অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৭, ২০২৪
১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৭, ২০২৪
১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাহিদ সিরাজ -
কলঙ্কিনী রাধা— তৃতীয় পর্ব

সম্পূর্ণ রচনার সূচিপত্র

অধ্যায়-১
পটভূমি
—যেখানে জীবনের যাত্রা
—গল্প সংকলন থেকে গবেষণা
—অধ্যায়গুলোর আগের কথা
—একটি অর্থহীন উত্থান হবে না তো (!)

অধ্যায়-২
জন্মই আমার আজন্ম পাপ
—ভূমিকা
—পেছনের কথা
—নীরবতা
—প্রসারিত হলো না কারও দু’হাত
—পছন্দের সীমাবদ্ধতা
—নির্যাতন
—সাংস্কৃতিক সামাজিক বিষয়াদি
—পেশাজীবীদের অভিজ্ঞতা
—অপর্যাপ্ত পরামর্শ বা কাউন্সিলিং
—বিশেষ প্রক্রিয়াটি
—গর্ভপাত পরবর্তী সময়
—ফিরে দেখা সমাজ আবার

অধ্যায়-৩
—গল্পের মরালিটি ও গবেষণায় নৈতিকতা
—পেছনের কথা
—গর্ভপাত সংক্রান্ত নৈতিক প্রশ্নগুলো
—নৈতিকতার সীমানা নারীবাদী মতামত ও বাংলাদেশ
—প্রাচীন দর্শন ও গর্ভপাত প্রাচীন দর্শন ও গর্ভপাত নৈতিকতা কি ধর্মীয় রীতিভিত্তিক খ্রিস্টান, ইসলাম, হিন্দু
—সুতরাং এথিকস কি সাবজেক্টিভ, বৈশ্বিক নাকি আপেক্ষিক?
—গবেষণায় নৈতিকতা ফোকাস ও উদ্দেশ্য
—ফলাফল— প্রয়োজনীয়তা
—গল্পগুলো সংগ্রহের কথা ও সেগুলোর ব্যবস্থাপনা : এথিকসের আলোকে
—গল্প সংগ্রহে ঝুঁকি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা
—নৃবৈজ্ঞানিক নৈতিক নির্দেশনা তথ্য উন্মোচনে, বলায়
—গল্প সংগ্রাহকদের ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা
—তথ্য মালিকানা ও প্রকাশ ও CDA’র নির্দেশনা

—উপসংহার : CDA’র বিড়ালটা বেড়ায় বসে থাকে

অধ্যায়-৪
কলঙ্কিনী রাধা
—চিরস্থির দৃশ্যপট (?)
—কলঙ্কের সূত্রগুলো কে বানাল
গর্ভপাত ও চারপাশের দেশ
—গর্ভপাত ও নারীদের ধারণা
—গর্ভপাত কলক আর সামাজিক ভাষা
—তিসকোর্য চিন্তাভাবনা সমাজ তেমুখের মডেল
—কাজ ও টেক্সটভিত্তিক মডেল; সামাজিক ইন্টারএকশনের মাঝে টেক্সট বা মায়েদের গল্পগুলো
দেখার পদ্ধতি
—একটি তুলনামূলক আলোকপাত
—প্রতিবাদ হিসেবে লেখা
—ক্যাথারসিস, অভিজ্ঞতার সম্মিলন
—কলঙ্কিনী রাধা : মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়েশা আক্তার

অধ্যায়-৫

—মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহের গর্ভপাত আইন : একটি ইসলামিক ডিসকোর্স বিশ্লেষণ ও নীতিপ্রণয়ন সম্ভাবনা

—আলোচনার সূত্রপাত
—মৌলিক উৎস কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা
—বিবেচ্য অন্য বিষয়সমূহ
—সুফিবাদ ও বৃহত্তর ইসলামি নীতি
—সুবিধাভোগী মহল ও আবারও নারীবাদ
—বহুজাতিক ইসলামি সংস্থা/ ডোনার
—মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে গর্ভপাত আইনের বহুমাত্রিকতা
—নীতি প্রণয়নের জন্য সুপারিশ
—উপসংহার নয় মোটেই

অধ্যায় ৬
—আমি কুলহারা কলঙ্কিনী
—যাদের কথা এই বইয়ের রসদ
—মাহজাবিন : তুই তো বিপদজনক এক উত্তরাধিকারী শুধু
—জেনিফার : আমার আত্মার আত্মীয়টা কই
—চামেলী : কোথায় লুকাল নাছোড় যন্ত্রণা
—দাসিরা : আমি আর কত বড় হলে
—রায়না : আমার পালিত যন্ত্রণার খাঁচা

অধ্যায়-৭
—অদৃশ্য পালকের সম্ভার
—ব্যাখ্যার বদলে রাজপথের সোগান
—গবেষণার আয়নার আমার মুখচ্ছবি
—উন্মোচিত হোক শোকের মোড়ক
—CDA’র বিড়ালটা আর আমাদের দেখার জমিন
—আনওয়ান্টেড ‘গর্ভ’ বনাম আনওয়ান্টেড ‘গর্ভপাত’
—সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চাপের স্বীকৃতি
—বিস্রস্ত বর্ণে অজ্ঞাত বিষয়
—প্রদোষের আলোয় কিছু দ্রষ্টব্য
—পরিশিষ্ট

 

নোট

১. ৭টি অধ্যায়ে লিখিত প্রবন্ধ গ্রন্থটির, অধ্যায়-১ ও অধ্যায়-২ ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে সঙ্কলিত করা হয়েছে।
https://magazine.anupranon.com/ধারাবাহিক-প্রবন্ধ/কলঙ্কিনী-রাধা-প্রথম-পর্ব/

২. ৭টি অধ্যায়ে লিখিত প্রবন্ধ গ্রন্থটির, অধ্যায়-৩ ও অধ্যায়-৪, ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্কলিত করা হয়েছে।
https://magazine.anupranon.com/ধারাবাহিক-প্রবন্ধ/কলঙ্কিনী-রাধা-দ্বিতীয়-পর/

৩. ৭টি অধ্যায়ে লিখিত প্রবন্ধ গ্রন্থটির, অধ্যায়-৫, ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্বে সঙ্কলিত করা হয়েছে।

কলঙ্কিনী রাধা Stigtamizaed Girl— তৃতীয় পর্ব

মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহের গর্ভপাত আইন : একটি ইসলামিক ডিসকোর্স বিশ্লেষণ ও নীতিপ্রণয়ন সম্ভাবনা

—আলোচনার সূত্রপাত

—মৌলিক উৎস কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা

—বিবেচ্য অন্যান্য বিষয়

—সুফিবাদ ও বৃহত্তর ইসলামি নীতি

—সুবিধাভোগী মহল ও আবারও নারীবাদ

—বহুজাতিক ইসলামি সংস্থা/ ডোনার

—মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে গর্ভপাত আইনের বহুমাত্রিকতা

—নীতি প্রণয়নের জন্য সুপারিশ

—উপসংহার নয় মোটেই

 

মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহের গর্ভপাত আইন : একটি ইসলামি ডিসকোর্স বিশ্লেষণ

এবং নীতিপ্রণয়ন সম্ভাবনা

ডিসকার্সিভ এলিমেন্টস, যা কিনা মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে নীতি নির্ধারণে সমর্থন জোগায় এবং গর্ভপাতবিষয়ক অনাগত গবেষণার কাজকে সমৃদ্ধ করে— সে সকল বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে অত্যন্ত সাধারণ মানের গর্ভপাত আইন পাওয়া যেতে পারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহের একটি বিশেষ ইসলামিক শরিয়া পর্ষদ কর্তৃক প্রদত্ত সাধারণ মানের ব্যাখ্যা প্রধানের মাধ্যমে, যখন নির্দ্বিধায় গর্ভপাতের বিরোধিতা করা হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাখ্যাদানকারী তাৎপর্যপূর্ণ ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করা হলেও তা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে সমাদৃত হয় না।

আলোচনার সূত্রপাত

একজন রোগীর বায়ো-এথিকাল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ধর্ম এবং দেশের প্রচলিত গর্ভপাত পলিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।১২৬ গর্ভপাত বা আরবি শব্দ ইজহাদ হলো অনাকাঙ্ক্ষিত ভ্রূণ পরিপুষ্ট অর্থাৎ ইউট্রাসের মধ্যে অতিরিক্ত বা স্বাধীন জীবন লাভ করার পূর্বেই নিরোধ করা।

যদিও প্রবর্তিত গর্ভপাত প্রক্রিয়া খুবই উন্নত এবং নিরাপদ মেডিকেল প্রক্রিয়া তবুও ব্যাপক সংখ্যক গর্ভপাত অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ।১২৭ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা১২৮-এর মতে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত হলো অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন গর্ভপাত প্রক্রিয়া যেখানে ন্যূনতম মেডিকেল স্ট্যান্ডার্ড বজায়ে রাখা হয় না। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১৯ থেকে ২২ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত হয়ে থাকে যার বেশির ভাগই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হয়ে থাকে।১২৯ এই অনিরাপদ গর্ভপাতের পরিণাম বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাতৃমৃত্যু।

ডব্লিউএইচও ২০১১। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত প্রায় ৪৭০০০ নারী মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। রোয়েমার১৩০ এর লেখায় উল্লেখ করেন, গর্ভপাতজনিত জটিলতা, নারী মৃত্যু ও বিকলঙ্গতার ক্ষেত্রে অপরাধমূলক গর্ভপাত অবশ্যই এই হিসাবের আওতায় আসবে। একইভাবে লক্ষাধিক নারী যারা কিনা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতের পরেও বেঁচে থাকে তারা স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তারা যে সকল শারীরিক সমস্যা জীবনব্যাপী ভোগ করে তার মধ্যে রয়েছে সেপিস, ইনফেকশন, হেমোরেজ১৩১।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মাতৃমৃত্যুর হার ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত ছিল সবচেয়ে বড় ধরনের উদ্যোগ ১৩২ যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহকে বলা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত ও মাতৃ মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার উন্মেষ ঘটান।১৩৩ বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে

এনে প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়ন মিলিনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারিত আটটি লক্ষ্যের একটি।

এমডিজি মূলত এই লক্ষ্যমাত্রা তিন কোয়ার্টারের মধ্যে কমিয়ে এনে প্রজনন স্বাস্থ্যে বৈশ্বিক অভিগম্যতা নিশ্চিত করা।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গর্ভপাত অধিকার সংরক্ষণ এবং বিষয়টি আইনের সাথে সন্নিবেশিত করা আবশ্যক। গর্ভপাত নীতিমালার উদারীকরণ গর্ভপাতজনিত মৃত্যুর প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক ধস।১৩৪

উদাহরণস্বরূপ বেরার১৩৫ একশ ষাটটি দেশের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন এবং লক্ষ করেছেন, যেসকল দেশের প্রচলিত আইনে গর্ভপাতের অনুমোদন দেয় সে সকল দেশে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতজনিত কারণে মাতৃমৃত্যুর হার আইন দ্বারা স্বীকৃত নয় এমন দেশের চেয়ে কম।

সিং ও রত্নাম এর ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে যে সকল দেশে গর্ভপাত সাধারণভাবে সুপরিচিত এবং একটি সাধারণ ব্যাপার সে সকল দেশে বাস্তবিক অর্থে মাতৃমৃত্যু নেই বললেই চলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জিওকেস১৩৬ এট অল লক্ষ করেন যে দক্ষিণ অফ্রিকায় গর্ভপাত আইন উদারীকরণ করার পরে গর্ভপাতজনিত কারণে ইনফেকশনের হার ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ঠিক একইভাবে ডিএফআইডি১৩৭ মতে রোমানিয়ায় মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে গর্ভপাত আইনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আইন ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত থেকে মহিলাদের রক্ষা করতে পারে। ১৯৬৬ সালে রোমানিয়ায় গর্ভপাত প্রতিবন্ধক আইন পাস হয়। এরপর থেকে রোমানিয়ায় মাতৃমৃত্যুর অনুপাতের নাটকীয় উত্থান, ১৯৬৪ সালে প্রতি লাখে প্রায় ৪০ জন মা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতজনিত কারণে মারা যায় এবং ১৯৮৮ সালে এই অনুপাত বেড়ে ১৪০-এ পৌঁছে। ১৯৮৯ সালে এই প্রতিবন্ধক আইন উঠিয়ে নেওয়া হলে মাতৃমৃত্যুর হার কমে প্রতি লাখে ৪০ জনে এসে পৌঁছে। মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে এই হ্রাস অবশ্যই গর্ভপাতজনিত কারণে মায়ের মৃত্যুহার কমে আসার একটি ফল।

এই প্রাপ্ত ফলাফল গর্ভপাতকে আইনের সাথে সন্নিবেশন করা এবং উদারীকরণ বিষয়ক একটি জরুরি জনস্বাস্থ্য বিতর্কের জন্ম দেয় বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতের কারণে মাতৃমৃত্যু খুবই সাধারণ ঘটনা। সে জন্যই গবেষকরা গর্ভপাত-নিষিদ্ধ আইন দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা ধর্মকেন্দ্রিক গর্ভপাত নিরীক্ষা একটি ধর্ম নিরপেক্ষ বায়োএথিক্যাল অবস্থানের উপর আলোকপাত করে থাকে যখন গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান একটি গবেষণাধীন বিষয়।১৩৮ যদিও ইসলামিক বায়োএথিক ১৯৬০ সালে সূচনা হয় কিন্তু এই ক্ষেত্রে হাতেগোনা কয়েকটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যদিও এই ক্ষেত্রে ইসলামি বিজ্ঞজনের গুরুত্বপূর্ণ এই বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

স্বল্প সংখ্যক গবেষণা যা মুসলিম বায়ো এথিকসের উপর সূক্ষ্ম ও সার্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করে তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য, কারণ মুসলমানরা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৩.৪ শতাংশ দখল করেও আছে। ১.৬ বিলিয়ন, ২০১০ এবং ধারণা করা হয়, পরবর্তী দুই দশকে মুসলমান জনসংখ্যার হার অমুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।১৩৯

এছাড়াও মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে গর্ভপাতবিরোধী আইন বিদ্যমান এবং এই আইনসমূহ কষ্টদায়ক ও শাস্তিদায়ক।১৪০ মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত খুবই সাধারণ ব্যাপার এবং কোনো কোনো পরিস্থিতিতে মারাত্মক হয়ে থাকে।১৪১ এ ছাড়াও মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বল্প মাত্রায় থাকে।১৪২

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাজ্জাক১৪৩ লক্ষ করেছেন যে মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে মাতৃমৃত্যুর হার দ্বিগুণ বেশি। যদিও অনেক মুসলমানপ্রধান দেশ তাদের গর্ভপাত নীতি উদারীকরণ করার জন্য বহির্বিশ্ব চাপ প্রয়োগ করছে, কিন্তু এখানে একটি গবেষণা-শূন্যতা লক্ষ করা যায় যে কেমন করে এবং কোন কোন নীতি গ্রহণ করলে তা

ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মতানৈক্য তৈরি করবে না যা সংবেদনতা ও সফলতার সাথে এডাপ্ট করা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে জিডিপি, রাজনৈতিক এবং আইনগত বিষয়ে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তবে দেশসমূহের মধ্যে এক ধরনের মিলও রয়েছে যেমন

প্রতিটি দেশের মুসলমানরা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে।১৪৪

যথোপযুক্ত নীতিবিষয়ক সুপারিশ করার জন্য নীতি প্রণেতা ও রাজনীতিবিদদের জন্য মুসলিম দেশসমূহের গর্ভপাত অধিকারবিষয়ক অতি প্রাসঙ্গিক ইসলামি ডিসকোর্স সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরি। হাসানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী (২০০১, পি৬৮) ‘আমি মনে করি না যে মুসলমান সমাজে কোনো কিছু আত্মস্থ বা এডাপ্ট

করানোর জন্য কোনো মডেল নির্মাণকরা সম্ভব যা কোরআন দ্বারা সিদ্ধ নয় অথবা নবীর জীবনে চর্চিত নয়।’১৪৫ প্রকৃতপক্ষে মুসলমান সমাজে নীতি নির্ধারণ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে যদি ইসলামকে বিবেচনায় না আনা হয়।১৪৬

মূলত পুথিগত উৎকর্ষ এবং তার প্রাসঙ্গিক উৎসের নিয়মতান্ত্রিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত করে যেমন : কোরআন, সুন্নাহ, ফতোয়া, বিচারিক দক্ষতা মিসটিকাল টেক্সট, বৃহত্তর নীতি, সুবিধাভোগী দল। ধর্মীয় নীতি এবং অবস্থানের সার্বিক ধারণা নিয়ে এই গবেষণা ক্ষেত্রটি মুসলিম-প্রধান অঞ্চলে গর্ভপাতের বৈচিত্র নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

মৌলিক উৎস কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা

এটা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে ইসলামের সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ের অনুসন্ধান শুরু হয় মূলত কোরআন ও সুন্নাহ যা মুসলমানদের পথ-প্রদর্শক।১৪৭ মুসলমানদের জন্য কোরআন এবং সুন্নাহ হলো শরিয়া আইনের প্রধান ভিত্তি যা পৃথিবীর বেশির ভাগ মুসলিম দেশে প্রচলিত। কিন্তু কোরআন এবং সুন্নাহর কোনটাই ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত সম্পর্কে সরাসরি কোনোটাতেই তেমন কিছু বলা নাই। কোনো রকম আলোচনা না করে যখন একজন গর্ভবতী মা জন্মের পূর্বেই স্খলন কামনা করে তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু কিংবা ভ্রূণ ধ্বংস/ শিশুবধকরণ হিসেবে গণ্য করা হয়।১৪৮

টেবল ১-এ সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ দেখানো হয়েছে যা প্রায়ই গর্ভপাত প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়। এটা সুস্পষ্ট যে কোরআন বিশেষ করে অর্থনৈতিক কারণে শিশু নিধন/ শিশুহত্যাকে অনুৎসাসাহিত করে। যদিও সুন্নাহ কখনই এমন কোনো ঘটনা উপস্থাপন করে না যেখানে মোহাম্মদ (স.) নিজ সরাসরি ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত নিয়ে আলোচনা করেছেন অথবা কোথাও তিনি বাধ্যতামূলক গর্ভপাতের বিষয় আইন প্রণয়ন করেছেন। একটা ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেখানে একজন স্ত্রী তার গর্ভবতী সতীনকে হত্যা করেছিল যখন নবী তখন নিহতের আত্মীয়কে রক্ত-মূল্য (দ্বিয়া) পরিশোধ প্রসংগে গর্ভস্থ শিশুর দামের (গুরাহ) কথাও উল্লেখ করেন।১৪৯ এই উদাহরণ ভ্রূণের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করে থাকে। যেহেতু গুরাহ এর দাম দ্বিয়ার দামের বিশ ভাগের একভাগ যা প্রমাণ করে যে ভ্রূণের আইনি অবস্থান ও অস্তিত্ব রয়েছে তবে তা একটি পূর্ণ বিকশিত শিশুর মতো নয়।১৫০

এ সংক্রান্ত হাদিস খানা নিম্নরূপ :

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.) ধনী লিহইয়ান গোত্রের জনৈক মহিলার গর্ভস্থ ভ্রণ হত্যা করার ব্যাপারে ফয়সালা দিয়েছিলেন, ভ্রূণটি নিহত হয়ে তার পেট থেকে পড়ে গিয়েছিল (তার বদলে) একটি দাস বা দাসী দিয়ত স্বরূপ আদায় করতে হবে। কিন্তু যে মহিলার উপর দাস আযাদ করা ওয়াজিব করেছিলেন, সে মারা গেল। তখন রাসুল (সা.) এ ফয়সালা করলেন যে তার মিরাস বা সম্পত্তি তার সন্তান এবং স্বামী পাবে। আর দিয়ত রক্তমূল্য তার আসাবাদেরকে মানে বাবা এবং ভাইকে আদায় করতে হবে। (বুখারী ও

মুসলিম শরীফ) ঘটনার বিবরণ, দুই মহিলা পরস্পরে ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন গর্ভবতী। গর্ভবতী মহিলাকে অপর মহিলা একটি পাথর তার পেটের উপর গিয়ে অতঃপর পাথর নিক্ষেপকারীর মহিলার অভিভাবকদের উপর একটি দাস বা দাসী প্রদান করার ফয়সালা দেওয়া হলো। আর যদি ঐ বাচ্চাটি জীবন্ত ভূমিষ্ট হওয়ার পর যারা যেত তাহলে পূর্ণ দিয়ত আদায় করতে হতো। ছেলে হলে একশ উট আর মেয়ে হলে ৫০টি উট দিতে হতো। কেননা মেয়েদের দিয়ত ছেলেদের অর্ধেক।

জানিন এর অর্থ, মহিলাদের ভ্রূণ যতক্ষণ পর্যন্ত পেটে থাকে তাকে জানিন বলা হয়। আর যদি জীবন্ত ভূমিষ্ট হয় তাহলে ওয়াল বলা হয়। আর যদি মৃত বা অসম্পূর্ণ ভূমিষ্ট হয় তাহলে তাকে সিফাত বলা হয়। কোরআনের একটি অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় বলা যায়, একটি ভ্রূণ থেকে পরিপূর্ণ একটি শিশুর বিকাশ, এবং অবশ্যই আমরা মানুষ সৃষ্টি করেছি মাটির নির্যাস থেকে। তার পর আমরা তাকে অবস্থান করিয়েছি শুক্রাণু ফোটা হিসেবে একটা দৃঢ়/ নিরাপদ জায়গায় তারপর আমরা সেই শুক্রাণু ফোটাকে জমাটবাধা রক্তকণিকায় পরিণত করি। আমরা সেই জমাটবাঁধা রক্তকণিকাকে একতাল মাংসে পরিণত করি। আমরা হাড়, মাংস তৈরি করি ও তা চামড়া দ্বারা আবৃত করে দিই। সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার মালিক।১৫১ নবী মোহাম্মদ (স.) ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি, ভ্রূণ

বিকাশের চারটি ধাপের কথা বলেছেন (টেবল ২)। যেভাবে টেবল ২-এ ব্যাখ্যা করা১০৯ হয়েছে। কোরআন কনসেপশন থেকে শিশু জন্ম পর্যন্ত অনেক সংবেদনশীল অবস্থানের কথা বলেছেন যা আইন প্রণয়নের বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।১৫২

বিবেচ্য অন্যান্য বিষয়সমূহ যেহেতু কোরআন ও সুন্নাহ গর্ভপাতকে উৎসাহিত করে না সেহেতু অন্যান্য উৎস এবং সুবিধাভোগী/ বিজ্ঞ দলসমূহ মুসলিম দেশসমূহে এ বিষয়ে অবগত করে থাকে।১৫৩ এদের মধ্যে রয়েছে সমসাময়িক ফতোয়া এবং বিচারিক জ্ঞান, ইসলামিক মিসটিসিজম এবং বৃহৎ ইসলামিক নৈতিকতা, সুবিধাভোগী দলসমূহের দৃষ্টিভঙ্গি : ইসলামিক বায়োএথিকাল ও নারী আন্দোলন।

সমসাময়িক ফতোয়া : ফতোয়া হলো ইসলামি বিজ্ঞজন দ্বারা স্বীকৃত আইনি প্রেক্ষাপট। যদিও ফতোয়া বাস্তবায়নের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নাই, তবে শরিয়া আইনে সমসাময়িক ফতোয়ার অনেক প্রভাব রয়েছে।১৫৪ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টরের মতে, ফতোয়া হলো মুসলিম নৈতিকতা নির্মাণের একটি খসড়া গাইড। প্রকৃত

পক্ষে ইসলামি ব্যাখ্যা অনেক বেশি সমাজ-সাপেক্ষ, প্রাসঙ্গিক। যদিও সরিয়া আইনকে মনে করা হয় অপরিবর্তনীয় এবং মূল পবিত্র উৎস থেকে অবিচ্ছিন্ন, কিন্তু ফতোয়া বা শরিয়া ইসলামি লিগাল ডিসকোর্সসমূহের একধরনের গ্রন্থিলতা যা সমাজভেদে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং ফতোয়া ব্যাপকভাবে

কাল ও স্থান বিবেচনায় ভিন্নতা লাভ করে থাকে। যদিও মুসলমানদের পৃথিবীব্যাপী একক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের রয়েছে বিভাজন: সিয়া-সুন্নী১৫৫

টেবল-১ গর্ভপাতের সাথে প্রাসঙ্গিক কোরআনের বাণী

আয়াত অনুচ্ছেদ wkক্ষv
৬:১৩৭ ভিন্ন বিশ্বাসের অধিকারীরা যারা মূলত নিজেদের বিশ্বাস ও আনন্দের জন্য শিশু হত্যা করেছে এবং তাদের দ্বিধাগ্রস্ত ধর্মের চাদরে সেগুলো ঢেকেছে, তারা মূলত তাদের ধ্বংসের জন্যই তা করেছে। তারা তা করতে পারত না যদি আল্লাহ ইচ্ছা পোষণ করতেন। সুতরাং তারা মেনে চলতে চায় তাতেই থাকতে দিন।

—সুরা আল অনাম

nZ¨v K‡iv bv
we‡kl K‡i
wkï‡`i|
৬: ১৪০ তারা সবকিছু হারিয়ে থাকবে যারা নিজেদের অজ্ঞতা বোকামির জন্য শিশুদের হত্যা করেছে এবং নিষিদ্ধ করেছে

যা আল্লাহ তাদের জন্য বরাদ্দ করেছে এবং আল্লাহ সম্পর্কে অসত্য আবিষ্কার করে, তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং

তারা কখনওই সঠিক পথ পাবে না।

—সুরা আল আনাম

nZ¨v Ki bv,
we‡kl K‡i
wkï‡`i
৬:১৫১ আমি শোনাব আপনার প্রভু আপনার জন্য যা কিছু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপনি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু সমকক্ষ

ভাববেন না এবং পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করুন এবং দরিদ্রতার জন্য শিশুদের হত্যা করবেন না। আমি

আপনাকে ও তাদের রিজিক দিই। যাতে স্পষ্ট ও গোপন সে সকল বিষয়ে অনৈতিক আচরণ করবেন না এবং

জীবন হত্যা করবেন না যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন শুধু আইনের পর্যায় ব্যতিত। এটা আল্লাহ আপনাকে

শিখিয়েছেন যাতে আপনি যুক্তি পর্দশন করতে পারেন।

—সুরা আল আনাম

`vwi`ªZvi
Rb¨ nZ¨v Ki
bv, we‡kl
K‡i wkï‡`i
১৭:৩১ দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের শিশুদের হত্যা কোরো না আমি আপনাকে ও তাদের রিজিক দিই।

প্রকৃতপক্ষে শিশুহত্যা মারাত্মক পাপ।

—সুরা আল ইসরা

`vwi`ªZvi
Rb¨ nZ¨v Ki
bv, we‡kl
K‡i wkï‡`i
১৭:৩৩ প্রাণ হত্যা কোরো না যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন, অধিকার (আইন) ছাড়া। যাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে

যারা তাদের উত্তরাধিকারের দায়িত্ব দিয়েছি। তাদের প্রাণনাশ ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করতে নিষেধ করা হয়েছে।

—সুরা আল ইসরা

nZ¨v Ki bv

 

২৫:৬৮ এবং যারা আল্লাহকে অন্য উপাস্যের সাথে তুলনা করে না। হত্যা করে না যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন এবং অবৈধ যৌন মিলন থেকে বিরত থাকে। যারা এসব কাজ করে তাদের প্রায়শচিত্ত করতে হবে।

—সুরা আল অনাম

nZ¨v Ki bv

উৎস : কোরআন ২০১২

কোরআন অনুযায়ী ভ্রূণ বিকাশের পর্যায়সমূহ

পর্যায় নাম সময়কাল যা ঘটে Mf©cvZ wm×všÍ
০১ নুৎফা আলাক্কা

(রক্ত জমাটবাঁধা)

গর্ভধারণ থেকে ৪০ দিন শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু গর্ভাশয়ে সমন্বিত হয় nvbvwd:
Aby‡gvw`Z
kvdx: wKQz wKQz
†ক্ষ‡Î Aby‡gvw`Z
nv¤^jx:AwaKvsk
†ক্ষ‡Î Aby‡gvw`Z
gvwjKx: wbwl×
০২ ৪০ থেকে ৮০ দিন জড়ানো ও জমাটবদ্ধ রক্ত nvbvwd:
Aby‡gvw`Z
kvdx: wKQz wKQz
†ক্ষ‡Î Aby‡gvw`Z
nv¤^jx: wKQz wKQz
†ক্ষ‡Î Aby‡gvw`Z
gvwjKx: wbwl×
০৩ মূদগাহ্ (এমব্রয়ো) ৮০-১২০ দিন জমাটবাঁধা রক্ত এক তাল মাংসে পরিণত হয়। nvbvwd:
Aby‡gvw`Z
kvdx: wKQz wKQz
†ক্ষ‡Î Aby‡gvw`Z
nv¤^jx: wKQz wKQz
†ক্ষ‡Î Aby‡gvw`Z
gvwjKx: wbwl×
০৪ খালকান

আখার

(স্পিরিট)

১২০ দিন থেকে জন্ম আত্মা প্রবিষ্ট হয় wbwl× (me¸‡jv
gvRnv‡ei
GK¨g‡Z)

নোট : এই টেবল লেখক মুসাল্লাম (১৯৮৩); বোয়েন (১৯৯৭); বোয়েন (২০০৩); বোয়েন (১৯৯৯); কার্টজ (২০০৩); হেদায়েত এট অল (২০০৬); আতিগেছি (২০০৭); এবং আল হিবরি (২০১১)দের সাথে মতবিনিময় করে গবেষণার সাথে সমন্বয় করেছেন। এই টেবল ইসলামে গর্ভপাত সম্পর্কে সুন্নিদের অবস্থান বর্ণনা করে। প্রত্যেকটি সুন্নি মাজাহাব হাদিসের ব্যাখ্যা করে থাকে (সংরক্ষিত মোহাম্মদ স.-এর বাণীসমূহ) (সিআইএ ২০১২) একজন সুন্নি মুসলিম যেকোনো একটি মাজাহাব অনুসরণ করতে পারে ১৫৬। উল্লেখ্য যে, শিয়া মুসলিম সুন্নি চার মাজহাবকেই অনানুসরণ/ অগ্রাহ্য করতে পারে। বেশির ভাগ সমসাময়িক শিয়া মুহাদ্দিসগণ গর্ভপাতকে অনুমোদন দেয় না তবে গর্ভধারণের বয়স চার মাস হওয়ার পূর্বে গর্ভপাতের অনুমোদন দেয় যদি তা গর্ভবতী মায়ের জীবনের জন্য মারাত্মক কোনো দুরবস্থা তৈরি করে।১৫৭

(*) মোহাম্মদ (স.) ব্যাখ্যা করেন যে ভ্রূণ বিকাশের প্রত্যেকটি পর্বে জন্য ৪০ দিন নির্ধারিত (বোয়েন ১৯৯৭) এই পরবর্তীকালে ভ্রূণ-বিকাশের প্রত্যেকটি পর্বেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তার সাহাবী ইবনে মাসহুদ১৫৮

(*) ফিকাহ অর্থ শুধু বিচারিক দক্ষতা বা সক্ষমতা নয়, এর আর একটি অর্থ অন্তর্দৃষ্টি।

সুন্নিরা চারটি মাজহাবে বিভক্ত যা মাজহাবসমূহের প্রতিষ্ঠাতাদের নামের সাথে সংগতি রেখে নামকরণ করা হয়েছে। এগুলো হলো : হানাফি, শাফী, হাম্বলী, মালিকী১৫৯ ক্যাথলিসিজম-এর মতো ইসলামের কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নাই, নাই কোনো একক মাজহাব। এর পরিবর্তে ইসলাম কীভাবে চর্চা করা যেতে পারে সে সম্পর্কিত বহুবিধ মতবাদ এবং মাজহাবসমূহের মধ্যে ব্যাপক সহিষ্ণুতা রয়েছে।১৬০ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে হানাফি যাদের বেশির ভাগই অর্থডকস মুসলমান তারা গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে গর্ভপাতের অনুমোদন দেয়। পক্ষান্তরে অধিাংশ মালিকী মাজহাব অনুসারীরা পরিপূর্ণভাবে গর্ভপাতের বিপক্ষে অবস্থান করে।১৬১ মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সকল মাজহাবের অনুসারীরা বিশ্বাস করে, গর্ভধারণের ১২০ দিন পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। কারণ এই সময় ভ্রূণকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে এই সময়েও সবগুলো মাজহাব গর্ভপাতের অনুমোদন দেয় যদি গর্ভবতী মায়ের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। গর্ভবতী মায়ের জীবন রক্ষার স্বার্থে এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।১৬২ যদিও মারাত্মক পরিস্থিতিতে গর্ভধারণের ১২০ দিনের মধ্যে গর্ভপাত করানো যায় বলে সবগুলো মাজহাব একমত পোষণ করে তবে গর্ভপাতকে কখনওই উৎসাহিত করা হয় না এবং এটাই সমসাময়িক ফতোয়ায় বলা হয়ে থাকে।১৬৩ ইসলামের প্রতিটি কর্ম পাচঁটি নৈতিক বিভাজনের মধ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়, এগুলোকে বলা হয় আহকাম আল কামছা। এগুলো হলো, ১. জরুরি (ফরজ) ২. সুপারিশকৃত (মানদূব) ৩. নিরপেক্ষ (মুবাহ) ৪. দোষযুক্ত (মাখরুহ) ৫. নিষিদ্ধ (হারাম) ব্রোউন ১৯৯৯)। গর্ভপাতকে হারাম হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় না, এটাকে

মাখরুহ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।

টেবল-৩ মূলত বিভিন্ন প্রেক্ষিতে গর্ভপাতের সংশ্লিষ্ট ফতোয়া বিশ্লেষণ করে কিন্তু ফতোয়া সার্বিকভাবে গর্ভপাতকে সমর্থন দেয় না।১৬৪ এছাড়াও বেশির ভাগ মুফতি গর্ভপাতকে অনুমোদন দেয় না কারণ এর অনুমোদন এক ধরনের ইসলামের আদর্শিক চ্যুতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। যাই হোক, এবোরশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গর্ভবতী

মেয়ের সবচেয়ে সবচেয়ে যৌক্তিক অবস্থান একটি ব্যাপক বিতর্কিত বিষয়। তবে মাজহাবসমূহ তাদের নীতিগত অবস্থানে শর্তসাপেক্ষে শিথিলতা প্রদর্শন করে যেমন যখন গর্ভবতী মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয় অথবা ভ্রূণ বিকৃত রূপ লাভ করে (ভ্রূণের সুষম বিকাশ না হওয়া)। ফতোয়ার ক্ষেত্রে এই ধরনের শিথিলতা এবং তার গুরুত্ব এখনও ব্যাপক কারণ সুন্নি ইসলামি অনুসারীদের মধ্যে সঠিক মাজহাব বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে।১৬৫ ফলে আইনগতদিক থেকে সমমতে পৌঁছানো এখনও সম্ভব হয় নাই।

সুফিবাদ ও বৃহত্তর ইসলামি নীতি

উপরোক্ত সামাজিক প্রেক্ষিত ছাড়াও ইসলামে আইনগত ব্যাখ্যাদানকারী অনুচ্ছেদসমূহ একটি দর্শন সমৃদ্ধ সুফিবাদ কাঠামোর মধ্য দিয়ে বোধগম্য হয়ে উঠতে পারে। মুসলমানরা একদিকে বিশ্বাস করে যে কোরআন হলো আল্লাহর বাণী একই সাথে তারা বিশ্বাস করে যে কোরআন হলো চূড়ান্ত গ্রন্থ যেখানে অসংখ্য উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। অনুসন্ধিৎসু মনের অসীম প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য মন এবং আত্মার সমন্বয় ঘটাতে হবে।১৬৬ তদনুসারে সুফিবাদ ইসলামে আত্মিক ও নৈতিক গাইডেন্স তৈরি করে।১৬৭ আবু হামিদ আল গাজালী, যিনি ইসলামের প্রভাবশালী ও স্বীকৃত সুফিদের একজন, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে গর্ভপাত খুনের চেয়ে একটু কম যায় (যাকে শিশু নিধন বলা যায়) কিন্তু এটা একটা নৈতিক জঘন্যতা।১৬৮ সুফিবাদ মূলত মানুষের অন্তর ও অন্তঃস্থ অনুভূতির কথা বলে থাকে এবং তাদের ব্যাখ্যায় বলা হয় যে একই কাজের বিভিন্ন রকম নৈতিক মূল্যায়ন হতে পারে, এটা নির্ভর করে যিনি কাজটি করেন তার আত্মিক ও ব্যক্তিক অবস্থার উপর। সুতরং সুফিবাদ আন্তঃব্যক্তিক আপেক্ষিকতা মূল্যায়ন করে এবং ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সুফিবাদে গর্ভপাত অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। কিছু সংখ্যক স্কলার গর্ভপাতকে সীমাবদ্ধ সামাজিক ও মেডিকেল কন্ডিশনের জন্য মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে অনুমোদন দিয়ে থাকে, এর একটি কারণ হতে পারে দ্রুত জনসংখ্যা সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য খাতে স্বল্প বাজেট থাকা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সমুন্নত রাখা। একই নীতি বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ করা যায় ধর্ষণ, ভ্রূণের বিকৃত বিকাশ, যৌনাচার ইত্যাদি।১৬৯

অধিকন্তু, ইসলামে পারিবারিক ও ব্যক্তিক পর্যায়ে বিশেষ ক্ষমতা চর্চার প্রথা রয়েছে বিধাতা শুধু জানে এই রকম পরিস্থিতিতে কোনটি সঠিক বা ভুল। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির বিবেককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং মনে করা হয় যে যেহেতু ব্যক্তিকেই পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে সেহেতু ব্যক্তির বিবেকই গর্ভপাত বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এই প্রচলিত আপেক্ষিক ধারা অনেক মুফতির কাজের মধ্যে লক্ষ করা যায় যিনি গর্ভপাতের ব্যাপারে দম্পতিদের বিবেকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে বলেছেন যদিও সাধারণভাবে গর্ভপাত অনুমোদন পায় না।১৭০ সুবিধাভোগী মহল এবং আবারও নারীবাদ ক্রমবর্ধমান ইসলামিক বায়োএথিক্যাল এবং নারী আন্দোলন গর্ভপাতের পক্ষে একটি জোরালো অবস্থান তৈরি করছে। মজার ব্যাপার হলো, ইসলামি বায়োএথিকস্ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কারণ ইসলামে বিষয়সমূহ বায়োএথিকস্ বিতর্কের জন্য কোনো একক অবস্থান নেই বরং অনেক বেশি বিভাজিত। পশ্চিমা সমাজের চেয়ে মুসলিমপ্রধান দেশসমূহের সমাজে রোগীর স্বাধীনতা চিন্তা করার সুযোগ অনেক কম। মুসলিম সমাজে ডাক্তারদের সাধারণত প্রশ্ন করা হয় যে কোনো রোগী যা ইচ্ছা করল তা করা হলো, পক্ষান্তরে পশ্চিমা সমাজে ঠিক উল্টোটা ঘটে। সেখানে ডাক্তারদের যুক্তি খণ্ডাতে হয়। এভাবে কেন রোগী যা ইচ্ছা করছিল তা করা হলো না গর্ভপাতের ক্ষেত্রে।১৭১ ধর্মীয় ডিসকোর্সসমূহ চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা ডাক্তারদের থাকে না বিশেষ করে যখন তারা রোগীর পরিবর্তে ইসলামি অথরিটির কাছে গর্ভপাত বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়। তথাপি গর্ভপাত উদারীকরণের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী।১৭২ উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যখন রাশিয়ায় অনুরোধসাপেক্ষে প্রথম গর্ভপাতের অনুমোদন দেওয়া হয় তখন ডাক্তাররা সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।১৭৩ এটিগেচি১৭৪ উল্লেখ করেন, আরব মুসলমান দেশসমূহে স্বাস্থ্য সেবার আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একইভাবে ইসলামি নারীবাদীরা জোর দিয়ে বলেন যে নারীর সমস্যাকে ঘিরে মুসলিম বিশ্বে জঘন্যতম চর্চা চলছে, কিন্তু এই নারীবাদীরা কোনো ধর্মীয় আদর্শের পরিবর্তে ইতিহাস, সংস্কৃতি অথবা অর্থনীতির বিশেষ করে রাজনীতির উপর জোর দেয় এবং তাদের কথায় এই বিষয়সমূহের উপর জোর দেওয়া হয়, রামিরজ এবং ম্যাক এনিন্যাই এর মতে আর্ন্তজাতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যে সকল দেশে নারীদের একটি বড় অংশ শ্রমিক এবং নিজেদের আয় আছে সেখানে গর্ভপাত নীতি ব্যাপক উদারীকরণ হয়ে ওঠে।১৭৫ স্পষ্টত এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। যাই হোক, ইসলামি নারীবাদীরা গুরুত্বারোপ করেন যে গর্ভপাতের স্বপক্ষে ফতোয়াসমূহ নারী অধিকারকে প্রমোট করে না।১৭৬ উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে মিশরের প্রধান মুফতির সাথে যখন যুক্তি প্রদর্শন করা হলো তখন তিনি অভিমত পোষণ করলেন, ধর্ষিত নারীকে গর্ভপাতের সুযোগ দেওয়া ছাড়াও তাদের সতিচ্ছেদ পুনঃস্থাপন সার্জারি করার সুযোগ দেওয়া উচিত যাতে তারা বিয়ের ক্ষেত্রে সতীত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে!

এই যুক্তির মধ্য দিয়ে তিনি পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকিফলন ঘটালেন।১৭৭ কিছু ইসলামি নারীবাদী ইসলাম ও গর্ভপাত অধিকারের সাথে এক ধরনের সঙ্গতি খুঁজে পান এবং এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণের জন্য কথা বলছেন, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধায় নারীর নিরাপদ অভিগম্যতা কামনা করেন। বিশেষ করে তারা পিতৃতান্ত্রিকতা পরিবর্তন করায় বিশ্বাসী যেখানে বাবা অথবা স্বামী সিদ্ধান্ত নেয় যে একজন নারী গর্ভপাত করবেন কিনা।

টেবল : ৩

গর্ভপাতের পক্ষে

যৌক্তিক অবস্থান

ফতোয়া সাধারণ সিদ্ধান্ত
জীবন প্রয়োজন আইন মানে না— এই নীতি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মায়ের জীবন ও তার কল্যাণ এখানে প্রাধান্য পায়। গর্ভপাত ব্যাপকভাবে

অনুমোদিত

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উপরোক্ত নীতি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সিরিয়ার ডাক্তার ইব্রাহীম হাক্কি ব্যাখ্যা করেন যে শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা একটি সমর্থনযোগ্য বিষয়। ফিকাহ কিতাবে আছে গর্ভপতের কারণ হতে পারে মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন দুর্বল ব্লাডার, শিশু জন্মদানকালে জটিলতা তৈরি হলে মাকে সিজার করার আশঙ্কা থাকতে পারে অথবা কোনো রোগ বা ভ্রূণ সঠিকভাবে বেড়ে না ওঠা (বায়েন ১৯৯৭) গর্ভপাত সাধারণত অনুমোদিত
ভ্রূণের বিকৃত বিকাশ প্রধান মুফতি আয়াতউল্লাহ ইফসুফ সানী ২০০৫) ভ্রূণের জেনেটিক ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে কনসেপশনের প্রথম তিনমাসের মধ্যে গর্ভপাত অনুমোদন করেন। হেসিনি ২০০৮)।

একই দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায় মিশরের মুফতি শেখ নাসির ফরিদ ওয়াছেলেন ক্ষেত্রে (রিসপে— চেইম২০০৩)। আউল ফাদিল মহসিন ইব্রাহিম এবং আব্দুর আর কাদিম গর্ভপাত অনুমোদন দেয় বিকৃত ভ্রূণ বিকাশের ক্ষেত্রে যদি তা ১৭ সপ্তাহ অতিক্রম না করে থাকে (আসমান ২০০৪)। গর্ভধারণের প্রথম ৪০ দিনের মধ্যে মুফতি আল করধাওয়াই ঠিক একই কারণে গর্ভপাতের অনুমোদন দেয়।

আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শেখ জাদ আল হক্ক গর্ভপাতের বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন কিন্তু তিনি বললেন যে ভ্রূণের মারাত্মক বিকৃত বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অথবা মারাত্মক

রোগের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।

গর্ভপাত প্রায়শই অনুমোদিত তবে

কঠোর গর্ভাবস্থার সীমাবদ্ধতার

মধ্য দিয়ে।

ধর্ষণ অথবা অজাচার ধর্ষণ অথবা অজাচারের ক্ষেত্রে দুর্বল শাসনব্যবস্থা প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়। গর্ভপাত বিষয়ে আপত্তি রয়েছে

 

১৯৮২ সালে গর্ভধারণের ৩ মাসের মধ্যে বিকৃতভাবে বেড়ে ওঠা ভ্রূণ গর্ভচ্যুত করা যাবে বলে অুমোদন দেওয়া হয় (রিস্পার

চায়েম ২০০৩)। কুয়েতে ভূমধ্যসাগরীয় যুদ্ধের পরে ইরাকি সৈনিক কর্তৃক কুয়েতি মহিলাকে ধর্ষণ করা হলে বেশির ভাগ মুফতি গর্ভপাতে দ্বিমত প্রকাশ করেন (আসমান ২০০৪)। যে রেপকেস পরিস্থিতিতে গর্ভস্খলন করা যাবে না। যারা রেপকেস জনিত কারণে গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়েছে তারা মূলত গর্ভাবস্থার ১২০ দিনের মধ্যে তা কার্যকর করা যাবে বলে মতামত দিয়েছেন (আসমান ২০০৪)। ১৯৯৮ সালে আরজেরিয়ার ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল ধর্ষণজনিত কারণে

গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়েছিল, কারণ তারা মনে করেছিল ধর্মীয় গোঁড়াপন্থিরা ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ঠিক একইভাবে মিশরের প্রধান মুফতি আল

আজহার মোহাম্মদ ছাইদ তানতাই ১৯৯৪ সালে যে সকল মহিলারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের জন্য গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়ে একটি ফতোয়া প্রকাশ করেন (আই ডব্লিউ আর এ ডব্লিউ ১৯৯৮)। ১৯৯৮ সালে প্যালেস্টাইনের প্রধান মুফতি ইশরিমা সাবরী কসোবো যুদ্ধে ধর্ষিত মুসলিম মহিলাদের জন্য গর্ভপাতের

অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং গর্ভনিরোধের জন্য ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

কিন্তু গর্ভকাল ও গর্ভাবস্থার উপর ভিত্তি করে ক্রমবর্ধমান হারে

অনুমোদন পাচ্ছে। অজাচার ধর্ষণের চেয়ে অনেক একটি

আলোচিত বিষয়।

সামজিক ও অর্থনৈতিক কারণ কোরআনে অর্থনৈতিক কারণে শিশু নিধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে

এবং এ ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি রয়েছে তবুও এই যৌক্তিকতা

লঙ্ঘন করা হচ্ছে (বোয়েন ২০০৩)। কিন্তু ভ্রূণ সবসময়ে শিশু

হিসেবে বিবেচিত হয় না।

১১৮

কলঙ্কিনী রাধা Stigmatised Girl

অধিকন্তু সুন্নাহ ভ্রূণচ্যুতির অনুমোদন দেয় যদি মায়ের বুকের দুধ খায় এমন শিশু থাকে। কারণ জীবন্ত শিশু ভ্রূণের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। এছাড়াও বয়সে খুবই ছোট মেয়ে (১৫ বছরের কম বয়সী) হওয়া গর্ভপাতের জন্য উপযুক্ত কারণ বলে মাঝে মাঝে বিবেচনা করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় গর্ভপাত সুবিধা গর্ভবতী ক্রীতদাসের সন্তান প্রসব থেকে বিরত রাখে। তথাপি আর্থ-সামাজিক কারণে গর্ভপাত স্পষ্টত কোরআনের আইন লঙ্ঘন করতে দেখা যায়, সুতরাং এটা ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে (আসমান ২০০৪)। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম দেখা যায় শেখ আহমেদ হারায়েদের ক্ষেত্রে যিনি একটি পরিবারকে গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়েছিলেন কারণ পরিবারটি অনাগত ভ্রূণের বিকাশের জন্য পুষ্টির সংস্থান করতে পারছিল না।
নোট : এই টেবলটি লেখক বোয়েন (১৯৯৭); আই ডব্লিউ আর এ ডব্লিউ (১৯৯৮); বোয়েন (২০০৩); রিস্পার-চায়েম(২০০৩) ও আসমান (২০০৪) এর আলোচনা সাপেক্ষে চয়ন করেছেন।

বহুজাতিক ইসলামি সংস্থা/ ডোনার

মুসলিমপ্রধান দেশসমূহের আইন এবং বহুজাতিক ইসলামি সংস্থাসমূহ গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে। (সমন্বিত মুসলিম দেশসমূহ যারা সমন্বিতভাবে তাদের দেশীয় সীমারেখা ও প্রেক্ষাপটের বাইরে সমন্বিতভাবে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকে।)

অধিকাংশ মুসলিম দেশসমূহে রক্ষণশীল গর্ভপাত বিধি প্রচলিত। অনেক দেশ গর্ভপাত অনুমোদন দেয় শুধু যখনই মায়ের জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ে— এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে গর্ভপাত সম্পর্কিত সবচেয়ে নাজুক দৃষ্টিভঙ্গি আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা হয়। ১৯৭১ সালে ইসলাম

ও পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক একটি সেমিনারের পরিসমাপ্তিতে বলা হয় যে গর্ভধারণের চতুর্থ মাস থেকে ইসলাম গর্ভপাতের প্রতি নিষেধারোপ করে যদি এই গর্ভধারণ মায়ের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে না তোলে, কিন্তু গর্ভধারণের প্রথম চার মাসে ইসলাম বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গর্ভপাত অনুমোদন দিয়ে থাকে।১৭৮

এই পরিস্থিতিসমূহ আরও বোধগম্য করে তোলা হয় ইসলাম ও পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক রাবাত সেমিনারে (১৯৭৪) যেখানে একজন ইন্দোনেশিয়ান বিশেষজ্ঞ আহমেদ গাজালী গর্ভপাত অনুমোদন সূচক পরিস্থিতিসমূহ তালিকাবদ্ধ করেন। (যেমন : ধর্ষণ, অজাচার, মায়ের মনস্তাত্বিক অবস্থা এবং ভ্রূণের বিকৃত বিকাশ)।

উল্লেখযোগ্য যে ১৯৯৪ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত প্রভাবশালী আই সিপিডি সম্মেলন, যা নারীর জীবনকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ে বৈশ্বিক গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে পরিগণিত হয় এবং যেখানে মুসলিমপ্রধান দেশসমূহের প্রতিনিধিরা ভ্যাটিকানের সাথে গর্ভপাত বিষয়ে আপত্তি তোলেন।১৭৯

আই সিপিডি কনফারেন্সে মুসলিম দেশসমূহ প্রাথমিকভাবে নির্ণীত গর্ভপাতের যৌক্তিকতা থেকে সরে এসে পরিস্থিতি বিবেচনায় গর্ভপাত অনুমোদনের উপর গুরুত্বারোপ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানের সভায় উপস্থিতি, কারণ তার প্রদত্ত ফতোয়া বিশবব্যাপী অনুসৃত হয়।১৮০

এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি মুসলিমপ্রধান দেশের রাজধানীতে এবং ঐ মুসলিম দেশ তার অংশগ্রহণকারী জনগণের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে পরিগণিত হবে।১৮১ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ৩১টি মুসলিমপ্রধান দেশের প্রতিনিধিরা কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে। তথাপি ১২টি মুসলিম দেশ তাদের অধ্যায় ৭-এর মূল বিষয়ের উপর আলোকপাত করে (প্রজনন অধিকার ও প্রজনন স্বাস্থ্য)। কনফারেন্সে ফলস্বরূপ মুসলিম দেশ কর্তৃক উত্থাপিত সারকথা যা ছিল কোনোভাবেই গর্ভপাত পরিবার পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না এবং এতে অংশগ্রহণকারীরা সবাই একমত পোষণ করে। সকল সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি সংস্থাসমূহকে প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষা এবং নারী স্বাস্থ্যের উপর অনিরাপদ গর্ভপাতের প্রভাব একটি প্রধান গণস্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে বিবেচনার জন্য জোরালো আহবান করা হয়। যাতে সম্প্রসারিত এবং উন্নত পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের মাধ্যমে গর্ভপাতের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা যায়। ১৯৯৪ সালে আইসিপিডি-তে মুসলিম দেশসমূহের সাথে আলোচনার মাধ্যমে গর্ভপাত বিষয়ে মুসলিম দেশসমূহের অবস্থান আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে; যদিও গর্ভপাত পরিপার১২০ পরিকল্পনার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা সাধারনভাবে একটি ইসলামবিরোধী

কর্মকাণ্ড, তবে একটি সু-সংজ্ঞায়িত পরিস্থিতিতে গর্ভপাত অনুমোদন যোগ্য।১৮২ মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে গর্ভপাত আইনের বহুমাত্রিকতা উপরের আলোচনা এটা নির্দেশ করে যে ইসলামে গর্ভপাত সম্পর্কিত কোনো একক সাধারণ আইন প্রচলিত নাই। গবেষণাটি মূলত যে বিষয়টি গুত্বের সাথে বিশ্লেষণ করবে, কীভাবে মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য ভিন্ন গর্ভপাত বিধি নির্মাণ করে। এটা মোটেই অবাক হওয়ার বিষয় নয়, ইসলামি দেশসমূহ এই বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তিউনিশিয়া হলো প্রথম মুসলিম আফ্রিকান আরব দেশ যেখানে এমনকি ফ্রান্স, জার্মানি বা আমেরিকার পূর্বে এই আইনের ১৯৭৩ সালে উদারীকরণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তিউনিশিয়ায় ১২ সপ্তাহের মধ্যে অনুরোধসাপেক্ষে গর্ভপাত করার অনুমোদন দেওয়া হয় এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এই সেবাটি বিনামূল্যে প্রদান করার বিধি রয়েছে।

এটা বেশ কিছু মুসলিম দেশসমূহের এবোরশন নীতির সাথে বিরোধ তৈরি করে বিশেষ করে যে সব দেশে যেখানে শুধু মায়ের জীবন হুমকির সম্মুখীন হলে গর্ভপাতের অনুমতি মেলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আসমান নামক একজন গবেষক তিনটি মুসলিম দেশের এবোরশন পলিসির উপর তুলনামূলক ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

(মিশর, কুয়েত ও তিউনিশিয়া) এবং উল্লেখ করেন, এই দেশসমূহের এবোরশন সংশ্লিষ্ট আইন ক্রমবর্ধমান হারে শিথিল হচ্ছে। মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে এবোরশন আইন নিরীক্ষণ কাজটি পরিচালিত হয়েছে সে সকল স্বাধীন দেশে যেখানে ২০১১ সালে মুসলিম জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি যেমনটি রাজ্জাক দেখিয়েছেন। রাজ্জাক, যিনি ৪৮টি রাষ্ট্র পূর্ণ করতে গিয়ে প্যালেস্টইনকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই গবেষণা কার্টজিব ও বোল্যান্ড-এর গবেষণার সাথে মিল পাওয়া যায়, যেখানে অবশ্য প্যালেস্টাইনকে বাদ দিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছিল কারণ পশ্চিম তীর এর গাজা দু’দেশের বিতর্কিত অঞ্চল যা স্বাধীন নয়। সে কারণে সঠিক জনসংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একইভাবে ২০১১ সালে পিউ রিসার্স সেন্টার পরিচালিত গবেষণায় মায়োতি এবং পশ্চিম শাহারা গবেষণা অঞ্চল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা এই গবেষণায় বাদ পড়ে কারণ এই দেশসমূহ স্বশাসিত নয় (সিআইএ ২০১২)।

সর্বমোট ৪৭টি মুসলিমপ্রধান দেশ খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণায় একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা হলো দেশসমূহের মধ্যে এবোরশন আইনের সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করা। রামিরাজ এবং ম্যক ইনিয়ানীসহ জাতিসংঘের মতানুযায়ী (১৯৯৭) এই গবেষণাটিতে মূসলিম দেশসমূহে এবোরশন আইনের সংখ্যা নিরূপণে সাতমাত্রিক

রূপ বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ—

১. গর্ভবতী মহিলার জীবন বাঁচানোর জন্য এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। (জীবন)

২. গর্ভবতী মহিলার শারীরিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। (শারীরিক স্বাস্থ্য)

৩. গর্ভবতী মহিলার মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। (মানসিক স্বাস্থ্য)

৪. ভ্রূণের বিকৃত বিকাশের জন্য এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। (ভ্রূণ)

৫. অজাচার অথবা ধর্ষণের জন্য এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। (অজাচার/ ধর্ষণ)

৬. সামাজিক অর্থনৈতিক কারণের জন্য এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। (সামাজিক/ অর্থনৈতিক)

৭. আবেদন/ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সপ্তমাত্রিক নিরীক্ষণ কোনোটিই এককভাবে একটি দেশ প্রচলিত নয় বরং এইগুলো একটি কিউমিলেটিভ ফলাফল। সুতরাং এবোরশন অইনের সংখ্যা ০ থেকে ৭ মাত্রার মধ্যে নিরূপণ করা সম্ভব। যখন ৭, তার মানে হলো ঐ দেশে আবেদন/ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবোরশন অনুমোদন দেওয়া হয় এবং যেহেতেু সপ্তমাত্রিক নিরীক্ষণ একটি কিউমিলিটিভ সমষ্টি সুতরাং ৭ মানে হলো ১ থেকে ৭ পর্যন্ত সবগুলো মাত্রা সেদেশের জন্য বিবেচ্য। একটি দেশকে শুধু তখনই গর্ভপাত অধিকার প্রদান করে এমন দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল যখন দেখা গেছে সেখানে উপরের যেকোনো একটি গ্রাউন্ড আইনের সাথে সন্নিবেশিত। এখানে উল্লেখ্য যে কোনো কোনো দেশের আইন সুনির্দিষ্টভাবে স্বাস্থ্য বলতে কী বোঝায়, শারীরিক স্বাস্থ্য না মানসিক স্বাস্থ্য তা স্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলা ব্যাখ্যা করা নাই— সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য উভয় রকম স্বাস্থ্যকে বোঝানো হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণে এবোরশন অনুমোদন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়নি যদিও বিষয়টি কোথাও কোথাও আইন দ্বারা সিদ্ধ। কিছু আপেক্ষিক গবেষণাটিতে সঞ্চয়ন করা হয়েছে, যা দ্বারা এবোরশন আইনের উদারীকরণ এবং তার সম্প্রসারণ দৃশ্যমান ও গণনা করা যায়।

৪ নম্বর টেবলে প্রদত্ত উদাহরণ দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে অনেক মুসলিম দেশ এখনও এবোরশন পলিসির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করে থাকে। বিশেষ করে ৪৭টি মুসলিম দেশের মধ্যে ১৮টি দেশে মায়ের জীবন যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তখন এবোরশন করার অনুমতি দেয় (টেবল ৪)। উল্লেখ্য যে সকল মুসলিম দেশই নারীর

জীবন বাঁচানোর জন্য এবোরশনের অনুমোদন দেয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ০ কাউন্ট করার কোনো সুযোগ নাই। ২০১১ সালে সম্ভাব্য ৭-এর মধ্যে মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে গড় এবোরশন আইনের সংখ্যা (এআস) ২.৯৪ (এসডি ২.৩০)। তথাপি এবোরশন পলিসিতে ব্যাপক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। যখন একটি দেশ এবোরশন অধিকারের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রক্ষণশীল তখন লক্ষ করা যায় অন্য একটি দেশ অনুরোধক্রমে এবোরশন অনুমোদন দিচ্ছে। সবচেয়ে উদার দেশ যাদের এবোরশন আইনের কিউমিলিটিভ সংখ্যা (এআস) ৭, এগুলো হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন, তুর্কি, তিউনিশিয়া। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেমন জাম্বিয়া, লুক্সেমবার্ক অথবা সেন্ট ভিনসেন্ট ইত্যাদি দেশ সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে এবোরশন করার অনুমোদন দেয় কিন্তু তারা অনুরোধের ভিত্তিতে গর্ভপাত করানোকে নিষিদ্ধ করেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে কোনো মুসলিম দেশেই সামাজিক অর্থনৈতিক কারণ কী হতে পারে তা বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত করা নাই (টেবল ৪)। এটা বিশেষ করে উল্লেখ্য কোরআনিক কন্টেট-এ আর্থসামাজিক কারণে গর্ভপাত করানো নিষিদ্ধ (টেবল ৩)। বিশেষ করে শিশুহত্যার সুস্পষ্ট অজুহাত অর্থনৈতিক দুরবস্থা মূলত একধরনের সামাজিক অবস্থার প্রতিরূপ যা তার মৌলিক বা পরিবারের জরুরি অবস্থা নয়, এবং বিষয়টি এবোরশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দেয়।১৮৩ এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণ অজুহাতে এবোরশন খুব কমই অনুমোদন পায়।

নীতি প্রনয়ণের জন্য সুপারিশ

আমি জানি, এই সুপারিশগুলো বইয়ের পাতাতেই শোভা পাবে, সেমিনারের আলোচনার খোরাক জোগাবে, আমার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব কর্ষিত হবে এবং নীতি নির্ধারণী মহল ভ্রূক্ষেপও করবেন না। তবুও লিখছি— আশা করতে দোষ নাই অন্তত। কর্নওয়েল ১৮৪-এর বর্ণনা অনুযায়ী ব্যাপক সংখ্যক কারণে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাঠামো নারীকে গর্ভ অপসারণ অধিকারে ও সামর্থ্য অনুযায়ী সেবায় তার অভিগম্যতা নিশ্চিত করে, যেমন প্রজনন অধিকার, সামাজিক অধিকার, গণস্বাস্থ্য, উন্নয়ন ধারণা ইত্যাদি। অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ ও আইন গর্ভপাতের জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার নারীর মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ গণস্বাস্থ্যবিষয়ক ইস্যু। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মোহাম্মদ১৮৫ এর নাইজেরিয়া পরিস্থিতির বর্ণনা অনুযায়ী উল্লেখ করা যায় যে এবোরশনজনিত কারণে নাইজেরিয়ায় ক্রমবর্ধমান মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনতে কিছু একটা করা আবশ্যক, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফলতা শুধু তখনই আসবে যখন ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক উপাদানসমূহের প্রতি পর্যাপ্ত সংবেদনশীল হয়ে বিষয়টির উপর আলোকপাত করা হবে (পৃ. ২২৫)। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ধর্মীয় অবস্থান অনেক মুসলিমপ্রধান দেশের নীতি বিনির্মাণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে, (বোয়েন ২০০৩, পৃ. ৫২)। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থানবিষয়ক বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু স্ট্রাটেজি তৈরি করা যেতে পারে যা উদার গর্ভপাত অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করে দেবে যাতে মুসলিম নারীস্বাস্থ্য ও অধিকার আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

প্রথমত, ব্যক্তিকে এই ভ্রান্ত চিন্তা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে যে ইসলামে কেন্দ্রীয় এবং প্রভাবশালী টেক্সট কোরআন এবং সুন্নাহ নিরঙ্কুশভাবে গর্ভপাতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। এটা অবশ্যই কোরআন ও সুন্নাহ ইচ্ছাকৃত গর্ভপাতকে শিশু হত্যা ব্যতিরেকে অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করে না, বিশেষ করে ‘ওয়াধ’ যার মানে হলো

মেয়েশিশু হত্যা (আসমান ২০০৪, টেবল ১)। এ ক্ষেত্রে অনেকে শিশু বলতে পরিপূর্ণ শিশু হিসেবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পায়। সুন্নাহ শিশু মৃত্যু এবং ভ্রূণ মৃত্যুর মধ্যে একটা পরিষ্কার বিভাজন তৈরি করে দিয়েছে— তা হলো ১২০ দিনের মধ্যে ভ্রূণে জীবন প্রবাহ তৈরি হওয়া।১৮৬

দ্বিতীয়ত উপরের বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, ইসলামের যদিও একটি অনমনীয় আপসহীন অবয়ব রয়েছে, তবে এখানে নমনীয় ব্যাখ্যাকরণের সম্ভাবনা রয়েছে।১৮৭ ব্রকপের ১৮৮ (২০০৩)-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী গর্ভপাত প্রশ্নে ইসলাম কখনই একই সুরে, কথা বলে না (পৃ. ২৪)। প্রকৃতপক্ষে ইসলামি আইনের নমনীয়তাই ইসলামি দর্শনের

মূল আদর্শ। যেহেতু ইসলাম সময়ের এবং সব মানুষের জন্য নাজিল হয়েছে সুতরাং এর আইনসমূহ সময়ের সাথে অভিযোজন-সক্ষমতা সস্পন্ন (আল হিবরী ২০১১)। এছাড়াও পূর্ব আধুনিক ইসলামি বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের ইসলামি রীতিনীতিচর্চার ঐতিহ্য লক্ষ করা যায়।১৮৯ গর্ভপাতের প্রতি সাধারণ নিষেধাজ্ঞা ধর্মীয় কর্তৃত্বকে পরোয়া করে না (টেবল ২, টেবল ৩)। প্রকৃতপক্ষে ইসলামি আইনি প্রক্রিয়া গর্ভপাতের সম্ভাব্য পরিস্থিতিসমূহ বাড়িয়ে দিয়েছে।১৯০ একইভাবে নমনীয় অবস্থান এবং ইসলামে বিভিন্ন মাজহাবের ফতোয়া বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময়

গর্ভপাতকে ধর্মীয়ভাবে অনুমোদনযোগ্য/ সম্ভবপর তুলতে পারে। অনেকে যা বিশ্বাস করে তার পক্ষান্তরে মোসাল্লাম ব্যাখ্যা করেন, ইসলামে কোনো মাজহাবেই গর্ভপাতের প্রতি নিষোধাজ্ঞা কোনো প্রধান চরিত্র নয়, এটা প্রদত্ত যে মুসলমানরা ভ্রূণে প্রাণ-স্পর্শে বিশ্বাস করে, যার পূর্বে ভ্রূণকে শিশু হিসেবে ভাবা যায় না, এটা প্রদত্ত যে ইসলামে গর্ভ নিরোধক পদ্বতিসমূহের অনুমোদন ভ্রূণে প্রাণস্পর্শের পূর্বে গর্ভপাত করানোর দৃষ্টিভঙ্গিকে সমৃদ্ধ করে— মোটের উপর এসকল বিষয়াদি বিবেচনায় আমরা বলতে পারি যে গর্ভপাত ধর্মীয়ভাবে সহনীয় (পৃ. ৫৯)। ইসলামে সুফিবাদ ও অন্যান্য বৃহত্তর ইসলামি আদর্শ (সাম্য, জনস্বার্থ, বিশেষ পরিস্থিতিতে সহানুভূতি) নমনীয় আইনি নীতি মেনে চলার রায় দেয় যখন এই বিষয়ে মৌলিক আদর্শ/ নীতি কঠোর এবং বাস্তব অবস্থায় প্রয়োগযোগ্য নয়। এই আদর্শ

কোরআন ও সুন্নাহর সহজ বোধগম্যকরণ পূর্বক ব্যক্তি জীবনে নমনীয় প্রয়োগের অনুমোদন দেয় এবং ইসলামি আদর্শের উন্মুক্ততা উম্মোচন করে।১৯১ এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে গর্ভপাত একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ইস্যু। প্রতি বছর ব্যাপক সংখ্যক গর্ভপাত করানো হচ্ছে এবং এটা বেআইনি বলে কাজগুলো গোপনে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে করা হয়

যা মুসলমান মায়েদের জীবন বিপদগ্রস্ত করে তোলে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, হেদায়েদ ব্যাখ্যা করেন যে ২০০৫ সালে ইরান যেভাবে তার আইনকে উদারীকরণ করেছে সে ক্ষেত্রে এই যুক্তিটি খুবই প্রভাবশালী ছিল; ব্যাপক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করার দায়দায়িত্ব আংশিকভাবে সেই সকল স্কলারদের উপর পড়ে যারা ইস্তিস্লা

এবং ইস্তিহস্থান বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করেন। ইরানের একটা সামাজিক সমস্যা হলো সেখানে প্রতি বছর প্রায় ৮০০০০ হাজার অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ গর্ভপাত করানো হয় যার ফলে মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

তৃতীয়ত, প্রভাবশালী মহল যারা বৈধ, নিরাপদ ও সচরাচর দেখা যায় না এমন গর্ভপাতকে সমর্থন দেয়। বোয়েন (১৯৯৭) উল্লেখ করেন যে গর্ভপাতের আইনি সমর্থন দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র সরকারের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম দেশসমূহের আন্তর্জাতিক কমিটমেন্টের প্রতি আবদ্ধ থাকা উচিত। এর অন্য একটি কারণ হলো সৌদি আরব ও মিসর কতৃক প্রদত্ত ফতোয়ার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ পোষণ। এসব দেশ থেকে প্রদত্ত ফতোয়া পৃথিবীব্যাপী শ্রদ্ধার সাথে মেনে চলা হয়।১৯২ একইভাবে এই দেশসমূহে নীতি নির্ধারণের উপর আলোকপাত করা বিষয়ের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যদিও গর্ভপাত অধিকার অর্জনের কেন্দ্রে রয়েছে সরকার, তবুও ইসলামে সুবিধাভোগী দলসহ ডাক্তার ইসলামি নারীবাদীদের স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি একজন ধর্মতাত্ত্বিক ফজলুর রহমান যিনি বিশ্বাস করেন, গর্ভধারণের ১২০ দিনের মধ্যে গর্ভপাত করানো যায়, তিনি বলেন যে গর্ভপাত আইন উদারীকরণ করার ক্ষেত্রে নারীরা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।

অতএব, নীতি প্রণেতাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কোনটি সর্বসাধারণ দ্বারা গ্রীহিত হবে এবং সেই বিষয়সমূহের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে যেগুলো নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য। এ ক্ষেত্রে বলা যায় উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে পরিবার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গর্ভপাতকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা বা প্রজনন অধিকার সংরক্ষণের জন্য রায় দেওয়া কখন সফল হয়নি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, যদি ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা অধিকার ভিত্তিক বায়োএথিকস হিসেবে বর্ণনা করা যায়, তবে ইসলামি বায়ো এথিকস হবে কর্তব্য এবং দায়িত্ববোধ মূলক।১৯৩ তদস্থলে গণস্বাস্থ্য (ইসতিসলাহ-এর উপর ভিত্তি করে)এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক

সম্ভাবনাময় হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তিউনিসিয়ায় গর্ভপাত আইন উদারীকরণ ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জন্মহার কমিয়ে আনা কেন্দ্রিক।

উপসংহার নয় মোটেই

ইসলামি চিন্তা এবং গর্ভপাত আইনের ক্ষেত্রে মুসলমান প্রধান দেশসমূহে বৈচিত্র্য সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। আল অজমেহ১৯৪, ১৯৯৬; পি. ১) বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘যত বেশি পরিস্থিতি/ সিচুয়েশন তত বেশি ইসলাম’। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান সম্পর্কিত অনুসন্ধানে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হয়, যদিও ইসলামি আইনি বিজ্ঞান সরাসরি গর্ভপাতকে উৎসাহিত করে না, তবে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোরআন এবং সুন্নাহর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞার কথাও বলা হয় না। তাছাড়াও গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে বহুরৈখিক, অনেক ইসলামি বিজ্ঞজন/ মুফতি ভ্রূণের বিভিন্ন অবস্থার বিকাশের স্তরের উপর ভিত্তি করে গর্ভপাত অনুমোদন দিয়ে থাকে। সুস্পষ্টত সুনির্দিষ্ট পরিস্তিতিতে ইসলামি আইনসমূহ গর্ভপাত অধিকারের সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। বিশেষ করে সবচেয়ে ন্যূনতম অপরাধমূলক গর্ভপাত হলো অতীব প্রয়োজন। তাগিদ বিবেচনা করা (মায়ের জীবন যখন মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে) এবং যখন গর্ভাশয়ে ভ্রূণের বয়স ১২০ দিনের কম।১৯৫

মুসলিমপ্রধান দেশসমূহের গর্ভপাত আইন বিশ্লেষণে দেশসমূহের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি পরিদৃষ্ট হয় যেখানে ৪৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ১৮টি দেশ আইনানুগ ব্যবস্থা হিসেবে গর্ভপাতের অনুমোদন দেয় যখন মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে (নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের নিমিত্তে গর্ভপাত অনুমোদনযোগ্য নয়, তাছাড়া ধর্ষণ,

ভ্রূণগত ত্রুটি অথবা আর্থ-সামাজিক কারণেও নয়)। তথাপি বিশ্বের ৪৭ মুসলিমপ্রধান দেশে গর্ভপাত অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য কম প্রসংশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে যে ১০টি মুসলিম দেশ গর্ভপাত অনুরোধ সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয় যা গর্ভপাত অধিকারের প্রশ্নে জাপান, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইউ কে-র চেয়েও বেশ শিথিল। মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে এ বিষয়ে যে বৈচিত্র্য বা বিভাজন পাওয়া যায় তা আশিংকভাবে ইসলামের অবস্থানগত কারণে হয়ে থাকে অথবা সে সব দেশে ইসলামি শরিয়া আইন প্রচলিত কিনা সে সব বিষয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে (যেমন ইরান)। অথবা শরিয়া আইনের পাশাপাশি সাধারন সে সবদেশে প্রচলিত কিনা তা উপরেও অনেকাংশে নির্ভরশীল (যেমন সৌদি আরাবিয়া)।

এই আর্টিকেলে মুসলিমপ্রধান দেশসমূহের জন্য নীতি প্রনয়ণের কথা বলা হয়েছে যা বর্তমানে শুধু নারীর জীবন রক্ষার জন্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইয়েমেন এবং অন্য ১৫টি দেশ।) বিশেষ করে বেশ সহজ গর্ভপাত আইন অর্জন করা যেতে পারে সাধারণ মানুষদের কোরআন এবং সুন্নাহ্ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে যেমন মনে করা হয় কোরআন ও সুন্নাহ পরিপূর্ণভাবে গর্ভপাতবিরোধী, এ ক্ষেত্রে তারা বেশ সস্তা ব্যাখ্যার আশ্রয় নেয় যা এক ধরনের ইসলামি গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পোষণ করে থাকে। সুতরাং দেখা যায়, মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে মতামতের ভিন্নতা অথবা বহু মতবাদ বিরাজিত থাকে যা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের পলিসি বাস্তবায়নের কৌশল প্রয়োগ দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়, সুতরায় পলিসি ফ্রেমিংটাও দেশভিত্তিক আলাদা হওয়া উচিত।

অবশ্য গর্ভপাতের সাথে সম্পর্কিত সামাজিক মূল্যবোধ ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা দূর করার জন্য এবং গর্ভপাত অধিকারে সবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করার জন্য ঐ সকল দেশে অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গসমূহ অনুসন্ধান করা উচিত।

ভবিষ্যৎ গবেষণার ক্ষেত্রে গর্ভপাত বিষয়ে শিয়াদের অবস্থান নিয়ে আরও অনুসন্ধান করা যেতে পারে। মোটের উপর যেহেতু ইসলামি বায়োএথিকস্ অবহেলিত একটি বিষয় সুতরাং সংখ্যালঘু শিয়াদের গর্ভপাত বিষয়ে নিজস্ব ধারণা অনেকটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে। অধিকন্তু এটা খুবই উপকারি হবে যদি মুসলিম বিশ্বাসীদের এবং ধর্মীয়

নেতাদের উপর ব্যাপক সার্ভে করা যাতে তাদের গর্ভপাত সম্পর্কিত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারা যায়। এটা করতে গিয়ে ওয়ার্ল্ড ভ্যালু সার্ভে গর্ভপাতের উপর একটি মাত্র প্রশ্ন তৈরি করেছেন যেমন : এটা ১ থেকে ১০ স্কেলে পরিমাপযোগ্য কোনো চর্চা কিনা?১৯৬

এই উপাত্তসমূহের সম্প্রসারণ ব্যক্তির ব্যক্তির চর্চা, যুক্তি প্রদর্শন এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক অসঙ্গতি বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হতে পারে। ধর্ম পালনকারীদের রিপোর্ট এবং তাদের বাস্তবচর্চার মধ্যে তফাত বোঝার ক্ষেত্রে ক্রিটিকাল ডিসকোর্স বিশ্লেষণ হতে পারে একটি কার্যকর পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি। (যেমন, কেন অধিক সংখ্যক নারী ইসলামে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কারণে গর্ভপাত করে থাকে?)। এছাড়াও মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে উদার গর্ভপাত আইনের সাথে যে সব বিষয় সম্পৃক্ত রয়েছে তা বোঝার ক্ষেত্রে পরিদৃষ্ট বিশ্লেষণ বা ইমপিরিকাল এনালাইসিস একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হতে পারে।

যেসকল বিষয় উদার গর্ভপাত আইন বিনির্মাণে পরিপূরক হিসাবে কাজ করে সেগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিবার পরিকল্পনার সমন্বয় (বীর্য উইথড্রয়াল, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভধারণ পূর্ব-কাউন্সিলিং, পিল গলাধঃকরণ, দীর্ঘস্থায়ী গর্ভনিরোধক প্রক্রিয়া এবং বন্ধ্যাকরণ ব্যবস্থাপনা) বিষয়ের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে।

ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে গর্ভপাত আইন এবং মুসলিমপ্রধান দেশসমূহে গর্ভপাত আইনের বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি সম্পর্কিত আমার প্রাপ্ত ফলাফলের পাশাপাশি এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত আর একটি সাধারণ বিষয় উন্মোচন করা যেতে পারে তা হলো, নারীর বায়োএথিক্যাল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ধর্ম সম্পর্কে গভীর এবং তার পরিস্থিতিভিত্তিক বিভাজিত নীতি কাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রকৃত প্রস্তাবে বিশ্বে গর্ভপাত নীতি বিশ্লেষণ এবং গবেষণা এবং বিশ্বেও ৪৭টি মুসলিম দেশ, অধিক সফল এবং সংবেদনশীল নীতি প্রণয়নের স্বার্থে অবশ্যই ইসলামিক ডিসকোর্সসমূহ বিবেচনায় রাখবে।

হাসান১৯৭ তার জ্ঞানগর্ভ উপস্থাপনায় বলেন, আধুনিক ইতিহাসের বাস্তবতা পশ্চিমা সমাজ বিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে যার ফলে তারা এখন ঐক্যমত পোষণ করেছে যে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের জন্য এবং মূল্যায়নের জন্য যে সামাজিক অনুষঙ্গসমূহ বিবেচনায় আনা দরকার তার মধ্যে ইসলাম অন্যতম।

তথ্যসূত্র

১২৬ বাকের এট অল. ১৯৮১; হারটেল ও হাগস ১৯৮৭; সেনকার ২০০০; হেসেনিই ২০০৮;

পাডেলা এট অল. ২০১১

১২৭ বেরার ২০০৪ পি

১২৮ WHO, ২০১৪

১২৯ ডব্লিইউএইচও ২০১১

১৩০ রোয়েমার, ১৯৬৭

১৩১ সিং এবং রত্নাম ১৯৯৮, ব্রুকম্যান-এমিস এবং মায়ো ২০০৪

১৩২ আইসিডিপি দি প্রগ্রাম অব অ্যাকশন অব দা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন এন্ড

ডেভেলপমেন্ট

১৩৩ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০১১

১৩৪ সিং ও রত্নাম ১৯৯৮, পি. এ১২৩

১৩৫ বেরার, ২০০৪.

১৩৬ জিওকেস এট অল, ২০০৫.

১৩৭ ডিএফআইডি, ২০০৫

১৩৮ ব্রকপ, ২০০৩

১৩৯ পিউ রিসার্স সেন্টার ২০১১

১৪০ বেকার এট অল ১৯৮১; হারটেল এবং হাগহেজ ১৯৮৭; বুনস্ট্রা ২০০১

১৪১ হেইসিনি ২০০৮

১৪২ বুনসষ্ট্রা ২০১১

১৪৩ রাজ্জাক এট অল ২০১১

১৪৪ ধর এট অল ২০০৮

১৪৫ হাসান, ২০০১, পি ৬৮

১৪৬ হেসিনি, ২০০৮

১৪৭ ব্রকপ ২০০৩

১৪৮ আরবর এবং রগারস ১৯৯৯

১৪৯ কার্টজ ২০০৩

১৫০ কার্টজ ২০০৩, পৃষ্ঠা : ২৮

১৫১ কোরআন, ২৩, ১২-৪

১৫২ মুসাল্লাম, ১৯৮৩

১৫৩ আসমান, ২০০৪

১৫৪ নাসির ও আসনাওই,

১৫৫ ব্যারেট এট অল, ২০০১

১৫৬ জুবাইদা ২০০৩

১৫৭ হেদায়েত এট অল, ২০০৬

১৫৮ কার্টজ,২০১৩

১৫৯ ব্যারেট এট অল ২০০১; জুবাইদা ;২০০৩

১৬০ বোয়ের ২০০৩

১৬১ মুসাল্লাম, ১৯৮৩

১৬২ আল হিবরি, ২০১১; নাসির ও আসনাওয়ী, ২০১১

১৬৩ আটিগাচি, ২০০৭

১৬৪ রিসপ্লার-চাইম, ২০০৩

১৬৫ ব্রকপ, ২০০৩

১৬৬ ব্রাউন, ১৯৯৯, পৃ. ১৮৭

১৬৭ কার্টস, ২০০৩

১৬৮ কার্টস, ২০০৩ পৃ. ৪৩

১৬৯ বোওয়েন, ২০০৩

১৭০ রিসপ্লার–চাইম, ২০০৩; ব্রকপ, ২০০৮

১৭১ আউটকা, ২০০৩

১৭২ কুনিনি এবং রোসেনফিল্ড, ১৯৯১; ম্যাকব্রাইড স্টেটসন, ২০০১

১৭৩ পপভ, ১৯৯৪

১৭৪ এটিগেচি, ২০০৭

১৭৫ বুনন্সষ্ট্রা, ২০০১, পি. ১

১৭৬ হেসিনি, ২০০৮

১৭৭ হেসিনি, ২০০৮; আই ডব্লিউ আর এ ডব্লিউ ১৯৯৮

১৭৮ হেসিনি, ২০০৮; পৃ. ২৪

১৭৯ হাসান, ২০০১; পৃ. ৬৪

১৮০ হাসান, ২০০১

১৮১ বোয়েন, ১৯৯৭; হাসান, ২০০১

১৮২ বোয়েন, ১৯৯৭; পৃ. ১৭৮

১৮৩ বোয়েন, ২০০৩, পৃ. ৭০

১৮৪ কর্নওয়েল এট অল, ২০০৮

১৮৫ মোহাম্মদ, ২০০৩

১৮৬ বুনস্ট্রা, ২০০১

১৮৭ হাসান, ২০০১

১৮৮ ব্রকপ, ২০০৩

১৮৯ রেইনহাটর্, ২০০৩

১৯০ বোয়েন, ২০০৩, পৃ. ৭৫

১৯১ ব্রাউন, ১৯৯৯, পৃ. ১৯২

১৯২ এটিগ্যাচি, ২০০৭

১৯৩ এটিগাচি, ২০০৭; দার এট অল, ২০০৮

১৯৪ আল অজমেহ, ১৯৯৬; পি. ১

১৯৫ বোয়েন, ২০০৩; কাটর্জ, ২০০৩; হেদায়েত এট অল., ২০০৬

১৯৬ ডাব্লিউ ভি এস, ২০১২

১৯৭ হাসান, ২০০১; পৃ. ৬৮

 

+ posts

Read Previous

জলছবির প্রতিচ্ছবি

Read Next

শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল, অনুপ্রাণন, ৪র্থ সংখ্যা (এপ্রিল-২০২৩)

One Comment

  • খুব ভালো লিখা। বই আকারে কবে আসবে। এক বসাতে জেন প্ড়তে পারি। নিঃস্ংকোচে বল্ব, অসাধারণ লিখনি। গভীর পড়াশ্যনা না থাক্লে এমন লিখা জায়না। স্যালুট সাব্যসাচী জাহিদ সিরাজ। উনার ইংরেজি বইগুলা বাংলা করে দেয়া জায় কি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *