অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৪, ২০২৪
১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৪, ২০২৪
১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবু সাঈদের একগুচ্ছ অণুগল্প

উন্নতি

মমিন সাহেব উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছার অভিপ্রায়ে তার আশপাশের মানুষগুলোকে প্রতিদিন অসম্ভব যন্ত্রণা উপহার দিয়ে চলেছেন! কেবল নিজের উন্নতি চাই…

পোশাক

বিশ হাজার টাকা বোনাস পেয়ে নিজেরটা ছাড়া পরিবারের সবার জন্য একটি করে পোশাক কিনল রহমান। ছোটভাই বলল, ‘আমার জন্য শুধু একটা পোশাক!’

নিয়তি

রাহেলা বেগমের বিক্রি করা জমিতে মতি মিয়া এখন কত রকমের ফসল ফলাচ্ছে! বিক্রি হওয়ার আগেই যেন জমিটি কেবল অনুর্বর ছিল!

মুক্তিযুদ্ধ

স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পর জমিলার রাজাকার বাবা তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে জমিলা তার বাবাকে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়।

ভালোবাসা

নীপাকে পাওয়া হয়নি বলেই হয়ত হৃদয়ের এতটা গভীরে সে এখনো হৃদয়ের গভীরে থেকে গেছে। অন্যথায় আলু-পটলের মতো প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয়তায় সেও হারাত।

বিশ বছর

তার হয়ত অনেককেই মনে পড়বার মতো আছে। কিন্তু রিফাতের তো সে ছাড়া আর এমন কেউ নেই। বিশ বছর পরও কেন তাকে মনে পড়ে!

দ্বিধা

অসম্ভব সম্ভাবনাময় তরুণ রিমন বীণার প্রেমে ডুবে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করেছে। এখন বীণার মতো সুন্দরী মেয়ে কীভাবে কপর্দকহীন রিমনকে বিয়ে করবে!

মাতৃত্ব

আচমকা বৈধব্য দুই সন্তানের যুবতী জননীকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিলেও সে সব কিছু সামলে নিয়েছে। যৌবনের চেয়ে মাতৃত্ব যে অনেক বড়।

ভাই

প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সেবা করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই বিষিয়ে তুলেছে আলিয়া। ভ্রাতৃভার বইতে বইতে উৎসবেও আনন্দ করার কথা ভুলে যায় সে।

হেড মাস্টার

স্কুলের হেড মাস্টার সাহেবের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। তাই তার আর যত গুণই থাকুক, রবিন তাকে কোনোভাবেই অনুসরণীয় মনে করে না।

প্রফেশনাল

রফিক উৎসবের আমেজেও নিজের বড়ত্বকে ভুলতে পারে না বলেই কোথাও তার কোনো বন্ধু নেই— শান্তি নেই। কেবল একাকিত্বই তার নিত্যসঙ্গী!

ঝগড়া

মমতা বেগম ঝগড়ায় অদ্বিতীয়। তাই পাড়ার মহিলারা হিংসা করে তার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এলে বরপক্ষের সামনে মমতা বেগম সম্পর্কে কুৎসা বর্ণনা করে!

লুকোচুরি

আজন্ম বেকার মহিউদ্দিন সাহেব সত্তর বছর বয়সে সময় কাটানোর উপায় হাতড়ে বেড়ান। কাজের সাথে তাঁর এমন লুকোচুরি খেলা চলবে কতকাল?

প্রত্যাশা

রমজান আলী রাতারাতি টাকার কুমির বনে গিয়েও পরিপূর্ণ শান্তি পাচ্ছে না। স্থানীয় রাজনীতিতে বড় পদ বাগিয়ে নেওয়াটা এখনো যে বাকি…

পরিচয়

শুভাকাঙ্ক্ষীদের জিজ্ঞাসা করা ‘তোমার কি সরকারি চাকরির বয়স শেষ?’ এই প্রশ্নই রফিককে তার বর্তমান চাকরির অবস্থা সম্পর্কে তীব্রভাবে জানান দেয়।

পানসে

চাওয়ামাত্রই সব পেয়েছে বলে রবিনের কাছে নিজের জীবনটাকে পানসে লাগে। তার সরলরৈখিক জীবনে নেই কোনো প্রবহমানতা। সব পাওয়াটাই যেন সব হারানো।

তেজ

সব হারালেও সত্তরোর্ধ্ব জামিলা খাতুনের তেজ কমেনি। মেয়েজামাইয়ের সাথে মেয়ের বনাবনি হচ্ছে না বলে সে মেয়েজামাইয়ের নামে মামলা ঠুকে দিল!

সন্তান

প্রতিবেশীদের সাথে মা সব সময় বিনা কারণে ঝগড়া করে বলে হাফিজ ঠিক করেছে এবারের ঈদের ছুটিতে সে গ্রামের বাড়িতে যাবে না।

মায়া

সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্বার্থপর হয়। কিন্তু কেন যে রফিক স্যারের বিদায়ের দিন মাধ্যমিকে বোর্ডফার্স্ট ফাহিমের চোখ দুটি ভিজে গেল!

দায়িত্ব

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই মাহফুজা পাগলীর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। নিঃস্বার্থভাবে বাবা-মা ছাড়া কে কার দায়িত্ব নিতে চায়?

অভিমান

ওর নিষ্পাপ চেহারায় ফুটে ওঠেছে বিশ্বসংসারের প্রতি নীরব অভিমান। জন্মেই দেখল বাবা-মা-বোন মৃত! সৃষ্টিকর্তা তারও হাতটা ভেঙে তাকেই শুধু অলৌকিকভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে শুধু।

উত্তরাধিকার

মা বেঁচে থাকতে তাঁর কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি গফুর। মায়ের মৃত্যুর পর সে মায়ের জমানো বিধবা-ভাতার টাকাগুলো সর্বত্র খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায়। সে যে মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদের একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী!

হিংসা

রিমঝিম ভালো ছাত্রী হলেও মাধ্যমিকে এ+ পায়নি। পাশের বাড়ির রনি পরের বছর মাধ্যমিকে এ+ পাবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত জেনে তার সাথে অসম মেকি প্রেম শুরু করল রিমঝিম!

বেদনা

নতুনকে বরণে যত প্রাপ্তিই থাকুক, পুরাতনকে ছেড়ে আসা সব সময়ই বেদনার। পুরাতন কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় চোখ মুছে বলতে থাকে শফিক।

অতৃপ্তি

রহিম শেখ নতুন পয়সাওয়ালা হয়েছে। কিন্তু গ্রামের লোকজন তাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। বিষয়টি রহিম শেখকে বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে। সে ভাবে, সম্মানই যদি না পেলাম তো টাকা-পয়সা দিয়ে হবেটা কী? সম্পদের শক্তিইবা গেল কই!

জীবিকা

জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ কী না করে! বেঁচে থাকার ঝামেলা মেটানোর জন্যই মিলন হরিজনকে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা টয়লেট পরিষ্কারের কাজ করতে হয়। এ কাজে তার নিজের কোনো অতৃপ্তি নেই। কিন্তু, মানুষ যে তাকে মানুষই মনে করে না!

ব্যতিক্রম

সাত বছরের সংসারজীবনে মিনু তার স্বামী পারভেজের নামে খুব একটা অভিযোগ তোলেনি কারও কাছে। কোন অতৃপ্ততা থেকে যে সে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে রেখে তার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট সহকর্মী কবিরের হাত ধরে পালাল, তাই এখন পাড়ার ভাবিদের আলোচনার প্রধান বিষয়।

হাহাকার

পথের ধারে কুকুরের ছোট বাচ্চাগুলো মা-কুকুরের গায়ের ওপর লাফাচ্ছে, মায়ের মুখের কাছে মুখ নিয়ে কুঁ কুঁ শব্দ করছে… এসব দেখে নিঃসন্তান আর জনসমাজ থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যাওয়া হাস্নাহেনার চোখ দুটি ভিজে যায়!

অহংকার

পথে দেখা হওয়ার সময় সদা হাস্যোজ্জ্বল জামশেদ সাহেব রফিক সাহেবের সালামের উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে তাকায়। রফিক সাহেব কিছুতেই বুঝতে পারে না যে, সে কী অপরাধ করেছে! বাসায় ফেরার পর স্ত্রী অতি উৎসাহের সাথে বলে, ‘জানো রফিক, তোমার ছাত্র জামশেদ চাচার ছেলে নবীন এবার পুলিশ ক্যাডার পেয়েছে!’

বৃদ্ধাশ্রম

পৃথিবীর কোনো বাবা-মাই জীবিত থাকতে সন্তানকে এতিমখানায় পাঠায় না। কিন্তু সন্তান জীবিত থাকতেও অনেক মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয়। বৃদ্ধাশ্রমের বন্ধু হাশেম সাহেবকে বলছিলেন কাশেম সাহেব।

অবদমিত ভালোবাসা

জনাব ইউসুফ ও তাঁর স্ত্রী মিসেস জুলেখা একে অপরকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসেন। চাকরির সুবাদে দুজন আলাদা জায়গায় অবস্থান করায় ভালোবাসা অবদমিতই থাকে। একদিন হঠাৎ মোবাইলের স্ক্রিনে চাপ লেগে ইউসুফ সাহেবের মোবাইল থেকে অফিসিয়াল ভাইবার গ্রুপে ভালোবাসার ইমোজি চলে যায়। পরের দিন অফিসে সবাই বলাবলি করে এ যে অবদমিত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ!

দুর্ঘটনা

প্রসঙ্গক্রমে একদিন দশম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে বার বছর আগে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন শিক্ষক আব্দুস সুবহান। গল্প শেষ না হতেই তিনি দেখতে পান সামনের সারিতে বসা মাহিনের চোখ থেকে ক্রমাগত পানি পড়ছে! এ যে স্বজন হারানোর কান্না…

Read Previous

অগ্নিবাসর

Read Next

নুশান : দ্য স্পেশাল চাইল্ড – প্রথম পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *