অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৩, ২০২৪
২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ৩, ২০২৪
২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোজাম্মেল হক নিয়োগী -
হান্ড্রেড ফেসেস অব উইমেন

গ্রন্থের নামকরণ

এই গ্রন্থ আলোচনার পূর্বে নামকরণ নিয়ে কিছু কথা বলা আবশ্যক বলে মনে হয়। নামকরণের জন্য গ্রন্থটি পাঠ করার আগেই পাঠকের মনে কয়েকটি প্রশ্ন জাগতে পারে; যেমন— ১. এটি ফিকশন নাকি ননফিকশন, ২. এটি কোনো অনুবাদ গ্রন্থ, ৩. এই বইয়ে কি একশত নারীর জীবনীমূলক কোনো কথা, ৪. এই বই কি নারীর শত ধরনের ভূমিকা কিংবা শত মানুষের মুখোশের উন্মোচনের কোনো খতিয়ান ইত্যাদি। বস্তুত এসব কিছুই নয়। বইয়ের ফ্ল্যাপ ও ভূমিকা পাঠ করার পর পাঠক উপলব্ধি করতে পারবেন এটি একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ এবং আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হলেও সব কিছু ছাপিয়ে প্রেমের আখ্যান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বইয়ের ১০৯ পৃষ্ঠার ৩৪ অধ্যায়ে বইয়ের নামকরণের বিষয়টি পরিষ্কার করেন লেখক নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো দেখতে শুরু করি নারীর আরও এক মুখ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যা শত শত মুখ হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে জীবনের পরতে পরতে।’

প্রেক্ষাপট

পূর্বেই বলেছি এটি একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ যেখানে কথকের বর্ণনায় দুটি রোমান্টিক প্রেমের বর্ণিল ও স্বপ্নময় জীবনের রোমান্স, সুখ-দুঃখ, প্রেমের ভেলায় ভেসে যাওয়া জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা রকম আলো-আঁধারের রঞ্জন স্ফূরিত হয়েছে। যেহেতু আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ তাই সঙ্গত কারণেই ফার্স্ট পারসনে কথক সমস্ত ঘটনা বইয়ের পৃষ্ঠায় বিধৃত করেছেন। পারিবারিক জীবন ছাড়াও লেখকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক চরিত্র অত্যন্ত দরদে ও আবেগের মিশ্রণে এই গ্রন্থে চিত্রিত হয়েছে।

লেখকের বাবা পলিটেকনিক ইনস্টিউটিটের শিক্ষক ছিলেন এবং প্রথমে তিনি কুমিল্লায় ছিলেন এবং পরে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বদলি হয়ে যান যখন লেখক শৈশব উৎরে কৈশোরে পদার্পণ করেছেন। ময়মনসিংহেই তাদের পারিবারিক জীবনের বর্ণনা পাওয়া যায় দীর্ঘ সময়ে। তবে লেখক বারবারই স্মৃতিচারণ করেছেন তার মধুময় শৈশবের লালমাই পাহাড়-ঘেঁষা তাদের আবাসিক বাড়ি, আঙ্গিনা, পুকুর, উন্মুক্ত মাঠ, আকাশসহ চিত্তহারী বর্ণিল নিসর্গের।

আখ্যান-বিন্যাস

১২৮ পৃষ্ঠার বইটি মোট ৩৬টি অধ্যায়ে বিভক্ত। শব্দ ও বাক্যের জোরাল আঁটসাঁট। প্রথম অধ্যায়ে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের কোলঘেঁষা নৈসর্গিক বর্ণনাসহ শৈশবে পুকুরে লাফ দেওয়া, বড় ভাইয়ের হাত ধরে সাঁতার শেখা এবং সাঁতরানোর অনাবিল আনন্দের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে আখ্যানের সূত্রপাত। পারিবারিক জীবনের সুখপ্রবাহ, ভাইবোনদের মধ্যে অপার ভালোবাসার বন্ধন, মা-বাবার অপত্য স্নেহের মাঝে নিজের পায়ে দাঁড়াবার উপদেশ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা কথা বিধৃত হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিবারই মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষালয় যে শিক্ষালয় থেকে দুরন্ত শৈশব রচনাকারী লেখকের বাকি জীবনের পাদপীঠ রচিত হয়েছিল। কুমিল্লা জেলার স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে সেখানকার অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং সূর্যাস্ত আইনের ফলে ছাত্রীদের নানা রকম বিড়ম্বনা, অধিকার হরণের ফলে তাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের ইতিবৃত্ত। ছাত্রীরা ১৯২২ সালের প্রক্টোরিয়াল রুলসের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। এতে ১১ জন ছাত্রী কালো তালিকাভুক্ত হন। এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ছাত্রীদের মিছিলে ছাত্রদলের হামলা এবং ছাত্রীদের ওড়না ধরে টানাটানি করা।

এরপর আবার পেছনে ফিরে যাওয়া এবং সপ্তম অধ্যায়ে লেখক পুনরায় লালমাই পাহাড়ের স্মৃতিমন্থন করেন। একটি ঘটনা পাঠকের হৃদয় বিগলতি হয় আর সেটি হল, জনৈক ব্যক্তি তবলিগ জামাতে চলে যাওয়ার পর তার পাঁচ বছরের মিমি নামের মেয়েটি সেফটি ট্যাংকে পড়ে মারা যায় এবং শিশুটির মা আপাদমস্তক বোরকাবৃত হয়ে মেয়েকে সারা দিন খুঁজে সন্ধ্যার পর পান মৃতদেহ। লেখকের আবেগও এই ঘটনায় লক্ষণীয়। তিনি বলেছেন এই নিথর দেহটি অর্থাৎ এক শিশুকন্যার মৃতদেহটি দেখার মধ্য দিয়ে লেখকের জীবনে প্রথম মৃত্যু দেখা। লুকিয়ে-চুরিয়ে সাহিত্য পড়ার ঘটনা আমাদের দেশে প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে, এই লেখকের জীবনীতেও তা দেখা গেলেও এই সময়েই লেখকের মনের মধ্যে লেখালেখি করার স্বপ্নের বীজও রোপিত হয়েছিল তখনই।

বাবার বদলির কারণে কুমিল্লা থেকে ময়মনসিংহ শহরে লেখকের জীবন শুরু হয় এবং ঘিঞ্জি শহরটিকে লেখক নানাভাবে চিত্রিত করেছেন। বর্তমান আলোচকের নিজ জেলা হওয়াতে প্রতিটি বর্ণনা যেন নিজ শহরকে দেখতে পান। লেখকের বর্ণনা যথার্থ এবং জোর দিয়েই বলা যায়, শহরটি এই দেশের অসুন্দর ও অপরিচ্ছন্ন জেলা শহর। বিদ্যাময়ী স্কুলে যাওয়ার সময় শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত নিষিদ্ধ পল্লির মেয়েদের পোশাক ও কুৎসিত অঙ্গভঙ্গির ছিঁটেফোঁটা বর্ণনাও রয়েছে। বিদ্যাময়ী স্কুলের ভেতরে বটতলায় একটি মেয়েকে বাইরের ছেলেরা এসে মারধরের ঘটনাটি দাগ কাটে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ময়মনসিংহ শহরের একজন জামাতা ২,৫৫০ দিন প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন কিন্তু ময়মনসিংহ শহর উন্নয়নের জন্য তিনি ট্যারা চোখেও তাকাননি। বাদ বাকি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কথা না-হয় বাদই দিলাম।

যা হোক, এই অসভ্য সমাজে একটি বৃষ্টির দিনে লেখকও কিশোরী বয়সে রিকশায় বসে থাকা অবস্থায় রিকশার পেছন থেকে এক ইতরের ঝাপটে ধরার ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যাময়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার আদর্শ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব লেখকের জীবনকে প্রভাবিত করার সত্যটিও তিনি প্রকাশ করেছেন।

পঞ্চদশ অধ্যায়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার কোচিং করার সময়ে টিনএজ প্রেম লেখকের জীবনে উত্তাপ ছড়ায়। তখন জনৈক কবির সঙ্গে দেখা হয় এবং তার সম্মোহনী ও মোহনীয় হাসিতে তিনি প্রেমের নাওয়ে রঙিন পাল উড়িয়ে দেন। কবিও কম ছিল না, অন্তত প্রেমের ক্ষেত্রে জবরদস্ত। লেখককে নাম দেয় ‘জলকুসুম’। কী সুন্দর নাম ও প্রেমাঞ্জলি! একটি শব্দই একটি কবিতা, একটি মহাকাব্য। আমাদের কাছে নয়, প্রেমিকার কাছে। এই নামের বদৌলতে লেখক কম পুলকিত হননি। পরিবারের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে থাকে কানামাছি খেলা। লেখকের পরিবারেও সূর্যাস্ত আইন ছিল, ছেলেমেয়ে সবার জন্য এবং প্রেমের টানে একদিন সূর্যাস্ত আনি লঙ্ঘন করার দায়ে মায়ের কঠিন শাসনের কবলে পড়তে হয়। সাহসী লেখক চুম্বনের বর্ণনাও আধামূর্ত ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করেন যেন ‘ন হন্যেতে’ মৈত্রেয়ী দেবীকে মির্চা এলিয়াদের চুম্বনের দৃশ্য পাঠকের সামনে জাগ্রত হয়।

কে এই ‘কবি’ তার বিশদ বর্ণনা মৈত্রেয় দেবীর মতো দিতে সাহস পাননি এই গ্রন্থের কথক কিন্তু তিনি পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, বিরুদ্ধ আচরণ, দ্বন্দ্ব-কলহ, পরিবারের সঙ্গে সৃষ্ট টানাপোড়েন, রোমান্স ইত্যাদি অকপটে লিপিবদ্ধ করতে কুণ্ঠিত হননি তিনি। মূলত আত্মজৈবনিক এই গ্রন্থের ক্যানভাসে প্রেমই প্রাধান্য বিস্তার করেছে, যদিও পারিবারিক বিভিন্ন ঘটনাও চিত্রিত হয়েছে তবে সেগুলো প্রেমের প্রাবল্যের কাছে গৌণ, ক্লিশে। দুজনই কবি এবং ১৯ বছর বয়সে লেখকের একটি কবিতারও বইও প্রকাশিত হয়। প্রেমিক কবি বাউণ্ডুলে প্রকৃতির এবং মাতৃহারা বলে নিজেকে প্রেমিকার সামনে উপস্থাপিত করে অতিরিক্ত আবেগ, অনুকম্পা ও প্রেমাবেদন আদায় করার কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে। পরে প্রমাণিত হয় তার মা সনাতন ধর্মের এবং জীবিত আছেন। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে পরিবার ও সন্তানাদি নিয়ে সুখেই আছেন। অবশ্যই খবরটি সেদিনই জনৈক হিতাকাঙ্ক্ষী লেখককে দিয়েছিলেন যেদিন দুজন ময়মনসিংহ শহরে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পাকা করে কাজিঘরে যাওয়ার অপেক্ষা করেছিলেন। কাজিঘরে আর যাওয়া হল না।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রেমিক কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে পরের বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু প্রেমের টানে লেখকের লেখাপড়ার বাধাগ্রস্ত করে এবং কবিতা আবৃত্তির সংগঠনের একাগ্র নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অভাবি কবির আবার তেজও কম ছিল না। যার প্রমাণ মেলে খাবারের প্লেট ছুড়ে মারার দুটি ঘটনায়। পাঠকের মনে প্রতীতি জন্মানো অস্বাভাবিক নয়, কবি প্রেমিক লেখকের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মাঝে মাঝে টাকা চাওয়ার মধ্য দিয়ে নীচতার পরিচয় দিয়ে প্রেমকে কলুষিত করেছে।

প্রবঞ্চক প্রেমিক এখানেই ক্ষান্ত নয়— প্রমাণ মেলে তার একাধিক প্রেমিকার শরীরবিষয়ক যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করারও। ফিকে হয়ে যায় প্রথম প্রেম এবং ভাইয়ের কড়া অনুশাসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবন থেকে বাসায় যাওয়ার পীড়াপীড়ি, প্রেমের জন্য তিরস্কার, ক্লাস ও আবৃত্তির ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার মর্মযাতনা যেন আত্মপ্রবঞ্চনার ফল যা লেখককে প্রায় দিশেহারা করে তোলে এবং অনার্স শেষ করেই চাকরির জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হয়। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ জুটিয়ে নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য পায়ের নিচে সামান্য মাটি পান লেখক। শৈশবের সোনালি দিনগুলো হারিয়ে যায় এবং লেখকের জীবনে কঠিন বাস্তবতার অধ্যায়ের শুরু হয়। স্বপ্ন ও বাস্তবতার এক সাংঘর্ষিক পরিবেশে লেখককে দিন গুনতে হয়।

এরপর আসে দ্বিতীয় প্রেম। ইতালি প্রবাসী প্রেমিকের মোহনময়ী ও ভুবনভোলানো মায়াবী হাসির কথা আবারও উল্লেখ পাওয়া যায় হাসির কাঙালিনী প্রেমিকার বর্ণনায়। তখন পাঠকের মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, এই হাসি কি হাবসী যুবক কৃতদাস তাতারীর হাসির চেয়েও মনোমুগ্ধকর যে হাসির জন্য খলিফা হারুনর রশিদ বলছেন, ‘তুমি একটিবার হাসো। তা-হোলে তুমি যা চাও, তাই পাবে’। এবং শেষে একটি বাক্য প্রতিধ্বনিত হয় নওয়াসের কথার, ‘আমিরুল মুমেনীন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।’ মোহনময়ী হাসির বর্ণনা পড়ার সময় মাসুম রেজা রচিত ‘স্বত্ব’ নামের একটি টিভি নাটকের কথাও পাঠকের মনে পড়তে পারে। ওই নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল প্রোটাগনিস্টের সম্মোহনী হাসি যে হাসির স্বত্বাধিকারী কেবলই প্রেমিকা। তবে খঞ্জরপুরের ইতালি প্রবাসী বিশ্বস্ত প্রেমিকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে জীবনের কিছুটা স্বস্তি মেলে। এই প্রেমের বিভিন্ন বর্ণনায় প্রেমময় জীবনের মধুরতা উৎকীর্ণ হয়— পাঠকের মনে পড়ে, মওলানা জালাল উদ্দিন রুমির কথা— ভালোবাসা কোনো ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না/ ভালোবাসা এক অপার সাগর যার নেই শুরু, নেই শেষ।

এই গ্রন্থে যেন রুমির এই বাণী প্রতিধ্বনিত হয়। কারণ, ভালোবাসার পরিণতি না দেখিয়েই বগুড়ায় বেড়ানোর মধ্য দিয়ে আখ্যানের পরিসমাপ্তি ঘটে— ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’।

আলোচকের মন্তব্য

ছোট বাক্যের সমাহারে এই বইয়ের ভাষা চমৎকার। নিসর্গের বর্ণনা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অপূর্ব ব্যঞ্জনায় পাতায় পাতায় সৃষ্টি হয়েছে শব্দের ঝংকার। কোথাও কাব্যিক ভাষার বুনন আবার কোথাও নিরেট প্রাবন্ধিক বা গদ্যের ভাষা। কোনো কোনো পৃষ্ঠার কাব্যিক ভাষার মন্দ্রজালে পাঠকের মনে চুম্বকীয় আবেশ তৈরি হয় এবং পাঠককে টেনে রাখে। এই বইয়ে সাহিত্যরস আস্বাদনেরও পর্যাপ্ত রসদ রয়েছে।

কাকতালীয়ভাবে, এই আখ্যানের সঙ্গে দুটি উপন্যাসের কয়েকটি ঘটনার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের চরে ও নদে নৌকাবিহারে এই বইয়ে যে-রকম অভিসারের বর্ণনা রয়েছে ঠিক অনুরূপ আমার লেখা ‘ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসর কাবিন’ উপন্যাসেও রয়েছে। আবার কুয়েত-মৈত্রী হলের মাঠে প্রেমিক-প্রেমিকা ও বন্ধু-বান্ধবদের যে আড্ডার বর্ণনা বিস্মৃত হয়েছে আমার লেখা ‘ক্যাম্পাসকাব্য’ উপন্যাসে একই মাঠ ও ঘটনার বিবরণ রয়েছে। আমি থাকতাম মুহসীন হল এক্সটেনশনে। লোডশেডিংয়ের সময় শাহনেওয়াজ হলের ছাত্রদের সঙ্গে যে গালিগালাজের যুদ্ধ হত তা ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় ঘটনা।

স্মর্তব্য যে, সর্বনামে সর্বনাশ। অতিরিক্ত সর্বনাম ব্যবহার করাতে পাঠকের মনোযোগের বিচ্যুতি ঘটে। দুই প্রোটাগনিস্টের নাম ব্যবহার না করে সর্বনাম ব্যবহার করাতে চরিত্র শনাক্ত করতে শর্ট মেমোরির পাঠককে চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়।

প্রোডাকশন হিসেবে বইটিকে প্রথম শ্রেণির দাবি করলে সুধীমহল মানবে না। তারা মানববন্ধনও করতে পারেন। বানান ভ্রমও রয়েছে বেশ। দু-একটি বাক্য নির্মাণ ও পুনরাবৃত্তির ব্যাপারে নিন্দুকরা ময়নাতদন্ত শুরু করতে পারে। এজন্য এক নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে, কোনো সতর্ক সংকেত বা বিপদ সংকেত নয়।

হান্ড্রেড ফেসেস অব উইমেন বইটির বহুল প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।

+ posts

Read Previous

একজন মন্ত্রীর একদিন

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন- ৩য় সংখ্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *