অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ৫, ২০২৪
২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর গুচ্ছকবিতা

হাওয়ার কারবারি

ডুবছি শীতনিদ্রায়। যেন আবাবিল পাখি। শূন্যতার গীতবাদ্য নিয়ে জেগে আছি গাছের কোটরে। এরপর যেতে পারি চাঁদের কেন্দ্রপথে। যেহেতু দুনিয়াবি বেহেশত উঠছে পূর্ণ হয়েছে, শ্বেত বরফের আস্তরণে। ভূমি উঠছে পূর্ণ হয়ে, জাফরান ফুলের রঙে। প্রতিশ্রুতি ছিল, এমন দিলে আমরা প্রজাপতির পাখায় উড়বো, সিরাজবাগের টিউলিপ বাগানে। রপ্ত করবো, ফুলের সঙ্গে মৌমাছির রসায়ন। সৃষ্টিলগ্নে ঈশ্বর প্রথম মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন পিতা আদম এবং তার পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেছিলেন মাতা হাওয়াকে।

আমিও মানুষের সন্তান। যিনি আমার পিতা, তিনি করেন হাওয়ায় কারবারি। মাতা জানেন, শস্যবীজের শুশ্রূষা। আমি ঘুমে বিভোর হয়ে তলিয়ে যাই মাটির গভীরে। পচনকালে, শরীরের মাংস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে সেক্রোপিয়া মথ। এমন দুঃস্বপ্নে, উপত্যাকার লিলি হাতে তোমার দিকে ছুটে যাই। সম্রাজ্ঞী আমার, গ্রহণ করো এ প্রেম। ঋণের দায়ে সবকিছু তুচ্ছ লাগে। মানুষ জীবন এক ভ্রান্তিবিলাস। পড়ে আছি নদীর তলদেশে।

সূর্যরশ্নি ভেদ করতে পারে না জলের তরঙ্গ। আমার দু-চোখের পাতায় নিকষ অন্ধকার। তোমাকে সন্ধান করতে গিয়ে এক বাঘিনীর চোয়ালে রেখেছি আলুথালু চুম্বন। সে মুগ্ধ হয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের ধাঁধায় ফেলেছে। এসো, তোমাকে আলিঙ্গন করি। চিবুকে রাখি আদর। তুমি আমার বিষাক্ত রডোডেনড্রন। পান করে ঢলে পড়ি, মৃত্যুর মহিমায়।

ব্রেইল পদ্ধতি

এইসব ভীতিপ্রদ রাত্রি, উথলে পড়ে তোমার বরণে। তুমি মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়া অচেনা সুরের মূর্ছনা। আমি হদিস করছি তোমার। মরুচারী মুসাফির অন্তর না বোঝে বালিয়াড়ির কম্পাঙ্ক! তোমাকে সুপেয় জলের নহর ভেবে আমি বারবার হবো পিপাসার খনি। আমাকে করিও তুষ্ট। জেগে আছি তিলাইয়া প্রজাপতির মতো শরীরে বারো হাজার চক্ষু নিয়ে। অথচ তোমাকে দেখার চোখ চিরকাল অন্ধ। যেন তুমি পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা।

আমার জ্যামিতিক মন, সম্বর হরিণের মতো তাকিয়ে থাকে নিচু ঘাসভূমির দিকে। এ ঋতু খাদ্যের ভরপুর মৌসুম। জটিল চক্রাকারে পরিবর্তিত হচ্ছে সবকিছু। বৃষ্টি বর্ষণের দিকে যাচ্ছে ফিরে বর্ষাঋতু। গাছেদের ভেতর সঞ্চার হচ্ছে প্রাণের। মৃত শাখা-প্রশাখায় উঁকি দিচ্ছে নতুন পাতা। বনের গভীরে একটি সবুজ ঠোঁট মালকোয়ায় জন্যে বিলাপ করছে তার সঙ্গিনী।

আমার অনন্ত বাসনা তুমি। বৈকালিক হ্রদ, বরফ খন্ডের ভূমিতে খালি পায়ে হাঁটি। লেজ নাড়াই। কেন যে হলাম লোনা পানির কুমিরের প্রতিবেশী, দুঃস্বপ্নে আলাদীনের প্রদীপের দৈত্যের মতো জাদুর রাজপ্রাসাদ হাতের তালুতে উঠিয়ে নিয়ে স্থাপন করেছি, পর্বতের শিখরে। তারপর থেকে ঘুম ও জাগরণে ঘুরছি, তেলেছমাতি দুনিয়ায়।

ধ্বংসপ্রাপ্ত হাড়ের প্রতিধ্বনি

ধ্বংসষজ্ঞের মতো বাসলে ভালো তুমি। চতুর্দিকে ওড়ে ভস্মীভূত ছাই। মস্তিষ্কের নিউরণে ভেঙে পড়ে হাড়ের শৃঙ্খল। মৌন পাথরের মতো ধারণ করি নদীর জল। লিখি, মায়াবী অর্কিডের বনে, এক গোলাপি ডলফিনের ডুব সাঁতারে ফেলে এসেছি মন। তারপর লবণাক্ত জলস্রোতে প্লাবিত হচ্ছি। জানি, শরীর এক ক্ষর্বাকৃতির বনসাই। শোভা পায় তোমার মেঝের বর্ধিতাংশে।

ময়ূর মাকড়সার মতো শরীরের উজ্জ্বল রঙে আকৃষ্ট করি স্ত্রী মাকড়সাটির মন। নেচে গেয়ে মুগ্ধ করি। যদিও তুমি এক অন্ধকূপ। আমি ডুবছি কৃষগহ্বরে। ষড়যন্ত্রের সব ফাঁদে দিয়ে রেখেছি পায়ের নখর। যখন তুমি উঠেছো হেসে, দুলে উঠেছে গ্রহের চাঁদ-তারকারাজি। মহাকম্পন শেষে সকল কিছু ধূলিসাৎ হবে। পড়ে থাকবে দেহের আসবাব। সেখানে ফুটবে পূর্ণবার ব্যালোরিনা অর্কিড।

আমাকে করিও ক্ষমা। জানি, নির্বোধের প্রেম আগ্রাসী দারুণ। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস। পরিচয়, এক গুপ্তধন শিকারী। তোমার খোলা চুলে বিলি কাটছে অন্তহীন। তোমার শরীর নদীর ঢেউ, স্পর্শ করেও ফিরিয়ে দিচ্ছি। পিপাসার্ত হৃদয় জানে, এ হৃদয় কেবল তন্ময় তোমার নামে। মায়াবিণী, নিকাব তুলে একবার দৃষ্টিপাত করো। নেভাও, এ আগুনের চুল্লি। প্রকাশিত হও কায়ায়। এক ঝলক দেখে গাঢ় অন্ধকারময় হবো। ঘুমিয়ে পড়বো সিন্দুকী কবরে।

মায়াবী হাড়ের প্রতিধ্বনি

এক মায়াবী সংগীতের দুনিয়ায় ফেলে এসেছি মন। যখন বৃষ্টিবনে সুমিষ্ট কন্ঠে গেয়ে উঠেছে গায়িকা আমার। স্মরণ এসে গেছে, ডাইফাইলিয়া গ্রায়ির বনে কে ফেলে গেলো বাম হাড়ের প্রতিধ্বনি! ডুবে যাই। যেন ধনেশ পাখি, যে ঠোঁটে তুলে নিয়ে এসেছে মৃত প্রাণীর হাড়। গ্রহণ করো। মুগ্ধতা ছড়াও। চাঁদের লেগে গেছে পূর্ণ গ্রহণ।

অন্ধকারে আমার দেহ, নেপচুন থেকে ইউরেনাস ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে। অশ্বারোহী ভেবো না। কোনকালে শিখিনি প্রাচীন জাদুবিশ্বাস। আদি মানব গোত্রে পশুপাল ও উদ্যান শস্য ক্ষেত্রে কেটেছে দিন-রজনী। গমের শীর্ষ বিন্দু হাতের রেখায় তুলে ধরেছি। যদি একবার শিখতে পারি প্রস্ফুটন! তোমার হৃদয়ে হবো পত্রলেখা। রাখি অনুনয়।

বিরহী চিলের মতো মেঘপুঞ্জের সাথে উড়তে থাকি। রপ্ত করি, প্রাণের ভাষা। নিরক্ষর আমি। মেঘের বাথান খুলে পাঠ করি, দূর্ভিক্ষপীড়িত লিপি। ভেবেছি, নিজেকে পুরুষ প্রতিমার মতো গড়বো বলে মেতেছি ভাঙনের নিবিড় ক্রীড়ায়। মাটির দেহাবয়বকে বলি, এ দেহ মাঝার নিয়ে ফিরতে চেয়েছি তোমাকে নিকটে। আমাকে দাফন করে দাও, তোমার বুকের গোরস্থানে।

অনন্ত ক্রোধের দিনে

তোমার অনন্ত ক্রোধের দিনে ভস্মীভূত হয়েছি। যদিও মোম মাথায় ধারণ করেছিল অগ্নিমুকুট। নিঃশেষিত হবে বলে। আমি উইভার পিপীলিকার দলে শ্রমিক হিসেবে নির্মাণ করছি পাতার বাসগৃহ। লাভা দিয়ে বুনছি পাতার শরীর। মুগ্ধ হও, কারুকার্যে। বুঝিনি, আবরাস প্রাক্টরিয়াসের বনে মৃত্যু লুকিয়ে ছিল। গতিপ্রাপ্ত হয়ে জড়িয়ে পড়েছি রক্তাক্ত সংঘাতে।

মাটির প্রতিমা তুমি, পুণ্যতার প্রতিবিম্ব। কখন রুপান্তরিত হলে জটিল গোলক ধাঁধায়। ফলশ্রুতিতে সবকিছু ধ্বংস হলো। আমাকে রাখলে কয়েদ বিষধর সাপের পিঞ্জিরায়। যেন অরণ্যের প্রতি কঠোর দাবানল। আমার নৈসর্গিক কাব্যভাষা তুমি! পাহাড়ে ঘেরা সমতল ভূমি। পড়ে আছে, সুইচোরা পাখির পালক। আমার হৃদয়ে জখমের রাত। জড় পদার্থ তুমি, কি বুঝে হানলে বিষের তীর।

সাগরপরিরা কি জানতো, শরীর স্টিক্স নদীতে সম্পূর্ণ ডোবাতে পারেনি একিলিস। মাতা থেটিস, কেনো জেগেছিল পায়ের গোড়ালি। বীরযোদ্ধা একিলিস, তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী হতে পারনি। আমি সামান্য এক অক্ষরযোজক। করি প্রিয়তমার গুণকীর্তন। যখন ঝড়ো বাতাস আছড়ে পড়েছিল তোমার খোঁপার গাজরায়। তখন আমি গভীর সমুদ্রে, উপকূলের উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দিচ্ছিলাম বিপদ সংকেত।

 

+ posts

Read Previous

রীতা ইসলামের যুগল কবিতা

Read Next

শিকড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *