নস্টালজিয়া
নিরুদ্দেশ হতে হতে শাদা ফেনায় এঁকেছি
মানুষের ঘর্মাক্ত ললাটের জলছবি। তন্দ্রার ছলে,
আন্দুলিসিয়ার প্রান্তে ফেলে এসেছি
শাদা বাজপাখির ডানা, মৃত ঘোড়ার খুর-
বিপন্ন বসন্ত বিকেল,
আর সাঁওতাল মেয়ের শস্য বিলাস।
নক্ষত্রের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
গাঙচিলের ডানায় উড়ে প্রাগৈতিহাসিক ভোর
নৈঃশব্দ্য অন্ধকারে
মাতৃ-জরায়ুতে জমাট বাঁধে
আগামীর স্পর্ধা…
আহা! বেদুইন, শূন্য উদ্যানে আজও খিলখিলিয়ে ওঠে
নাবালিকা জৈবিক পারদসন্ধ্যা।
রোড কুমিল্লা টু ত্রিপুরা
মানুষ মরে যাচ্ছে হিংসার কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে লোভের কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে ভালোবাসাহীন পৃথিবীর কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে…
মানুষ মরে যাচ্ছে; মানুষের কাছে!!!
মানুষ মরে যাচ্ছে ক্ষুধার কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে যুদ্ধের কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে মমতার কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে…
মানুষ মরে যাচ্ছে; মানুষের কাছে!!!
মানুষ মরে যাচ্ছে দুঃখের কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে মিথ্যার কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে ঘৃণার কাছে
মানুষ মরে যাচ্ছে…
মানুষ মরে যাচ্ছে; মানুষের কাছে!!!
নোঙর
(“জললিপি বোঝ না তুমি নোনতা জলের ব্যাকরণ”)
তোমার আত্মহননের পাণ্ডুলিপি এইমাত্র শেষ করে ঘরে ফেরার কথা ভাবতেই দেখি, ঈশ্বরিণীর শাড়ির আঁচলে বাঁধা কিশোরী সন্ধ্যা। চুরুটের গন্ধে মাতাল তখন মেথর সর্দারের উঠোন, আত্মস্থ করতে থাকি নগরের অন্ধগলির মাংশাসি প্রলোভন। নিষিদ্ধ গন্ধমের জল-পিপাসায় কাতর যমজ স্তন।। কৃষ্ণাঙ্গ ঠোঁটে, মায়ার কলতান…
দূরগাঙে পড়ে রয়
মাঝির হাহাকার,
ছেঁড়া ‘মাস্তুল’
আর
লোনাজলের শীৎকার।।
পরম্পরা
.
বেয়ারা স্বপ্নের শরীর বেয়ে ঝরেপড়ে ‘মানচিত্র’, রক্তের ছোপ ছোপ দাগ- লাল মোরগের কণ্ঠে প্রলম্বিত ভোরের আর্তনাদ। পৃথিবীর বয়স ক্রমশ বাড়ছে। সভ্যতার অটোবায়োগ্রাফি হাতে সারি সারি নর-নারী হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে তাম্রবর্ণ জনপদ পিছু ফেলে। সাইবেরীয় মেঘবালিকার গতর জুড়ে দুর্ভিক্ষের ক্যানভাস। ক্ষুর্ধাত শালিকের পাখনায় উদ্বাস্তু দিনলিপি। কোন এক অদৃষ্টের মোহে অনন্তকাল এ যাত্রা…। পৃথিবীর আয়ুষ্কাল ধীরে ধীরে বাড়ছে…। ঘোরের পোস্টার জুড়ে মৃত্যু উপতক্যায় নিঃশব্দ্য আলাপন; ফিসফিসিয়ে কে যেন হাসছে…
.
সারি সারি চোখ নক্ষত্ররাজি হয়ে দুলছে, কচি বিষণ্ন মুখে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে-
বুবু আর কত দূর?
জানি না… ( স্বগতোক্তি)
‘হয়তো আগামীর স্বল্পতম সময়ের বাঁকে
. কিংবা
পূর্বপুরুষের মতো হারিয়ে ফেলবো আয়ুগুলো
উত্তর প্রজন্মের ললাটে’।।
কলম্বাস কিংবা সোয়ারি
…………………
ক্ষতের মতো অভিমানগুলো নিয়ে জেগে আছি।। দৃষ্টিসীমানায় কি দারুণভাবে খুলে পড়ে বিশ্বাসের পলেস্তারাদি…
প্লাবিত জোছনার ঘ্রাণে সেদিন তুমি খিলখিলিয়ে বললে, জানো! জানো!! আমি রানি ইসাবেলাকে স্বপ্নে দেখেছি, অমনি ভয় পেয়ে আমার শ্যামলা মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণের প্রজাপতি হয়ে উঠলো,
তুমি বেশ অবাকই হয়ে ছিলে, বললে, এ আর এমনকি? মানুষ স্বপ্নে কত কি দেখে…
আমি কিন্তু সেদিন ঠিকই এক লুণ্ঠনকারী কলম্বাস সোয়ারিকে মস্তিষ্কের ভিতর দৌড়াইতে দেখেছি…
ফটোগ্রাফার
ভূগোল জন্মরহস্যে আস্তাবল থেকে বেরিয়ে পড়েছে ‘কালো’ ঘোড়াটি।। সহস্র-কোটি আলোকবর্ষ দূরে গোপন অন্ধকারে ধ্যানমগ্ন কোনো এক শৌখিন পূজারী, পাশের জঙ্গলে বৃক্ষরাজির প্রার্থনার ক্যানভাসে কোরাস করে মৃত বালিকার লাশের কৈশোরিক চপলতা।
গন্ধবণিকের সাথে কফিতে চুমুক দেয় ছদ্মবেশধারী হত্যাকারী ফটোগ্রাফার।।
দিগন্তে ভেসে বেড়ায় ধূলিঝড়ের দুরন্তপনা।। আহারে… কৃষ্ণ-ঘোড়া!!
নক্ষত্র- যোজনপথ এখনও বাকি;
অথচ
তোর খুরে রাজ্যের ক্লান্তি…
২ Comments
দুঃসাহসিক ও দুর্দান্ত সব কবিতা। গতানুগতিক থেকে ভিন্ন। এ প্রকার কবিতা প্রকাশ করে পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অনুপ্রাণনকে ধন্যবাদ। কবি সুমন সৈকতের জন্য নিরন্তর শুভকামনা। 💚
ভিন্নধারার কবিতা পড়তে হলে প্রতিটা শব্দচয়নে মনোনিবেশ আবশ্যক।