বেড়াল ও ইঁদুর
পরম আকুতির বেড়াল—
ইঁদুরের প্রতি কি যে লোভ তার!
গর্তের সমুখে ঢের ঢিবি— ইঁদুর যায় আসে
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি
থেতলে যাচ্ছে ইঁদুরের মুখ
খাবার নাই, পানি নাই, মালিক নাই
ইঁদুরটা লেজ নাড়িয়ে বেড়ায়
বেড়ালের লোভ পাহাড় সমান
বেড়াল ঢিবি টপকে যায়— ইঁদুর লুকোয়
ইঁদুর হাসে খিলখিল করে
আমি দেখছি চেয়ে চেয়ে—
বেড়ালটার দাঁত মেসওয়াক করা— চকচকে
এভাবে কিছু বেড়াল সমাজে আছে
চকচকে দাঁতাল, দিনে রাতে ইঁদুর খোঁজে
খেতে না পেরে ঢিবি টপকায়
সে হোক রাতে বা দিনে
ভবঘুরে
জীবন ও জীবিকার সন্ধানে কে না চলে— আমিও চলতে চাই
অথচ কর্ম নেই, হতাশার ভেতর কালা কালা মহিষ
ডান হাত বাম হাতকে চেনে না— বাম হাত ডান হাতকে
হাতের ভেতরকার মার্বেল ঘোরে না হাতের ভেতর
মার্বেলও কর্মহীনতা বুঝে ফেলেছে
আমার চোখের কাছে কার চশমা নতুন করে কিছুই আর দেখছে না
সেও জেনে ফেলেছে— আমি কর্মহীন, ভবঘুরে লোক
চশমাকে বলি— দ্যাখো দ্যাখো
হাতের মার্বেলকে বলি— ঘুরো ঘুরো
অথচ, কেউ শুনল না আমার বেদনা
আমার কর্ম নেই
আমার অর্থ নেই
আমার প্রেম নেই
আমার সখ্য নেই
কর্মহীন, ভবঘুরে লোক হলে কেউ চেনে না
হজম
পেট থেকে একটু দূরে— হা হয়ে থাকা মুখ
মুখের আলুথালু স্বভাব আর গেল না
যা দেই মুখে— হজম করে ফেলে সব
শুধু হজম করতে পারে না
প্রেমিকার নির্লজ্জ হাসি
পেট একটা দরিয়া—
দুমড়েমুচড়ে হজম করে সব
অথচ প্রেমিকার হাসি হজম করতে পারে না
শুধু চিবেয় আর চিবেয়
রাত মানেই মানুষ ভাবে ভয়
রাত মানেই মানুষ ভাবে ভয়
এ কারণেই আমি শরীরে সাহস মেখে রাতে হাঁটি
গ্রামের উঁচু সাঁকোতে যে ভয়ের গল্প শুনেছিলাম—
চারপাশে বাঁশঝাড়, শতায়ুর বটবৃক্ষ
ভূতেরা দাঁত কেলিয়ে ডালে ঝুলে থাকে মাঝ রাতে
আমিও একদা রাত বারোটায় মরি মরি হয়ে
বাড়ি ফিরেছিলাম
ভয়কে হাতের তালুতে রেখে
আর কানের পিঠে রেখেছিলাম সাহসের সাহসফুল— তবুও
অথচ, চোখে আমার তেমন কিছু পড়েনি
কথিত গল্প মনে পড়লে কেবল আঁতকে উঠেছিলাম, এই যা
প্রতিবেশি হাত ও পা
যে শরীরের প্রতিবেশি— হাত ও পা
তার কোনো ভয় নেই
চরম দূর্ভিক্ষেও নিকটের পেট
কিছু একটা পাবে
যে আত্মার মা নেই
যে চোখের মা নেই
আর যে মুখেরও—
তারা তো বড়ই বিপদগ্রস্ত প্রতিবেশি
সন্তানেরা সব সময় মা-মুখী
শরীরটা সব কিছুর মা
আঙুলগুলো তার বাধ্যগত সন্তান
আর চোখগুলো নিকটতম প্রতিবেশি