অনুপ্রাণন, শিল্প-সাহিত্যের অন্তর্জাল এ আপনাকে স্বাগতম!
এপ্রিল ২৮, ২০২৪
১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এপ্রিল ২৮, ২০২৪
১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নুসরাত সুলতানা  -
একুশ শতকের বাংলা সাহিত্যে নারীদের পদচারণা : সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা 

১৯৬৯ সালে শুরু হয়ে ৯০-এর দশকের শুরুর দিকে এসে বিশ্ব ইন্টারনেট নামক বৈশ্বিক ভার্চুয়াল যোগাযোগব্যবস্থার সাথে পরিচিত হয়। সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থা। সঙ্গত কারণেই এর প্রভাব পড়ে মানুষের জীবনযাপনসহ মনস্তত্ত্বেও।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের সাথে সাথেই আবিষ্কৃত হয় ইমেইল, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, ইয়াহু মেসেঞ্জার ইত্যাদি প্রযুক্তি। নব্বইয়ের দশক থেকেই কমতে থাকে বিশ্বে কাগুজে যোগাযোগ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ চলমান প্রক্রিয়া। সেই জার্নির হাত ধরেই সত্তরের দশকের শুরুর দিকে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদিত হয়। ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল মটোরোলা সবার আগে বাণিজ্যিকভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। সেটি ছিল দুনিয়ার ওয়ান জি মোবাইল ফোন বা জিরো জেনারেশন মোবাইল ফোন।

এরপর ১৯৮২ সালে ইউরোপের ১১টি দেশের প্রকৌশলী ও প্রশাসকরা সুইজারল্যান্ডের স্টকহোমে একত্রিত হন। তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার ব্যাপারে সম্মত হন। এভাবেই মোবাইল ফোনের উত্থান ঘটতে থাকে এবং ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

ধীরে ধীরে মোবাইল ফোনের বিস্তার ঘটে এশিয়াতেও। ১৯৯৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে পৃথিবীর অনেক দেশেই মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়। সে বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয়। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে এএমপিএস মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে ফোর জি ও থ্রি জির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। চালু হয়েছে ফাইভ জি।

হ্যালো শব্দটি আবিষ্কারের সাথে সাথে ধীরে ধীরে মিইয়ে যেতে থাকে অপেক্ষা, চোখের জল, হারিয়ে যেতে থাকে পত্র আদান-প্রদান সংস্কৃতি, সংকুচিত হতে থাকে আবেগের প্রকাশ।

এরপর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আসে স্মার্টফোন প্রযুক্তি। ১৯৯৪ সালে আইবিএম (IBM) কোম্পানি এবং মিতসুবিসি ইলেকট্রিক কর্পোরেশন একসাথে মিলে যৌথ উদ্যোগে তৈরি করেছিল বিশ্বের প্রথম স্মার্ট ফোন এবং যার নাম ছিল আইবিএম সিমন; এই স্মার্টফোন বাজারে আসার প্রায় ১৫ বছর পরে অ্যাপল আইফোন বাজারে আসে। একুশ শতকের শুরুর দিকে স্মার্ট ফোনের ব্যপক ব্যবহার বিস্তৃত হয় বাংলাদেশে।

স্মার্ট ফোনের বৈশিষ্ট্য এবং বহুবিধ ফিচারের কারণে স্মার্ট ফোন মানুষের জীবনের অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে। মুভি দেখা, গান শোনা, ইমেইল করা, পড়া সবকিছু এক ফোনের মাধ্যমে করা সহজতর হয়ে ওঠে।

মানুষের বিনোদনের জন্য আড্ডা সংকুচিত হতে থাকে।

সশরীরে যোগাযোগের স্থলে ভার্চুয়াল যোগাযোগ প্রাধান্য পেতে থাকে। ছবি তোলা, ভিডিও গেম খেলা, চ্যাটিং বা মেসেঞ্জিং সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসে মানুষের। মানুষের ভেতর আত্মকেন্দ্রিকতা জেঁকে বসতে থাকে।

