একটি সুমেরীয় পাখি
একটি সুমেরীয় পাখি উড়ে যাচ্ছে প্রাচীন ব্যাবিলনের জানালায়
সেখানে উত্তপ্ত বালুতে প্রহর মাখছেন কয়েকটি উট,
কয়েকজন হামীয় জাতির রাখাল ভেড়াপালের পেছনে দৌড়াচ্ছেন
পাখিটি পিরামিডের সমাধিস্থলে পৌঁছলো
সেখানে নিস্তব্ধ ইতিহাস থেকে শুনশান কম্পিত কণ্ঠে চলে
ফেরাউন আত্মার সংগীত-
এসো নীলনদ প্রাণের ভেতরে এসো
সবুজ ঘাস ও ঘাসফুলেরা তীব্র বাতাসে আকাশ ছুঁতে চাইছে
কয়েকটি জাহাজ পাল তুলে নীলনদ ছেড়ে
সুয়েজ খালের দিকে এগোচ্ছে
নীলনদের কোলঘেঁষে প্রজাপতিদের নাচন
খেজুরের কোমল দেহ কামড়ে খাচ্ছে পথিক
মেসোপটেমিয়ার বালুময় পাহাড় থেকে শোনা যাচ্ছে
আরব বসন্তের গান।
ওহে মিশর তুমি তপ্ত বালুকণায় ফুটে ওঠা ইতিহাসের মাতা
তোমাকে ঘিরে ভারতীয় বেদে দল পাহাড়ি সাপের নাচন দেখাচ্ছে
নুবীয় জাতির কয়েকটা ছেলে হাতে তালি দিচ্ছে
আর মিশরীয় কবিগণ যুদ্ধবিরতি দিয়ে
নীলনদের পাশে বসে ফুল আর পাখিদের রঙ মাখছে।
অসংখ্য সংখ্যার ভিড়
চোখ কঁচলে দেখি অ্যালার্জিক শৈত্যসন্ধ্যা
ও কফিমগের দুর্দান্ত ফেনা আমাকে
এক ঝাঁঝালো গলির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে
সেখানে অসংখ্য সংখ্যার ভিড়
রাতযাপনের উল্লাসে নগ্ননৃত্য করছে।
সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন হলে
সমগ্র পৃথিবী কত টন
এই হিসাব কষছে কাঁচা ম্যাথমেটিশিয়ান।
বাংলা থেকে বিশ্ব, বিশ্ব থেকে মহাবিশ্বে যেতেই
সেখানে অসংখ্য সংখ্যার ভিড়
গাণিতিক হিসাবকে আরও জটিল করে তুলছে।
চোখ সৌন্দর্য চায় তাই লালা খালে
লাল লাল পদ্মের ফুটন্ত লৈঙ্গিক বিকাশে
মাথার ভেতরে রঙ যন্ত্রণার উদয় হয়
মুঠো ভরে আনি রঙের পরাগ
এক হতে অসংখ্য, এভাবে অসংখ্য সংখ্যারা
জড়ো হয় চেতনায়।
তুমি ভূমি চাও, যতদূর চোখ যায় সব তোমার
এক শতক, দুই শতক, সহস্র শতক
গুনতে গুনতে তুমি ক্ষান্ত হও
তিন ও আধুলির কৌশলগত বিরতিতে।
তুমি অনন্তের পথে হাঁটতে থাকো।
এক কদম, দুই কদম, তিন কদম
এভাবে অসংখ্য সংখ্যার ভিড়ে
তোমার পদচ্ছাপ ক্রমশ মুছতে থাকে।
প্রতিলিপি
পিতার প্রতিলিপি আজীবন আঁকে সন্তান
তার হাঁটাচলা, অদ্ভুত কথা বলা সবকিছু
এঁকে নেয় অবচেতনে।
মায়ের প্রতিলিপি আঁকে প্রকৃতি
আঁকে ফুল ফল, পরাগ রেণু।
বাতাসের প্রতিলিপি যেমন এঁকে নেয় নিঃশ্বাস
ভালোবাসার প্রতিলিপি আঁকে যেমন বিশ্বাস।
সময়ের প্রতিলিপি ঘড়ি
আর বেঁচে থাকার প্রতিলিপি আঁকে স্বপ্ন।
আমার প্রতিলিপি এঁকে নাও তোমার চোখে
তোমার চোখে দেখুক আমায় পৃথিবী।
গন্দম
এখন আর গন্দম ফল খাই না,
নিজেই গন্দম ফলের চাষ করি।
দেবরাজ্যে আমার গন্দম ফলের ব্যাপক সুনাম
পৃথিবীতে দেবদূতের আগমন ঘটে
প্রতি সন্ধ্যায় আমার গন্দম বাগিচা থেকে
তারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় তান্ত্রিক মাদকতা
আর দেবরাজ্যে বুদ হয়ে একে একে সব
দেবতা ঘুমিয়ে পড়ে, যমদূত ভুলে যায়
আত্মা শিকারের কৌশল
কতিপয় আমরা তখন
গন্দম চাষের ব্যবসায়িক সাফল্য শেষে
জীবনের উৎকর্ষতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
ছায়া
আমি আমার ছায়া হারিয়েছি
উদ্ভ্রান্ত বিকেলের আলোয়,
যেখানে হাঁসছানা ও শুকরপাল
একই কাদায়, একই জলে
গড়াগড়ি করতে করতে ঠোঁটের অগ্রভাগে
শূন্যতাকে এঁকে ফেলে।
ইস্পাত শরীর থেকে বুনো ঘামের ঘ্রাণ
লুটোপুটি খাচ্ছে তিমির বিচ্ছিন্ন পথে,
এসো মিসিসিপি মিশৌরী খড়িমাটি লও
লেখো ছায়াশোকের পদ্য।
কালের পেছনে লেগে আছে মহাকাল
ঘরের পেছনে দাঁড়িয়েছে বিশ্বঘর
রাতের পেছনে দাঁড়ায়ে আখেরাত
ইশক ও মহব্বতের হিসাব কিতাব শেষে
আমি কেবল দিগ্বিদিক আমার ছায়া খুঁজে ফিরি।