অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৪, ২০২৪
১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৪, ২০২৪
১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ড. শিল্পী ভদ্র -
বন্ধুত্ব

রাত ১২টা। অ্যাশ ফোন রিসিভ করে। বিশালের ফোন।

: এত রাতে ফোন করেছেন?

: বৃষ্টি পড়ে পৃথিবীটা শীতল হয়েছে। মনটা এখন প্রকৃতির মতোই শান্ত, সুস্থির। মন চাইছে আপনার সাথে কথা বলতে, ব্যস্ত নয়তো?

: তেমন না, বই পড়ছি।

: আপনাকে বিশেষ একটা কথা-বলতে ফোন করেছি। জানেন তো, আমার ইমিগ্রেশন লেটার এসেছে কানাডা থেকে।

: সেতো যেদিন এসেছে, ফোনে জানিয়েছেন। সেদিন বিকেল বা সন্ধ্যায় খুব চেয়েছিলেন- আমার সাথে দেখা করে, আনন্দটা ভাগ করে নিতে। তখন তো সময় করা যায়নি। সে সময় মা এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য আর একদিন পর চলেও যান। মা অপেক্ষা করছিলেন, দুপুরে একসাথে খাবার খাব-বলে। মা কাছাকাছি আছেন, সে শান্তিটা কাউকে বোঝানো যায়না। তার মতো এমন নিবিড় উপলব্ধি সন্তানকে আর কেউ করেনা। তাই আপনার আন্তরিক আবেদনে সাড়া দিতে পারিনি। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম বলে বলেছিলাম, ঠিক আছে দু-তিনদিনের মধ্যে লাইব্রেরিতে যাব, তখন কথা হবে।

: হ্যাঁ, তা দু-তিনদিন তো পার হলো, ফোন করলেন না যে?

: লাইব্রেরিয়ানের কাছে আমার বিশেষ কাজ ছিল, ওনাকে বারবার ফোনে না পেয়ে, শেষে অনিশ্চয়তার মধ্যে বের হয়েছিলাম বেশ বেলা করে। আপনি তো বের হয়ে যান সকালেই এই ভেবে আর ফোন করা হয়নি।

: আচ্ছা বুঝলাম। আপনাকে সেদিন বলতে চেয়েছিলাম, আপনি আমার সাথে কানাডা চলুন।

: কীভাবে?

: আমার ‘বউ’ হয়ে। আমার লিগ্যাল অ্যাডভাইজর পরামর্শ দিচ্ছেন- ব্রোকেন, ধনাঢ্য, সুন্দরী কয়েকজন নারী ওনার পরিচিত আছেন- যাদের একজনকে স্ত্রী- নামে লিখে নিয়ে যেতে। যারা কানাডাতে গিয়ে আর কোনো সম্পর্ক রাখবেনা। শুধু ওখানে যাবে আমার সাথে। তারা অবশ্য এজন্য মোটা অংকের টাকা দিতে চাইছে। আমি ওনাকে বলেছি ‘ইমপসিবল’। এমন সাজানো বউ আর টাকা আমি চাইনা। আমি চাইছি শুধু ‘আপনাকে’।

: সেটা যে সম্ভব নয়।

: কেন? আমি উপজাতি, শংকর জাতিভুক্ত বলে আমাকে ঘৃণা করেন?

: ঘৃণা করার প্রশ্ন নয়। আমার অনেক বন্ধুই উপজাতি, তা আপনি জানেন। বিষয়টা হচ্ছে কালচারের। আপনার কালচার আমার কালচারের সাথে যাবে না।

: কিন্তু আমি তো আপনার ধর্ম পালনে বাধা দেব না। আপনি আপনার কাজ করবেন। আমি নাস্তিক, ধর্ম নিয়ে মাথা-ব্যথা নেই আমার।

: যে পূজা-পার্বণে আমি মেতে উঠবো, সেখানে তো আপনার সাড়া থাকবে না।

: আমি তো আপনার মন্দিরে যাই, লোকনাথ আশ্রমে যাই। জানেন, একবার আপনাদের ধর্মীয় ট্যুরে যাবার জন্য আমি আর আমার এক বন্ধু একটা মন্দিরে যাই। এরপর যারা ট্যুরে যাবে, তাদের নাম ডাকছে। যথারীতি আমার নাম এলো। আমি পুরো নাম বল্লাম।

তারা বললেন: আপনি তো অন্য সম্প্রদায়ের।

বললাম: তাতে কী হয়েছে?

: দেখুন আমরা মাছ-মাংস খাব না, আপনার অসুবিধা হবে না?

: না, আমিও মাছ-মাংস খাব না।

: কিন্তু অন্যান্য নিয়মাচারণও মিলবে না, যেহেতু সব তীর্থযাত্রীরা একই আচরণ করবেন, সেখানে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবু আপনি ভেবে দেখুন।

: আমি ফিরে এলাম ওনাদের সমস্যা করে লাভ নেই ভেবে। কিন্তু মন্দিরে, গির্জায়, মসজিদে বেড়াতে, আখরায়, সাপুড়িয়াদের নৌকাতে, পর্বতে, বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে থাকতে আমার সমস্যা হয় না। জানেন, একবার বেদের নৌকায় সাতদিন, সাতরাত ছিলাম। ওদের সাথে খেয়েছি, ঘুমিয়েছি।

: আচ্ছা ওদের নৌকায় মাছের স্মেল আসে না? কিংবা সাপের?

: না।

: ভয় লাগে না। নৌকাতে তো অনেক সাপ থাকে তাই না?

: হ্যাঁ থাকে। শুধু রাতের বেলায় ঘুমোতে গেলে পায়ে কুট্ করে কিছু কামড়ালে জেগে ভয় লাগে সাপের। সেজন্য ভাবছি, আমার নামের শেষে ‘বিশাল সাপুড়িয়া’ দেব তাতে আমার জাত্যাভিমান কিছুটা হলেও চলে যাবে। আমি লালনের আখরায় থেকেছি, ওদের সাথে নানা বিষয়ে আলাপ করেছি, আমার আরেক নাম হবে ‘বিশাল বাউল’। উপজাতিদের সঙ্গে থেকেছি। ওরা খুব সরল, উদার প্রকৃতির মতো। তাই ভাবি, আমার আরেক নাম দেব ‘বিশাল নারমা বা চাকমা’।

: তখন তো নামে আপনাকে চেনা যাবে না। যখন ছবি দেখবো তখন ভাববো, এটা আপনিই।

: ঠিক বলেছেন। বিয়ের পর, আমি আপনাকে কোনোরকম বিরক্ত করব না।

: আচ্ছা আপনি তো ধর্ম মানেন না, তাহলে যদি বলি, অন্য একটা ধর্ম নিতে, তা নেবেন?

: না আমিও তো আপনাকে ধর্ম পরিবর্তন করতে বলছি না। আপনি আপনারটাই করেন। ববং নিজের ধর্মের চেয়ে আপনার ধর্মীয় কার্যক্রমে আমার অংশগ্রহণ বেশি। তাহলে সমস্যা কোথায় আপনার?

: বুঝতে পারলাম, আপনার ধর্মের বালাই নেই। তবে একই সংস্কৃতির পরিবার হলে পার্বণ, অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম একসাথে পালন করতে সুবিধা হয়। সকলে মিলে একই কাজে আনন্দও অনেক। সেটা তো পাব না।

: কিন্তু আপনার সঙ্গে তো আমি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি।

: সেটা তো আপনার পাত্রী দেখার বিষয়ে যিনি মধ্যস্থতা করবেন তার সাথে কথা বলিয়ে দেবার জন্য মন্দিরের কাছে আপনাকে যেতে বলি। কারণ ওইদিন সেখানে আমার একটা কাজ ছিল। আপনি মন্দিরে এসেছিলেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত ছিল। আপনি তো এম. ফিল. করেছেন না?

: হ্যাঁ এম.ফিল করেছি। এখন পিএইচ.ডি করছি; এক বছরের মধ্যে থিসিস জমা দিতে হবে। বলেন, দু-তিন মাসের মধ্যে কানাডা চলে গেলে কীভাবে জমা দেব থিসিস?

: কেন এসে জমা দেবেন।

: চলে গেলে পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে ফিরে আসা সম্ভব হবে না। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ২১২ জন পিএইচ.ডি’র জন্য আবেদন করেছিল শুধু আমাকেই কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছিল। পিএইচ.ডি ডিগ্রিটা হয়ে গেলে কানাডাতে পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি করবো। তারপর একটা কলেজে জয়েন করলে অনেক টাকা পাব এজন্য পিএইচ.ডি করাটা খুব দরকার।

: আপনি তো সোস্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স করেছেন?

: আমি ম্যানেজমেন্ট বিষয়েও মাস্টার্স করেছি। ল’ পড়েছি, প্রাকটিসও করেছি। কনসালটেন্সিতে ল’ লাগে। আবার বি.এডও করেছি। বি.এড-এর ইন্টার্নশিপ করার সময়ে বেশ মজার গল্প আছে। আমি তো চিরদিনই ফাঁকিবাজ গোছের। আমার দুই বন্ধুর সাথে সিলেটের এমন একটা স্কুলে ইন্টার্নশিপ নেই, যে স্কুলে কোনো বি.এড টিচাররা পড়াতে যায়না, এত বাজে স্কুল।

: সেটা কেমন?

: সব স্কুলে তো স্টুডেন্টরা সিগারেট খায়। ওরা খায় গাঁজা। একদম পড়ালেখা করে না যারা, তারাই সেখানে ভর্তি হয়। তো আমরা হেডমাস্টারের কাছে গেলাম দুই প্যাকেট বেনসন সিগারেট নিয়ে। স্যারের সাথে পরিচিত হয়ে বললাম, স্যার আমরা তিনজন ফাঁকিবাজ স্যার। ক্লাস তেমন নিতে পারব না, আপনাকে ম্যানেজ করতে হবে।

স্যার এ কথা শুনেও খুব খুশি হলেন। কারণ এই প্রথম কোনো বি.এড টিচার তার স্কুলে তবু ক্লাস নিতে এসেছে। ক্লাস নিয়েছিলাম মাত্র তিন বা চারদিন। একদিন বি.এড কলেজ থেকে অনুসন্ধানী টিম গিয়েছিলো, আমাদের না দেখে প্রশ্ন করেন,

‘ওনারা কোথায়’?

হেডমাস্টার তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন,

‘আপনাদের তিনজন শিক্ষক অত্যন্ত সিনসিয়ার, খুব ভালো শিক্ষক। আজকে মর্নিং শিফটের ছাত্রদের আগ্রহে মর্নিয়ে ওনারা ক্লাস নিয়ে গিয়েছেন’।

এরপর বিদায় অনুষ্ঠানে, এই স্কুল থেকে আমরা অনেক প্রশংসা পেয়েছি। আমাদের গিফট্ দিয়েছে; খাইয়েছে, প্রশংসাপত্র দিয়েছে।একদিন ঢাকাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, আমার চেয়ে বয়সে বড় একটা ছেলে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো, টুক্ করে। আমি অবাক! ছেলেটি পরিচয় দিল, সে ওই স্কুলের ছাত্র- যেখানে আমি মাত্র তিন বা চারদিন ক্লাস নিয়েছি। আমি জীবনে শিক্ষকতা করিনি, কিন্তু এ কদিনের ক্লাসের বিনিময়ে ‘স্যার’ বনে গেলাম ভেবে অবাক হলাম। এরপর ছাত্রটি জোর করে অনেক কিছু খাইয়ে তারপর ছাড়লো।

: হ্যাঁ আমিও একটা কলেজে শিক্ষকতা করেছি, এ পেশায় সম্মান অনেক। আমার ছাত্ররা ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। মাঝে মাঝে ওরা ফোন করে। দু-একজনের সাথে দেখাও হয়।

: আচ্ছা আপনি সাপ পুষবেন? তাহলে আপনাকে একটা সাপ দেব।

: না সাপ পুষবো কেন?

: পুষবেন, সাপ পুষতে জায়গা কম লাগে, খরচ কম, ওরা বাচ্চা দেয় অনেক।

: হ্যাঁ, আজকাল সাপের বিষ চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে।

: জানেন, রাস্তায় যারা সাপ দেখিয়ে টাকা নেয়- আমি এগিয়ে গিয়ে বলি, দেখি তোমাদের সাপ? ওরা ভয় পায় কারণ অনেকের কাছে সাপ থাকেও না।

: ভয় পায় কেন?

: কারণ ওরা বোঝে, এ আমাদের চেয়েও বড় সাপুড়ে। আচ্ছা সাপ না পুষলে একটা বানর পোষেন। একটা বানর দেব আপনাকে।

: না, আমি বানরও পুষবো না। লাফ দিয়ে কার ঘরে গিয়ে, কী অনিষ্ট করবে- এ নিয়ে কেওয়াজ করবে কে?

: কুকুর নেবেন?

: না কুকুরের লোমে অ্যাজমা হয়।

: বিড়ালও না?

: না। বিদেশে যাদের অ্যাজমা হয় তাদের বাড়িতে কুকুর-বেড়াল থাকলে ডাক্তাররা সে বাড়িতে যায়না, সোজাসুজি বলে দেয়- ‘আগে এদের বাড়ি থেকে বিদায় করেন, তারপর যাব’।

: তাহলে একটা খরগোস পালেন।

: খরগোস, আগে আমাদের বাড়িতে ছিল।

: তাহলে কী করবেন?

: তারচে’ পাখিদের খেতে দেওয়া ভালো। কিন্তু খাঁচার ভেতরের পাখি আমার ভালো লাগে না। তারা মুক্ত থাকবে, আমি খেতে দেব। ওরা বেশ সুন্দর করে খেয়ে যায়- তা আমার ভালো লাগে।

: থাক, তাহলে ভাষা শিখেন। আমি এখন স্প্যানিশ ভাষা শিখছি।

: কেন শিখছেন?

: ভাষা শেখায় আমার আগ্রহ। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যেমন অনেক ভাষা জানতেন আমারও ইচ্ছা, অনেক ভাষা শিখি।

: আমার অবশ্য দুটো বিষয় শেখার ইচ্ছা আছে, একটা ল’ পড়া আর হোমিওপ্যাথি পড়া।

: দুটোই ভালো। আমি তো ল’ পড়েছি, অনেক বই ছিল আমার। একটা গরিব ছেলের ল’র বই কেনার সামর্থ্য নেই-জেনে অনেক বই একটা ব্যাগে ভরে ওর বাসায় দিয়ে এসেছিলাম। ছেলের বাবা তখন আমার মাথায় হাত-রেখে অনেক আশীর্বাদ করেন । আপনি ল’ পড়েন, এটা জীবনের সব ক্ষেত্রে কাজ দেয়।

: আমিও তাই ভাবছি। ল’ জানা সবারই দরকার।

: এখনও আমার কাছে বেশ কিছু বই আছে। আপনাকে দিয়ে যাব। আমি ফার্স্ট ইয়ারের জন্য ছয়টা প্রশ্ন সাজেশন করে দেব, তা-ই আসবে। ল’ পড়ায় আমি আপনাকে হেলপ্ করতে পারবো।

: আচ্ছা শুনেছি আপনি হাত দেখতে জানেন?

: হ্যাঁ, হাত দেখা শিখেছিলাম এক বৌদ্ধর কাছ থেকে।

: আমার এক রিলেটিভ হাত দেখাতে চায়, দেখে দেবেন?

: দেব, কবে দেখা হবে বলেন? পরশু ডেট করেন।

: আমি ওনার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাব। আচ্ছা আপনার না একটা এনজিও ছিল?

: হ্যাঁ আছে। হরিজন- সুইপার-মুচি এবং ঝরেপড়া শিশুদের নিয়ে আমরা কাজ করি।

: আপনি চলে গেলে এনজিওটা বন্ধ করে দেবেন?

: আপনি তো এদের নিয়ে কাজ করতে পারবেন না।

: কেন?

: ওদের তো আপনি ঘৃণা করেন।

: কে বলল?

: সুইপার, মুচি ওদের সাথে বসে খেতে পারবেন? ওদের সাথে মিশতে পারবেন?

: কেন নয়? সুইপাররা খুব পরিস্কার হয়। আমি সুইপার পল্লীতে গিয়েছি, একটা ময়লা পাবেন না ওদের উঠোনে। ওদের বাসায় খেয়েছি, ওদের সঙ্গে মিশেছি।

: যান, তাহলে আমার এনজিওটা আপনাকে দিয়ে যাব। এবার বলেন, ফর্মে আমার বউর নামটা আপনার দেই?

: এমনটা আপনার কেন মনে হলো?

: আপনি আমাকে পিঠা খাইয়েছেন, মন্দিরে আমার জন্য এসেছেন।

: মন্দিরে তো এসেছিলাম আপনার বিয়ে ঠিক করতে; আপনাকে বিয়ে করতে নয়!

: বিদেশে নাকি গার্ল ফ্রেন্ড লিখলে ভিসা আরও তাড়াতাড়ি দেয়। আচ্ছা এক টাকার দু’পাশে টস করবো। একপাশে ‘বউ’ আর একপাশে ‘গার্লফেন্ড’। যেটা হবে, আপনি তাই হয়ে যাবেন আমার সাথে।

: একটাও না।

: কেন?

: আমি তো আপনাকে সে আসনে বসাইনি!

: আচ্ছা আপনি একটু আদর-যত্ন করতে পারবেন তো, তাহলেই হবে।

: আমি তো আপনাকে সেভাবে চিন্তাই করিনি!

: আপনি আপনার হাসবেন্ডকে আদর করবেন তো?

: আপনাকে বলবো কেন?

: আমি একটু আদর পেলেই খুশি। আপনাকে এত ভালোবাসবো তখন ভাববেন, এ জীবন কেন আরও আগে আসেনি। সুইডেনে হাতের পাঁচটা আঙুলকে কী কী বলে জানেন? তারা বলে- ঞৎঁংঃ (বিশ্বাস), ঋধরঃয (আনুগত্য), খড়াব (ভালোবাসা), চৎরাধপু (গোপনীয়তা), জবংঢ়বপঃ (সম্মান)- এই পাঁচটা বিষয় থাকলে একটা সম্পর্ক টিকে থাকে। আপনাকে সবটাই শতভাগ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো; ঠিক আছে? আমি গিয়ে আপনার জন্য স্পন্সর পাঠাব উইথ প্লেন টিকিট। যাবেন তো?

: তখন দেখবো।

: তখন আপনাকে বিয়ে করে আটকে রাখবো, কী করার আছে?

: পুলিশকে খবর দেব। আপনাকে বের হতে দিলে তো? আমাকে তখন অনেক ভালবাসবেন আপনি। ঠিক আছি আপনার জন্য কানাডিয়ান বাঙালি পাত্র দেখবো।

: হ্যাঁ, বাঙালি পরিবার দেখেন। বিদেশিদের কিছুই ঠিক নেই।

: না, বিদেশিরা অনেক ভালো হয়। আমি কানাডা গিয়ে একত্রিশ দিনের মধ্যে একটা সাদা চামড়ার লেডি বিয়ে করবো। তারপর দেশে এসে বাসে, ট্যাক্সিতে, রিকশা করে ঘুরে বেড়াব। তাকে শাড়িও পড়াব।

: শাড়ি ওরা পড়ে। আর পড়লেও ভালো লাগে।

: তবে আমি আপনাকে প্লেনের টিকেটসহ স্পন্সর পাঠাব।

: একটা নয় দুটো পাঠাবেন, একটা আমার স্বামীর।

: ঠিক আছে পাঠাব। তাহলে আপনি আমার কিছুই হলেন না?

: বন্ধু হলাম।

: বন্ধু হয়েই থাকেন।

: যে কথা মাকে বলা যায় না। বাবা-মা, ভাই-বোন কাউকে বলা যায় না। যেখানে কেউ যেতে পারে না। বন্ধুর স্থান সেখানে। এ অনেক বড় কথা। বন্ধুত্ব রক্ষা করা আরও বড় কঠিন।

: ঠিক আছে, আপনি আমার চিরদিনের বন্ধু হয়েই থাকবেন-

ড. শিল্পী ভদ্র, ফেলো গবেষক, লেখক।

 

 

 

 

Read Previous

গুরু ভাই, সন্তানেরা

Read Next

মানবেতর জীবন আখ্যান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *