অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বীপ সরকার-এর গুচ্ছকবিতা

gucho kobita\dip.jpg

প্রেমপত্রে অলৌকিক জিন

চেনা কেউ একজন প্রেমপত্র পোস্ট করেছিল কোনো

অচেনা পোস্ট অফিসে- বহুকাল আগে

বাতাসের ভেতর দিয়ে মহাশূন্যে পড়ে আছে- কেউ জানে না

সেই চিঠিতে অলৌকিক জিনের উপস্থিতি- বংশানুক্রমে,

আঘাত করেছিল রোগ-বালাইখ্যাত অশ্বারোহী মেঘ- প্রেমের

চিঠিটা সেই থেকে অসুস্থ হয়ে মহাকাশে

শুনেছি পত্রের খাঁজে খাঁজে দুঃখ দেই দেই ভাষার নিখুঁত

কারুকাজ- সময়ের মহাকালে ধরা আছে সমূহ উচ্চারণ;

আমাদের মেজাজ টপকে এই স্বতন্ত্রমনা জিবে আজকাল

রস নেই- প্রত্যেকটা উচ্চারণে তাই বেহুদা গুনগুন

আকাশে হাজিরা দিতে গিয়ে আটকে আছে আমার চিঠির পা

জখম হওয়া খুঁতখুঁতে ভাষারা কুড়ি বছর ব্যাপে কামড়ে ধরে

আছে বাতাসে- আমি অপেক্ষায় আছি আজও

ওখানে নেই কেউ- মধ্যবয়সী কঙ্কাবতী মেঘেরাও নেই

চিঠিটার বংশবিস্তার নেই, ভাষার বংশবিস্তার নেই- আটকে

থেকে কি আর বংশবিস্তার হয়? আমি অপেক্ষায় আছি আজও;

হে মহাকালের চিঠি, হে মহাকালের প্রেমপত্র- বাতাসের

হেল্প নিয়ে আসো- তোমাকে প্রজনন দিয়ে দেবো

কথায় কথায় গুঁজে দেবো হাজারও কথাফুল।

সাকি

বেড়াল মার্কা একটা শাদা মন

মিউমিউ করতে থাকা তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ

আগলে আছে আমাকে-

নির্ঘুম চোখে নিমজ্জিত সাকি-

আজও জখম হবো বলে তোমারই থাকি

কালান্তরে তুমি-ভীষণ উপচানো চোখ

চোখের লাটিমে আমাকে ঘোরাও

আমি লাটিম ঘূর্ণনে ঘুরি-

তবুও তুমি শাদা বেড়াল আমার

কীসব অখ্যাত বেড়াল আসে রাতে!

ডান হাতে কামড়ে দেয় গোপনে

আমিও জড়িয়ে ধরে থাকি-পাঁজরের পাশে;

নির্বিকার ঠোঁটে উঠেছে মর্মদন্ত কম্পন

বিস্ময়ের ভিড়ে কতক ভ্রমর কামড়ে দিচ্ছে গালে।

ভিনদেশি হাওয়া এবং একটি বটগাছ

বটগাছের ছায়ায় জড়ো হতে থাকে কর্পোরেট হাওয়া

অতঃপর নির্মল নিঃশ্বাস-অতঃপর অক্সিজেন

নিঃশ্বাসের ভেতর অক্সিজেন হাঁটে-অক্সিজেনের ভেতর

হাঁটে সুস্থতার প্লাবন। আমরা বাঁচি এই বটগাছের ছায়া খেয়ে

হাওয়াগুলো ভিনদেশি-হাঁটতে হাঁটতে এসে

এদেশের নাগরিক হলো একদিন। চুল উড়াতে

উড়াতে এসে বন্ধু হলো-মন খুলে কথা কই

বট গাছের ছায়া ঘিরে প্রাচীন ইতিহাস-এখানে

হৃদয় খুললে প্রেমে মজতে হয়-পাখিরা তাই হৃদয়

খুলে বসে থাকে। পথের ধারে সবুজের ব্রা খুলে

ডাকে ‘আয় আয়’-ভিনদেশি হাওয়ারা আসে

এই বটগাছটা জীবিত- মরে না। যাদুময়তায় ঘেরা

আগুন্তক হাওয়া এসে চুল এলিয়ে বসে পড়লো

আঁচলে ধরে আছে বৃষ্টি বিছানো লজ্জা

বটগাছটা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে- সাক্ষীগোপাল

হংসমিথুন থইথই

চারদিক রঙের বিভব-আলপথে ঘাস

চিকচিকে দানা দানা আকাশ

চলছি কাঁধে ব্যাগভর্তি ব্যাঙের আলোচনা নিয়ে-

থকথকে বর্ষার মেঘ-ছিরিছাদে বৃষ্টির লুন্ঠন

কেউ একজন জিজ্ঞেস করলে আমি

নিজেকে বর্ষা বলে পরিচয় দেই- আর তখনি

ছাতা মেলে ধরলে আমি ছাতাবন্দি হলাম-

কাঁধ থেকে আস্তে আস্তে নামে ব্যাঙের আলোচনাসমগ্র

এবার কথোপকথন-

এতদিন বৃষ্টি ছিল না বলে ব্যাঙ নাই মাঠে-পুকুর

পুসকিনিতে নেই তাদের সমূহ জলকেলি। বৃষ্টি থেমে

গেলে তল্লাট ছেড়ে আমিও ছন্নছাড়া মেঘ-রেশমি আলোয়

উড়ছি। বাগানে বাগানে ফুলকলিদের হংসমিথুন থইথই

চিল

অসুখ বিসুখে আছি বলে ডাক্তারি মতে কথা বলা মানা-

তুমিও সুযোগ বুঝে ডানা মেললে- তারপর ডানা উড়ায়ে

দুঃখ ছিটাতে ছিটাতে হয়ে গেলে হাওয়াচিল

ভালো থাকি বা না থাকি এমন প্রশ্নের ভয়ে ভেঙ্চিকাটা

চিলও আমার আকাশে আর ওড়ে না

যদি আমি চিনে ফেলি- এই চিল আমার’

এই চিলটা আমার চিরচেনা- যদি প্রশ্ন করি

‘আকাশ বদলাও কেন ঘনঘন’

এমন চিন্তা যে চিল করবে না- তাও জানি

কারণ, চিল ভবঘুরে পাখি- ঘর-সংসার নাই

তবুও আমি চিলের অপেক্ষায় থাকি- আকাশে

হেলান দিয়ে বসে থাকি-প্রেসারের বড়ি খাই

আর আকাশ থেকে একটু একটু মেঘ গিলি

ভালো লাগে এই ভেবে যে আমি এখনও বেঁচে আছি!

 

+ posts

Read Previous

রীতা ইসলামের যুগল কবিতা

Read Next

শিকড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *