অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ৩০, ২০২৪
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ৩০, ২০২৪
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেহানা বীথি -
মৃত হাঁস, মাতাল ও একটি মানবিক গাছ

একটি মৃত হাঁস পড়ে আছে গাছতলায়, সেদিকে ওদের কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই। ওরা আছে যে যার মতো। কেউ হাসছে, কেউ আকুল হয়ে কাঁদছে, কেউ আবার মুখ ভার করে বিজ্ঞের মতো বক্তৃতা দিচ্ছে। একজন আবার দাঁড়িয়েছে হিসু করবে বলে, কিন্তু তার নাকি হিসু হচ্ছে না। এই নিয়ে সে প্রচণ্ড বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছে নিজের লিঙ্গটির সঙ্গে। ওর লিঙ্গটি বোধহয় প্রতিউত্তরও করছে। বিতণ্ডার গতিবিধি দেখে তো তা-ই মনে হয়!

গাছটি ডালপালায় অজস্র পাতার ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিচরাস্তার ওপরে। আকাশে থমথমে চাঁদ। মেঘ করেছে। মাঝে মাঝেই চাঁদটা ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে। গাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠিক একটা মোড়ের মাথায়। যেখানে রয়েছে একটা সুগভীর পুকুর আর একটা চায়ের স্টল। স্টলে বাঁশের মাচার পাশাপাশি একটা বেঞ্চও আছে।

এই রাত্তিরে স্টলের ঝাঁপ বন্ধ এবং তালা দেয়া। তালা দেয়া আছে সরু বেঞ্চটিতেও বাঁশের মাচার সঙ্গে৷ এলাকায় চোরের বড় উৎপাত! সুনসান রাতই যাদের উৎসবের সময়। উৎসবের সময় মাতালেরও। গভীর রাতে, যখন পাড়া-মহল্লা সব ঘুমে অচেতন, তখন কখনও দুই-একজন, কখনও তিন-চারজন কিংবা তারও বেশিসংখ্যক লোক মাতাল হয়ে গাছটির নিচে উগরে দেয় নিজেদের। আজ আছে চারজন। ওরা খেলে চলেছে নিজেদের মতো করে। কখনও বসে, কখনও দাঁড়িয়ে, কখনওবা চিৎপটাং হয়ে খেলছে ওরা। কিন্তু হাঁসটি? মৃত বলেই কি দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে? কী দুর্ভাগ্য তার!

অথচ জীবিত হলে… যাকগে!

হিসুতে দাঁড়ানো লোকটি বিতণ্ডায় ক্ষান্ত দিল। ক্ষান্ত দিয়ে জড়ানো পায়ে স্টলের দিকে এগোতে গিয়ে দড়াম করে পড়ে গেল। ওকে পড়ে যেতে দেখে আকুল হয়ে কান্না করা লোকটি খিকখিক করে হেসে উঠেই আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলল,

‘কেন ওদিকে হিসু করতে গিয়েছিলি ভাই! জানিস না, ওই পুকুরে খুব বদ একটা মেয়ে জ্বিন আছে? একদিন আমিও পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে হিসু করেছিলাম, সেদিন আমিও পড়ে গিয়েছিলাম দড়াম করে।’

‘তাই না-কি রে? তুই শালা মহাবজ্জাত, আগে বলবি তো!’

হিসুতে দাঁড়ানো লোকটি এই বলে মুঠো পাকিয়ে ঘুষি ছুঁড়ে দিতে গিয়ে আবারও বেতাল হয়ে দড়াম।

ওর নাম ব্যারিস্টার। ছেলের মুখ দেখে বাপ-মা বোধহয় স্বপ্ন দেখেছিল, একদিন ছেলে ব্যারিস্টার হবে। তা ব্যারিস্টার না হোক, নিদেনপক্ষে উকিল কিংবা উকিলের মুহুরি তো হতে পারতো! কিন্তু ওসবও কিছু হয়নি। কেন হয়নি সে প্রশ্ন অবান্তর। ও যে মাতাল হয়েছে এই ঢের! হুঁ হুঁ বাবা, মাতাল হতে গেলেও খরচা লাগে, কতজনের তো সে মুরোদও নেই!

অবশ্য মুরোদ ছাড়াই সুকুমার মাতলামি করে। আগে রিকশা চালাতো। মাতলামির দাপটে এখন ও পেশা বন্ধ। বন্ধ রাত-বিরাতে বউয়ের শরীরের ওপর নিজের জোর পরীক্ষাও। বউটা নেয় না ওকে। বাঁজা মেয়েমানুষ, ধারালো শরীর নিয়ে পরপুরুষের সঙ্গে শুয়ে বেড়ায়। দিনমান যে মেস বাড়িটিতে কাজ করে, ওখানকার পুরুষদের থেকে বেশ আদর-সোহাগ পায় বলে সুকুমারকে আর পাত্তা দেয় না। না দিক, নেশার পয়সাটা তো দেয় ঠিকমতো। ওই পয়সা নিয়ে নেশা করে বক্তৃতা দিতে বেশ লাগে সুকুমারের। ছোটবেলা থেকে নেতা হওয়ার সাধটা যেন পূরণ হয় কিছুটা।

কিন্তু সবসময়ই তো আর ও মাতাল থাকে না। যখন পেটে মাল পড়ে না, তখন তো দিব্যি স্বাভাবিক। দরকার পড়লে যাকে তাকে জ্ঞানও দিতে চায়। যদিও কেউ-ই ওই জ্ঞান নিতে চায় না। এমনভাবে ধমকে ওঠে যেন ও কুকুরেরও অধম। জ্ঞান নিতে না চাইলে নেবে না, তাই বলে অমন করে ধমকাতে হবে? যত্তসব! তবে ধমক খেয়ে সাময়িক চিল্লাচিল্লি করুক আর যা-ই করুক, পাড়া-পড়শীর দোষ সুকুমার খাটো করেই দেখে। নিজের বউয়ের কাছেই যে পাত্তা পায় না, তার কি আর পাড়া-পড়শীর ওপর অভিমান করা খাটে? খাটে না। আর তা বুঝেই ও চিমসে মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। বউটা মেসবাড়ির ব্যাটাছেলেদের সোহাগ গায়ে মেখে ফুরফুর করে বেড়ালেও আহ্লাদ দেখিয়ে বলে,

‘সারাদিন খাইটে খাইটে শরীলডা কয়লা বানাইস না তো বউ। দুই-একটা দিন খানিক বিশ্রাম করলেও তো পারিস।’

ও শালী মুখ ঝামটে বলে কী, ‘আমি বিশ্রাম নিলে খাবি কী রে গোলামের ব্যাটা গোলাম! তোর নেশার পয়সা কি গাছ থেইকে পড়বি, না-কি তোর বাপ আইসে দিয়ে যাবি?’

সুকুমার কাচুমাচু মুখ করে চুপ থাকতে গিয়েও আবারও বলে, ‘মুখ খারাপ করিস ক্যান বউ? আমি তো তোর ভালার লাইগাই কইলাম!’

তবুও বউটার তেজ একটুও কমে না। আগের চেয়ে দ্বিগুণ ঝাঁঝে বলে, ‘এঁহ্, আইছে আমার মরদ রে, বউয়ের শরীলের চিন্তায় তার ঘুম আসে না! নিজের শরীর নিয়া চিন্তা কর আকাইম্মা মরদ। নেশার চোটে তো অঙ্গে জোর নাই, খালি জ্ঞান দ্যাওয়া!’

ন্যাও, নিজের বউকে না-কি আহ্লাদ করে জ্ঞানও দিতে পারবে না, এমনই পোড়া কপাল সুকুমারের। তবে কালে কালে সবই সয়ে নিয়েছে সুকুমার। শরীরও জাগে না। কিন্তু সেই ছোটবেলার নেতা হওয়ার স্বপ্নটা জেগে ওঠে মাঝে মাঝে। পেটে মাল পড়লেই ঝাঁঝালো বক্তৃতায় কখনও পাড়া-মহল্লা, কখনও এই গাছতলা মাত করে দেয়।

গাছের চওড়া গুড়িকে ঘিরে রাখা সিমেন্টের গোলাকার বেঞ্চে বসে বসে হাসছে মোমিন। একেক সময় একেক কারণে হাসে ও। এখন হাসছে, গাছটির বন্ধ্যাত্ব নিয়ে। যদিও এই মুহূর্তে গাছ ফুলে ভরপুর এবং লাইটপোস্টের নরম আলোয় ফুলগুলোর মধ্যে একরকম স্বর্গীয় ভাব এসেছে, তবুও কেন যে ওর গাছটিকে বন্ধ্যা মনে হচ্ছে কে জানে? মাতালদের যে কত কিছু মনে হয়!

গাছকে লক্ষ্য করে ও বলল,

‘ফল দিতে পারিস না তো এত সেজে থাকিস কেন? লজ্জা করে না তোর? জানিস না, যে জীবনে ফল নেই, সে জীবনের কোনও দাম নেই? মোমিন ফল দিতে পারেনি, মোমিনের কোনও দাম নেই। মোমিনের বউ ফলের আশায় পরের বউ হয়ে যায়। হা হা হা…!’

মোমিন হাসছে। ওর হাসি দেখে কান্না সামলিয়ে হেসে উঠতে ইচ্ছে করছে পুকুরে মেয়ে জ্বিন দেখা শওকতেরও। কিন্তু ও যে তেমন করে হাসতে পারে না কখনওই! মুহূর্তের জন্য হাসি এলেও কোথা থেকে যে কান্না ঠেলে বের হয়, আল্লাহ্ মালুম! আর মাতাল হলে তো কথাই নেই। কখনও বুক চাপড়িয়ে, কখনও ডুকরে ডুকরে, কখনও গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকে। এখন কাঁদছে হৃদয় বিদীর্ণ করা কান্না। এরকম কান্না মাঝে মাঝে ও খুব যত্ন নিয়ে কাঁদে। সংক্রামিত হয় আশপাশ। তবে আজ ও নিজেই সংক্রামিত হলো মোমিনের হাসিতে। প্রথমে মৃদু মৃদু, তারপর দুলে দুলে, তারপর দন্ত বিকশিত করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। ওর হাসিতেই কি-না কে জানে, কিংবা ওর আর মোমিনের সম্মিলিত হাসির তোড়েই হয়তো অন্য দু’জন হকচকালো তো বটেই, এই গভীর নিশিথেও গাছটির ভরপুর ফুলের মধ্য থেকে কয়েকটি খসে পড়ল। যদিও ভীষণই আলোকস্বল্পতা, তবুও যেন স্পষ্ট হয়ে ফুলগুলো তাদের পরিপূর্ণ রূপ-সুধা ছড়িয়ে দিল চারপাশে। ওরা চারজন টলমল হাতে তুলে নিতে চাইল ওই রূপ-সুধা। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউই তা পারল না। না পেরে ওরা যে যার মতো আবারও মগ্ন হতে চাইল। আর ঠিক তখনই ওরা লক্ষ করল, ওদের একেবারেই পাশটিতে একটি হাঁসের নিথর দেহ।

ধবধবে সাদা পালকের আচ্ছাদন হাঁসটিকে কোনও বিশেষত্ব দেয় না। বিশেষত্ব দেয় না ওর ডুবুরি পা জোড়া কিংবা কাঠের চামচের মতো ঠোঁটও। কমবেশি সব হাঁসই প্রায় একইরকম দেহ সুষমা ধারণ করে। কিন্তু তারপরও চারজন টলটলায়মান মাতাল হঠাৎ করে ওটাকে দেখে যারপরনাই চমৎকৃত হলো এবং খানিকটা হলেও ওদের নেশা চটে গেল। কারণ হাঁসটির দিকে তাকিয়ে ওরা যা দেখছে, সারাজীবনেও তেমনকিছু তো ওরা দেখেইনি, অন্য কেউ দেখেছে বলেও শোনেনি। ওরা দেখছে, মৃত হাঁসের সাদা পালকের ভেতর থেকে এক অপার্থিব আলোর বিচ্ছুরণ আর বিচ্ছুরিত হওয়া আলোয় ওদের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। চোখ জুড়িয়ে গেলেও কোনোভাবেই ওরা যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। দেখছে, চোখ কচলাচ্ছে, আবারও দেখছে…। অবিশ্বাসী চোখ নিয়ে প্রত্যেকেই ভাবছে, এ আলোর বিচ্ছুরণ শুধু সে-ই দেখতে পাচ্ছে এবং তা নেশারই প্রতিক্রিয়া। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্যে ওরা একে অপরকে জিজ্ঞেস করল। জিজ্ঞেস করে জানতে পারল সবার চোখেই একইরকমভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ওই আলোর মায়া। অবিশ্বাস্য ঔজ্জ্বল্য আর অপার্থিবতা প্রত্যক্ষ করতে করতে ওরা লক্ষ করল, হাঁসটির শক্ত হয়ে যাওয়া সটান পা জোড়া একটু একটু নড়ছে, ডানা দুটোও যেন কাঁপছে তিরতির করে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইল হাসটি। খুব শান্ত, ধীর-স্থির ওই চাহনি। কিছু যেন বলতেও চাইল। চার মাতাল চোখ রগড়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে করতে দেখতে পেল, দুধসাদা আলোকচ্ছটা গায়ে নিয়ে হাঁসটি উঠে দাঁড়াল এক ঝটকায়। তারপর ডানা দুটোকে শূন্যে তুলে ধরে খুব আলতো করে দোলাতে লাগল। ডানার ওই আলতো দুলুনিতে আলোকচ্ছটা যেন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে এবং হাঁসটি দেখতে দেখতে চোখের সামনেই রূপান্তরিত হলো এক অনিন্দ্য সুন্দর নারীতে। ওর পরনে সেই ধবধবে সাদা পালক আর একটু আগে ঝরেপড়া ফুলগুলোর পোশাক। ওর সমস্ত অস্তিত্ব থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে এক ঘোরলাগা আলো। চোখে অপার মায়া নিয়ে ও দেখছে চারজন মানুষকে। নেশা চটে যাওয়া চারজনও বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। ওরা এমনভাবে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে যেন এই মুহূর্তে নড়াচড়ার শক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছে বাকশক্তিও। অনিন্দ্য নারী চোখে-মুখে ধীর-শান্ত ভাব আর মায়া নিয়ে বলল,

‘তোমরা সবাই এত দুখী কেন?’

ওদের কানে প্রবেশ করল এক তুলনারহিত মধুঝরা কণ্ঠস্বর। কিন্তু কি বলবে বা কি বলা উচিত, কেউই তা না ভেবে পেয়ে আগের মতোই স্থির রইল। নারী আবারও বলল,

‘বললে না, কেন তোমাদের এত দুঃখ?’

ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল শওকত।

নারী বলল,

‘আহা, কাঁদছ কেন অমন করে? কাঁদলেই বুঝি সব ঠিক হয়ে যায়? সেই কখন থেকে তোমাদের দুঃখযাপন দেখে চলেছি। তা-ও আবার এই গাছের নিচে এসে। জানো, এই গাছের কাছে এলে সব দুঃখ নিঃশেষ হয়ে যায়? দেখো, ওটার ফুলগুলো কী সুন্দর! ওই ফুলগুলোই তো সকলের সব দুঃখ শুষে নেয়। তোমাদেরও নিয়েছে, কিন্তু তোমরা  বোধহয় এখনও তা বুঝতে পারোনি। যখন বুঝতে পারবে, দেখবে, নিজেকে কত সুখী মনে হয়!’

তা বটে! কবেইবা ওরা কিছু বুঝতে পারল? শুধু তো দুঃখের দুঃখতে জীবনের এতটা সময় কাটিয়ে সুখ নামেও যে একটা জিনিস আছে, তা ভুলেই গেছে! আলোকিত নারীর কথাগুলো ওদের ভেতরটা যেন ভরিয়ে দিল মুহূর্তেই। প্রচণ্ড রকম আশাবাদী মন নিয়ে ওরা প্রত্যেকেই তাকিয়ে রইল নারীটির দিকে। ও বলল,

‘যে কোনও অবস্থাতেই নিজেকে সুখী করা যায়। আর তোমরা তা পারো। কিন্তু আমার দুঃখ হচ্ছে, কেন যেন তোমরা তা বুঝতে পারছো না। এক কাজ করো না, এসব ছেড়েছুড়ে সুখী মানুষ ভাবতে থাকো নিজেদের। ভাবলেই দেখবে, সুখের খুব কোমল এক অনুভূতি হচ্ছে মনে।’

অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকলেও নারীর বলা প্রতিটি শব্দ যেন ওদের মধ্যে এক অদ্ভুত আলোড়নের সৃষ্টি করল। ওরা ভাবল, সত্যিই তো, আমাদের মতো সুখী আর কে আছে? গভীর নিশিথে গাছের ফুল যাদের দুঃখ শুষে নেয়, তারা কেন দুখী ভেবে নির্যাতন করবে নিজেদের ওপর? এই ভাবনা একটু একটু করে বিস্তার লাভ করল ওদের মনে। মনে একটি প্রশ্নও জাগল। স্থির, নির্বাক অবস্থা থেকে ওরা ধীরে ধীরে সচল হলো। সচল হয়ে পুরোপুরি সুখী চোখ নিয়ে নারীটির কাছে প্রশ্নটি করবে বলে তাকাতেই দেখল, কেউ নেই। গাছের নিচের যে জায়গায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ একজন স্বর্গীয় নারী মুগ্ধতা আর মায়া ছড়িয়ে দিচ্ছিল, সে জায়গা একেবারেই শূন্য, আলোহীন। ভীষণ মর্মাহত হয়ে ওরা আবারও চোখ কচলে তাকাল। কিন্তু নাহ্, নেই… কেউ নেই! কিছুক্ষণ আগে নিজেদেরকে সুখী ভাবতে থাকা মানুষগুলোর মনে আবারও দুঃখ এসে ভিড় জমাতে লাগল। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ওরা আকাশের দিকে তাকাল। কিন্তু এ কী! এই ঘোর অন্ধকার রাতে আকাশের কিছু অংশ আলোকিত কেন? আর ওই আলোর মধ্যে ওটা কাকে দেখা যায়? হ্যাঁ, সে-ই তো! এক অদ্ভুত মোলায়েম হাসি ছড়িয়ে হাত নাড়িয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে যেন!

এমন সুন্দর আপন আপন হাসি আগে কি কোথাও দেখেছে ওরা? যেন ওই হাসি, ওই চারজন নগণ্য মানুষকে জীবনের কোনও একসময় অনাবিল সুখে ভরিয়ে রেখেছিল, এতটা চেনা মনে হলো। সেই সুখের দিনগুলো কি ওদের মনের আয়নায় ভেসে উঠছে এই মুহূর্তে? হঠাৎ করে ওদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে যে!

একসঙ্গে চারজন কাঁদছে ওরা। সুখে না দুখে তা না জানলেও ওরা অনুভব করছে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। এত প্রশান্তি কোথায় রাখবে, ওরা কেউই হয়তো তা জানে না।

+ posts

Read Previous

একান্তে গরলে ডোবা সন্ধ‍্যা নামে

Read Next

একটি ফটোগ্রাফের নেপথ্য কথন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *