অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৭, ২০২৪
১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৭, ২০২৪
১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শফিক হাসান -
সেতু-ক্রন্দন

জনাথন স্মিথ যখন বাংলাদেশের মিশ্র মাটিতে পা রাখেন, তখনই বুঝে ফেলেন বঙ্গ-মৃত্তিকা আদতে অন্যরকম। আলো-বাতাস, বাদ্যবাজনা কিংবা খানাখাদ্য সবকিছুই একটু ভিন্নরকম। কিন্তু নিরেট ব্রিজ— যেটাকে এদেশের লোকজন সেতু নামে অভিহিত করে সেটা যে এতটা নাকানিচুবানি খাওয়াবে তাকে, কল্পনা করেননি ঘুণাক্ষরে।

যুক্তরাস্ট্রে মানুষ কত বিচিত্র বিষয়ে পিএইচডি করে, প্রায় সারা বিশ্বের লোকজন আসে সেখানে। অথচ মায়ের বুদ্ধি ধরে জনাথন স্মিথ চলে এলেন বাংলাদেশে। বুদ্ধিটা বাতলে দিলেন তা মা-ই। কুলসুম বেগমের বিয়ে হয়েছিল জনসন স্মিথের সঙ্গে। বাঙালি কুলসুমের সঙ্গে যুক্তরাস্ট্রের নাগরিক জনসনের সঙ্গে কোথায় সাক্ষাৎ, তারপর কীভাবে পরিচয়-পরিণয় অত সব ঠিকুজি আমাদের জানা নেই। বোধকরি তার প্রয়োজনও নেই। ওগো বিদেশিনী, ওরে ও পরদেশি… এমন গানবাদ্য এখনকার মানুষজনকে টানে না। চাইলে নিজেরাই মঞ্চস্থ করে ফেলতে পারে আপডেট নানাকিছু!

কুলসুম বেগমের একমাত্র ছেলে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, এখন পিএইচডি করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নামের আগে ডক্টর শব্দটা থাকলে ভালো চাকরি পেতে যেমন সুবিধা হয়, তেমনি বহির্বিশ্বের লোকজনও সমীহের দৃষ্টিতে তাকায়। যুক্তরাস্ট্রের মানুষ প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক বলে কাউকেই কোনো বিষয়ে ‘বেইল’ দেয় না। তাতে ডক্টরকুলের খুব একটা সমস্যাও হয় না। নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে ডক্টরকে বিশ্বস্ত সঙ্গী বানিয়ে নেয় তারা। জনাথন স্মিথ কোন বিষয়ে ডক্টরেট করবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর একবার সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন পিএইচডির বিষয় হবে ‘আমাজন জঙ্গলের বৃক্ষবৈচিত্র্য’। তাতে বাধ সাধলেন মা। গবেষণার জন্য এমন অঘোর জঙ্গলে না যাওয়াই ভালো। জঙ্গলে মঙ্গল যেমন থাকে, অমঙ্গলও কম থাকে না। কত সাপ-বিচ্ছু, বাঘ-ভাল্লুক ওত পেতে আছে!

উপযাচক হয়ে কুলসুম স্মিথ পরামর্শ দিলেন, ‘বাজান, তুই নানার দেশে চইলা যা। পিএইচডির ভালা সাবজেক্ট পাবি। ওই দেশে মানুষরাই সাপ-বিচ্ছু, বাঘ-ভাল্লুক। লোকালয়ে থাকে। স্বার্থ না থাকলে কাউকে ছোবল দেয় না। আবার দেয়ও। তোরে কিছু কইব না!’

জনাথন স্মিথ ভাবলেন, প্রস্তাবটা মন্দ নয়। নতুন দেশ দেখা হবে আবার কাজও সারা হবে- মন্দ কী! গবেষণার জন্য ভিন্ন পরিবেশ থাকলে ভালো। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ঘেটে জানা গেল, বাংলাদেশের লোকজন কারণে অকারণে ব্রিজ বানায়। যে ব্রিজের দৃশ্যমান কোনো কার্যকারিতা নেই। যেখানে সেখানে বানিয়ে বসে। ব্রিজের প্রয়োজন নেই, সড়ক নেই, নৌপথ নেই— এমন জায়গায়ও হরদম ব্রিজ বানিয়ে বসে থাকে এরা। লোকালয় নেই যেখানে, সেখানেও নাকি কেউ কেউ ব্রিজ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! বিষয়টা রহস্যময় মনে হল তার কাছে। ভাবলেন, সাবজেক্ট হিসেবে ব্রিজ মন্দ হয় না। পরিকল্পনার মাঝখানেই কুলসুম স্মিথ ছেলেকে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি দিলেন- ‘বাপ, দ্যাশে নাইমাই এক চিমটি মাডি খাইস। এই মাডি য্যান তোরে মাইন্যা-চিইন্যা লয়। খাস দিলে খাবি কিন্তু।’

তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, মাম। মাটি খাব, সস ছাড়াই।’

মায়ের দেওয়া নানাবাড়ির ঠিকানা খুব একটা কাজে লাগল না। নানা মারা গেছেন অনেক আগেই। মামারা কেউ মধ্যপ্রাচ্যে, কেউ অন্য জেলার শহরে চাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে বসেছেন। শেষপর্যন্ত দূর সম্পর্কের এক মামার সন্ধান পাওয়া গেল। সব শুনে মামা বললেন, ‘সেতুর কাছে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে মাটি ও মানুষের কাছে। এ জন্য ভাষা প্রশিক্ষণ দরকারি। ইংবাংলা এখানকার লোকজন বুঝবে না। যেতে তো হবে সারা বাংলাদেশেই। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সীমান্ত পর্যন্ত। স্থলবন্দর থেকে নৌবন্দরেও। কথা ক্লিয়ার, মামু?’

চিন্তিত মুখে জনাথন স্মিথ বলেন, ‘সেটা না হয় করলাম। কিন্তু নতুন একটা ভাষার কথা বললেন- ইংবাংলা। সেটা কী?’

‘এটা বুঝলেন না! ইংরেজি ও বাংলার মিশেলে আপনি যেভাবে কথা বলেন এটার নামই ইংবাংলা। এদেশের লোকজন বাংরেজিতে অভ্যস্ত। উল্টোটা নেবে না।’

মনে মনে এ কথায় সায় দিলেন জনাথন স্মিথ। তার মা কুলসুম ইংরেজি শেখেননি, বরং চারপাশের সবাইকে বাংলা শিখিয়ে ছেড়েছেন। যেটা অন্যরা শিখতে পারেনি, সেখানটায় তিনি নিজেই ইংরেজি শিখে চালিয়ে নিয়েছেন। এমনতর ইংরেজি ও বাংলা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। বস্তুত ভাষা-যোগাযোগের নামে তারা নিজেরাই কিম্ভুতকিমাকার কিছু একটা বানিয়ে নিয়েছেন! বাংলাটা শেখা (!) ছিল বলেই তো জনাথন স্মিথ বঙ্গদেশে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই বিদ্যায় কাজ হবে না জেনে তাকে ভর্তি হতে হল শর্ট টাইম স্পিকিং ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সে। এখানকার প্রশিক্ষক বাংলার পাশাপাশি যখন ইংরেজি অনুবাদ শেখাতে আসেন, কুলকুল করে ঘাম বেরোতে থাকে…।

বিপদ যত বড়ই হোক, একদিন শেষ হয়ই। জনাথন স্মিথও পরীক্ষায় পাস করলেন। তিনি এখন এদেশের খেটেখাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলার উপযুক্ত। কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পড়ে সেতু-কবলিত জেলা-উপজেলার হদিস জানলেন। এক প্রত্যুষে বেরিয়ে পড়লেন অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে। এই ব্রিজই হবে তার ডক্টর তকমা বাগানোর সেতু!

ঢাকা থেকে দূরতম একটি জেলায় পৌঁছালেন এক প্রত্যুষে। নাইট কোচে এসেছেন। তার চোখে রাতজাগার ক্লান্তি নেই, আছে আবিষ্কারের আনন্দ। সবুজ ঘাস, গাঢ় সবুজ ধানখেতের সঙ্গে ভাটফুল, কচুরিপানার ফুল-পাতা ও গোড়ার কালো অংশ বিমল আনন্দে মোহিত করল তাকে। এসেছেন একাই। গাইড নিয়ে ভ্রমণ হতে পারে, গবেষণা নয়। বাংলাটা যেহেতু শেখাই আছে, অতটা অসুবিধা হবে না। বিমুগ্ধ চিত্তে চলতে থাকেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে সামনে পড়ে বহু প্রত্যাশিত সেই সেতু- যেটা তাকে বানিয়ে দেবে জনাথন স্মিথ পিএইচডি! ডানে ধানখেত, বামেও। খেতের দুই পাশেই ব্রিজ। বিলের আশপাশে কোথাও সড়কও নেই। তাহলে একাকী এই ব্রিজ কার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে!

ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর একজন কৃষক আসেন। তাকেই প্রশ্নটা করেন জনাথন স্মিথ- ‘এই সেতুর কাজ কী এখানে?’

প্রশ্ন শুনে কৃষক হাসেন। তারপর মজা করে বলেন, ‘আপনে ফরেনার মানুষ। পরের জিনিস জাইনা কী করবেন?’

‘ফরেনার হলেও আমি পর নই। সেতু গবেষক। সেতুটা এখানে কে বানিয়েছেন, কেন বানিয়েছেন— জানেন কিছু?’

জনাথন স্মিথের মুখে প্রমিত বাংলা বিস্মিত করে না কৃষককে। উল্টো বলেন, ‘আমরা তো আরও ম্যালা জাগায় ব্রিজ বানাইছি। এইটা মনে করেন খেয়ালের খুশি। কোনো কামে লাগব না, তবুও বানাইছি।’

‘বেখেয়ালি আরও জাতি আমি দেখিনি। কিন্তু এমন সেতু কালচার কোথাও দেখিনি!’

এবার সব ক্লিয়ার করেন কৃষক। জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঊর্ধ্বতন মহলে একটি ব্রিজের জন্য বাজেট চেয়েছেন। বাজেট পেয়েও গেলেন। কিন্তু কোথায় বানাবেন ব্রিজ! নদী, খাল থেকে শুরু করে নিদেনপক্ষে কোনো নালা-নর্দমাও তো নেই এই গ্রামে। যেহেতু মোটা বাজেট নিয়েছেন সব টাকা হাপিস করে দেওয়া যায় না। বিপক্ষের লোকজন শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দিতে পারে— এমন আশঙ্কাও আছে। শেষমেশ নিজের ধানি জমিতেই ব্রিজ বানিয়ে বাজেটের বৈধতা দিলেন। গ্রামবাসীকে বোঝালেন, কখনো যদি বন্যা হয় কৃষকরা যেন বন্যাকবলিত ফসল তুলে ব্রিজের উপর রাখতে পারেন, সেই সুবিধার জন্যই এই ব্রিজ। এছাড়াও কেউ যদি মনে করেন তিনি ব্রিজে বসে দুপুরের খাবার খাবেন, বিড়ি টানবেন, পল্লিগীতি গাইবেন, মুখে গুল কিংবা জর্দা পুরবেন তার জন্যও এই ব্রিজ উপকারে আসবে। খেতের আইলের কাদা থেকে পাকে সুরক্ষা দিতে এই ব্রিজের উপর হাঁটাচলাও করা যাবে!

মুগ্ধতা ঝরে পড়ে জনাথন স্মিথের কণ্ঠে— ‘দারুণ আইডিয়া তো!’

‘দারুণের দ্যাখছেন কী! আমগো চেয়ারম্যান সাব এলাকায় পঙ্গু স্কুল বানাইছেন। যদিও পুরা এলাকায় একজন পঙ্গুও নাই। স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দিছেন দশজন। শিক্ষকগো কাছ থেইকা কত লাখ টাকা কইরা ঘুষ নিছেন জানেন? জানেন না। জাইনাও করবেন কী? আমি জাইনা কী করছি!’

‘দূরদর্শী মানুষ অবশ্যই। ভবিষ্যৎ ভেবে রেখেছেন।’

‘হ। নিজের বর্তমান-ভবিষ্যৎ গোছাইতেছে।’

‘এমন সেতু আর কয়টা আছে এই গ্রামে?’

‘আমগো গেরামে আর নাই। পাশের ইউনিয়নে আছে। সময় থাকলে গিয়া দেইখা আসেন কাজলা দিদি সেতু।’

দেখতেই তো এসেছেন জনাথন স্মিথ। এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এই বাঙাল মুলুকে। চন্দিচাউরা ইউনিয়নে গিয়ে যুগপৎ বিস্ময় ও হতাশা দেখা দিল মনে। এ কী করে সম্ভব! বিশাল বাঁশবাগানের ভেতরে বানিয়ে রাখা হয়েছে একটি ব্রিজ। এলাকার লোকজন এটাকে আবার কাজলা দিদি সেতু বলে ডাকে।

বাঁশবাগানে কাজলা দিদি কী করেন জানতে চাইলে ব্রিজটির স্বপ্নদ্রষ্টা অলিয়ার হোসেন বিরক্তি প্রকাশ করেন। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলেন, ‘ছোটোবেলায় কাজলা দিদির কবিতা পড়েননি, মিয়া?’

‘কোন কবিতা?’

‘বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই

মাগো আমার শোলক বলার কাজলা দিদি কই?’

‘না। পড়িনি।’

‘বুঝেছি, আপনি বাল্যশিক্ষা পাস। আপনার দেশে বাল্যশিক্ষাকে ইংরেজিতে কী বলে?’

‘আমাদের সিলেবাস নেই। এই বইও নেই।’

‘তাহলে কবিতার ব্যাখ্যাটা শোনেন। বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ ওঠে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে কাজলা দিদি ছোটো ভাইকে গল্প শোনান। গল্প শোনাতে শোনাতে একদিন কাজলা দিদি চাঁদের বুড়ির সঙ্গে ঝগড়া বাঁধায়। ছোটো ভাইকে চাঁদের বুড়ির চরকা কাটার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। তাতেই বুড়ির রাগ। ঝগড়ার একপর্যায়ে বুড়িকে বের করে দেন চাঁদের ভেতর থেকে। সে জায়গাটা দখলে নেন কাজলা দিদি। বড় জায়গায় পৌঁছে গেছেন। এখন তিনি আর গ্রামে আসেন না। গ্রামের লোকজন যাতে কাজলা দিদিকে কাছ থেকে দেখতে পারেন, এজন্যই এখানে ব্রিজ বানিয়েছি। দেড় কোটি আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে!’

‘কোটি টাকা! মানে দেড় ক্রোরেরও বেশি! কিন্তু বাঁশবাগানের ভেতরে কেন এত টাকা ঢালতে গেলেন?’

‘এখানেই হচ্ছে বুদ্ধিমানের সঙ্গে বোকার পার্থক্য। কখনো যদি কাজলা দিদির ফিরতে মন চায়, তিনি যেন লম্বা বাঁশের আগায় পাড়া দিয়ে সহজেই নামতে পারেন তার জন্যই এত আয়োজন। দেখছেন না, কত লোকজন এটা দেখতে আসে! এই ব্রিজের মাধ্যমে আমরা পর্যটনেও নতুন ধারা সৃষ্টি করব। কাজলা দিদিকে যদি একবার নামাতে পারি, তাহলে তো পুরাই বাম্পার!’

কথাটা মনে ধরল জনাথন স্মিথের। এ দেশে এত রকমারি ব্রিজ আছে, এগুলোকে কেন্দ্র করে বিকল্প পর্যটন গড়ে তোলা যায়। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ট্যুরিস্ট বাসে চড়িয়ে শুধু এই ব্রিজগুলোই দেখাতে নিয়ে যাওয়া হবে। আইডিয়াটা ভালো, এটা নিয়েই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পাঁচ-ছয় পৃষ্ঠা লেখা যাবে। ভাবলেন জনাথন স্মিথ।

অলিয়ার হোসেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেওয়া হলো। এবারকার গন্তব্য নৌকা ব্রিজ। নদী ডাকা হলেও এটা আদতে খালের চেয়ে ছোটো। দুই পাশে বিস্তীর্ণ চর। চাষাবাদ কিংবা মানুষ কোনোটাই চোখে পড়ল না। দুই পাশের চরকে সাক্ষী রেখে বানানো হয়েছে সুদৃশ্য একটি ব্রিজ। নিচে আবার দুইটি ডিভাইডার। ব্রিজের নিচে এক তৃতীয়াংশ জায়গা গাঁড়া হয়েছে লম্বা পিলার। বড় অংশটা দিয়ে চলাচল করবে বড় নৌকা, পাশের অংশ দিয়ে ছোটো নৌকাগুলো। মহাজনী নৌকা না থাকলেও আজকাল টাউট-বাটপাড়রা নৌকায় চড়ে। নৌকায় মৌজ-মাস্তি কিংবা গঞ্জিকা সেবনের মজাই আলাদা। জলের উপর আরেক জলতরঙ্গ সৃষ্টির মজা সবাই বুঝবে না। অনেক কসরত করে জনাথন স্মিথ খুঁজে বের করলেন ব্রিজের কন্ডাক্টরকে। বললেন, ‘বিভাজনরেখাটুকু না দিলে এবং ব্রিজটা না বানালে নৌকা চলাচলে কি অসুবিধা হতো?’

তেরছা দৃষ্টিতে তাকিয়ে কন্ডাক্টর খলিল উল্লাহ বললেন, ‘বেশি বোঝেন, না?’

‘বুঝতে চাই বলেই আপনার কাছে এসেছি। ইজ ইট তুঘলকি কাণ্ড? এতে কার কী উপকার হল? মাঝি-মাল্লারাইবা কী পেলেন!’

‘তার আগে বলেন, কন্ডাক্টরিটা না করলে আমি লাখ টাকা কোথায় পেতাম?’

‘মানে হচ্ছে, আপনি লাখ টাকা উপার্জনের জন্য একটা অনর্থ সৃষ্টি করলেন!’

‘আবার ভুল করছেন। আমি চুক্তিতে কাজটা করে দিয়েছি মাত্র। প্রজেক্ট আরেকজনের।’

‘কে তিনি? কেন করেছেন এমন নির্বোধ নির্মাণ?’

‘তিনি গডফাদার। তার কাছে যাওয়ার চিন্তা করবেন না। ফিরতে পারবেন না। মাছের খাদ্য বানিয়ে ছাড়বেন আপনাকে।’

‘ওরে বাবা, তাহলে কাজ নেই। ধন্যবাদ আপনাকে খলিল ভাই। আপনার সৃষ্টির মতোই সুন্দর থাকুন।’

‘খোঁটা দিলেন মনে হচ্ছে!’

‘আরে নাহ! ছোটো নৌকা ও বড় নৌকা পারাপারের জন্য ব্রিজের খুঁটি আলাদা লাগবে কেন, এটা নিশ্চয়ই আপনার দেশের বুদ্ধিজীবীরা খুঁজে বের করতে পারবেন।’

জান হাতে নিয়ে এক মাইল হেঁটে এলেন জনাথন স্মিথ। হাঁটতে হাঁটতে চলৎশক্তি হারিয়ে ফেললেন একসময়। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা সেতু। কিছু লোক সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছে, কিছু লোক নিচ দিয়ে। বাঁশের ছাউনি দেওয়া জায়গায় এক লোক বসে টোল তুলছেন। টোল দিয়ে তার কাছে জানতে চাইলেন জনাথন স্মিথ, ‘এই ব্রিজের সুবিধা কী?’

টাকা গুনতে গুনতে জবাব দিলেন টোলওয়ালা— ‘সুবিধা হচ্ছে, আপনি চাইলে নিচ দিয়েও হেঁটে যেতে পারবেন। কষ্ট করে ব্রিজের উপর না উঠলেও চলবে।’

‘তাহলে টোল নিচ্ছেন যে?’

‘জায়গাটা ইজারা নিয়েছি, তাই টোল তুলছি।’

‘ইজারা নিয়েছেন কেন?’

‘টোল নেওয়ার জন্য।’

‘তার মানে ব্যবসার জন্যই এই ব্যবস্থা?’

‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন ব্যবসা খারাপ কিছু!’

কথা বাড়ানো সমীচীন নয়। বিড়বিড় করতে করতে নিচ দিয়ে হেঁটে রাস্তা পার হলেন তিনি। কী মনে করে ও-প্রান্ত থেকে ব্রিজে উঠে এপারে এলেন। বেকুবির মাশুল হিসেবে টোল দিতে হল আবারও!

কিছুক্ষণ হেঁটে ঝোলাব্যাগ থেকে ছিন্ন খাতাটা বের করলেন জনাথন স্মিথ। আর অল্প কিছু ব্রিজ দেখা বাকি আছে। সেগুলোর নাম ঠিকানা ছবি লিপিবদ্ধ আছে এই খাতায়। পুকুর ব্রিজের কাছে এসে হাত-পা ছেড়ে মাটিতেই বসে পড়লেন। এদেশের মাটিতে নাকি সোনা মাখানো আছে। একবার বসে পড়তে পারলে সোনায় ছেয়ে যায় শরীর। অধোবদনে গভীর হতাশায় পুকুরের মাঝ বরাবর অবধি তাকিয়ে রইলেন তিনি। কখন যে গণ্ডদেশ বেয়ে অশ্রু বেয়ে পড়েছে টের পাননি। হুঁশ ফিরল একজন পথচারীর কথায়- ‘কী সায়েব, কান্দেন ক্যান?’

‘আমার পিএইচডির কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। ঘরের ছেলে দেশে ফিরব এই সুখে কাঁদছি। আরেকটা কারণও আছে। সেটা দুঃখের?’

‘সাদা চামড়ার মানুষেরও দুক্কু থাকে!’

এবার হেসে ফেললেন জনাথন স্মিথ। তাই বলে অশ্রুধারা থামল না। পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের অনেক লোকই তো এখনো ঠিকমতো খেতে পারেন না, পরতে পারেন না, আশ্রয়হীন।’

‘হ্যাঁ, আমিও তো দুর্ভাগা। টাকার অভাবে মাইয়ার বিয়া দিবার পারতাছি না। আবার আমার বড় পোলাও চাকরি পাইতেছে না বইলা বিয়ে করবার পারতাছে না।’

‘তাহলে এত ব্রিজ দিয়ে আপনারা কী করেন! কেন এত অপচয়ের মচ্ছব?’

‘পুষ্কুনির মাইঝখানে বিরিজের কী কাম, এইটাই তো আপনের প্রশ্ন?’

শুধু পুকুরে নয়, নদীতে খালে ধানখেতে পাটখেতে কচুখেতে এত সেতু কেন বছরের পর বছর নির্মিত হচ্ছে, দেখভালের কেউ নেই কেন— এমন অসংখ্য প্রশ্ন গোত্তা দিচ্ছে জনাথন স্মিথের মনে। পুকুরের বিষয়টা জানলেন। ব্রিজ বানাতে বাজেট লাগে। বাজেট আনতে হয় অনেক টানাহেঁচড়া করে। বর্তমানে বিপক্ষ দল ক্ষমতায়। এই ব্রিজ নির্মাতা নিজের পছন্দের দল সরকারে এলে পুকুরের এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত ব্রিজের কাজ শেষ করবেন। যাতে দুই পাশের লোকজন আরামে গোসল করতে পারে। শীতকালে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে রোদ পোহাতে পারে।

উন্নয়ন বয়ান শুনে জনাথন স্মিথ পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘এখন যে ব্রিজ নেই, লোকজন গোসল করছে না? শীতকালে রোদ পোহাচ্ছে না? গরমকালে ছায়ায় দাঁড়াচ্ছে না!’

এমন কথায় হেসে ফেললেন দুঃখী মানুষটি। বললেন, ‘কী আর বলব সায়েব, সব সিস্টেমের খেইল। কমিশন কন আর পার্সেন্টেজই কন… এইসব তো আপনে আমার থেইকা কম জানেন না।’

‘কম জানলেই ভালো। বেশি জানলে দুঃখ পেতে হয়। দেখছেন না আমি কাঁদছি?’

‘আপনের কান্দন এক সিজনের। কাইন্দা-কাইট্যা নিজ দেশে চলি যাইবেন। আর আমরার কান্দন বার মাসের। এই দল সরকারে থাকলে যেই কান্দন, আরেক দল ক্ষমতায় গেলে সেই একই ভাইগ্য। কান্দন আর কান্দন!’

এক সকালে প্রচারসংখ্যায় সর্বনিম্নের দৈনিকটিতে চোখ আটকে গেল জনাথন স্মিথের। নিয়ম করে প্রতিদিন ১৭টি বাংলা দৈনিক কাগজ পড়েন। ‘সেতু বার্তা’ নামে কোনো কাগজ নেই; থাকলে কাজটা সহজ হত আরও। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এ-প্রান্ত থেকে শেষ পৃষ্ঠায় লাফ-ঝাঁপ করতে হত না। দৈনিক ভোরের শেষের সংবাদ বলছে বিকুলপুরে সংঘটিত ব্যতিক্রমী একটি ঘটনার কথা। রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে গ্রামের সঙ্গে গঞ্জের সংযোগকারী একটি ব্রিজ। সেই আলোচিত-সমালোচিত ব্রিজটি পেরোচ্ছিল গরুসহ রাখাল। কিন্তু স্বাস্থ্যবান গরু ও তার সহচরের অত্যধিক ওজনজনিত চাপ সইতে না পেরে ভেঙে পড়ে বাঁশ-নির্মিত সেতুটি। দড়ি হাতে ধরা থাকা অবস্থাতেই গরুসহ ধড়মড় করে পানিতে পড়ল রাখাল। গরুটির সাঁতার জানা ছিল বলে সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছে। অন্যদিকে পানির সঙ্গে সন্ধি না থাকায় রাখাল ডুবে যায় সহজে। ভেসেও ওঠে অল্প সময় পরে।

খবরটি ভীষণ নাড়া দেয়। জনাথন স্মিথ দেরি না করে বেরিয়ে পড়েন সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য। কিন্তু বিধি বাম, সেখানে আর পৌঁছানো হলো না। আরেকটি বাঁশ-সেতু দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। জনাথন ফেল মারলেন তাই। চোখের সামনে দেখলেন খণ্ডবিখণ্ড হয়ে একটি ব্রিজের ধসে পড়া। উন্নয়নপ্রতীক সংক্রান্ত দুর্ঘটনার এখানেই শেষ নয়। কালো সানগ্লাস পরে, হেভি মাঞ্জা মেরে পূর্ণ গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিল এক তরুণ। বাঁশ-সেতু অতিক্রম করা হল না। মোটরসাইকেলসহ প্রপাত জল-তল হল সে। বাইক নিচে রেখেই একটু পরে ল্যাংচারে ল্যাংচারে উপরে উঠে এলে শুরু হল কানাঘুষা।

আরে, এ যে চেয়ারম্যানপুত্র!

কেমন জব্দ।

শ্রদ্ধার সম্পর্কের একজন মুরব্বি চুকচুক করে সমবেদনা জানালেন আহতকে— ‘কী আর করবা ভাতিজা, বিরিজখানা তো তোমার বাবাই বানাইছিল! তাও তোমাগো বাগানের কাঁচা বাঁশ দিয়া! এতদিন জানতাম ক্ষেমতাবানরা সাধারণ মাইনষেরে বাঁশ দেয়, এখন দেখছি বিরিজরেও বাঁশ দেয়। জমানা বোধহয় উল্টাইয়া গেল!’

পরিস্থিতির প্রতিকূলে গিয়ে উপস্থিত অনেকেই হেসে ফেলল হা হা করে।

চেয়ারম্যানপুত্র একজনকে লক্ষ্য করে বলল, ‘ওই, আব্বারে একটা কল দে। আমারে চিকিৎসার লাইগা হাসপাতালের নিতে অইব। অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে ক।’

এবারও সরব হলেন বয়স্কজন। বললেন, ‘এই ভাঙ্গা বিরিজ দিয়া কীভাবে অ্যাম্বুলেন্স আইব? তোমার তো সাঁতরাইয়া উডন আছিল ওই পারে!’

নীল জিন্সপ্যান্ট টেনে উপরের দিকে তুলে ক্ষতস্থান আবিষ্কার করতে থাকা চেয়ারম্যানপুত্র জবাব দিল— ‘সমস্যা নাই। সাঁতার জানি। সাঁতরাইয়া ওই কূলে যামু গা!’

অসংখ্য জায়গায় রাস্তা নেই কিন্তু ব্রিজ দাঁড়িয়ে আছে। লোকালয় নেই কিন্তু ব্রিজ করে বসে আছেন ক্ষমতা-প্রতিনিধিরা— এমন নজির প্রচুর। সেতু আবার নির্বাচনের প্রতীকও। পোস্টার হয়ে ঝুলে আছে নানান জায়গায়। সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করে জনাথনের মনে হল, এদেশের দ্বিতীয় নাম হতে পারে সেতু-দেশ কিংবা ব্রিজল্যান্ড।

এমন আরও ৫২৩টি সেতু পরিদর্শন শেষ হল। একেকটি সেতুর একেক রকম অভিজ্ঞতা। জনগোষ্ঠীর চালচলন, আচার-আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হলেও জনপ্রতিনিধি, শাসক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বৈশিষ্ট্য প্রায় অভিন্ন। এটা কীভাবে সম্ভব ভাবতে ভাবতে মাথা নষ্টের জোগাড় জনাথন স্মিথের। ইতোমধ্যেই তার মাথার সামনের অংশটা ফর্সা হতে শুরু করেছে। ভালোই হল, ডক্টর-সংযোজিত নামের সঙ্গে চেহারা মানিয়ে যাবে!

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিলাসবহুল একটি হোটেলে বসে নিজ জন্মস্থান টেক্সাসে ফেরার কথা ভাবছিলেন হবু ড. জনাথন স্মিথ। আর ভাবছেন নানার দেশ সফর কতটা সার্থক হয়েছে তা নিয়ে। হঠাৎ ঝড়ো বাতাসের মতো আরেকটি ভাবনা আস্তানা গাঁড়ল মস্তিষ্কে। এটাকে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ না করে উপন্যাসও তো লেখা যায়! বিক্রি হবে মার মার কাট কাট করে। অল্পদিনের বাগাতে পারবে বেস্টসেলারের মর্যাদা। উপন্যাসের নাম হবে ‘সেতুর জাদু’ আর নায়িকার নাম সেতু। অষ্টাদশী এক তরুণী নিজের নামকরণের সার্থকতা যাচাইয়ের জন্য দেশের সব সেতু ভ্রমণের পরিকল্পনা করে। ভ্রমণ যখন শেষ হবে তার বয়স উন্নীত হবে ২৪-এ। এক এক করে সব ব্রিজের প্রেমে পড়ে যাবে সেতু। কোনো পুরুষকে ভালো লাগবে না। মগজজুড়ে শুধু ব্রিজ ব্রিজ ব্রিজ…। কিন্তু কোন ব্রিজের কাছে সে যাবে, কাকে ছাড়বে, কাকে রাখবে— এসব স্বপ্ন-কল্পনায় সৃষ্টি হবে ঘোর। আসবে জাদুবাস্তবতার আখ্যান। এই ঘোর কবলিত দশায় চলে আসবে সব সেতু নির্মাতা ও পরিকল্পকের খল, লুটপাট এবং দখলদারী মানসিকতার গল্প। নানামুখী কল্প-জাদুর মধ্যে ঢুকে পড়বে ল্যাটিন আমেরিকান আখ্যান। আসবেন কলম্বাস, নিজ রাষ্ট্রবিরোধী অথচ সত্য কথা বলে উঠবে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। জবান খুলে যাবে সেতুগুলোর, তারা বর্ণনা করবে স্ব স্ব জন্মের আজন্ম পাপের কথা…।

নিজের ভবিষ্যৎ সাফল্যে ‘ইউরেকা’ বলে চিৎকার করে উঠলেন জনাথন স্মিথ। চিৎকার শুনে ছুটে এল হোটেলের সেবাদানকারী একজন। জানতে চাইল, ‘স্যার কি রেখাকে চেয়েছেন! পাঠাব?’

‘কোন রেখা?’

‘ওই যে গতকাল রাতে আপনাকে অ্যালবামে যাদের ছবি দেখিয়েছিলাম, এদের একজনের নামই রেখা। নতুন। সার্ভিসও দেয় ভালো। কুমারী টেস্ট পাবেন।’

‘আপনাদের সেতু আছে তো?’

‘হ্যাঁ। সেতু নামের তিনজন আছে। বোঝেনই তো, এসব এদের আসল নাম না। বানানো নাম। তাতে কী, কাজ-কাম হওয়া নিয়ে কথা। তাহলে স্যার, অ্যালবামটা নিয়ে আসি। আপনি দেখেন তিনজনের মধ্যে কোন সেতুকে নেবেন!’

‘মানবী-সেতুর কথা বলিনি। আপনার এলাকায় কোনো ব্রিজ আছে কি না জানতে চেয়েছি।’

‘একটা ব্রিজ আছে অবশ্য। নদীর নিচে। কারও কোনো কাজে লাগে না। কে বানিয়েছেন, কখন বানিয়েছেন, কেন বানিয়েছেন তা আমরা কেউই জানি না। আমার বাবা জানেন না, দাদা জানেন না, হিজাও জানেন না। হিজা মানে কী জানেন তো? দাদার বাবা। শুধু জানি ধন ধান্য ও সেতুতে ভরা/ আমাদের এই বসুন্ধরা…।’

‘সমৃদ্ধ ইতিহাস বটে। এসব ঐতিহ্যকে কাজে লাগানো উচিত। আপনাকে হলিউডের নামকরা একজন পরিচালকের ইমেইল এড্রেস দিচ্ছি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখুন ‘ব্রিজ অফ বাংলাদেশ’ নামে কোনো চলচ্চিত্র বানাতে ইচ্ছুক কি না।’

‘নতুন সিনেমা তো লাগবে না স্যার। এমন সিনেমা তো আমাদের আছে!’

‘কোনটা?’

‘পদ্মা নদীর মাঝি!’

‘শুধু নদীর মাঝির ক্যারেক্টার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন! চোর-বাটপাড়ের সিনেমা লাগবে না?’

‘লাখ লাখ কু-সিনেমা নিয়ে আমরা কী করব, স্যার! কে দেখবে এসব? সবাই তো সবকিছু জানে।’

হোটেলকর্মীর কণ্ঠে হতাশার সুর। বোঝাই যাচ্ছে, একইসঙ্গে তিনি অপমানিত ও ক্ষুব্ধ। ভিনদেশি কারও মুখে নিজ দেশের কদর্য বয়ান শুনতে কারইবা ভালো লাগে!

জনসন স্মিথের চোখ তখন সাদা গ্লাস ভেদ করে আলোছায়ার পৃথিবীতে। নীল-সাদা শেড আকাশের কোনাকাঞ্চিতে খুঁজে ফিরছে কাঙ্ক্ষিত ঈশ্বরের মুখ।

এক সপ্তাহ পরে জনাথন স্মিথ যখন স্বদেশে ফিরলেন, মুখোমুখি হলেন তার বুদ্ধিমতি মায়ের। আইডিয়াটা মায়ের সঙ্গে শেয়ার করলেন। সঙ্গে সঙ্গেই কুলসুম বেগম নিজের মতামত দিলেন- ‘আরে বাপ, এইডা একটা কথা কইলি? পিএইচডির ভিত্রে তুই উপন্যাস হান্দাইয়া দে। সমস্যা কী! এইডা অইল, ওইডাও অইল।’

প্রস্তাবটা পছন্দ হল তার। এটাই হতে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রথম পিএইচডি অভিসন্দর্ভ, যেটার বিষয়বস্তু উপস্থাপিত হয়েছে উপন্যাসের চরিত্রের আদলে!

 

+ posts

Read Previous

হাফিজ রহমান-এর গুচ্ছকবিতা

Read Next

কলঙ্কিনী রাধা – দ্বিতীয় পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *