অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
নভেম্বর ১২, ২০২৪
২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নভেম্বর ১২, ২০২৪
২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আনোয়ার কামাল -
গোলাম কিবরিয়া পিনু’র কবিতা: দেশপ্রেমের বহু বর্ণিল দ্রোহের স্ফুলিঙ্গ

কবি-প্রাবন্ধিক-গবেষক ড. গোলাম কিবরিয়া পিনু আশির দশকের দেশবরেণ্য একজন নিভৃতচারী কবি। অত্যন্ত শান্ত, বিনয়ী, ভদ্র, মৃদুভাষী, সৎ, মার্জিত রুচিবোধ, পরিমিত বাক্য ব্যয়, সজ্জন, নির্মোহ, নিরহংকারী, লাজুক স্বভাব আর প্রচারবিমুখ কবি হিসেবে তিনি লেখকসমাজে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। এ থেকে ধরে নেওয়া যায়, তিনি তাঁর সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বাংলাদেশের একজন অন্যতম শুদ্ধতম কবির প্রতিচ্ছবি। লেখালেখি করছেন তিন দশকের অধিককাল থেকে। ইতোমধ্যে তাঁর ২৬টি গ্রন্থ বের হয়েছে। কবিতার বই ছাড়াও তাঁর ছড়ার ক’টি বই আছে। আছে বাংলা সাহিত্যের নারীলেখকদের নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ, যা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ে প্রবন্ধের বইও রয়েছে।

কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু ৩০ মার্চ ১৯৫৬ সালে গাইবান্ধায় জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী প্রতিবাদে, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় থেকেছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘকাল কবিতায় নিমগ্ন থেকেছেন- এখনো তিনি তার সৃজনশীল স্পর্ধা নিয়ে অবিচল। তিনি বহু ধরনের বর্ণিল কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলো বিভিন্ন নিরীক্ষাপ্রবণতায় সংশ্লিষ্ট। তাঁর কবিতায় জীবন আছে, সমাজ আছে, প্রকৃতি আছে, মানুষ আছে, দেশ-কাল আছে এবং আছে প্রতীকের ব্যঞ্জনাও, আছে রূপক, আছে ছন্দের বিভিন্নমুখী ব্যবহার, অনুপ্রাসের নতুনমাত্রা, মিলবিন্যাসের নিরীক্ষা ও অন্যান্য সূক্ষ্ম কারুকাজ। একেক কাব্যগ্রন্থ একেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে উজ্জ্বল। লেখার মূলধারায় নিজেকে স্থাপন করবার জন্য কবিতাকেই তিনি জীবনের মূল কাজ হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। তাঁর প্রকাশিত ১৬টি কবিতাগ্রন্থের কবিতা নিয়ে ২০২১ সালের বইমেলায় ‘নির্বাচিত কবিতা’ গ্রন্থটি বেরিয়েছে। এসব কবিতায় চৈতন্যের ভেতর প্রস্ফুটিত যে বহুতল ও স্তর কবি উন্মোচন করেছেন, তা পাঠককে নিয়ে যায় সেই স্তরে ও তলের গহীন গভীরে।

একজন কবি হিসেবেই নয় তিনি শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরসহ ছাত্র ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর ভূমিকা ছিল। বর্তমানে বাংলা একাডেমির জীবনসদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর সদস্য। এখনো একাধিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কবিতার মধ্য দিয়ে পাঠকের বোধের মধ্যে সঞ্চারিত করতে লিখি। কবিতা নিছক আনন্দের বিষয় নয়, চৈতন্যের বহু স্তর উন্মোচিত করে। জীবনের খণ্ড খণ্ড অনুভূতির মধ্য দিয়ে জীবনের তাৎপর্য কবিতায় উন্মুক্ত করতে পারি, সেজন্যও লিখি। কবিতা মানুষকে ভাবায়, ভাবতে শেখায়, জাগিয়ে তোলে, কৌতুহল সৃষ্টি করে। কবিতা সমকালের হয়েও আগামীকালের ও চিরকালের হয়ে উঠতে পারে।’

তাঁর কবিতায় প্রেম, দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, সুন্দরবন, ফুল-পাখি, নদী, সাগর, ঝরনা প্রভৃতি উপমা, প্রতীক ও রূপক অর্থে উঠে এসেছে অবলীলায়। প্রকৃতিকে তিনি আপন চিত্রকল্পে অনুপম সৌকর্যে কবিতার স্থান করে দিয়েছেন। যে কারণে তাঁর কবিতায় ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়ে পাঠকনন্দিত হতে পেরেছে। এছাড়াও তাঁর কবিতায় সাম্যবাদী দর্শনের সরাসরি প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত হয়েছে। তিনি সরাসরি রাজনৈতিক পরিভাষা ব্যবহার না করেও অনেক রাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন। যা তাঁর দেশপ্রেমের পরিচয় উদ্ভাসিত করে, পাঠককে ভিন্ন ধরনের আস্বাদন দিয়ে থাকেন। তাঁর কবিতা ছন্দ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা আর বহুবিধ অলংকারে উদ্ভাসিত, যা পাঠককে মুগ্ধ করে।

গোলাম কিবরিয়া পিনু’র কবিতায় একজন উৎপিপাসু কবিতার পাঠক, তাঁর কবিতায় বহু বর্ণিল ও বিভিন্ন ভূগোলের খোঁজ পেয়ে থাকেন। তাঁর কবিতা পাঠকের সংবেদন সৃষ্টি করে একধরনের ইন্দ্রিয়ানুভূতিও তৈরি করে, যা ইন্দ্রিয়জ্ঞানে পরিণত হয়, সেইসাথে কবিতার শিল্প-সৌন্দর্য নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ও আনন্দময় অনুভূতিরও জন্ম দেয় ও কাব্যরসের দ্যোতনা সৃষ্টি করে। আমরা তাঁর কবিতা পাঠ করলে দেখতে পাই, মানুষ তার ভবিতব্যকে ভুলে যায়। মানুষের সামনে যখন কেবলই উত্থানের হাতছানি দেয়, তখন সে আর পিছন ফিরে তাকায় না। ভুলে যায় পতনের কথা। আর যখন পতন হয়, তখন সে মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পায় না। অত্যন্ত সরল কথাটি তিনি কবিতায় মূর্ত করে তুলেছেন পতন কবিতায়।

পতনের শব্দে কোথায় লুকাবে মুখ
নাকি শেষে পতঙ্গের মতন আগুনে পুড়বে?
তোমার পতন আবশ্যিক মনে হয়-
[পতন; এখন সাইরেন বাজানোর সময়]
প্রতারণা। আমরা প্রতারণার শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত, প্রতি পদে পদে। কবি এখানে প্রতারণাকে প্রাদুর্ভাবের সাথে তুলনা করেছেন। আমাদের দেশে নিরক্ষর লোকেরা অক্ষরজ্ঞান-সম্পন্ন মানুষের কাছে ধোঁকা খায়, জনপ্রতিনিধিরা ভোটের আবেদন নিয়ে নানান প্রতিশ্রুতির ডালি সাজান। ফাঁকা বুলির ফুলঝুরি দিয়ে ভোটে উত্তীর্ণ হয়ে বেমালুম তা ভুলে যায় এসব নিরন্ন, নিরক্ষর মানুষের কথা। রক্তচোষা জোকের মতো মজুরের রক্ত চুষে নেয়। শ্রমের মূল্য না দিয়ে প্রতারণা করে, বঞ্চিত করে। তাইতো কবি তাঁর প্রতারণা কবিতায় তারই চিত্র তুলে ধরেছেন।

এত প্রতারণা যাকে বলে প্রাদুর্ভাব এইখানে
এই গ্রামে, এই দেশে, ভোট আসে, ফাঁকা ধ্বনি নিয়ে
যায় সমর্থন। নিরক্ষর কৃষকেরা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন
লোকেদের কাছে ধোঁকা খায়, লোভ স্থলপদ্মের পবিত্র
পবিত্রতা নষ্ট করে, মজুরের ঘাম চুষে নেয়
নতুন চোষক। অমলিন থাকে না চেহারা কিংবা
ছবিময় ঘর, উঠোনের এলাকা সমাধিপূর্ণ
[প্রতারণা; এখন সাইরেন বাজানোর সময়]

মানুষকে জাগিয়ে তুলবার, তার ভোঁতা চেতনায় টোকা দিয়ে তাতিয়ে তোলার কাজ অনেকটা কবিরাই করে থাকেন। দেশে যখন অনাচার-অবিচার-বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করে; ঠিক তখনই কবিরা বুক চেতিয়ে সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে যান। মানুষকে আহ্বান করেন। তার অমিত বাণীর বর্ণচ্ছটায় মানুষকে খানিকটা হলেও জাগিয়ে তোলা যায়। কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু একজন রাজনৈতিক সচেতন কবি। তাঁর কবিতার চরণে চরণে মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে। ভোঁতা সমাজের ঘুমিয়ে থাকা আমজনতাকে ঘুম ভাঙানোর আওয়াজে নিজেকে শামিল করেন। আর সে কারণেই তিনি তার সাইরেন কবিতায় জানাচ্ছেন- এখনই সাইরেন বাজানোর সময়। কোনো প্রকার শিথিল শৈথিল্য থাকলে হবে না। মানুষকে জেগে উঠতে হবে, তাদের দ্বার উন্মোচন করতে হবে। এই আহ্বানের ভেতর দিয়ে আমরা দেখতে পাই, মানুষের মুক্তির পথে হাঁটবার উদগ্রীব আকাঙ্ক্ষাকে উসকে দিয়েছেন। কবিতার ভেতর দিয়ে মানুষের চেতনার নিউরনে টোকা দেওয়ার কাজটি পুরোপুরি তিনি করতে পেরেছেন। এখানেই তাঁর কবিতা স্বাতন্ত্র্য।

সাইরেন বাজানোর সময় এখন
কোনো শিথিল শৈথিল্য থাকতে পারে না
জাগরণ যাকে বলে, তাই দরকার
উন্মোচন যাকে বলে, তাই দরকার
উন্মীলন যাকে বলে, তাই দরকার।
[সাইরেন; এখন সাইরেন বাজানোর সময়]

আবার বর্শা কবিতায় তিনি এই সময়কে ধারণ করে বলেছেন- এখন বর্শা হাতে তুলে নেওয়ার সময়। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবার এখনই সময়। যার জন্য শক্ত হাতের মুঠে আগল ভাঙবার ডাক দিয়েছেন। কবিতায় এখানে আমরা দেখতে পাই, তিনি অনেকটা রাজনৈতিক নেতাদের মতো করে শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

এখন আমার বর্শা নেওয়ার সময়
এই হাতে আছে শক্ত জোর
খুলতে পারি দোর-
লক্ষ্য করে বক্ষ তার ছিদ্র করা চাই।
[বর্শা; এখন সাইরেন বাজানোর সময়]

আবার মানুষ শিরোনামের কবিতায় আমরা সেই একই সুর অনুরণিত হতে দেখি। আমাদের দেশের শোষিত নির্যাতিত নিরন্ন মানুষগুলো অসহায়ের মতো জীবনযাপন করে। ঠিক যেন শামুকের মতো নিজেদের খোলসে গুটিয়ে রাখে। কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু সেইসব মানুষকে মুক্তির আস্বাদন নিতে হাঁড়ি-কলসীর ভেতর না ঢুকে শিরদাঁড়া খাঁড়া করে দাঁড়ানোর স্পর্ধা দেখানোর সাহস জুগিয়েছেন। মাথা উঁচু করে প্রতিবাদী হয়ে আকাশস্পর্শী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে কবির রাজনৈতিক স্পৃহা থেকে মানব মনের জাগ্রত উদ্দীপনাকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে রুখে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বানকেই উসকে দেয়।

শামুকের মতো
হাঁড়ি-কলসীর ভেতর না ঢুকে
দাঁড়াও মানুষ,
উঁচু দাঁত নিয়ে নয়
নীল স্পর্শ করতে আকাশস্পর্শী হও।
[মানুষ; কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে]

আবার তিনি প্রতীকী উচ্চারণে জানান দিচ্ছেন- আমরা কুমিরের হাত থেকে বাঁচার জন্য না বুঝেই হাঙরের কাছে ছুটে যাচ্ছি। সেই সাথে হাঙরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা আমাদের চেতনার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এতে বড় ধরনের ক্ষতির ভেতর নিজেকে টেনে নিয়ে যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। অচেতন মানুষ দেখভাল না করলে ছোট ছোট বিপদ থেকে বাঁচার জন্য নিজের অজ্ঞতার কারণে বড় বিপদে পতিত হতে হয়।

কুমিরের হা থেকে বাঁচতে গিয়ে
হাঙরের কাছে যাই-
হাঙরকে ধন্যবাদ জানাই!
[কুমির ও হাঙর; ও বৃষ্টিধারা ও বারিধারা]

তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থ পোর্ট্রেট কবিতা। এ গ্রন্থে তিনি কবিতায় ছবি এঁকেছেন কমরেড মণি সিংহ, শহিদ ডা. মিলন, শহিদ নূর হোসেন, শহিদ তাজুল, শহিদ রাউফুন বসুনিয়া বসু, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইলা মিত্রসহ আরো অনেক কিংবদন্তিতুল্য কীর্তিমানদের নিয়ে। এসব কবিতা একেকটি জীবন্ত কিংবদন্তির প্রতিভাস হয়ে উঠেছে। বিপ্লবী চেতনার মৃত্যু হয় না। বিপ্লবীরও মৃত্যু হয় না। তাঁরা দেশ মাতৃকার ও মানবমুক্তির অলঙ্ঘনীয় পথকে বেছে নিয়ে, জীবনকে হাতের মুঠোয় পুরে মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে নিজেদের অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুটমিলে কমরেড তাজুলকে জীবন দিতে হয়েছিল। অথচ এই তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হয়েও শ্রমিকের রাজনীতিকে জীবনের দীক্ষা হিসেবে নিয়েছিলেন। সমস্ত লোভ-লালসাকে পদদলিত করে পাটের ছিন্নভিন্ন আঁশমাখা ধুলোর ভেতর থেকে শ্রমজীবী মানুষকে মুক্তির বারতা পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাজুলকে স্বৈরাচারী এরশাদের পেটুয়া বাহিনী বাঁচতে দেয়নি। শ্রমিক আন্দোলনের মিছিলে হামলা করে তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। অবশেষে তাজুল বিপ্লবের লাল ফুল হয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। কবি তাঁকে নিয়ে কবিতায় মূর্ত করে তুলেছেন- শহিদ তাজুল কবিতায়। তাঁর কবিতায় কাব্যবিশ্বাস, কাব্যভাষা, কাব্যশৈলী কবিতার পাঠককে আকৃষ্ট করে, পাঠে মনোযোগী করে তোলে। পাঠক আপ্লুত হয়, কবিতায় মজে যায়।

লোভের কাছেই যখন অনেকে ছোট হয়ে যাই
তখন তাজুল-
ভরবাহী হয়ে,
ঢুকে পড়ে সোজা আদমজীর পাটের
ছিন্নভিন্ন আঁশমাখা ধুলোর ভেতর।
…………………………
মধ্যবিত্ত, বিত্ত ছাড়া কিছুই বুঝি না;
কিন্তু সেই এক-
অধঃপতনের প্রপাত থেকে
ত্যাগের মহিমা তুলে ধরে।

তাঁকে অবশেষে রক্তমাখা বেশে কেন হারালাম?
[শহিদ তাজুল; পোর্ট্রেট কবিতা]

আবার স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ডা. মিলনকে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। স্বৈরাচারী শাসক ধরে নিয়েছিল এভাবে হত্যা করে তার গদিকে টিকিয়ে রাখবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। সান্ধ্য-আইন জারি করেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি। স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল। কবি গোলাম কিরিয়া পিনু তার শহিদ মিলন কবিতায় ডা. মিলন হত্যাকে চোরাস্রোতের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ জলধারা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেদিন ঢাকার রাজপথের চিত্র কবিতায় মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। মানুষের ব্যথা জাগানিয়া রোষ দগ্ধ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। যার পরিণতিতে মানুষ মিলন হত্যার প্রতিবাদে নিজেদের ভেতর মিলন সেতু রচনা করেছিলেন। ডা. মিলন হত্যার ভেতর দিয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।

মিলন, আপনি মুহূর্তেই গুলিবিদ্ধ হলেন, তখন
গুলিবিদ্ধ হলো যেন বহুজন
আর সেইসাথে
মানুষেরা ব্যথা জাগানোর রোষ নিয়ে
ফেটে পড়লো দগ্ধ ক্ষোভে

সন্ধ্যা নেমে এলো
তারপর নেমে এলো সান্ধ্য-আইনের অত্যাচার
না, মানুষ ঘরে রইলো না
রাস্তায় নামলো,
…………………………
মিলন, আপনি মিলনের পথে টেনে এনে দাঁড়
করিয়ে দিলেন দৃঢ়ভাবে সবাইকে
ফোটালেন চোরাস্রোতের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ জলধারা।
[শহিদ মিলন; পোর্ট্রেট কবিতা]

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তিপাক’ লিখে যে যুবক রাজপথ কাঁপিয়েছিল, তার নাম নূর হোসেন। এই নূর হোসেনকে নিয়ে কবি শামসুর রাহমান কবিতায় এঁকেছিলেন বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়। সেই কবিতায় শেষ পঙক্তিতে তিনি বলেছেন- নূর হোসেনের বুক নয় বাংলাদেশের হৃদয়/ ফুটো করে দেয়; বাংলাদেশ/ বনপোড়া হরিণীর মতো আর্তনাদ করে, তার/ বুক থেকে অবিরল রক্ত ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে। আসলেই নূর হোসেনের বুক যেন বাংলাদেশের হৃদয়; তার বুক থেকে অবিরল রক্তধারা ঝরতে থাকে- এখনো ঝরছে। সেই নূর হোসেনকে নিয়ে অনেক কবি তার কবিতায় তুলে এনেছেন সেই বীরত্বগাথা সংগ্রামের দেদীপ্যমান ইতিহাস। কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুও নূর হোসেন কবিতায় লিখেছেন- নিজের শরীরের শার্ট খুলে নিজের বন্ধনকে খুলে সবার বন্ধন খুলে দেওয়ার আয়োজন করেছিলেন। আর সেই উদোম বুক পুলিশের টার্গেট- তপ্ত বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। নূর হোসেনকে হত্যা করার অর্থ তখন দাঁড়িয়েছিল- এ যেন বাংলাদেশের হৃদয়কে ঝাঁঝরা করা। তারপর তার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সবার ঐকমত্যে পৌঁছার এক উদাত্ত সাহসী শক্তি দেশজুড়ে গণজোয়ারের ঢেউ তুলেছিল।

খুলে দিল নিজের বন্ধন, সবার বন্ধন খুলে
দেওয়ার জন্য-
শরীরে ঊর্ধ্ব আচ্ছাদন ফেলে দিয়ে
জীবন্ত লিখন রচনা করলো দেহে
‘স্বৈরাচার নিপাত যাক
গণতন্ত্র মুক্তি পাক’

অভিনব সাহসী যুগল পায়ে এগুতেই কেঁপে
উঠলো কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের
পোশাকী লোকেরা
খৈ হারিয়ে হৈ হৈ করে ওঠে-
…………………………
অতঃপর টার্গেট ফায়ার…
[নূর হোসেন; পোর্ট্রেট কবিতা]

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাহসী ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া বসুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। রংপুরের সাহসী তেজি যুবক রাউফুন বসুনিয়া তার বাবার কাছে চিঠি লিখেছিলেন- ‘আব্বা, আমাদের সুদিন আসছে’। সেই সুদিনের অনাবিল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যে যুবক প্রহর গুনতেন; সেই দিন কি এসেছে? এ প্রশ্নটি আমাদের সামনে এখনও ঝুলে আছে। গোলাম কিবরিয়া পিনু তাঁর কবিতায় বসুনিয়ার মায়ের আহাজারি, নষ্ট বিশ্বাসের কাছে পরাজিত, সবার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যে যুবক নিজের নিরাপত্তাহীনতায় থেকেও পরাভব মানেনি; তাকে জীবন খোয়াতে হয়েছিল নষ্ট রাজনীতির পরাকাষ্ঠে। এভাবেই কত সম্ভাবনাময় ছাত্রের জীবন কালের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। ক’জনই বা মনে রাখছে তাঁদের সেই বীরত্বগাথা সংগ্রামী জীবনের আলেখ্য। রাউফুন বসুনিয়া বসু কবিতায় সেই পোর্ট্রেটই এঁকেছেন তাঁর কবিতায়।

হিংস্রতার কাছে পরাজিত হলো না কখনো
কুলুষতার ছত্রছায়ায় গুলিবিদ্ধ হলো
ছায়াশূন্য বুকে মা ডুকরে কেঁদে উঠলো
নষ্ট বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হলো না কখনো
নিরাপত্তাহীন থেকে খুঁজেছে সবার নিরাপত্তা
রাউফুন বসুনিয়া বসু।
…………………………
রাউফুন বসুনিয়া বসু
রক্তের অনুরণনে লেখে শেষ চিঠি
পিতার নিকটে-
‘আব্বা, আমাদের সুদিন আসছে’।
[রাউফুন বসুনিয়া বসু; পোর্ট্রেট কবিতা]

বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনগণের কৃষ্ণাঙ্গ নেতা। যাকে তাদের জনগণ মুক্তির দূত হিসেবে মনে করেন, সেই মহান মানবতার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে তিনি নেলসন মানডেলা কবিতায় বিশ্ববাসীর তাঁর জন্য যে মমত্ব, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার শোকগাঁথা কবিতায় তাই তুলে এনেছেন অবলীলায়। যারা তাঁকে কারাবন্দি করে রেখেছিল, পরবর্তী সময়ে তারাই মরণের ফাঁদে পড়ে কেঁদেছে। পাশাপাশি বিশ্ববাসী এই মহান নেতার জন্য কেঁদেছে। তার সংগ্রাম মুখর জীবনের জয়গান আজো আকাশে বাতাসে অনুরণিত হয়। তিনি সংগ্রামী মানুষের মুক্তি বারতা নিয়ে যে বীজ বপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চির স্মরণীয়, চির জাগরুক হয়ে থাকবে।

তোমার স্বদেশভূমি বিশ্বভূমির সম্মুখে
উঁচু হয়ে আছে-
তুমি মাথা উঁচু করে আছো, তাই-
কারাগারে যারা
রেখেছিল হায়
তারাই পড়েছে
মরণের ফাঁদে-
তোমার জন্য বিশ্বের লোকেরা কাঁদে।
[নেলসন মানডেলা; পোর্ট্রেট কবিতা]

লাঞ্ছিত নিপীড়িত মেহনতী মানুষের মুক্তির সাম্যবাদী সংগ্রামকে জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়ে যিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন- তিনি কমরেড মণি সিংহ। পাথরের প্রাণ ভেঙে ভেঙে মানুষের আওয়াজ তুলেছেন। বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। জাতবিপ্লবী আমৃত্যু দেশের মানুষের জন্য শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করবার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। জেল-জুলুম-নির্যাতন তাঁকে নোয়াতে পারেনি। তিনি মানুষকে মুক্তির অলঙ্ঘনীয় পথের দিশা দেখিয়েছেন। এই ঘুণে ধরা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু মণি সিংহ কবিতায় তাঁর মতো স্বজনের কাছে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেছেন এবং বলেছেন যেতেই হবে। কারণ তিনি সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে মেহনতী মানুষের শোষণহীন-শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমের নিঃস্বার্থ উদাত্ত আহ্বানকারী। সে কারণেই আমাদের তাঁর কাছেই যেতে হয়, যেতে হবে।

তাঁর কাছে যেতে হয়। পাথরের প্রাণ ভেঙে ভেঙে
যে তৈরি করেছে আওয়াজ, এজন্য হেঁটেছে এই
ধুলোপথে, রথে উঠতে পেয়েও ওঠেনি কখনো।
………………………………
এখানো বৈষম্যপীড়িত জীবন হাঁফাতে হাঁফাতে
হাপর দোলায়, যা অন্যায়ে অন্য গৃহে থাকে বন্দি ;
বন্দি র সীমানা ভাঙা দ্রোহে-
তাঁর মতো স্বজনের কাছে যেতে হয়, যেতে হবে।
[মণি সিংহ; পোর্ট্রেট কবিতা]

কিংবদন্তি বিপ্লবী নেত্রী নাচোলের ইলা মিত্র। জমিদার পরিবারের পুত্রবধূ হয়েও যিনি আমৃত্যু মেহনতী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে লড়েছেন- আপামর মানুষের রানি-মা হয়ে শ্রদ্ধার মুকুট নিয়ে গত হয়েছেন। এমন বিপ্লবীর দেখা পাওয়া ভার। তাঁর ওপরে নির্মম নির্যাতনের কাহিনি জগদ্বাসী জানেন। তবুও হার মানেননি। পরাভব না মানা এই কিংবদন্তিকে নিয়ে ইলা মিত্র কবিতায় তাঁর মানুষকে ভালোবাসার কথা, মুক্তির পথ বাতলে দেবার কথা উঠে এসেছে।

নাচোলে আঁচল বিছিয়েছিল কে? তাঁর
সবুজ আঁচলে অবুঝ পাখিরা বসতে পেয়েছিল,
ছায়ায় ছায়ায়
সম্মুখ উত্থানে
পাখিগণ, খোলসের মাত্রা থেকে বের হয়ে, যাত্রা
শুরু করেছিল
জাগর জীবনে।
তাঁর পদশব্দ, অব্দজুড়ে
থাকে, আজও জেগে থাকে পাখিগণ, চায়
ফসলের ভাগ
সুষম সবুজ,
টেনে এনে টান করে রাখে অধিকার।
[ইলা মিত্র; পোর্ট্রেট কবিতা]

আমাদের দেশে বিপুল জনগোষ্ঠী নিরক্ষরতার ভেতর মানবেতর জীবনযাপন করে। তাদের মধ্যে প্রায় শতভাগ অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্নতায় নিমজ্জিত। গ্রামীণ জনপদের এই সব মানুষকে একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের ভুল ব্যাখা দিয়ে নাজেহাল করে। এরা কখনো কখনো বাজপাখির মতো ছোঁ মারতে চায়। উড়ে এসে জুড়ে বসে সবকিছু তছনছ করে দিতে চায়। সুযোগ সন্ধানী ধর্ম ব্যবসায়ীরা নানান সময়ে নানান বেশে নিজেদের উন্মোচিত করে। আবার যখন জনতার রোষানলে পড়ে তখন ঠিক মুখ লুকায়।

ফতোয়াবাজ কি বাজপাখি?
কখনো কখনো উড়ে এসে জুড়ে বসে
ঘরের চাতালে,
বাজখাঁই গলায় ছড়ায় মনগড়া কিছু শব্দ
জব্দ করে, অব্দ থেমে যাবে?

এদের বগলে যে ছাতা সে ছাতায় কখনো বা
ঢাকে মুখ, মুখ কখনো বা আরও বেশি
অন্ধকার নিয়ে নুয়ে পড়ে,
অন্যদের নখর-খামচা দিয়ে ধরে।

ফতোয়াবাজ কি বাজপাখি?
ছোঁ দিয়ে মুরগি ছানা নিয়ে যেতে চায়!
[ফতোয়াবাজ; কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে]

১৯৯৫ সালে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে যাওয়ার সময় অতিপ্রত্যুষে দিনাজপুর শহরের সন্নিকটে বাস থেকে নামলে ১৪ বছর বয়স্ক ইয়াসমিন নামের এক বালিকাকে পুলিশ সদস্য কর্তৃক গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। যে পুলিশ মানুষের রক্ষক, সেই পুলিশই ভক্ষক হয়ে ইয়াসমিনের মতো বালিকাকে ধর্ষণ করেছিল। কবির মনোজগতে পীড়া দেয় এহেন ঘৃণ্য অপরাধের জন্য। তাই তিনি কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে কবিতায় আক্ষেপ করে বলেছেন- ভরসা করবার মতো আমাদের ফরসা বা আলোকিত আকাশ কোথায়? আজ রক্ষকেরা বাঘ হয়ে ভক্ষক সেজেছে। কুরে কুরে খাচ্ছে আমাদের সত্তাকে।

কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে
ভরসা করা ফরসা আকাশ কই?
রক্ষকেরা ভক্ষক হয়ে ব্যাঘ্র সাজে
রাতের বেলায়-
মাংস ভক্ষণ
ষড় রিপুর দাপাদাপি।
[কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে; কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে]

বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত মহাননেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। যে নেতা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য, মুক্তির জন্য, জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন; যাকে একাত্তরে পশ্চিম পকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। কবর খুঁড়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়েছিল, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করতে সাহস পায়নি। তাঁকে নিজের প্রিয় মাতৃভূমিতে বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কি লজ্জা! এ লজ্জা ঢাকবো কি দিয়ে! তাইতো কবি মুজিবের জন্য হৃদয়ের রজনীগন্ধা কবিতায় সেই শোকগাথা তুলে ধরেছেন। তাঁর মৃত্যু দিবসে কবি লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চেয়েছেন। যে নেতা বাঙালির পরিচয়ের পতাকাশোভিত ভিত্তিভূমি এনে দিলেন, তাঁকে কেন বারবার করতে চেয়েছি অমবস্যায় বিলীন। এই খেদোক্তির ভেতর দিয়ে বাঙালির মহান নেতার প্রতি অপরিসীম প্রগাঢ় মমত্ববোধের প্রকাশ পায়। গোলাম কিবরিয়া পিনুর কবিতায় এমনিভাবে দেশ, জাতি, জাতীয়তাবোধ আর মানবতার জয়গান উদ্ভাসিত হয়েছে।

এসো, আমরা মাটির সাথে মিশে যাই
লজ্জায়! লজ্জায়!
তাঁর মৃত্যুদিনে কীভাবে দাঁড়াই
রঙিন সজ্জায়!

আমরা কি এত দীনহীন!
যে দিল বুকের রক্ত, যে দিল পরিচয়ের ভিতমাখা মাটি
যে দিল মন্ত্রী, নেতা ও জেনারেলদের পতাকাশোভিত দিন
তাঁকে কেন করতে চেয়েছি বারবার অমাবস্যায় বিলীন!
[মুজিবের জন্য হৃদয়ের রজনীগন্ধা; আমি আমার পতাকাবাহী]
আবার এই মহান নেতার জন্মদিনে¬ মুজিব যে এই মাটির, এই জলবায়ু এই নক্ষত্রলোকে, এই ছায়াপথে এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তারই বয়ান মুজিবের জন্মদিন- আমাদের চৈতন্যময় কবিতায় তুলে ধরেছেন।
মুজিব তোমার জন্ম- মহাশূন্যে নয়
মুজিব তোমার জন্ম- সপ্তলোকে নয়
মুজিব তোমার জন্ম- নক্ষত্রলোকে নয়
মুজিব তোমার জন্ম- ছায়াপথে নয়

তোমার জন্ম-
এই পূর্বাচলে
এই চন্দ্রালোকে
শরৎশশীর উষ্ণ কোলে
এই এক দেশে- এইখানে সূর্যোত্থানে তোমার জন্ম।
[মুজিবের জন্মদিন- আমাদের চৈতন্যময়; ফুসলানো অন্ধকার]

বাঙালি জাতির অহঙ্কার মহান মুক্তিযুদ্ধ। একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মহান মুক্তিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া পিনুর কবিতায় ভিন্নমাত্রায় উপস্থাপিত হয়েছে। কারণ তিনি নিজেও তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধজয়ের পরে বিজয়ীর বেশে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের কবিতা নামক একটি কবিতাগ্রন্থ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয় মাস শিরোনামে কবিতায় তিনি প্রশ্ন রেখেছেন- নয় মাস কত মাসে তৈরি হয়েছিল? প্রকৃত অর্থে নয় মাস তো নয়মাসে তৈরি হয়নি। এর এক সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা বাঙালি জাতির রক্তের ইতিহাসে মিশে আছে। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান তারই ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ প্রস্তুত হতে এই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। কেবলমাত্র এ যুদ্ধ নয়মাসের আঁতুড়ঘর নয়। এ এক দীর্ঘ সংগ্রামের রোপিত বীজের রক্তাক্ত ফসল। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা রয়েছে। কবি যখন দেখতে পান দেশের একদল জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যাচ্ছে।

নয় মাস
কত মাসে তৈরি হয়েছিল?

আমাদের সমবেত সংহতি
বিঁধেছিল
শত্রুদের,
কাঁটাবিদ্ধ হয়েছিল কালো হৃদপিণ্ড।
[নয় মাস; মুক্তিযুদ্ধের কবিতা]

কবি মুক্তিযুদ্ধের প্রসববেদনায় জারিত হচ্ছেন দেশ জাতির উল্টোরথে, উল্টোপথে হাঁটতে দেখে। অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে কবিতায় মুক্তির সোপানে নিজেদের উৎসর্গ করবার এক উদ্দীপ্ত আহ্বান- তখনই তিনি আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে বলেছেন চলো- অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে/ চলো- কুণ্ঠামুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে/ চলো- প্রসববন্ধন হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ যে চেতনায় সংগঠিত হয়েছিল- শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে। তা থেকে আমরা এখন যোজন যোজন দূরে। কাজেই অসম্পূর্ণ যুদ্ধটা সম্পন্ন করবার তাগিদ অনুভব করে তিনি সেই আকুতিই জানিয়েছেন। দেশাত্ববোধে দ্রোহে জারিত নান্দনিক উপস্থাপনায়- অনিরুদ্ধ আলোকচ্ছটায় মনোরম চিত্রকল্পময়তার তাঁর কবিতা ভিন্নমাত্রার ব্যঞ্জনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।

এই এক দেশ- যেখানে রক্তাক্ত হাইড্রোজেনের ভেতর
মেঘজমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়েছিল
-এক চন্দ্রধারা
সেই চন্দ্রধারার নামই দেদীপ্যমান মুক্তিযুদ্ধ।
চলো- অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো- কুণ্ঠামুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো- নবাঙ্কুর হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো- প্রসববন্ধন হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে।
[অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে; মুক্তিযুদ্ধের কবিতা]
অপরদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের একদল যুদ্ধশিশুকে অকুষ্ঠিত হৃদয়ে বুকে তুলে নিতে হয়েছে। সেইসব যুদ্ধশিশুরা নানান বিড়ম্বনা আর অনুকম্পা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। বাংলাদেশও ঠিক যেন সেই যুদ্ধশিশুর মতো ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে নাম ধারণ করে বাংলাদেশ।

যুদ্ধশিশু যুদ্ধজয়ের মধ্য দিয়ে
অকুণ্ঠিত হৃদয়ে
অসম্পূর্ণতার মাঝে
ধীরে ধীরে নিজেকে প্রসারিত করে
তার হৃদয়মন্দিরে একাত্তর!
……………………………
যুদ্ধশিশু অনুকম্পা নিয়ে বড় হতে হতে
যে কম্পন অনুভব করে
তার নাম বাংলাদেশ!
তারপরও অন্তর্জগতের ভেতর আত্মবুদ্ধি নিয়ে
নিজমূর্তিতে প্রাণময়তা জেগে রাখে।
[যুদ্ধশিশু; মুক্তিযুদ্ধের কবিতা]

এতো রক্তক্ষয়, এতো বিপন্ন জীবন! তারপরেও স্বাধীনতার সুফলগুলো ভূলুণ্ঠিত হয়। পরাজিত শকুনের হাতে চলে যায় স্বাধীনতার মূল্যবোধ। কেবল জাদুঘরে শোভা পায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো। মুক্তিযুদ্ধ কি এ পরিণতির জন্যই হয়েছিল! কবির হৃদয় একরাশ বেদনায় মুষড়ে ওঠে। কারণ, তিনি নিজেও জীবনের মায়া ত্যাগ করে কিশোর বয়সে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর কবিতাগুলো আমাদের ভোঁতা চেতনাকে শাণিত করে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় স্বাধীনতা একটি রক্তাক্ত ছেঁড়া বিবর্ণ পোশাকে।

জাদুঘরে গিয়ে দেখি প্রিয় মুক্তিযুদ্ধ
একটি ছিন্ন বিবর্ণ দৈনিকে!
একটি ছেঁড়া রক্তাক্ত পোশাকে!
একটি ছোট অস্পষ্ট ছবিতে!

এতটুকু ধারণ ক্ষমতা নিয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ?
[জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ; মুক্তিযুদ্ধের কবিতা]

সুন্দরবন আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক বিশাল বনভূমি। সুন্দরবন আমাদের বিপুল ধনভাণ্ডারে সমৃদ্ধ। এই বনাঞ্চলে যেমন রয়েছে নানান প্রজাতির জীববৈচিত্র্য প্রাণিকুল, তেমনি বৃক্ষরাজি, মৌমাছির নিরাপদ আবাসভূমি। আমরা সুন্দরবনকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি। যে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়ে বুক চেতিয়ে আমাদের রক্ষা করছে, সেই সুন্দরবনের গাছপালা অবাধে নিধন করছি। ফলত, সেখানে পশুপাখিদের বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ হয়ে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, পরিবেশ দূষণ হবে অনিবার্য ভাবে। তাই কবি এখানে সুন্দরবনকে একা থাকতে দাও কবিতায় সুন্দরবনকে তার নিঝুমতা নিয়ে একা থাকতে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। এই সুন্দরবন অক্সিজেন ভান্ডার হয়ে আমাদের জীবনের ফুসফুসকে সজীব রেখেছে। সুন্দরবন ধ্বংস হলে মানুষের জীবনের আয়ুষ্কালও ক্ষয় হয়ে যাবে।

সুন্দরবনকে একা থাকতে দাও
ওর নিঝুমতা নিয়ে একা থাকতে দাও
ওর পাখির কিচির মিচির নিয়ে
ওর ডেঁয়োপিঁপড়ে নিয়ে
ওর ঝুলনপূর্ণিমা নিয়ে
ওর নদীর জলশব্দ নিয়ে একা থাকতে দাও!
[সুন্দরবনকে একা থাকতে দাও; ঝুলনপূর্ণিমা থেকে নেমে এলো]

আমরা আমাদের নদ-নদী নিজেরাই গিলে খাচ্ছি। গ্রাস করছি নিজেদের লোভের লালসা পূরণ করবার জন্য। একবারের জন্যও ভাবনায় আসছে না নদীকে দূষিত করে, নদীকে দখল করে, নিজেরা নিজেদের প্রকারান্তরে মেরে ফেলছি। তাই কবি তার বুড়িগঙ্গা নদীকে নিয়ে অপরূপ চিত্রকল্পময়তায় বুকের ভেতরের নিদারুণ হাহাকারকে তুলে এনেছেন। কারণ, বুড়িগঙ্গা বাঁচলে তার জীববৈচিত্র্য প্রাণ ফিরে পারে। দু’কূলের বাসিন্দারা সুপেয় পানি পাবে। মানুষের নদীপথের যাতায়াত সুগম হবে। মাছের অবাধ চলাচল হবে। মৎস্যসম্পদে আবার ভরে যাবে বুড়িগঙ্গা। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিনিয়ত নদীকে হত্যা করা হচ্ছে।

আমি মরে যাচ্ছি, জ্বরাগ্রস্ত-
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, মুমূর্ষু-গোঙানি নিয়ে
বেঁচে আছি মৃতপ্রায়
বুকে জাগা বালুভরা কষ্ট
আর অশ্রুপাত,
কাফন পরানো আয়োজন দিনরাত!
[বুড়িগঙ্গা; আমরা জোংরাখোটা]

এই নদীকে নিয়ে তিনি হৃদয়গ্রন্থি কবিতায় আবারও সেই আক্ষেপকে তুলে ধরেছেন। নদী শুকিয়ে খালে পরিণত হচ্ছে। জল ছাড়া নদী মরে যাচ্ছে। জলের অভাবে নদীর মরণদশা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। মানুষ যেমন একা বড় হতে পারে না, ঠিক নদীও তেমনি পানি ছাড়া বড় হতে পারে না। কাজেই, নদীকে বাঁচাতে হলে- জলের প্রয়োজন। তার বেড়ে ওঠা, বড় হওয়ার জন্য জলের প্রয়োজন। নদী আমাদের জীবনের অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নদী মাতৃতুল্য, নদীকে বাঁচাতে হবে, তার জলপ্রবাহ বাড়াতে হবে। তার দুপাড়ের ঘিরে ধরা জনবসতিকে ফিরে যেতে হবে নিজ নিজ স্থানে।

নদীকে বলেছি- ‘নদী বড় হও’।
নদী বলে- ‘আমি জল ছাড়া বড় হই না
যত জল তত বড়’।
মানুষ কি একা বড় হয়?
[হৃদয়গ্রন্থি; ঝুলনপূর্ণিমা থেকে নেমে এলো]

গোলাম কিবরিয়া পিনুর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : এখন সাইরেন বাজানোর সময় (১৯৮৪), সোনামুখ স্বাধীনতা (১৯৮৯), পোর্ট্রেট কবিতা (১৯৯১), সূর্য পুড়ে গেল (১৯৯৫), কে কাকে পৌঁছে দেবে দিনাজপুরে (১৯৯৭), আমরা জোংরাখোটা (২০০১), সুধাসমুদ্র (২০০৮), আমি আমার পতাকাবাহী (২০০৯), ও বৃষ্টিপাত ও ধারাপাত (২০১১), ফসিল ফুয়েল হয়ে জ্বলি (২০১১), মুক্তিযুদ্ধের কবিতা (২০১২), ফুসলানো অন্ধকার (২০১৪), উদরপূর্তিতে নদীও মরে যাচ্ছে (২০১৪), নিরঙ্কুশ ভালোবাসা বলে কিছু নেই (২০১৫), কবন্ধ পুতুল নাচে (২০১৬), ঝুলনপূর্ণিমা থেকে নেমে এলো (২০১৯), নির্বাচিত কবিতা (২০২১)।

ছড়াগ্রন্থ : খাজনা দিলাম রক্তপাতে (১৯৮৬), ঝুমঝুমি (১৯৯৪), এক কান থেকে পাঁচ কান (১৯৯৮), মুক্তিযুদ্ধের ছড়া ও কবিতা (২০১০)।

প্রবন্ধগ্রন্থ : জামাতের মসজিদ টার্গেট ও বাউরী বাতাস (১৯৯৫), দৌলতননেছা খাতুন (প্রবন্ধ) (১৯৯৯), ঊনিশ-বিশ শতকের নারী লেখক ও আত্মশক্তির বিকাশ (২০১৯), সমকালীন কবিতা ও বোধের দিগন্ত (২০১৯)।

গবেষণাগ্রন্থ : বাংলা কথাসাহিত্য : নির্বাচিত মুসলিম নারী লেখক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১০)।

গোলাম কিবরিয়া পিনুর কবিতায় এক ধরনের সরলতা এবং প্রবল রাজনীতি সচেতনতা লক্ষণীয়। তিনি যে একজন রাজনীতি সচেতন কবি তারই প্রতিফলন আমরা তাঁর কবিতায় প্রস্ফুটিত হতে দেখি। তিনি কবিতায় নিছক কল্পনাবিলাসী না হয়ে খুঁজে ফিরেছেন চারপাশের চরম বাস্তবতার নাগপাশ, আর তা তুলে এনেছেন নিপুণ করিগরের মতো করে। শব্দ ছেনেছেনে কবিতার শরীর গঠন করেছেন। অতিক্ষুদ্র বিষয়কে সুনিপুণ দক্ষতায় উপস্থাপন করেছেন। সমাজের চলমান অনেক ঘটনাবলি তাঁর হৃদয় স্পর্শ করে- আপন শৈলীতে তিনি শাণিত করেছেন কবিতার প্রকরণ। বিষয় প্রকরণে তাঁর কবিতায় নিরীক্ষাধর্মী উপসর্গ সবসময়ই পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর নিরীক্ষাধর্মী কবিতা রয়েছে। তবে সবচে’ বড় কথা হলো এতো কিছু লেখার পরেও সেই অর্থে তাঁকে সমালোচক বা অন্যান্যরা সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। হয়তোবা তাদের চোখে পড়েনি। এতে কবির মোটেই খেদোক্তি নেই। তিনি নিরলসভাবে তাঁর মতো করে লিখে চলেছেন। তাঁর কবিতা নিয়ে শেষে বলতে গেলে বলা যায়- তাঁর কাব্যপথ চলার গতি বিভিন্ন সময়ে বাঁক নিয়েছে; কখনো একরৈখিকভাবে থাকেনি, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়েই সম্মুখ পানে এগিয়ে গেছে। চারপাশের পারিপার্শ্বিক ঘটনা ছাড়া সেই অর্থে কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবনের অন্তর্গূঢ় বিষয়াদি খুব একটা উঠে আসেনি।

আনোয়ার কামাল
কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য আলোচক
সম্পাদক- ‘এবং মানুষ’ (সাহিত্যবিষয়ক ছোটকাগজ)
মুঠোফোন: ০১৭১২-৫০২৩৪৫

Print Friendly, PDF & Email
আনোয়ার কামাল

Read Previous

থ্রিলার জনরা ও একজন ঘোস্ট রাইটার শেখ আবদুল হাকিম

Read Next

হাসান আজিজুল হক: জীবন-বাস্তবতার কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *