টুপ করে হার্টের একটা বিট মিস হলো আমার।
পুলে নামার সময় খেয়াল করিনি। কিন্তু ভেজা শরীরে সুঠাম, চওড়া দেহটা নিয়ে পুল থেকে যখন উঠলো এই প্রথম কোনো ছেলের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না!
ছেলেদের সৌন্দর্য চোখে পড়েনি সেভাবে। হামেশাই পাওয়া প্রপোজালগুলো ফিরিয়ে দিতে মায়াও লাগেনি কখনেও। কিন্তু কেমন অস্খির হয়ে ওঠলাম ওকে দেখে। এভাবে কাউকে দেখে পাগল পাগল অস্থির লাগবে ভাবিনি কখনও।
পুরস্কার ঘোষণার সময় দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা হাতে নিলাম। ও আমার পাশে রানার আপ ট্রফি হাতে হেসে দাঁড়ালো।ইন্টার ইউনিভার্সিটি সাঁতার প্রতিযোগিতায় মেয়েদের মধ্যে আমি চ্যাম্পিয়ন আর ছেলেদের মাঝে ও। কিন্তু কম্বাইন্ড ফলাফলে ওর চেয়ে টাইমিং-এ আমি এগিয়ে ছিলাম।
সুইমিং কমপ্লেক্সের বাইরে এসে ও ডাব হাতে নিলো। আমি চোখের আড়াল করতে পারছিলাম না ওকে। পাখির নীড়ের মতো চোখ কারও থাকতে পারে বিশ্বাস করিনি। ওর চোখ দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। আমি ডুবে যাচ্ছি ওর অতলে। ডাবওয়ালার কাছ থেকে স্ট্র চেয়ে আমিও আমার তাতে ঠোঁট রাখলাম। কথা বলার একটা উপলক্ষ্য খুঁজছি।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘আজই ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে নাকি ঢাকায় থেকে যাবে’। জানালো পরের দিন ওর প্রেজেন্টেশন আছে। সুযোগে জেনে নিলাম জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টে পড়ছে।
বুঝলাম-
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। ”
রাজশাহী ভার্সিটিতে জিওগ্রাফি পড়তে চেয়েছিলাম। দূরে বলে বাসা থেকে দেয়নি। কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে কেনো জাহাঙ্গীরনগরে পরীক্ষাটা দিলাম না। তাহলে ওর বুকে আঁছড়ে পড়েই নাহয় ডুব দিতাম। ভর্তি পরীক্ষার দিন আমি সদ্য বিয়ে হওয়া বোনের শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি বোনের সাথে। গাড়িতে গান বাজছে, “তুমি আমার নয়নগো…”
ওদের ক্যাম্পাসে বেড়াতে যাবো বলে কৌশলে ফোন নম্বরটা নিয়ে মৈত্রি হলে ফিরলাম। আমি কোনোভাবেই আমার মুগ্ধতা সরাতে পারছি না। চোখ বন্ধ করলেই পুল থেকে ওঠে আসা ওর তামাটে গড়নের পাঁচ ফুট প্রায় ১০ ইঞ্চি উচ্চতার শরীরের সাথে চওড়া বুকের ছাতি, মেদবিহীন শরীরটা এগিয়ে আসছে! মিটমিট করে একা একা হাসতে দেখে রুমমেটটা চেপে ধরলো কাহিনি জানতে।
আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না! বলেই ফেললাম, ‘ওকে দেখতে সপ্তাহান্তে জাহাঙ্গীরনগর যাচ্ছি’।
একটা ভয় ছিল, ওর কারো সাথে যদি সম্পর্ক থাকে! মাথা নিতে পারছিল না এমন ভাবনা। ওর ক্যাম্পাসে গিয়ে যখন ফোন দিলাম ও জিম থেকে ফিরলো আমার সাথে দেখা করতে।
সারাদিন ওদের ক্যাম্পাসে ঘুরলাম ওর সাথে। স্বস্তি পেলাম মেয়েদের ব্যাপারে কোনোরকম হ্যাংলামো নেই দেখে। এমন ছেলেও হয় নাকি! এই যে সারাদিন ঘুরলাম আমার সাথেও কোনো ফান করেও হ্যাংলামো করেনি। অথচ ছেলেরা আমাকে রানি মৌমাছির মতো পুজো করে।
ফিরে আসার সময় হাসতে হাসতে দুষ্টুমির ছলে বলে এলাম, ‘তোমার নৌকায় মাঝি হতে চাই, সাঁতারু’। ও কেমন যেন লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো!
‘’গ্রিক দেবতাদের সৌন্দর্য ধারণ করে পাথর হৃদয়ের হৃদয়হরণকারী,
সঁপেছি তোমার তরে এ মন প্রাণ!’’
হলে ফিরে মনে মনে রবিবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম-
“যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক
তারা তো পারে না জানিতে ।
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছো আমার হৃদয় খানিতে।‘’
লেখক পরিচিতি:
আরজু নাসরিন পনি,
অধ্যক্ষ
মডার্ন টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা।
One Comment
অনুপ্রাণন ম্যাগাজিন কর্তুপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ।