প্রেমপত্রে অলৌকিক জিন
চেনা কেউ একজন প্রেমপত্র পোস্ট করেছিল কোনো
অচেনা পোস্ট অফিসে- বহুকাল আগে
বাতাসের ভেতর দিয়ে মহাশূন্যে পড়ে আছে- কেউ জানে না
সেই চিঠিতে অলৌকিক জিনের উপস্থিতি- বংশানুক্রমে,
আঘাত করেছিল রোগ-বালাইখ্যাত অশ্বারোহী মেঘ- প্রেমের
চিঠিটা সেই থেকে অসুস্থ হয়ে মহাকাশে
শুনেছি পত্রের খাঁজে খাঁজে দুঃখ দেই দেই ভাষার নিখুঁত
কারুকাজ- সময়ের মহাকালে ধরা আছে সমূহ উচ্চারণ;
আমাদের মেজাজ টপকে এই স্বতন্ত্রমনা জিবে আজকাল
রস নেই- প্রত্যেকটা উচ্চারণে তাই বেহুদা গুনগুন
আকাশে হাজিরা দিতে গিয়ে আটকে আছে আমার চিঠির পা
জখম হওয়া খুঁতখুঁতে ভাষারা কুড়ি বছর ব্যাপে কামড়ে ধরে
আছে বাতাসে- আমি অপেক্ষায় আছি আজও
ওখানে নেই কেউ- মধ্যবয়সী কঙ্কাবতী মেঘেরাও নেই
চিঠিটার বংশবিস্তার নেই, ভাষার বংশবিস্তার নেই- আটকে
থেকে কি আর বংশবিস্তার হয়? আমি অপেক্ষায় আছি আজও;
হে মহাকালের চিঠি, হে মহাকালের প্রেমপত্র- বাতাসের
হেল্প নিয়ে আসো- তোমাকে প্রজনন দিয়ে দেবো
কথায় কথায় গুঁজে দেবো হাজারও কথাফুল।
সাকি
বেড়াল মার্কা একটা শাদা মন
মিউমিউ করতে থাকা তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ
আগলে আছে আমাকে-
নির্ঘুম চোখে নিমজ্জিত সাকি-
আজও জখম হবো বলে তোমারই থাকি
কালান্তরে তুমি-ভীষণ উপচানো চোখ
চোখের লাটিমে আমাকে ঘোরাও
আমি লাটিম ঘূর্ণনে ঘুরি-
তবুও তুমি শাদা বেড়াল আমার
কীসব অখ্যাত বেড়াল আসে রাতে!
ডান হাতে কামড়ে দেয় গোপনে
আমিও জড়িয়ে ধরে থাকি-পাঁজরের পাশে;
নির্বিকার ঠোঁটে উঠেছে মর্মদন্ত কম্পন
বিস্ময়ের ভিড়ে কতক ভ্রমর কামড়ে দিচ্ছে গালে।
ভিনদেশি হাওয়া এবং একটি বটগাছ
বটগাছের ছায়ায় জড়ো হতে থাকে কর্পোরেট হাওয়া
অতঃপর নির্মল নিঃশ্বাস-অতঃপর অক্সিজেন
নিঃশ্বাসের ভেতর অক্সিজেন হাঁটে-অক্সিজেনের ভেতর
হাঁটে সুস্থতার প্লাবন। আমরা বাঁচি এই বটগাছের ছায়া খেয়ে
হাওয়াগুলো ভিনদেশি-হাঁটতে হাঁটতে এসে
এদেশের নাগরিক হলো একদিন। চুল উড়াতে
উড়াতে এসে বন্ধু হলো-মন খুলে কথা কই
বট গাছের ছায়া ঘিরে প্রাচীন ইতিহাস-এখানে
হৃদয় খুললে প্রেমে মজতে হয়-পাখিরা তাই হৃদয়
খুলে বসে থাকে। পথের ধারে সবুজের ব্রা খুলে
ডাকে ‘আয় আয়’-ভিনদেশি হাওয়ারা আসে
এই বটগাছটা জীবিত- মরে না। যাদুময়তায় ঘেরা
আগুন্তক হাওয়া এসে চুল এলিয়ে বসে পড়লো
আঁচলে ধরে আছে বৃষ্টি বিছানো লজ্জা
বটগাছটা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে- সাক্ষীগোপাল
হংসমিথুন থইথই
চারদিক রঙের বিভব-আলপথে ঘাস
চিকচিকে দানা দানা আকাশ
চলছি কাঁধে ব্যাগভর্তি ব্যাঙের আলোচনা নিয়ে-
থকথকে বর্ষার মেঘ-ছিরিছাদে বৃষ্টির লুন্ঠন
কেউ একজন জিজ্ঞেস করলে আমি
নিজেকে বর্ষা বলে পরিচয় দেই- আর তখনি
ছাতা মেলে ধরলে আমি ছাতাবন্দি হলাম-
কাঁধ থেকে আস্তে আস্তে নামে ব্যাঙের আলোচনাসমগ্র
এবার কথোপকথন-
এতদিন বৃষ্টি ছিল না বলে ব্যাঙ নাই মাঠে-পুকুর
পুসকিনিতে নেই তাদের সমূহ জলকেলি। বৃষ্টি থেমে
গেলে তল্লাট ছেড়ে আমিও ছন্নছাড়া মেঘ-রেশমি আলোয়
উড়ছি। বাগানে বাগানে ফুলকলিদের হংসমিথুন থইথই
চিল
অসুখ বিসুখে আছি বলে ডাক্তারি মতে কথা বলা মানা-
তুমিও সুযোগ বুঝে ডানা মেললে- তারপর ডানা উড়ায়ে
দুঃখ ছিটাতে ছিটাতে হয়ে গেলে হাওয়াচিল
ভালো থাকি বা না থাকি এমন প্রশ্নের ভয়ে ভেঙ্চিকাটা
চিলও আমার আকাশে আর ওড়ে না
যদি আমি চিনে ফেলি- এই চিল আমার’
এই চিলটা আমার চিরচেনা- যদি প্রশ্ন করি
‘আকাশ বদলাও কেন ঘনঘন’
এমন চিন্তা যে চিল করবে না- তাও জানি
কারণ, চিল ভবঘুরে পাখি- ঘর-সংসার নাই
তবুও আমি চিলের অপেক্ষায় থাকি- আকাশে
হেলান দিয়ে বসে থাকি-প্রেসারের বড়ি খাই
আর আকাশ থেকে একটু একটু মেঘ গিলি
ভালো লাগে এই ভেবে যে আমি এখনও বেঁচে আছি!