সঙ্গম
পূরবীরা ভুলে গেছে সঙ্গম
কে যায় উলঙ্গ পথে হেঁটে; আমি কি জানি গন্তব্য তাহার?
সুদর্শনা, উড়ন্ত শকুন ক্ষুধার্ত হয়; জানো না
পৃথিবীর এ আকালে শুধু আমারই পুড়েছে ঘর
প্রেয়সী হয়েছে পর; তবুও বেঁচে থাকতে হয় শতাব্দীর এই অন্ধকারে
এখনও অন্ধকার? আলো কি নেই পাশে? এতদিন কি
জেনেছি
পোড়া সূর্যই কি শুধু তাতে? ভালো নেই পূরবীরা; অন্ধকারে আছে
চাল নেই, চুলো নেই, সিঁদুর গোলা জলে তবুও কামুক পুরুষেরা আসে
মাতালের মতো ওরা জলেই সঙ্গম সারে
সুদর্শনা, কত মানুষ আসে; চলেও যায় নীরবে
আমি কি দেখিনি মানুষের পর মানুষ হেঁটে যাচ্ছে পথে
কি রেখে যায়? ভবিষ্যৎ কি তা জানে?
আমি তো জানি এ উন্মাদের দেশে একদিন ওই সূর্যই খসে পড়বে জমিনে
সেদিন দেখিও
আগুন আর জলে সঙ্গম হবে দু’জনে!
বহুদিন পর এলাম
বহুদিন পর এলাম
চিনে যদি থাকো ভীরু পায়ে কপাল কুণ্ডলার মতো কাছে আসিও
অভিমানী বাতাস হু হু করে কেঁদে ওঠে যদি আবার
মনে করিও জন্ম-জন্মান্তরের মতো আমিও ছিলাম তোমার
ভুলে যদি থাকি ভুলে গেছি কোভিড-নাইনটিন মহামারী
একাত্তর কি ভুলতে পারি?
আমি যে ছিলাম রক্ত জবার, আর্য-অনার্য সহোদরার
ভুলতে কি পারি একবিংশ শতাব্দীর দাঙ্গা-হাঙ্গামার কাহিনি?
পোড়া বসনে এখনও যে আঁকড়ে ধরে আছে মাটি
কি করে ভুলে যাই বলো
সেও যে ছিল তোমারই মতো আমারই সহযোদ্ধা, মরণ-পণের একনিষ্ঠ সাথী
বহুদিন পর এলাম
চিনে যদি থাকো, আসিও; হইও হুঙ্কারিত নদী!
আমিও বর্ম খুলে প্রেমিক হতে পারি
প্রেমে প্রেমে গোধূলিলগ্ন আসন্ন হলে
আমিও বর্ম খুলে প্রেমিক হতে পারি
তুমি কি গিয়েছ ভুলে
জলবিনে কেন অশ্রুরহিত করে আমার এ ভাগীরথী নদী?
যত দূরেই যাই; কাছে ডাকে মাটি
তুমিও কি তাই?
আমি তো ভেবেছি সবই মেকি; প্রেম বলে কিছু নাই
সহৃদয় বলে যখনই ডেকেছ কাছে
আসিয়াছি যোদ্ধার বেশে
শুধু জননীর মতো বলিও একবার ‘ভালোবাসি’
বিদায় সম্ভাষণে!
ফিরে যদি আসি
মৃত্যুর কোলাহল থেকে যদি আসি ফিরে
মনে রেখো
এই নবান্নের দেশে আমিও ছিলাম ‘যুদ্ধংদেহি’ বেশে
কতজন পালিয়েছে ভয়ে, নপুংসক তো তাদেরই বলে
সগোত্রীয় নিধনে যারা আশ্রয় খুঁজেছে শত্রুর পতাকাতলে
আমি কি জানতাম
যুদ্ধোত্তর দেশে খুনিই পতাকা উঁচিয়ে ধরে
মা-মাটি-মানুষের দেশ বলে জেনেছি এতকাল যারে
সেও দেখি দাঁড়িয়ে আছে নির্বাক হয়ে বীরাঙ্গনা বেশে
মৃত্যুর কোলাহল থেকে যদি আসি ফিরে
মনে রেখো, আমিও…
মুক্তির বারতায় তর্জনী উঁচিয়ে ধরবো বঙ্গবন্ধুর মতো করে!
দিন যায় বিরহ কাতরে
দিন যায় বিরহ কাতরে
ঝড়ঝঞ্ঝার রাত্রি, কেন যাবে?
‘ক্ষতি যদি হয়; হবে!’
এই কথা বলেই বসিল সে ধ্যানমগ্ন হয়ে
মুখটিপে হেসে ইশারায় দেয় জানিয়ে…
‘আগুন যদি জ্বলে বিরহ কাতরে
ভুলিবে কী করে হরহামেশার এই চুম্বনে’
ভেঙেছে পাড় নদী
তাতে কি ক্ষতি?
নদী যদি হয় কালবৈশাখে বসন্ত যামিনী
তবে কেন ভয় ওহে অগ্নিহোত্রী বাসন্তী রজনী
জ্বলে যদি জ্বলে যাক আমার এই নশ্বর পৃথিবী!