অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৯, ২০২৪
১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৯, ২০২৪
১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাবণী মণ্ডল -
জীবন ও গল্পের হাতছানি
‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুরে’

সাহিত্যে গল্পের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে মানুষ স্বভাবত গল্প শুনতে ভালোবাসে। প্রাণ-প্রকৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারা বিশেষ যোগ্যতার ব্যাপার। এতে সমাজ-সভ্যতার বাস্তবতা তুলে ধরা যায় গল্পকারের চিন্তাশক্তি দিয়ে।

গল্পকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে হয় অল্প কথায় লক্ষ্য স্থির বা বক্তব্য ঠিক রেখে পাঠকের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা। তাহলে গল্পের সূচনা এবং সমাপ্তির ইতিহাসকে গুলিয়ে ফেলতে পারবে না পাঠকসমাজ। আমাদের সাহিত্যে এটির বড়ই অভাব— পাঠককে আকৃষ্ট করতে না পারা।

সাহিত্যে রস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গল্পকারদের এ বিষয়ে আরও কঠিনভাবে নজর দিতে হয়। সাধারণত গল্প হল গতিময় বর্ণনা। যে বর্ণনায় সমাজের গতিময়তা উঠে আসে। ভাষাবিন্যাস হয় নির্মেদ; কিন্তু ইঙ্গিতধর্মী। সুন্দর উপস্থাপনার বিশেষ যোগ্যতার জন্য পাণ্ডিত্যে ভরপুর হলেই শুধু চলে না, এর জন্য সমাজের ভেতরের চিত্রগুলো বিশেষভাবে অবলোকন করতে হয়। যেটি ‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুরে’ গল্পগ্রন্থে বেশ সুচারুভাবেই করতে পেরেছেন আঁখি সিদ্দিকা। এই গল্পকার মূলত একজন কবি। সাহিত্যে কবিতা থেকে গল্পে রূপান্তর— এক কষ্টসাধ্য কাজ। কেননা, একমাত্র কবিতাকেই সাহিত্যে ছোটগল্পের সঙ্গে তুলনা চলে। সে হিসেবে আঁখি সিদ্দিকা সফল হয়েছেন। ‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুরে’ বইটি তার প্রথম গল্পের বই। প্রিন্ট কপি হাতে পাইনি। তবে পিডিএফ কপি পাওয়া মাত্রই পড়ে ফেলেছি। ইদানীং গল্প বেশ পড়া হচ্ছে। বিশেষ করে চিন্তাশীল, উদীয়মান তরুণদের গল্প।

গল্পকারের আলাদা ভাষাশৈলী থাকে। যে ভাষাশৈলীকে মাধুর্যমণ্ডিত করে পাঠকের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে হয়; কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থায় সাহিত্যের নামে এর অপতৎপরতাই বেশি। সেখানে আঁখি সিদ্দিকার মতো একজন নিভৃতচারী গল্পকার কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন, সেটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করাটাই স্বাভাবিক।

আলোচ্য বইটিতে ১১টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো হল— ‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুরে’, ‘এক কাপ কফি ও একটি সিনেমা’, ‘কনে দেখা আলো’, ‘মাকড়সা জাল’, ‘নীল মেঘের শেষে’, ‘নৈর্ব্যক্তিক’, ‘রঙিন পালক’, ‘রঞ্জনরা ফিরে আসে না’, ‘শেষ দৃশ্যের কতিপয় মুখ’, ‘শব্দজীবন’, এবং ‘যোঁজন দূর’। প্রতিটি গল্পের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আঙ্গিক ভিন্ন। কখনো চরিত্র, কখনো ঘটনা, কখনো শুধু অনুভূতি, আবহ ও পরিমণ্ডলের ভিন্নতা এনে গল্পগুলো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

গল্পকার সংলাপের ভঙ্গি, বর্ণনার ঔজ্জ্বল্য এবং কখনো ইঙ্গিতময়তার বৈশিষ্ট্যে কাহিনিকে পাঠকের অন্তরে স্থাপন করেন। লেভ তলস্তয়ের ‘একজন মানুষের জন্য কতটুকু জমি প্রয়োজন’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘ছাব্বিশ জন লোক ও একটি মেয়ে’, ‘মানুষের জন্ম’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের আবেদন জাতি ধর্মের অতীত সর্বজনীন। এগুলো ঐতিহাসিক; কিন্তু ইতিহাস প্রতিনিয়ত নির্মিত হয় এবং সেটি মানুষই করে।

জীবনের অনেক ঘটনার মধ্যে কোনো একটি বিশেষ ঘটনা বা জীবনের খণ্ডাংশ নিয়ে ছোটগল্প রচিত হয়।

ছোটগল্পের সূচনায় থাকবে আকস্মিকতা। একটি চমক বা উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি হবে। ছোটগল্পের ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল হবে। ছোটগল্প জীবনের বিলাসিতাকে ধারণ করে না, তাই সমগ্র অবয়বের মধ্যে একটি বোধ থাকে যা পাঠকের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। ছোটগল্পের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গল্পকার যেখানে পরিসমাপ্তি টানেন, সেখানেই পাঠকের চিন্তার শুরু হয়।

গল্পকারকে জীবন দেখতে হয় বহুভাবে। একভাবে দেখলে যান্ত্রিকতা চলে আসে। জীবনের অপর নাম গল্প। সবার জীবনে গল্প থাকে। এর রূপ ভিন্ন হয়। শ্রেণিচরিত্র ভিন্ন হয়। ‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুরে’ বইটির নামকরণের মধ্যেই আলাদা জিজ্ঞাসা রয়েছে। এই জিজ্ঞাসা তৈরি করাটাও সাহিত্যিকের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে।

গল্পগুলো পড়তে গিয়ে পাঠক জীবনানন্দীয় ধাঁচ পাবেন। ১১টি গল্পের মধ্যে, যে গল্পগুলো চিন্তার জগতে বিশেষভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হবে— ‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুরে’, ‘মাকড়সার জাল’, ‘এক কাপ কফি ও একটি সিনেমা’, ‘রঞ্জনরা ফিরে আসে না’ ও ‘শব্দজীবন’।

‘চড়ুইয়ের সাদা ডিম ভাঙা দুপুর’ গল্পের মূল চরিত্র মৌমিতা। পেশায় শিক্ষক। মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে জীবনের কাছে পরাজয় শিকার করে নেয়; কিন্তু মানুষ দৈহিকভাবে পৃথিবীর মায়াকে বিদায় জানালেও, কারও না কারওর ভেতরে আজীবন বেঁচে থাকে। সেটা হোক প্রেমের মাধ্যমে কিংবা কর্মের বিশালতায়। মৌমিতা ব্যাংকের এক হিসাব রক্ষকের হৃদমাঝারে বেঁচেছিলেন। হৃদয়ের যে ব্যাকুলতা তাকে পরাজয় করে এমন সাধ্য কার!

প্রথম গল্পটিতে গল্পকারের বর্ণনাভঙ্গি অসম্ভব ভালোলাগা তৈরি করে। তিনি লিখেছেন, “ঝিমিয়ে পড়া বিকেলের গায়ে ভৈরব নদের কলমিদামের ভেতর ডুবে থাকা হাঁস, তাড়াহুড়ো করে ফেরা খেয়াঘাটের নৌকোয় ঘরে ফেরা মানুষের মুখ, ফণিমনসা, শটিবন, মধুকর ডিঙা, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা খুলনালঞ্চের এগিয়ে আসা ভেঁপু, নদের পাড় ধরে হাঁটা বালুপথ, বেঁকে এসে তীরে ওঠা রসগোল্লার দোকানে রস-আপ্যায়ন, সন্ধ্যে নামার মুখে কৃষ্ণাদ্বাদশীর জ্যোৎস্নার নরম গান, ওপারে বিশীর্ণ বটের নিচে থমকে থাকা অন্ধকারের গায়ে লেপটানো নিস্তব্ধতা। বাসকলতায় ঘেরা জলসিঁড়ির ঢেউ ছলকে ওঠা সাতটি তারার তিমির, গঙ্গা ফড়িং, কেবল ঘন হয়ে আসা অন্ধকারে চুপ জিরিয়ে নেয়া পথিক, ভ্যানে রেললাইনের পাড় ধরে আসতে আসতে বিজন ঘাসপোকা আর ঝিঁঝিঁর চিৎকার। এই ‘স্রোত’ নামের বাড়ির গেটে এসে কচি লেবুপাতার নরম সবুজ আলো, মিহি ঘিয়ে রঙের জবা, নাটাফলের গাছ, ধুন্দল বীজ আর শালিক-খঞ্জনার দৌড়াদৌড়ি মনে করিয়ে দেবে আমায়।”

সহজ-সুন্দর একটি দৃশ্যপটকে এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করার জন্য যে চিন্তাশক্তির প্রকাশ থাকতে হয়, সেটি গল্পকার সাবলীলভাবেই দেখাতে পেরেছেন।

বাংলা ছোটগল্প ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনারতরী’ কাব্যের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতাটিই মূলত উদ্ধৃত হয়—

‘ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা
নিতান্ত সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারটি অশ্রু জল।
নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
জগতের শত শত অসমাপ্ত কথা যত,
অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল,
অকালের জীবনগুলো, অখ্যাত কীর্তির ধুলা,
কত ভাব, কত ভয় ভুল—’

এই পদ্যখণ্ডে ছোটগল্পের যেসব গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে, তা বহু ছোটগল্পের ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ছোটগল্প এমন হতে হবে যে ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ অর্থাৎ গল্প শেষ হয়ে গেলেও যাতে রেশ থেকে যায়।

এই রেশটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন আঁখি সিদ্দিকা। ‘এক কাপ কফি ও একটি সিনেমা’ গল্পের ‘রূপন্তি’ চরিত্রটিকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, সেটি সমাজের সব রূপন্তিরই চরিত্র। চরম পুরুষতান্ত্রিক একটি সমাজে রূপন্তিদের এই চরিত্র নির্মাণ করাটা ছিল অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

চন্দ্রমল্লিকা কেনা রূপন্তির আর হাজারটা কাজের মতো একটি কাজ। চাকরি এবং বাসায় ফেরার পথে চন্দ্রমল্লিকা কিনে নিয়ে ফেরা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা; কিন্তু সব দিন তো শাহবাগ, কাঁটাবনে চন্দ্রমল্লিকা পাওয়া যায় না— এই না পাওয়ার বিষয়টিকে গল্পকার তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবী নারীদের লড়াই, জীবন-সংগ্রামকে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। যে কারণে গল্পগুলো আলাদা প্রাণশক্তি পেয়েছে।

কোনো সম্পর্কই শ্বাশত নয়। সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভেঙে যাওয়ার জন্য, এটিই দর্শন। সুখ-বিলাসিতা সবকিছু থেকেও কী যেন থাকে না সংসার নামক শব্দের মধ্যে। যে কারণে একটা সময় নতুনত্বের খোঁজ সামনে আসে। কেন এমন হয়? যে বা যিনি এ খোঁজ করেন, তিনি নিজেও অনেক সময় এর ব্যাখ্যা খুঁজে পান না; কিন্তু স্বভাবসুলভ সংসার নামক বেড়াজালে থেকেও তিনি প্রেমে পড়েন, নতুন স্বপ্নে নিজেকে বেঁধে ফেলেন। ‘মাকড়সার জাল’ গল্পটিতে এই জালবন্দি জীবনকেই নির্ণিত করেছেন গল্পকার।

প্রসূনের সংসার রয়েছে। দশ বছরের সংসার, চাট্টিখানি কথা নয়! ফুটফুটে, দুরন্ত, সূর্যের আলোয় আলোকিত হওয়ার মতো একটি কন্যাও রয়েছে। তবুও অফিসের কলিগের প্রেমে বন্দি হওয়া। এ রকম মুহূর্তে স্বাভাবিক যে পরিবর্তনগুলো আসে, সেটি প্রসূনের ভেতরে আসে; গল্পকার সেটি সাবলীলভাবেই দেখিয়েছেন। মানুষ তো সমাজের বাইরের অংশ নয়! সুতরাং, সমাজের ভেতরের ঘটনাগুলোই তো গল্প-কবিতায়-উপন্যাসে লিপিবদ্ধ হয়। যে কাজটি আঁখি সিদ্দিকা করেছেন।

গল্পে কল্পনার বেগ থাকে; কিন্তু সেটিকে সামলিয়ে উঠার যে অসাধ্য সাধন, সেটি করতে পারাটা জরুরি। এ বইয়ের গল্পগুলো এ জায়গা থেকে মুক্তি নিয়েছে। মধ্যবিত্তীয় যে বাস্তবতা, তার উত্থান-পতনকে গল্পকার স্পষ্টকরণ করেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। যে কারণে মধ্যবিত্ত সমাজের ভেতরে গল্পগুলো প্রাণ পাবে। হয়ত মনে হবে, ‘গল্পকার আমার জীবন লিখে ফেলল না-তো…!’ এই সমাজ বাস্তবতার ছাপ রাখাটাই তার সার্থকতা।

এ ছাড়াও মানব জীবনের নানা রকম ছোটখাট সংঘাত ও ভালোলাগা ভালোবাসার প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর গল্পে। বর্ণনাগুলো একেবারে জীবন্ত। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় সমাজের হাহাকার, মানুষের হৃদয় স্পন্দনের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আঁচ করা যায়।

‘শব্দজীবন’ গল্পটিতে লেখক আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষার যে রূপ বর্ণনা করেছেন এবং এ রূপে নিজেকে ভিজিয়ে ফেলার যে আকুলতা প্রকাশ করেছেন, তা প্রায় অধিকাংশ মেয়ের মনের সুপ্ত বাসনা; কিন্তু বাস্তবতাগুলো ভিন্ন হয়। এখানে দিয়েগোর যে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা এবং তা নিয়ে তার প্রিয় ব্যক্তিত্বের উদ্বিগ্নতার বিষয়টি দেখানো হয়েছে।

শব্দের যে মেলবন্ধন ‘শব্দজীবন’ গল্পটিতে— ‘বুনো কাঠবাদাম, কাঁঠালচাপার ডালে অন্ধকার আর বৃষ্টির মাখামাখিতে রাত যেন গভীর প্রণীয় হয়ে উঠল বারান্দার কোনটায়। সিগারেটের ধোঁয়া তুলে জানান দিলাম আমিও আছি। কেমন ম্যাড়মেড়ে ঠাণ্ডা, ভেজা ভেজা বরফ যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে গালে। দীর্ঘ ছায়ার মতো একটি গোলাঘর সামনে এসে সাংসারিক মাধুর্যকে যেন এক নিমেষেই উড়িয়ে নিল অ-নে-ক দূর।…’

বৃষ্টিস্নাত রাতকে এত কাব্যিক ঢঙে বর্ণনা করা কবিদের পক্ষেই সম্ভব হয়। যে কাব্যিকতার ঢঙ গল্পের পরবর্তী পৃষ্ঠা উল্টাতে বাধ্য করে। কাব্যিক বর্ণনা এবং ঘটনার যখন সামঞ্জস্য থাকে, তখন এর প্রতি আলাদা আকর্ষণবোধ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কী!

সর্বশেষ গল্প ‘যোজন দূর’। সমাপ্তি টেনেছে, না আনন্দ, না আঘাত দিয়ে। ‘যার কিছু নেই, তার কোনো কিছুতেই যায় না, আসেও না…।’ এই একটি লাইনকে কোনো গতিময় জীবনের ব্যাখ্যা বললেও ভুল হবে না।

‘…মনের খেয়ালে মন কী মনে রাখে? গাড়ির হেড লাইট জ্বলে উঠল, ডালিমকে বললাম, আজ এসএম হলের দিকে যেও।’ ডালিম কি এসএম হলের সামনে দিয়ে গিয়েছিলেন— এখন পাঠক পথ হারাতে থাকুক। পথ না হারিয়ে খুঁজে ফেরার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। এজন্য গল্পকার পথ হারিয়ে দিয়েছেন, এখন পথ আর কতটুকু হারাবে এবং খুঁজে ফিরে পাওয়ার আনন্দই-বা কতটুকু…।

একটি বই তখনই সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে, যখন বইটির প্রচ্ছদ, মেক-আপ, বানান ও বিষয়বস্তু শিক্ষণীয় হয়। এ ক্ষেত্রে বইটির কিছু ত্রুটি লক্ষণীয়, সেটি হল— বানানের দিকে বিশেষ কোনো নজরই দেওয়া হয়নি। যে কারণে একজন রুচিশীল পাঠকের কাছে বইটি বেশ প্রাসঙ্গিক হওয়া সত্ত্বেও বিরক্তিবোধ জন্ম দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে লেখক এবং প্রকাশক বিষয়টিতে নজর দেবেন বলে, একজন পাঠক হিসেবে মত রাখছি।

বইটি প্রকাশ হয়েছে ২০২০ সালে। প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স। ঢাকার পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে পাওয়া যাবে।

লাবণী মণ্ডল : তাঁর জন্ম টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। সবুজের মাঝে বেড়ে ওঠা এ লেখক ভালোবাসেন প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের গল্প বলতে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন প্রকাশনা শিল্পে। তিনি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন মাধ্যমে সাহিত্য ও বই আলোচনা করে থাকেন। ইতোমধ্যে তাঁর সম্পাদনায় পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

 

+ posts

Read Previous

একজন মন্ত্রীর একদিন

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন- ৩য় সংখ্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *