ছোটগল্প সাহিত্য মাধ্যমের এক বৈপ্লবিক অধ্যায়। এর ইতিহাস খুব বড়ো নয়। ছোটগল্পের পথচলা শুরু হয় পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বর্ণকুমারী দেবী, নগেন্দ্রগুপ্ত প্রমুখ লেখকের হাত ধরেই। মূলত, ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয়-চতুর্থ দশকেই ছোটগল্পের পথ চলা শুরু। মুখে মুখে গল্প বলা বা গল্প শোনার প্রবণতা মানুষের মাঝে প্রাচীনকাল থেকেই। কিন্তু এর শিল্পরূপের সৃষ্টি ঊনবিংশ শতাব্দীতেই। কবিতা, নাটক, উপন্যাস এমনকি প্রবন্ধেরও বেশ পরে ছোটগল্পের পথ চলা শুরু হয়।
রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছোটগল্পকে একটা ব্যাকরণের মধ্যে নিয়ে আসলেও অনেকে তাঁর প্রথার বাইরেও ছোটগল্পের চর্চা চালিয়ে যান। এতে করে ছোটগল্পের আঙ্গিক বদলেছে কিন্তু এর আকর্ষণ মোটেও না কমে বরং আরও বেড়ে গেছে। আর এ কাজগুলো যারা করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন কারিগর ছিলেন জগদীশ গুপ্ত। বলা হয়ে থাকে, বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের শিল্পীদের যদি ক্রমানুসারে সাজানো হয়, তাহলে জগদীশ গুপ্তকে প্রথম দিকেই পাওয়া যাবে।
জগদীশ গুপ্ত ছিলেন একজন নির্লিপ্ত আত্মবিশ্বাসী সাধক। তিনি যখন লেখালেখি শুরু করেন তখন ‘কলেস্নাল’ সময়। সেই সময় রবী ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বলয়ের বাইরে একগুচ্ছ টগবগে সাহিত্যিকেরা কিছু একটা করে যাচ্ছেন। শরৎচন্দ্রের তখন সাবলীল পদক্ষেপ তিনি খুব সহজেই বাংলা সাহিত্যের হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছে। ঠিক তখনই নিজেকে কলেস্নালিত না করে জগদীশ গুপ্ত নিজের প্রতিভা নিয়ে, নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
অথচ তিনি যদি সামান্যতম কলেস্নালিত হতেন তাহলে এখন, এই যুগে জগদীশ গুপ্তকে চিনতে কষ্ট করতে হতো না, তিনি তখন তাঁর সাহিত্যে অন্য পথের পথিক। তাঁর লেখায় তিনি তখন তাঁর নিজের লব্ধ জ্ঞান ও অবস্থানকেই কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি তাঁর সাহিত্যে মনুষ্যপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম কিংবা সৌন্দর্য-সাধনাকে পাশ কাটিয়ে তার গল্প-উপন্যাসগুলোতে মানব চরিত্রের জটিল আলো-আঁধারির দিকগুলো চিহিৃত করতেই ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘মানুষের বিচিত্র প্রবৃত্তির সঙ্গে যার যতো পরিচয়, যতো অন্তর্দৃষ্টি, তার গল্প ততো বিচিত্র হইবে।’
তিনি নিজের জীবন থেকে দেখে এবং শিখে তাঁর সাহিত্য রচনা করেছিলেন, যা শুধু সাহিত্যরস সম্বলিত না রেখে জীবন বোধের তীব্রতাকে তুলে ধরেছিল। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টি ছিল স্বচ্ছ এবং কঠিন মাপকাঠির এক উদার উদাহরণ যা তাঁর ‘বিধবা রতিমঞ্জরী’ গল্পে ফুটে উঠে। এই গল্পে তিনি এক অল্পবয়স্ক নারীর পুরো অধিকার এবং সে সময়ের কঠিন সমাজকে থোড়াই কেয়ার করে তার বিদ্রোহকে তুলে ধরলেন। রতিমঞ্জরী বিধবা হয়ে তার নিজের বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিলো। অর্থাৎ সে তার যৌবনকে কখনোই অস্বীকার করে নাই। স্বামীর মৃত্যুর এবং সৎকারের পর তার ছোটো বোনের সাথে আলাপচারিতায়ও তা স্পষ্ট। বোনের এক জিজ্ঞাসায় রতির উত্তর ছিল, ‘আয়নার ভিতর নিজেকে দেখছিলাম। দেখতে বেশ হয়েছি।’ একই গল্পে তিনি মৃতের শ্রাদ্ধকে নিয়ে যেভাবে লিখলেন তা তাঁর সাহসের প্রকাশ। শ্রাদ্ধের ঘটনায় তাঁর বর্ণনা হলো, ‘মোটের উপর অক্ষয়ের শ্রাদ্ধে ঘটা হলো ভালোই- লোক খেলে অনেক; এবং লোকে বললো, পতিব্রতার পতিনিষ্ঠার দরুনই সব তরকারি নুনে-ঝালে মুখরোচক এবং লুচি নরম এবং মিষ্টান্ন প্রভৃতি সুমিষ্টই হয়েছে। ব্রাহ্মণগণ ভোজন দক্ষিণা পেয়ে আরও সদ্ব্যবহার করলেন- সতীর শান্তি কামনা এবং অক্ষুণ্ন ব্রহ্মচর্যের উপর আশির্বাদ বর্ষণ করলেন।’ তখনকার কঠিন ধর্মীয় অনুশাসনের সময়েও কিরকম সাহসী অথচ তীর্যক লেখা। যা বর্তমানে চিন্তার অবকাশ রাখে।
নারীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং নারীর প্রয়োজনের কথা একই গল্পে বারবার উঠে এসেছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন- ‘পুরুষ বিপত্নীক হলে তাকে বিপত্নীক সেজে থাকতে হবে, এমন কোনো প্রথা নেই – নারী বিধবা হলে তার বিধবা সাজবার একটা তোড়জোড়ই দেখা যায়।’ কী বিদ্রোহী উক্তি এবং কত সহজে তৎকালীন সমাজকে নাড়া দেওয়া। তার লেখায় তিনি রতিকে তার শেষ বিদ্রোহ হিসেবে গণিকাবৃত্তি গ্রহণ করালেন।
শ্রী শঙ্কর কুমার চট্টোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তর স্ত্রী চারুবালার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর লেখায় সৃষ্ট চরিত্র সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন, যাতে তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন, ‘সরাসরি কাদের দেখে বা কীভাবে উনি চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন সে কথা বলা মুশকিল, তবে আমার মনে হয় আদালতের মামলার নথিপত্র নিয়ে কাজ করার সময় তিনি এই সব পাপী লোকদের খোঁজ পেয়ে থাকবেন। এছাড়া একটা বিষয় আমি আমার শাশুড়ির মুখে শুনেছিলাম। আমার শশুরবাড়ির খুব কাছেই, মানে বাড়ির জানালা দিয়ে দেখা যেতো- একটা ছোট পতিতাপল্লি ছিল। পরে আগুন লেগে ওদের ঘরগুলো পুড়ে যায়, তারাও কোথাও চলে যায়। খুব ছোটো বয়সে অন্তত ওঁর ৩/৪ বৎসর পর্যন্ত এই পতিতাদের কেউ কেউ ওঁকে খুব আদর যত্ন করে সারাদিন কাছে কাছে রেখে দিতো।
একবার ছোটবেলায় উনি ড্রেনের মধ্যে পড়ে যান। ওরাই ওঁকে ড্রেন থেকে তুলে বাঁচায়। ছোটো বয়সের দেখা এই পতিতারা ওঁর শিশু মনে হয়তো কোনো ছাপ ফেলেছিল যা পরে ওঁর সাহিত্যিক জীবনে কাজ করেছে। এছাড়াও ওঁর আর একটা অভ্যাস দেখেছি। যেটা আমার নিজেরও একটু অদ্ভুত ঠেকতো। তখনতো পর্দা প্রথা ছিল। কখনো হয়তো একগলা ঘোমটা দিয়ে ওঁর সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়েছি । দুজন নিম্নশ্রেনির পুরুষ বা মেয়েমানুষ রাস্তায় ঝগড়া করছে, উনি দাঁড়িয়ে পড়ে যতক্ষণ সম্ভব ঐ ঝগড়া শুনতেন। আমাকেও রাস্তায় ঐভাবে ঘোমটা মাথায় কলাবউ এর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। (স্ত্রীর চোখে লেখক জগদীশ গুপ্ত’ “বারোমাস শারদীয়” অশোক সেন সম্পাদিত পৃ-৪৫] আমার সংগ্রহ “জগদীশ গুপ্তর গল্প -এর নতুন সংস্করণ প্রসঙ্গ থেকে” )।
তার ‘পয়োমুখম’ গল্পটি বাংলা সাহিত্যে বিপরীত রসে অর্থাৎ নির্মোহ আবেগের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। কবিরাজ কৃষ্ণকান্ত তার ভেতরের লোভ চরিতার্থ করার নিমিত্তে পুত্র ভুতনাথের স্ত্রী বিয়োগ এবং পুনঃপুনঃ বিবাহের গল্প। কৃষ্ণকান্তের মূল উদ্দেশ্যই ছিল পণ আদায়ে। পরপর দুইবার দুই পুত্রবধুর রহস্যজনক পেটের ব্যামোর কারণে মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তৃতীয় পুত্রবধুর ক্ষেত্রে কবিরাজ তার পুত্রের নিকট ধরা পড়ে যান। গল্পের শেষটি নাটকীয় এবং অনবদ্য। যেমন, ‘ভুতনাথ সেদিকে দৃকপাতও করিল না, একটু হাসিয়া বলিল, এই বউটার পরমায়ু আছে, তাই কলেরায় মরল না বাবা। পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন। বলিয়া সে ঔষধ সমেত হারতর খল আড়ষ্ট কৃষ্ণকান্তের সম্মুখে নামাইয়া দিলো।’
তিনি তাঁর রোমান্টিক গল্পেও না পাওয়ার বেদনাকে খুবই সুক্ষ্মভাবে তার ‘অরুপের রাস’ গল্পের চিত্রায়ন করেছেন। এই গল্পের প্রেক্ষাপট বিচারে জগদীশ গুপ্তের গল্পে রোমান্টিকতা নেই তাই-বা বলি কীভাবে। এই গল্পে রানুর প্রেমকে তিনি যেভাবে দেখিয়েছেন তা অভূতপূর্ব। রানুর যখন বিয়ে ঠিক হচ্ছে এবং পাত্রপক্ষ তাকে দেখতে এসেছে, সে দৃশ্য উপভোগ্য। কিংবা রানুর সুপ্ত ভালোবাসার দিক স্পষ্টতই প্রকাশ পায় যখন রানুকে দেখতে আসার আয়োজনের মিষ্টান্ন খেতে কানুর আগ্রহ দেখে এবং শেষে তা কুকুরের মুখে নিক্ষিপ্ত হয় কিংবা উপহার লেখা মানপত্র আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে।
গল্পের শেষের দিকে কানুর স্ত্রী ইন্দিরার মাধ্যমে কানুর স্পর্শের অনুভব করা এ এক চমৎকার বর্ণনা। তিনি খুবই চমৎকার ভাবে এখানে তাঁর গল্পের সমাপ্তি ঘটান। যেমন, ‘ইন্দিরার অঙ্গ হইতে আমার স্পর্শ মুছিয়া লইয়া সে ত্বক রক্ত পূর্ণ করিয়া লইয়া গিয়াছে। …এবং সর্বশেষ দুটি শব্দ দিয়ে তিনি গল্প শেষ করেন …আমি তৃপ্ত। ভালোবাসার এক চমৎকার রসায়ন। যেখানে দুজন কাছাকাছি না থেকেও পরস্পরের উপস্থিতি খুঁজে পাচ্ছে।
জগদীশ গুপ্তের বিভিন্ন গল্পে বিভিন্নভাবে মানবের সম্পর্কিত অবস্থান উঠে এসেছে। যেমন ‘চন্দ্র সূর্য যতদিন’ গল্পে শাশুড়ির আদেশে ছোটো বউয়ের লুব্ধ স্বামীর শয্যাসঙ্গিনী হতে হয়েছে বড়ো বউকে, যার ফলশ্রুতিতে নিজের প্রতি বিতৃষ্ণায় তার মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে। ‘পারাপার’ গল্পে সতীত্ব গর্বে গর্বিতা স্ত্রী বাসার কাজের মেয়েকে স্বামীর জুতা স্পর্শের জন্য তিরস্কার করেন। অথচ তিনি জানেনই না তার পতি দেবতা একান্তে ঐ মেয়ের পদসেবা করে। জগদীশ গুপ্তের অবলোকন কতটা সূক্ষ্ম হলে তিনি ‘পৃষ্ঠে শর লেখা’ গল্পে পুত্রের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্রিকে পিতার নিজের পছন্দ হলে তাকে বিবাহ করেন। কিংবা ‘লোকনাথের তামসিকতা’ গল্পে সূক্ষ্মভাবে হিংসাকে চিত্রায়িত করেন এইভাবে যে, তিনি পুত্রের জন্য সুন্দরী পাত্রী নির্বাচন করেও পরে বাতিল করেন, কেননা তার নিজের স্ত্রী সুন্দরী নয়।
প্রবৃত্তির নিকুষ্ট এবং নগ্ন চিত্র তিনি এঁকেছেন তার ‘শঙ্কিত অভয়া’ গল্পে। স্ত্রী অভয়া বুঝতে পারেন তার স্বামী কন্যাকে মুক্তমনা হিসেবে গড়ে তুলতে চান। একদিন স্বামী ও কন্যা সিনেমা দেখে ফিরলে, স্ত্রী অভয়া কন্যাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন, স্বামী তাকে নষ্ট করেছে কিনা। গল্পের এই অংশটি সমাজের মূল্যবোধে প্রচন্ড আঘাত করার মতো। মায়ের প্রশ্নে বিস্মিত মেয়েটি জানতে পারে যে, তাকে নিয়েই তিনি এই স্বামীর সাথে কুল ত্যাগ করেছিলেন। সুতরাং, বাবা ও মেয়ের কোনো রক্ত-সম্পর্ক নেই যা কন্যা না জানলেও তার বাবা জানেন। এই একই ব্যক্তি যদি তাকে মুগ্ধ করতে পারে তবে নব যুবতি কন্যাকে কেন নয়। এইখানেই ছিল জগদীশ গুপ্তের সমাজ অবলোকন বৈশিষ্ট্য। তিনি কতো সুক্ষ্মভাবে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অলক্ষ্য এই অবিশ্বাস ও দূরত্বকে আবিষ্কার করেছিলেন।
অন্য আর দশজন সাহিত্যিকদের মতোই জগদীশ গুপ্তও প্রথম জীবনে কবিতা লিখেই তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু করেছিলেন। সম্ভবত তাঁর দুটো কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল, যথাক্রমে ‘অক্ষরা’ (১৯৩২) এবং ‘কশ্যপ ও সুরভী’। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটি তিনি রবীন্দ্রনাথের নিকট প্রেরণ করেছিলেন এবং তার এই কাব্যগ্রন্থটির বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত আছে।
জগদীশ গুপ্তর প্রথম গল্প ‘পেয়িং গেস্ট’ যা ১৩৩১ বঙ্গাব্দে ‘বিজলি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি উপন্যাস লিখলেও উপন্যাসের প্রতি তেমন মনোযোগী হতে পারেননি। কারণ তাঁর জীবন বোধের প্রকাশের উপযুক্ত মাধ্যম ছিল ছোটগল্প। তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘উপন্যাস লেখা আমার পক্ষে দুরুহ – অসম্ভবই।’ তথাপি তাঁর কলম থেকে বেশ কয়েকটি উপন্যাস রচিত হয়েছিল, যেমন ‘নন্দ আর কৃষ্ণ’ ‘লঘু – গুরু’ ‘মহিষী’ ‘দুলালের দোলা’ ‘তাতল সৈকতে’ ‘নিদ্রিত কুম্ভকর্ণ’ ইত্যাদি।
এছাড়াও তাঁর একটি অপ্রকাশিত নাটক রয়েছে যা ‘নিষেধের পটভূমিকায়’। (সংগ্রহ সুত্র : জগদীশ গুপ্তর রচনাবলী ১ম ও ২য় খন্ড) তিনি কথাসাহিত্যিক হিসাবে ছিলেন প্রচন্ড বাস্তববাদী। তাঁর লেখায় ঘটনা ছিল, বাস্তবতা ছিল কিন্তু রোমান্টিকতায় ছিল যথেষ্ট অনুপস্থিতি। জীবনের নির্মম সত্যনীতি – মুল্যবোধ– সংস্কারের সমস্ত আবরণ ভেদ করে তাঁর গল্প ঝলসে উঠে। তাইতো তিনি তেমনভাবে আলোচিত নন। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে বলেন,
‘দেয়ালে কপাল ঠুকে নিজেকেই জন্মাবে আবার কোনোক্রমে / তোমারই এ – ইচ্ছা ছিলো। পাওনি কোথাও অভ্যর্থনা। / ঠাণ্ডা করে রাখোনি অথচ কুঁজো ভীষণ গরমে; / সব জল গন্ধ করে দেবে, তোমার তা বাঞ্চিত ছিলোনা।’ ইত্যাদি (আংশিক) (অর্ধেক শিকারী, ১৩৮২)
কিন্তু সুখের বিষয় হলো, এই বাস্তববাদী সূর্যের তেজের মতো লেখক বর্তমানে আলোচনায় আসছেন। তাঁকে নিয়ে কাজ হচ্ছে। তাঁকে নিয়ে ‘জগদীশ গুপ্ত ; কথাসাহিত্যে বিপরীত স্রোত’ এই শিরোনামে লিখেছেন সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। এছাড়াও শঙ্কর কুমার চট্টোপাধ্যায়, দাউদ হায়দার, জুলফিকার মতিনের কথাও উল্লেখ্য। আবুল আহসান চৌধুরীর ‘জগদীশ গুপ্ত’ (১৯৮৮) এবং আমাদের আর একজন কৃতি ড. সরকার আব্দুল মান্নান তাঁর উপর বিষদ গবেষণা করেছেন ।
জগদীশ গুপ্ত সময়ের স্রোতে হয়তো কিছুটা স্তিমিত হয়েছিলেন কিন্তু হারিয়ে যাননি। তাঁকে নিয়ে লিখলে ঢাউস বইয়ের সৃষ্টি হবে। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে লেখা শেষ হবে না। জগদীশ গুপ্তর জীবন বোধ সম্পন্ন লেখা আবারও ঔজ্জল্য ছড়াক এইটাই আমার কামনা।
বি. দ্র.- ‘কল্লোল’ একটি সাহিত্য পত্রিকা, এর সময়কাল ১৯২৩-১৯২৯-এ সময়কে কলেস্নাল যুগও বলা হয়। এ সময় কয়েকজন বাঙালি লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বাইরে সরে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছিলেন। কলেস্নাল সময়কালে বাংলা সাহিত্যে প্রভাবশালী আন্দোলন দানা বাঁধে; যা বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত করে। কলেস্নাল লেখকদের অন্যতম ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম ও বুদ্ধদেব বসু।