২০০৪ সালে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক নামের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উদ্ভাবন করেন। শুরুতে এই মাধ্যমটি শুধু হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে সমগ্র বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০০৫ সালে আবিস্কৃত হয় ইউটিউব। আজকের বিশ্ব— স্মার্টফোন, ইউটিউব, আর ফেসবুকের রাহুগ্রাসে বিপর্যস্ত।

এর আগে বিনোদনের জন্য মানুষের প্রয়োজন ছিল ভালো বই পড়া, ভ্রমণ করা, বন্ধুদের সাথে প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে ওঠা, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা।

এসবকিছুই মানুষ করতে পারে ; স্মার্টফোন, ইউটিউব ও ফেসবুকের মাধ্যমে।

বিশ শতকের শুরুতে এসে যে পণ্য সংস্কৃতি বা পুঁজিবাদ, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ, ভোগবাদ ও বিশ্বায়নের উদ্ভব ঘটে; একুশ শতকে এসে তা সর্বগ্রাসী রূপ পরিগ্রহ করে। পুঁজিবাদ মানুষকে সবকিছুর মূল্যায়ন করতে শেখায় অর্থনৈতিক মূল্যে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ পরিণত হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতায় যা কেবল নিজেকেই আরও বেশি করে চেনায়, ভোগবাদ বা অতি বস্তুবাদীতা মানুষকে কেবলই ভোগে উৎসাহিত করে, আর বিশ্বায়নের নামে শুরু হয় নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা আর ঐতিহ্যের বর্জন। মানুষ ক্রমে সরে যেতে থাকে নিজস্ব শেকড় থেকে। সামাজিক কাঠামো ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়তে থাকে। লোপ পেতে থাকে আত্মীয়তার চর্চা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ। সুখ যেমন একা ভোগ কর, দুঃখও একা ভোগ কর। ঘরে স্মার্ট টিভি, ডাবল ডোর ফ্রিজ, এয়ার কুলার মেশিন, স্মার্ট ফোন সব আছে কিন্তু মনে সর্বগ্রাসী একাকিত্বের হাহাকার। অনিবার্য প্রয়োজন হয়ে ওঠে মনের ভাব প্রকাশের। প্রত্যেকটি মানুষ হয়ে ওঠে একেকটি বিচ্ছিন্ন, মনোহর দ্বীপ।

এই জনপদে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবং রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ এর কারণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঠিক বিকাশ ঘটেনি। যার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়; শিক্ষা, সংস্কৃতি,সাহিত্য এবং গবেষণা সর্বত্র। শিক্ষাব্যবস্থায় সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মের গভীরভাবে পাঠের অভাব পরিলক্ষিত হয়। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে কোনো সরকারই তেমনভাবে গবেষণায় এগিয়ে আসেনি। ফলে অগভীর চিন্তাভাবনার একটা প্রজন্ম শেকড় ছাড়া হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে যারা লালন, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, শহীদুল্লা কায়সার, বিভূতি, মানিক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক কাউকে চেনে না। তাদের মনন পড়ে থাকে পতিত জমির মতোই। ফলে তারা না বোঝে মেধা ও মননের চাষাবাদ, না বোঝে সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার।

এরই মধ্যে বাংলা সাহিত্যে উদ্ভব হয় বিনোদনমূলক সাহিত্যের। যারা কিছুই পড়ত না তারা পড়তে থাকল মাসুদ রানা, কুয়াশা, হিমু, মিসির আলি সিরিজ। তাতে না ঘটল মননের শ্রীবৃদ্ধি, না হলো জ্ঞানার্জন। কিন্তু সময় কাটল বেশ। হিড়িক পড়ে গেল এইসব বই কেনার। প্রকাশক, লেখক সবাই লাভের টাকা গুনলেন আর প্রজন্ম হলো বেপথু। একটা বিরাট দল ভেবে নিতে থাকল এটাই সাহিত্যচর্চা, এরাই আইডল। মনে মনে অসংখ্য তরুণ-তরুণী স্বপ্ন দেখতে থাকল এমন আইডল হয়ে ওঠার। সাহিত্য আর সংস্কৃতি হয়ে উঠল অনেকটা পুতুল খেলার মতো।

আগেই বলেছি বিশ্বায়ন, পুঁজিবাদ আর ব্যাক্তিকেন্দ্রিকতা মানুষকে একেকটি মনোহর দ্বীপে পরিণত করেছে। মানুষের ভাবের আদান-প্রদান অনিবার্য হয়ে ওঠে। নিজেকে প্রকাশ করতে ব্যকুল হয়ে ওঠে মানুষ।

ফেসবুকের নিউজফিডে লেখা থাকে— হোয়াটস অন ইউর মাইন্ড? মানুষ ফেসবুকের নিউজফিডে লিখতে থাকল; সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন-হতাশার উপাখ্যান। আর তার একেকটা শিরোনাম দিয়ে দিল।

এর নাম হয়ে গেল কবিতা। এভাবে একঝাঁক নারী লেখকের আবির্ভাব ঘটে একুশ শতকের শুরুর দিকে। একুশ শতকের জিরো দশকের প্রারম্ভে সৃষ্টি হতে থাকে ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপ। যেখানে অধিকাংশ লেখক এবং পাঠকের কোনো দায় থাকে না।

পুরোপুরি না পড়েই পাঠক মন্তব্য করতে থাকে অপূর্ব, অনবদ্য, অসাধারণ। অনেক গৃহিণী নারী যেমন এসব গ্রুপে যুক্ত হলেন, তেমনি কর্মজীবী নারীরাও যুক্ত হলেন। যুক্ত হলেন, বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ সবাই।

অনেক নারী লেখার সাথে সেঁটে দেন নিজের সাজগোজ করা সুন্দর একটা মুখাবয়বের ছবি। আর তাতে সুযোগসন্ধানী পুরুষ প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন সেই নারী লেখককে। নারীটি ভাবলেন তিনি বেশ জনপ্রিয় কবি বা লেখক হয়ে উঠেছেন।

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় যেকোনো কাজেই আদর্শগত বা প্রাণের তাগিদের চেয়ে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য বেশি প্রাধান্য পায়। এই গ্রুপভিত্তিক সাহিত্যচর্চাকে কেন্দ্র করে হিড়িক পড়ে গেলো যৌথ কাব্যগ্রন্থ, যৌথ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের। দুয়েকটা গ্রুপ খুলে বসল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আর কিছু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হলো পদক ব্যবসা করার জন্য। নারীগণ অস্থির হয়ে উঠলেন পদক/ পুরস্কার কিনে নেওয়ার জন্য।

সুপ্রিয় নারী লেখকগণ, আপনি লাইক-কমেন্ট পেলেন, সুন্দর সুন্দর ব্যক্তিগত ছবি পোস্ট করে হাজার হাজার ফলোয়ার পেলেন, টাকা দিয়ে পুরস্কার কিনলেন কিন্তু একটা লাইনও মহাকালের ধরে রাখার মতো হলো কিনা একবার ভেবে দেখেছেন তো! বিখ্যাত লেখকদের সাথে সেলফি তুলে বোঝাতে চাইলেন আপনিও অই গোত্রীয় কিংবা আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসলেই কি তাই!

এ তো গেল গ্রুপকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা। মূলধারায় পত্রিকা, লিটলম্যাগ, ওয়েবম্যাগ এসব ক্ষেত্রেও দেখা যায়, বডি ল্যাংগুয়েজ, লিঙ্গভিত্তিক প্রাধান্য। এই অসুস্থ ধারায় নারী-পুরুষ উভয়েই আছেন। একদল সুবিধা দিয়ে কিছু নিতে চান, অন্যদল কিছু দিয়ে হলেও সুবিধা নিতে চান।

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে; লেখকের আবার নারী পুরুষ কি? হ্যাঁ মেধা, মনন, সৃষ্টি, শিল্প সাহিত্যের কোনো লিঙ্গ নেই। কিন্তু সৃষ্টিকে ততখানি পরিনত হতে হবে তো। রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা কিংবা সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড কী শহীদুল্লা কায়সারের সংশপ্তক কিংবা বিভূতিভূষণের অপরাজিত-এর চেয়ে কোনো অংশে কম শৈল্পিক সৃষ্টি?

যেসব নারী কিংবা পুরুষ লেখকের সৃষ্টি কালোত্তীর্ণতা পেয়েছে তারা প্রত্যেকেই নিবিষ্ট সাধক ছিলেন।

প্রতিনিয়ত অধ্যয়ন করেছেন সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি সর্বোপরি মানুষের জীবন ও প্রকৃতি।

রিজিয়া রহমানের সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম তার লেখা পত্রিকায় যায় বলে উনার বোন শ্বশুরবাড়ির কটু কথা শুনতেন। কারণ উনার হাতের লেখা অন্যপুরুষ দেখতে পায়। আর সেলিনা হোসেন বলেছেন লেখক হওয়ার সাধনায় তিনি অনেককিছুই ছেড়েছেন। আজকে আমরা সহজেই ফেসবুকের নিউজফিড কিংবা সাহিত্য গ্রুপে লিখছি আবার লাইভ করে পরিচিত হয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু যা করছি তা কতখানি অর্থবহ কিংবা আদৌ কি কিছু শিখছি? পূর্বসূরিদের চেয়ে আমরা প্রচার ও স্বাধীনতা চর্চায় অনেক এগিয়েছি। তাই সৃষ্টি কর্মেও এগিয়ে থাকতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন নিরবধি সাধনা।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ এর সময়কাল থেকেই নারী হাঁটছেন সাহিত্যের কক্ষপথে। চর্যাপদের একজন নারী পদকার ছিলেন তার নাম কুক্কুরীপা।

তারপর বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি চন্দ্রাবতী। এরপর এই ধারাকে টেনে নিয়ে গেছেন হ্যানা ক্যাথেরিন মালেঞ্চ, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী, কুসুমকুমারী দাশ, কামিনী রায়, বেগম সুফিয়া কামাল, নীলিমা ইব্রাহিম। স্বাধীনতা উত্তর যুগে সত্তর দশকে আমরা পেয়েছি সেলিনা হোসেন, রাবেয়া খাতুন ও রিজিয়া রহমানের মতো কিংবদন্তি নারী সাহিত্যিকদের। যাদের প্রত্যেকের অবদান বাংলা সাহিত্যে অনস্বীকার্য।

তেমনি আশি-নব্বই দশকজুড়ে দেখতে পাই নাসরীন জাহান, আকিমুন রহমান শামীম আজাদ, ফেরদৌস নাহার, দীলতাজ রহমান, দিলারা মেসবাহ, পাপড়ি রহমান প্রমুখ সাহিত্যিককে।

এই নারী সাহিত্যিকরা প্রত্যেকে অর্জন করেছেন নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি। জীবন, প্রকৃতি ও মানুষকে তারা পাঠ করেছেন মানুষ ও লেখক হিসেবে, নারী হিসেবে নয়।

সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-স্বপ্ন এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলো অবশ্যই সাহিত্যের উপাদান। কিন্তু চূড়ান্ত বিষয় না। লেখকের মেধার চর্চা ও বিষয়ের বৈচিত্র্য সাহিত্যের জন্য অত্যাবশকীয়।

এর সাথে আছে শুদ্ধ বানান, বাক্য গঠন ও আঙ্গিক বিনির্মাণ। শিল্পের জন্য শিল্প এই স্লোগান তো কবেই বাতিল হয়ে গেছে। শিল্পের দায় ইতিহাস, প্রজন্ম, দেশ এবং সমাজের কাছে।

এই সময়ে সাহিত্যচর্চা করা একজন পুরুষ লেখক যেভাবে বিশ্বসাহিত্য পাঠ করেন, কজন নারী সাহিত্যিক সেটা করেন। বিশ্বমানের লেখা লিখতে হলে অবশ্যই মিশেল ফুকো, দস্তয়েভস্কি, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, হারুকি মুরাকামি, ইভান তুর্গেনেভ, ফ্রানৎজ কাফকাসহ বিশ্ববিখ্যাত লেখকদের ভালো কাজ এবং সাথে বাংলা সাহিত্যের পাঠ অনস্বীকার্য।

বডি ল্যাংগুয়েজ বা সুন্দর চেহারা বা সুন্দর কথার সুবিধা নিয়ে আপনি বা আমি সেলিব্রিটি হতে পারব কিন্তু আবার সমকালেই হারিয়ে যাব। লেখক বা শিল্পী হতে গেলে অধ্যয়ন এবং সাধনা অত্যাবশকীয়।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম কবি ছিলেন নারী যার নাম এনহেদুয়ান্না। নারীর হাতেই সূচিত হয়েছিল কৃষি বিপ্লব।

সাহিত্যেও নারীর হাতে রচিত হতে পারে বিপ্লব। নারীর দেখার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক গভীর। নারী জীবন ও সংসারকে দেখেন একেবারে শেকড় থেকে। হয়তো বা পুরুষের মতো ভ্রমণ করা সম্ভব হয় না নারীর পক্ষে। সেই ঘাটতি নারী অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারেন বই পড়ে। পড়তে হবে ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, জীবনী সব ধরনের বই।

সাধনায় নিবিষ্ট হলে হয়তো আপনার, আমার ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসবে অরুন্ধতী, লুইস গ্লিক কিংবা এলিস মুনরো!

নুসরাত সুলতানা : কবি ও কথাসাহিত্যিক

 

+ posts

নামঃ নুসরাত সুলতানা।
পিতাঃ শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা আবুয়াল ইসলাম খান(মৃত)
মাতাঃ শিক্ষিকা মোসাঃখালেদা বেগম(মৃত)
বর্তমান ঠিকানঃ স্বামী ও একমাত্র পুত্র সন্তান নিয়ে বর্তমানে মিরপুর সেনানিবাসে বসবাস করছেন।

পড়াশোনাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাঃ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মিলিটারী ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি তে সিভিলিয়ান ষ্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

লেখালেখিঃ
সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক সেই ছোট বেলা থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই লেখালেখি করতেন। মাঝখানে ছেড়ে দেন। গত ছয় বছর নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। লেখালেখি - তাঁর আত্মার মুক্তি। গল্প, কবিতায় আঁকতে চান--

প্রেম,বিদ্রোহ, স্বপ্ন,স্মৃতি, জীবন,প্রকৃতি স..ব!!

প্রকাশিত গ্রন্থঃ

ছায়া সহিস (একক কাব্য গ্রন্থ) -২০১৯
গহিন গাঙের ঢেউ (একক কাব্য গ্রন্থ) -২০২০
পায়রার পায়ে আকাশের ঠিকানায়(পত্রকাব্য সংকলন) -২০২১
মৌতাত - (একক গল্পগ্রন্থ)  --২০২২
মহাকালের রুদ্রধ্বনি- (একক কাব্যগ্রন্থ)- ২০২২।।

এছাড়াও নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগ এবং ওয়েব ম্যাগে।

Read Previous

ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি 

Read Next

লর্ড ডানসানি’র সাতটি উপকথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *