অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
মে ১, ২০২৪
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মে ১, ২০২৪
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খসরু পারভেজ -
এলিজা খাতুনের  “চিটেধান, প্রার্থনামগ্ন মাটি”

নতুন বইয়ের ঘ্রাণ-১
বইমেলা ২০২৩ এ ‘অনুপ্রাণন’ থেকে প্রকাশিত এলিজা খাতুনের নবম কাব‍্যগ্রন্থ ” চিটেধান,প্রার্থনামগ্ন মাটি”।

এলিজা খাতুন মাটিলগ্ন কবি। তিনি ভালো গল্প লেখেন। এপর্যন্ত তাঁর পাঁচটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গল্পে তিনি শোষিত, বঞ্চিত মানুষের কথা বলেন বরাবরই। কবিতার ক্ষেত্রেও তিনি ব্রাত‍্যজীবনের কাছে নিবেদিত। জীবনযন্ত্রণায় দগ্ধ সমাজের অন্ত‍্যজশ্রেণির আশা-আকাঙ্খা তাঁর শিল্পীত চেতনায় ধরা পড়ে। কাব‍্যগ্রন্থের উৎসর্গপত্রেও তার যথার্থ প্রমাণ মেলে। তিনি লিখেছেন, “সেদ্ধধানের ভাপে যাদের সমস্ত মুখ কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর হয়ে ওঠে,অথবা তুষপোড়া আগুনের আলোয় যাদের চোখের কোণে গোধুলি জমতে থাকে তাদের প্রতিফোঁটা ঘামবিন্দুর প্রতি”  উৎসর্গপত্রের এ অভিব‍্যক্তিই বলে দেয় কবি তাঁর কাব‍্যগ্রন্থে কতখানি হৃদয়সংবেদী।

এলিজার কবিতা মৃত্তিকাগন্ধী। জীবন ও মাটির প্রলেপ মাখানো এসব কবিতা জীবনের ভাঁজ খুলে খুলে আমাদেরকে দেখায়। শিরোনামীয় কবিতায় কবি বলেছেন:

 ” লাঙল ফলার কর্ষণে কতখানি ব‍্যথা, জানে মাটি
   কতটা সহনীয় হলে বৃক্ষ শেকড় ছড়ায়
   কতটা বুকের রক্ত নিংড়ে দিলে ধানের অন্তঃকোণে
   দুধ জমা হয় — মাটি জানে ও মানে

  …

  মাটির মতো দরদী কে আর আছে!
  তুমুল কর্ষণের অপেক্ষায় পৃথিবীর জমিন ও সময়”

                                   ( চিটেধান,প্রার্থনামগ্ন মাটি )

মাটির প্রার্থনায় চিটেধান পরিপুষ্ট হয়, দুধ জমে হয় ধান; যা আমাদের জীবনকে বাঁচায়। মাটিই তো শত যন্ত্রণা সহ‍্য করে ফসল ফলায়, ফুল ফোটায়। ধানের ভেতরে জমে থাকা দুধ সে তো মাটির রক্ত।  মাটি চায়,- মানুষ তাকে ভালোবাসুক, সমীহ করুক। কী চমৎকার বোধ!

এলিজার কবিতায় যতখানি কবি-কল্পনা, শিল্পের মাধুরী, তার চেয়ে বেশি সমকালের প্রভাব। সময়ের ক্ষরণ। দুর্বৃত্তসময়ে পৃথিবীর অসুখ কবিকে বিচলিত করে। তিনি বলেন:

    ” বেড়ে চলেছে পৃথিবীর অসুখ
       খোলা মাঠ আর দিগন্তকে ছুটি দিয়ে
       মৃত‍্যুর নদী বয়ে যায় —- ভেতরে, বাহিরে”

                                                 ( অন্তর্গত আশ্বাস )


অথবা,

“স্বপ্ন-শরীর ছটফট করছে, কাতরাচ্ছে ভীষণ
 অবশেষে মারা যাবে হয়ত ঘাম চোয়া ক্ষত-বিক্ষত স্বপ্নেরা
 চার রাস্তার মোড়ে কিছু জীবন্ত স্বপ্নদের
 অপেক্ষা -আহাজারী তবু দারুণ বিশ্বাসে!”

                                  ( শীঘ্রই আসবে অ‍্যাম্বুলেন্স )

সমকালে দ্রব‍্যমূল‍্যের উর্ধ্ব গতি, সাধারণ মানুষের হাহাকার কবির কবিতায় উচ্চকিত হয়। তিনি সরাসরি বলেন:

দ্রব‍্যমূল‍্যের আকাশচুম্বী তাণ্ডবে
     ক্ষুধা ও স্বপ্ন গুড়িয়ে শূন‍্যে মিশে গেলে
     মানুষের শরীরের মতো —
     হৃদয় কি কঙ্কাল হয়!

                                       ( কঙ্কাল )

এলিজার কবিতা কতখানি উসকে দেয় আমাদের ভেতরের বোধকে, এক টুকরো উদ্ধৃতিতেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে:

     ” জীবাণুরা মানুষের মাংসের ক্ষত খোঁজে
       মানুষেরা খোঁজে মানুষের হৃদয়ের ক্ষত
       যে পায় খুঁজে; সে-ই পারে সারিয়ে তুলতে

                                                  ( ক্ষত )

এলিজার কবিতায় উঁকি দেয় একফালি রোদ। সে রোদ ঘামঝরা সময়ের, ঐতিহ্যের স্মারক দাদার মাথোলের, শরণার্থীর প্রতি সহমর্মিতার। সে রোদ সুগন্ধি কুঁড়ির, মানুষের মঙ্গলের, শুভদিন প্রত‍্যাশার। সুসময়-সুদিনের জন‍্য কবির প্রতীক্ষা আমাদেরও  প্রতীক্ষা হয়ে ওঠে। তাঁর নিবিড় উচ্চারণ :

 “যারা সম্মুখে এগিয়ে গেছে ধাবমান শিখার মতো
  নদীর মতো যারা এঁকে গেছে আত্মোৎসর্গের পথ
  জীবনের সনদে ; যারা সীলমোহর লাগিয়ে গেছে-
  দাসত্বের জোয়ারের উপর, শৃঙ্খলের লজ্জার উপর
  অমন মুখ ভেবে প্রতীক্ষায় থাকি…”

                                                ( প্রবাহ-প্রতীক্ষা )

কবির প্রতীক্ষার অবসান হোক। ফিরে আসুক রৌদ্রঝলমল দিন।

এলিজার জন্মদিন এই ফেব্রুয়ারিতেই। ফেব্রুয়ারি আমাদের রক্ত ঝরানোর মাস, আশা-প্রত‍্যাশা জাগানিয়ার মাস। আমাদের তুমুল প্রতিবাদ-অগ্নিশপথের মাস। এ মাসেই প্রকাশিত এই কাব‍্যগ্রন্থ ও কাব‍্যগ্রন্থের স্রষ্টা এলিজা খাতুনকে অভিবাদন, জন্মদিনের বিলম্বিত শুভেচ্ছা । আগামীতে তাঁর কবিতা নিয়ে বিস্তারিত লেখার প্রত‍্যাশা রইল।”

লেখক- কবি, মধুসূদন গবেষক।

——————————————————-

কাব্যগ্রন্থ : চিটেধান, প্রার্থনামগ্ন মাটি

কবি :  এলিজা খাতুন
প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান

প্রকাশনা সংস্থা : অনুপ্রাণন প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য- ৳ ২৪০/-

 

২৫% ছাড়ে ঘরে বসে বইটি পেতে www.anupranon.com ভিজিট করুন অথবা ডায়াল করুন:০১৭৬৬-৬৮৪৪৩৬

 


কবি পরিচিতি:
এলিজা খাতুন, ১৯৮১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অরুণবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মহানন্দা নদীতীরে বেহুলা গ্রামে পৈত্রিক বাড়ি, বাবা- মো: মাসদুল হক, মা- মোসা: মাসকুরা বেগম। খুলনা ভিক্টোরিয়া স্কুলে প্রথম লেখাপড়া শুরু। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এসসি গণিত বিষয়ে পড়াশোনা। সাতক্ষীরা জেলা সদরে বসবাস এবং একটি মানব-সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘ঋশিল্পী’র হস্তশিল্প বিভাগে এক্সিকিউটিভ-এইচ.আর পদে কর্মরত।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : নৈঃশব্দ্য ছোঁয়া জল, মধ্যরাতের খামে, ভাঙনকাল, শ্রাবণ জানালা, রোদমাখা চিঠি, গহীনে দাহ, মুর্মূষু মোকামে, আরাধ্য পথের দিকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : বর্গামাটি, ভাটির টানে, আগুনগোঁজা মাটি, কৃষ্ণগহ্বর, রক্তসমুদ্র ও একুশ আখ্যান

সম্মাননা :
উতল হাওয়া সাহত্যি সম্মাননা ২০২০ (পশ্চমিবঙ্গ), সমতটের কাগজ গুনিজন সম্মাননা ২০২০, অক্ষরবৃত্ত পান্ডুলপি(কবিতা)পুরস্কার ২০২১, অপরাজতি প্রজন্ম সাহত্যি পুরস্কার ২০২২

Email : alizasat335@gmail.com

+ posts

Read Previous

মোজাম্মেল হক নিয়োগী’র ট্রিলজি: জীবনগল্পের বাঁকবদলের শৈল্পিক বয়ান

Read Next

লেখকের দায়, পাঠকের রুচি ও আবেগের বইমেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *