত স্বাধীনতা এসে যাবে। চিত হয়ে শুয়েছিল। কোলের ওপর ছোট্ট ট্রানজিস্টর। বলল, “এক্ষুনি যাচ্ছি মা।”
–“আচ্ছা, শুনলাম পাড়ার কোন্ ছেলে নাকি এসেছিল টিউশনির খোঁজে। কী বলেছিস তুই?”
–“কে বলল তোমায়? জয়ী নিশ্চয়ই! কে জানে কোথাকার কোন্ এক উটকো। ঋষিকেশ না নিশিকেশ ওরকম নাম। ঋষিপাড়ার হবে। আপাদমস্তক দেখে মনে হয়নি মাস্টারি করে। সাহস কিন্তু কম নয় জানো? দোতলা পর্যন্ত উঠে এসেছে! বলিহারি যাই! রহমত চাচা যাকে তাকে ঢুকতে দেয়, এটা ঠিক না মা। তুমি বলে দিও তো!” বলেই ঢুকে পড়ল বাথরুমে রাধা মাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে। ও জানে মা একবার কোনোকিছু পেলে সহজে ছাড়তে চায় না। পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দীর্ঘক্ষণ তর্কাতর্কি চালাবেই থামাথামি নেই!

কল্যাণীদেবী কঠিন মুখ করে বেরিয়ে গেলেন।

ঘটনাটি এখানে থেমে থাকলো না। জয়শ্রী সন্ধ্যেবেলা তার বাবাকেও চুপি চুপি বলে দিল। শুনে চমকে উঠলেন তিনি। চা পান করছিলেন কাপটা রেখে দিলেন টেবিলে। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, “তাই নাকি! এসেছিল তাহলে! রাধা খারাপ ব্যবহার করেছে! কিন্তু কেন? এ ভারী অন্যায়। ভারী অন্যায় হয়েছে। দ্যাখো দেখি কী কাণ্ড! ঋষিকেশকে পাঠাবেন বলেছিলেন আদিত্যবাবু আমাকে। একদিন পার্টি অফিসে আদিত্যবাবুকে বলেছিলাম, একজন ভালো টিউটর খুঁজে দেবার জন্য, রাজকে পড়াবে। তখন ঋষিকেশের কথা বলেছিলেন। খুব ভালো ছাত্র বিএ পাস করে আর পড়তে পারেনি। কিন্তু একটা চাকরি জোগাড় করতে পারছে না। সম্ভবত আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি করার কারণে কেউ চাকরি দিতে চায় না। সরকারি চাকরি তো হবেই না। বলেছিলাম আমার ছেলেটাকে পড়াক আর একটা ব্যবস্থা আমি করে দেবো। আহা! কী মনে করেছে ছেলেটি কে জানে! আদিত্যবাবুকেই বা আমি কী জবাব দেবো!” কল্যাণীদেবী রান্নাঘর থেকে সব শুনলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। কী আর বলবেন! এ তো নতুন ঘটনা নয়।

রাধা মেয়েটি একটু রাগীই বটে। কখন যে ওর মাথায় কী ভূত চাপে সে নিজেও জানে না। যখন বাবার আহাজারি শুনতে পেলো বুঝতে পারলো সকালে সংঘটিত কাজটি সে আসলেই ভালো করেনি। মনটা তার এমনিতেই নরম রাগী স্বভাবের হলেও। বন্ধু-বান্ধবী, সহপাঠীদের সঙ্গে হরহামেশা ঝগড়াঝাঁটি, মনোমালিন্য হয়ে থাকে। দু-একদিন অভিমান করে থাকা কিংবা মন খারাপ থাকা ঠিকই, তারপর যে যেরকম সেরকম অবস্থায় ফিরে যেতে সময় লাগে না কারো। এভাবে এতগুলো বছর পার করে দিয়েছে রাধা। মহানগর ঢাকাতে জন্ম এবং বড় হয়েছে, কোনোকিছু কেয়ার করার মানসিকতা ওর মধ্যে নেই। কতো ছেলে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছে ইনিয়ে বিনিয়ে, কিন্তু সে কঠিন চাহনি দিয়ে ওখানেই ওদেরকে স্ট্যাচু করে দিয়েছে। এই নিয়ে কম হাসাহাসি হয়নি তাদের মধ্যে। একটা নাছোড়বান্দা ছেলে বান্ধবী রমাকে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করতো। মাস তিনেক পর রাধাই বাধ্য করেছিল ছেলেটিকে কান ধরে ওঠবস করতে। তারপর উধাও হয়ে গেছে ঝামেলা।

রাধা পূর্বের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। সন্ধ্যেরাত। বাসার সামনেই ধর্মসাগর দীঘি সংলগ্ন উদ্যান। লোকজন খুব একটা নেই। চমৎকার মিষ্টি হিমেল বাতাস আসছিল। ডিসেম্বর মাস অথচ মনে হচ্ছে এখনো হেমন্তকাল! শীতের দেখা নেই। বিশাল দীঘির কারণে সবসময় জোরালো বাতাস থাকে সারাদিনই। ছেলেটির করুণ মুখটা মনের পর্দায় ভেসে উঠতে লাগলো বারবার। এভাবে দুর্ব্যবহারটা না করলেও চলতো! মোটেই ঠিক হয়নি। কেন যে এমন হয়ে গেল হঠাৎ করে! এই ছেলেটি ভদ্র এবং নিরীহ ছিল দেখতে। আর দশটা ছেলের মতো তাকে প্রেম নিবেদন বা অহেতুক উত্ত্যক্ত করতে আসেনি এটা তার প্রথমেই বোঝা উচিত ছিল। খোলা চুল উড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর মনে মনে ভাবল, আগামীকাল সকালেই সে ওই মেসে গিয়ে ঋষিকেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে নিজের কৃতকর্মের জন্য। ব্রাহ্মণের মেয়ে বলে অহংবোধ যেমন তার আছে, আবার কৃত অপরাধের জন্য দোষ স্বীকার করতে কোনো বেগ পেতে হয় না। নীতিজ্ঞান তার বরাবরই প্রখর। বাবা যদি ছেলেটি আসবে বলে আগাম জানিয়ে দিতো, তাহলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। এর জন্য বাবাও কম দায়ী নয়। রাধারও দোষ কারণ, যে কারও সঙ্গেই এরকম অমানবিক আচরণ করা সভ্যভব্যতার লক্ষণ নয়।

মনোজমিনে তীক্ষ্ন একটা কিছু গেঁথে থাকার কারণে সারারাত রাধা আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারলো না। জানালা দিয়ে ধেয়ে আসা দুরন্ত উত্তুরে বাতাসে উথালিপাতালি হয়ে কেবলই থেকে থেকে ঋষিকেশের কথাই ভেবেছে। ছিঃ! ছেলেটি কী ভেবে বসে আছে কে জানে! এরকম অপ্রত্যাশিত অহেতুক অপমান তার নিশ্চয়ই আমার কাছে পাওনা ছিল না! লজ্জায়, ক্ষোভে, দুঃখে রাধার দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নামলো। অতো আহামরি মুখ না হলেও নামটি সত্যি খুব সুন্দর ঋষিকেশ! ঋষিকেশ! ঋষিকেশ!

খুব সকালেই জয়শ্রীকে নিয়ে রাধা একটা রিকশায় চড়ে মিউনিসিপ্যালিটি অফিসের কাছে যেতে সহজেই খুঁজে পেলো মেসটি। পুরোনো টিনের কালো সাইনবোর্ডে সাদা অক্ষরে লেখা ‘নিবারণ হিন্দু মেস’। বড় একটি টিনের চালাঘর। সকাল তখন সাতটা বাজে। অনেকেই জাগেনি। কেউ কেউ হাঁটাহাঁটি করছে রাস্তায়। সবারই মুখ হা করা কৌতূহল সুন্দরী দুটি তরুণীর দিকে। এই পাড়ায় এরকম রূপসী মেয়ে কোনোকালে ছিল না মনে হয়! রিকশা থেকে দু’জনে নেমে হেঁটে গেল বড় ঘরসংলগ্ন একটি কক্ষে। সাদা ধুতি-গেঞ্জিপরা একজন টাকপড়া মধ্যবয়স্ক লোক টেবিলে বসে কি যেন লিখছেন। চোখে কালো ভারী ফ্রেমের চশমা। চশমার নিচে হিটলারি কালো এক টুকরো গোঁফ। তাদের আগমন টের পেয়ে চোখ তুলে তাকালেন এবং দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন।

নমস্কার দিল রাধা, “আমি রাধাশ্রী চক্রবর্তী। আর এ আমার ছোটবোন জয়শ্রী। আমরা আর অ্যান্ড এইচ করপোরেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জীবন চক্রবর্তীর মেয়ে।

–“নমস্কার! নমস্কার! কী বিপদ! কী বিপদ! আসুন। আসুন মা জননীরা। বসুন। বসুন। দরিদ্রের এই ভাঙা মেসে আপনাদের স্বর্ণচরণের অমূল্য ধূলি কোথায় রাখি! কোথায় রাখি!” বলে দুটো চেয়ার গামছা দিয়ে মুছে দিলেন। বললেন, “আমার নাম ম্যানেজার রাধারমণ শর্মা। লোকে রাধুবাবু বলেই ডাকে।”

রাধারমণের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো জয়শ্রী। দ্রুত মুখ স্বাভাবিক করে নিল। রাধার কোনো বিকার নেই। বলল, “আমরা এসেছি ঋষিকেশবাবুর খোঁজে। তিনি তো এখানেই থাকেন, তাই না? উনি কি আছেন, নাকি বেরিয়ে গেছেন?”

অমনি চুপসে গেল ম্যানেজার রাধারমণবাবুর হাসিখুশি উজ্জ্বল মুখটি। জোরে হাঁক দিয়ে বললেন, “ওরে রঞ্জিত দু’টো চা দে না বাবা এখানে। দু’জন জলজ্যান্ত মেহমান এসেছে দেখেও কি দেখিসনি বাবা? সারাটি জীবন কি হেঁসেল ঢেলেই যাবি, আমি যেমন এই অচলায়তন মেসটি ঠেলে ঠেলে চলেছি। কী কপাল নিয়ে জন্মেছিলামরে! রাধার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের চেয়ারে বসলেন তিনি। বললেন, “কী বলবো মা। পোড়া কপালের কথা। ছেলেটি গতকাল দুপুরে চলে গেছে।”

অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে উঠল রাধা, “চলে গেছে! কোথায়?”

–“তা তো বলতে পারবো না মা। পার্টির বড়দা আদিত্য সেনগুপ্ত একদিন নিয়ে এসেছিলেন। তা প্রায় ৭-৮ মাস আগে। বললেন, “পার্টির কর্মী ও এখানে থাকবে। একটা সিট খালি করে দিতে।” সিট খালিই ছিল। কয়েকজনই চলে গেছে দেশের পরিস্থিতি ভালো নয় দেখে। কাজকর্ম নেই। কলেজ নেই। কী করবে ফ্যা ফ্যা করে ঘোরাঘুরি করে! ঋষিকেশও তাই ছিল। খুব অভাবী হয়ে পড়েছিল ছেলেটি। বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় বড় বিপাকে পড়ে গেছে। এত ভালো রেজাল্ট একটা চাকরি জুটল না কত চেষ্টা-তদবির করেও। স্বভাব-চরিত্র খুবই ভালো ছিল। এখানে সবার সঙ্গে সুমধুর সম্পর্ক ছিল। ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইতো। চার মাসের ভাড়া তো দিয়েছিলেন আদিত্যবাবু নিজেই। এরপর আর হলো না। বাকি পড়ে গেল। কী বিপদ! কী বিপদ! মালিক মহাশয় বড় দজ্জাল লোক! নিষেধ করে দিলেন এখানে থাকা যাবে না! কিন্তু আদিত্যবাবু এসে বললেন কিছুদিন থাকুক আমি সব টাকা পরিশোধ করে দেবো। তবে খাবার বরাদ্দ করা যাবে না। কী আর করা? কোথায়ই বা যাবে ছেলেটি! আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তবুও যা পেরেছি করেছি। গতকাল কী হলো কে জানে! আমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে গেল! শুধু রঞ্জিতকে বলেছে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে।”

–“ওও! আচ্ছা গ্রামের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন?” ভেঙে না পড়লেও মনটা নিস্তেজ হয়ে গেল রাধার সহসা। এই দুঃসংবাদটা না জানলেই ভালো ছিল। জয়শ্রীরও মন খারাপ হয়ে গেল।

–“সেটা তো বলতে পারবো না মা জননী। এখানে যে রেকর্ড আছে তাতে আদিত্যবাবুর ঠিকানা লেখা প্রযত্ন হিসেবে। কুমিল্লা জেলাতেই কোথায় যেন!”

–“উনার বাবা কোথায় চাকরি করতেন?”

–“একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতেন শুনেছিলাম। কিন্তু শহরের কোথায় সেটাও জানা নেই। খুব কি জরুরি মা জননী? ও কি খারাপ কিছু করেছে?”

–“না না না ম্যানেজারবাবু। বরং উল্টো। আসলে উনি গতকাল আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন একটা টিউশনির ব্যাপারে। আমি বুঝতে না পেরে তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছি। ইচ্ছে করে নয় জানেন! এই পাড়ার কতগুলো ছেলে আমাকে প্রায়শ উত্ত্যক্ত করে। আমিও উনাকে তাদের দলের কেউ ধরে নিয়েছিলাম। এটা আমার মস্ত বড় ভুল হয়েছে ম্যানেজারবাবু। তাই সকালে ছুটে এসেছি ক্ষমা চাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি চলে গেছেন আমার ওপরই রাগ করে কোনো ভুল নেই। নেহাত বিপদে পড়েই তো গিয়েছিলেন আমাদের কাছে তাই না? বুঝতে পারিনি। বড় অন্যায় হয়ে গেল!” বলতে বলতে রাধার গলা ধরে এলো।

–“কী বিপদ! কী বিপদ! তাই নাকি! আ-হা-হা। কী করা এখন বলুন দেখি? কোথায় পাবেন ওকে এখন? আমি তো বুঝতে পারছি না। কোনো ট্রেসই তো নেই। আচ্ছা, দাঁড়ান দেখি।” বলে ঘরের ভেতরে গেলেন। কাকে যেন জিজ্ঞেস করে ফিরে এলেন। বললেন, “না গো মা জননী। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ জানে না ওর গ্রামের বাড়ি কোথায়?”

ভগ্নমন নিয়ে ফিরে এলো রাধা ও জয়শ্রী। জয়শ্রী বলল, “কী করবি এখন দিদি? বড় অন্যায় করে ফেলেছি রে! বেচারা কোথায় চলে গেলেন কে জানে! দেশের পরিস্থিতিও মারাত্মক হয়ে উঠছে।”

রাধা বিষণ্ন মনে জবাব দিল, “নিজেকে সত্যি বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে রে জয়ী। আদিত্যবাবুর কাছে যাবো আজকে।” তারপর মনে মনে বলল, “ঋষিকেশকে খুঁজে বের করতেই হবে। ওর কাছে আমাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেই হবে। অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে আমাকে। না হলে মরেও শান্তি পাবো না। ঋষিকেশ ক্ষমা করো। না জেনে, না বোঝে তোমাকে যেভাবে অপমানিত করেছি, ব্যথা দিয়েছি তার জন্য ক্ষমা করো।”

[৩]
মাসতিনেক পরের ঘটনা। রাধা নিজেও যেমন হয়রান হয়েছে শহরে ঋষিকেশকে খুঁজে খুঁজে, তেমনি আদিত্য সেনগুপ্তও। কোথাও তার খোঁজ মিললো না। কিন্তু একদিন দুপুরবেলা আদিত্যবাবু নিজেই এসে হাজির হলেন রাধাদের বাসায় ঝড়ের বেগে। পাগলের মতো অবস্থা তার। উত্তেজিত কণ্ঠে রাধাকে বললেন, ‘ঋষিকেশের খোঁজ পাওয়া গেছে, কিন্তু বড় দুসংবাদ রাধা! গত পরশু সন্ধ্যেবেলা তাকে আওয়ামী লীগের গুপ্তচর মনে করে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে বিহারিরা চকবাজারের কাছেই নূরপুরে! নূরপুরে বিহারিদের কলোনি আছে জানো তো!’

শোনা মাত্রই রাধা ‘মাগো’ বলে সোফা ধরে নিজেকে সামলে নিল। আদিত্যবাবুও তাকে জাপটে ধরে ধীরে ধীরে সোফায় বসিয়ে দিলেন। রাধার মুখ একেবারে ফ্যাকাশে! মাথার ভেতরটা শূন্য শূন্য লাগছে। মাথাটা নিচু করে বসে রইল। এরপর দু’চোখ থেকে টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো।

+ posts

Read Previous

একটি পুরোনো জানালার গল্প

Read Next

অন্ধকারের বুকে আলোর ফেরিওয়ালা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *